শতকরা ১০ ভাগ ছাত্র সন্ত্রাসবাদের সমর্থক!
২১ নভেম্বর ২০১৬ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের নেতৃত্বে এই জরিপ চালানো হয় ঢাকার ১০০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে৷ তাদের ৬৬৩ জন পুরুষ এবং ৩৩৭ জন নারী৷ সবাইকে মোট ২০টি প্রশ্ন করা হয়৷ ২৭ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বরের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন স্পটে এই জরিপ চালানো হয়৷
জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয় রবিবার৷ জরিপ অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শতকরা ১০ ভাগ ছাত্র সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করে বলে জরিপে অংশগ্রহণকারীরা মনে করেন৷ তবে জরিপে অংশগ্রহণকারীরা কেউ নিজে সন্ত্রাসবাদ সমর্থন করেন কিনা তা জানা যায়নি৷ তুরিন আফরোজ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘তারা নিজেরা কী করেন সে ধরণের কোনো প্রশ্ন ছিলনা৷ তারা কী মনে করেন প্রশ্ন ছিল সে ধরণের৷ ফলে জরিপে অংশ নেয়া ছাত্রদের নিজেদের অবস্থান এই জরিপে প্রতিফলিত হয়নি৷''
জরিপে অংশ নেয়াদের মতামত অনুযায়ী, যে ১০ ভাগ ছাত্র সন্ত্রাসবাদ সমর্থন করে তাদের মধ্যে ৫১.৭ ভাগ সচ্ছল পরিবারের সন্তান৷ ওই ১০ ভাগের ৫৪.৭ ভাগের বয়স ১৮ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে৷
তাদের মধ্যে ৮২.২ ভাগ মনে করেন, বাংলাদেশে অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় তরুণদের জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ার মাত্রা বহুগুণ বেড়েছে৷ আর তাদের মতে, এর প্রধান কারণ পরিবারের উদাসীনতা৷ তারপরে রয়েছে রাজনৈতিক উস্কানি৷
এছাড়া বেকারত্ব, হতাশা, শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটি, ধর্মীয় জ্ঞানের অভাব, ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সহজলভ্যতাকে দায়ী করেছেন তারা৷
জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতার দিক দিয়ে এখন ধনী পরিবারের সন্তানরাই শীর্ষে৷ জরিপে অংশ নেয়া শতকরা ৩৭.৬ ভাগ মনে করেন, উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানরা জঙ্গিবাদের দিকে ঝুঁকছে৷ তারা মনে করেন, আর্থিক নয়, প্রধানত ‘আদর্শিক' কারণেই কিছু তরুণ জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদে জড়িয়ে পড়ছে৷
তুরিন আফরোজ বলেন, ‘‘এটা এখন স্পষ্ট যে সব শ্রেণি থেকেই তরুণরা জঙ্গিবাদের দিকে আকৃষ্ট হচ্ছে৷ এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে দু’টি কাজ করা প্রয়োজন৷ যারা এরইমধ্যে সন্ত্রাসবাদে জড়িয়ে পড়েছে তাদের সেখান থেকে বের করে আনা এবং নতুন যাতে কেউ জড়াতে না পারে সেজন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেয়৷''
জরিপে অংশগ্রহণকারীরা মনে করেন, ‘‘পরিবারের উচিত সন্তানদের ওপর নজর রাখা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও নজরদারির ব্যবস্থা করতে হবে৷ আর শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার প্রয়োজন৷ প্রয়োজন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রশিক্ষণ ও আধুনিক সরঞ্জাম৷’’
বিচার ব্যবস্থার প্রতিও আস্থাশীল নন৷ এছাড়া জঙ্গিবিরোধী অভিযানের কৌশল নিয়েও অসন্তুষ্ট তারা৷
তবে এই জরিপের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘এটা সত্য যে বাংলাদেশের তরুণদের একাংশ জঙ্গিবাদের দিকে ঝুঁকছে৷ কিন্তু জরিপকারীরা যেভাবে জরিপ করেছে তাতে সঠিক তথ্য উঠে এসেছে বলে আমার মনে হয় না৷ তাদের ম্যাথোডোলজি এবং স্যাম্পলিং বৈজ্ঞানিক হয়নি বলেই আমার কাছে মনে হয়েছে৷’’
প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে নীচে মন্তব্যের ঘরে লিখুন৷