যারা বেশি বেশি গর্ভপাত করায় তাদের ভবিষ্যতে অনেক রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে৷ তাদের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে৷ ভবিষ্যতে আর সন্তান নাও হতে পারে৷ জরায়ুতে সংক্রমণ হতে পারে৷ সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন অধ্যাপক ডা. নাসিমা বেগম৷
বিজ্ঞাপন
এছাড়া গর্ভপাত করালে পিরিয়ড নিয়মিত না হওয়াসহ অনেক রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে জানান তিনি৷ ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলাপকালে কথাগুলো বলছিলেন অধ্যাপক ডা. নাসিমা বেগম৷ তিনি স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের স্ত্রী রোগ ও প্রসূতি বিভাগের সাবেক প্রধান এবং বর্তমানে ইন্টারন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের স্ত্রী রোগ ও প্রসূতি বিভাগের চেয়ারম্যান৷
ডয়চে ভেলে: গর্ভপাত কী এবং এটা কেন হয়?
অধ্যাপক ডা. নাসিমা বেগম: মেয়েরা যখন অন্তঃসত্ত্বা বা গর্ভবতী হয় তখন একশ' জনের মধ্যে ২০ জনের গর্ভপাত হয়ে যায়৷ এটা একটা স্বাভাবিক নিয়ম, প্রাকৃতিক নিয়ম৷ গাছের যেমন ২০ ভাগ ফল পরিপুষ্ট হয় না, তেমনি ২০ ভাগ ভ্রুণ পরিপুষ্ট হয় না৷ এগুলোর প্রধান কারণ হচ্ছে জিনগত, ক্রোমোজমাল অ্যাবনর্মালিটি, মেয়েদের বা ছেলেদের ডিম্বানু বা শুক্রানুর ভেতরে যে ফলটা হয়, সেখানে যদি কোনো ‘ডিফেক্ট' থাকে, তখন এমনটা হতে পারে৷ এটাকেই মেইন কারণ হিসেবে ধরা হয়৷ এছাড়াও অনেক কারণ আছে৷ জরায়ুতে যদি কোনো ডিফেক্ট থাকে বা মহিলাদের ডায়াবেটিস, কিডনিতে, থাইরয়েডে সমস্যা বা ভাইরাল জ্বর হয়, এমনকি মানসিক কারণেও গর্ভপাত হতে পারে৷ অনেক সময় দেখা যায়, গর্ভপাতের কোনো কারণই খুঁজে পাওয়া যায় না৷ এটা প্রাকৃতিক নিয়ম অনুসারেই হয়ে থাকে৷
Dr. Nasima Begum for Alaap - MP3-Stereo
গর্ভপাতের লক্ষণ কী?
বিশেষ করে তিন মাস বা কারো কারো ক্ষেত্রে ৬ মাসের মধ্যে তলপেটে ব্যথা ও রক্তপাত শুরু হয়৷ আস্তে আস্তে এই ব্যথা বাড়তে থাকে৷ এতে জরায়ুর মুখ খুলে যায় এবং পুরো বা আংশিকভাবে চাকার মতো বা মাংস দলা বের হয়ে আসে ও ব্লিডিং হতে থাকে৷ এগুলোই সাধারণত গর্ভপাতের লক্ষণ৷
গর্ভপাতের শারীরিক ও মানসিক ঝুঁকি কী কী?
গর্ভপাতের শারীরিক ও মানসিক ঝুঁকি অনেকখানি আছে৷ একটা মেয়ে যদি সন্তান চায় এবং তার যদি গর্ভপাত হয়ে যায়, তাহলে সে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে৷ গর্ভপাতের কারণে রক্ত বের হতে হতে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়৷ কারো যদি বেশি রক্তপাত হয় তাহলে সে শকে চলে যেতে পারে বা মৃত্যুর মুখেও পতিত হতে পারে৷ গর্ভপাতের ফলে সে যদি আনহাইজেনিক অবস্থায় থাকে দীর্ঘদিন, এভাবে থাকলে সেপটিক অ্যাবরশন বা পরবর্তীতে তার অনেক ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে৷
গর্ভপাত কতদিনের মধ্যে হয়?
সাধারণতো তিন মাসের মধ্যে হয়৷ ৮০ ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় তিন মাসের মধ্যে গর্ভপাত হয়ে গেছে৷ এছাড়া বাকিদের ছ’মাস বা ২৮ সপ্তাহের মধ্যে হতে দেখা যায়৷ তবে বেশিরভাগই প্রথম তিন মাসের মধ্যে হয়ে থাকে৷
ইসলাম ধর্মে গর্ভপাত আলোচনা, গবেষণার তথ্য
গর্ভপাত বিষয়টি নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই৷ বিভিন্ন ধর্মেও গর্ভপাত সম্পর্কে মতামত দেয়া হয়েছে৷ ছবিঘরে শুধু ইসলাম ধর্মের কথা থাকছে৷
ছবি: Gent Shkullaku/AFP/Getty Images
কোরানে উল্লেখ নেই, তবে...
কোরান শরিফে স্পষ্টভাবে গর্ভপাতের বিষয়ে কিছু বলা নেই৷ তবে কিছু নির্দেশনা আছে যেগুলো গর্ভপাতের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যেতে পারে বলে ইসলামি বিষয়ে পণ্ডিতরা মনে করেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Al-Shaikh
ভ্রুণই জীবন
সূরা আল-মায়দাহের ৩০তম আয়াতে বলা হয়েছে, ‘‘যে বা যারা একটি আত্মার জীবনকে হত্যা থেকে বিরত থেকেছে, সে বা তারা যেন সব মানুষের জীবনকে হত্যা থেকে বিরত থেকেছে৷ যে বা যারা একটি আত্মাকে হত্যা করেছে, সে বা তারা যেন পুরো মানবজাতিকেই হত্যা করেছে৷’’ আর অধিকাংশ মুসলিম পণ্ডিত মনে করেন, গর্ভে থাকা ভ্রুণকেই ইসলাম জীবন হিসেবে স্বীকৃতি দেয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মায়ের জীবন রক্ষা
যদি মায়ের প্রাণ হুমকির মুখে থাকে তাহলে গর্ভপাত সমর্থন করে ইসলাম৷ মুসলিম আইন ‘দু’টি মন্দ জিনিসের মধ্যে যেটি কম মন্দ তাকে’ বেছে নেয়ার প্রতি সমর্থন জানায়৷ এক্ষেত্রে গর্ভপাতকেই ‘কম মন্দ’ মনে করা হয়৷ এর পক্ষে কয়েকটি যুক্তি হচ্ছে মা-ই ভ্রুণের ‘জন্মদাতা’, মায়ের জীবন আগে থেকেই প্রতিষ্ঠিত, মায়ের অন্যান্য দায়িত্ব আছে, মা একটি পরিবারের অংশ এবং মাকে মরতে দিলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভ্রুণও মরে যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/E. Biba
দারিদ্র্যতার ভয়ে গর্ভপাত
কেউ যদি মনে করেন আগত শিশুকে লালনপালন করা তার পক্ষে হয়ত সম্ভব হবে না এবং সেই ভয়ে ভ্রুণকে মেরে ফেলেন, তাহলে সেটি মহাপাপ বলে বিবেচিত হবে৷ সুরা আর ইসরার ৩২ আয়াত বলছে, ‘‘তোমরা তোমাদের সন্তানকে দারিদ্রতার ভয়ে হত্যা করো না৷ আমরা তোমাকে এবং তোমার সন্তানকে দেখেশুনে রাখি৷ তাই তাদের হত্যা করে সত্যিকার অর্থেই একটি মহাপাপ৷’’
ছবি: Fotolia/Mikael Damkier
ত্রুটি ধরা পড়লে
গর্ভধারণের চার মাসের মধ্যে যদি নিশ্চিত হওয়া যায় যে, ভ্রুণ ত্রুটি নিয়ে বাড়ছে এবং এর সমাধান সম্ভব নয়, এবং এই সমস্যা পরবর্তীতে শিশুর জীবন দুর্বিসহ করে তুলতে পারে, তাহলে সেক্ষেত্রে গর্ভপাত সমর্থন করেন অনেক পণ্ডিত৷ এক্ষেত্রে অন্তত দু’জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বলা হয়েছে৷ অবশ্য এক্ষেত্রেও গর্ভপাতের পক্ষে নন এমন পণ্ডিতও আছেন৷
ছবি: AP
চার মাস পর...
গর্ভধারণের সময় ১২০ দিন পেরিয়ে গেলে গর্ভপাত সমর্থন না করার পক্ষে মোটামুটি পণ্ডিতদের মধ্যে মিল রয়েছে৷ তবে এক্ষেত্রে যদি ভ্রুণের ত্রুটি মায়ের জীবন হুমকির মুখে ফেলে দেয় তাহলে অন্য কথা৷
ছবি: Sven Bähren/Fotolia
মুসলিম দেশের জরিপে বাংলাদেশ শীর্ষে
২০১৩ সালে প্রকাশিত পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক জরিপ বলছে, বাংলাদেশের প্রায় ১৮ শতাংশ মুসলিম নাগরিক নৈতিক বিবেচনায় গর্ভপাত সমর্থন করেন৷ অর্থাৎ প্রতি পাঁচজন বাংলাদেশি মুসলমানের মধ্যে একজন গর্ভপাতের পক্ষে৷ ৩৭টি দেশের মসুলমানদের উপর পরিচালিত এই জরিপে বাংলাদেশেই গর্ভপাতের পক্ষে সবচেয়ে বেশি মানুষ পাওয়া গেছে৷ আরও জানতে উপরের ‘+’ চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: picture-alliance/Pacific Press/ Md. M. Hasan
ভ্রুণ কি ব্যথা পায়?
২০০৫ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ভ্রুণের বিকাশের প্রাথমিক পর্যায়ে তার মধ্যে ব্যথা, এমনকি তার আশেপাশে কী ঘটছে, তা বোঝার মতো নার্ভাস সিস্টেম গড়ে ওঠে না৷ আরেক গবেষণা বলছে, ব্যথা পাওয়ার জন্য যে ‘নিউরো-অ্যানাটোমিকাল অ্যাপারেটাস’ প্রয়োজন তা গড়ে ওঠার কাজ গর্ভধারণের ২৬ সপ্তাহ আগে সম্পূর্ণ হয় না৷ অবশ্য এই বিষয়ে বিতর্ক এখনও থেমে নেই৷ দু’টি গবেষণা সম্পর্কে আরও জানতে উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: Fotolia/ ingenium-design.de
8 ছবি1 | 8
গর্ভপাত কী হত্যার শামিল?
প্রশ্নটা ভিন্ন৷ যেটা অটোমেটিক হয়ে যাচ্ছে, সেটা তো আর হত্যার শামিল বলা যাবে না৷ অ্যাবনরমাল শিশুগুলোই সাধারণত ঝড়ে যায়৷ আমরা ডাক্তাররা কোনো মহিলার শারীরিক কারণ, স্বাস্থ্যগত কারণ, এছাড়া এমন কোনো কারণ আছে যেখানে মেডিক্যাল ইনডিকেশন আছে, সেখানে মেডিক্যাল টার্মিনেশন অব প্রেগনেন্সিও আছে৷ এখানে আগে মাকে বাঁচানোর চেষ্টা করি৷ মায়ের স্বাস্থ্যগত সমস্যা, কিডনির সমস্যা বা লিভারের সমস্যার কারণে এমন পরিস্থিতির তৈরি হয় যেখানে, সেখানে আমরা মেডিক্যাল টার্মিনেশন করতে পারি৷ কিন্তু যেখানে অবৈধভাবে গর্ভাপাত করায়, সেখানে অনৈতিকতার প্রশ্ন আছে৷
চিকিৎসা বিজ্ঞানে গর্ভপাতকে কতটা সমর্থন করা হয়?
চিকিৎসা বিজ্ঞান গর্ভপাতকে সেভাবে সমর্থন না করলেও মেডিক্যাল টার্মিনেশনে এটা করতে হয়৷ এটাকে আমরা সমর্থন করি৷ যার অনেকগুলো ইন্ডিকেশন আছে৷ সামাজিক কারণও রয়েছে৷ ধরুন, ধর্ষণ বা খারাপ কোনো দুর্ঘটনা অথবা ফ্যামিলি প্ল্যানিংয়ের কোনো ফেইলর মেথডেও মেডিক্যাল টার্মিনেশন বা গর্ভপাত এখন অনেক দেশেও সরকারই করার অনুমতি দিয়েছে৷ আমাদের দেশেও আমরা মেডিসিনের মাধ্যমে গর্ভপাত করে থাকি৷ অথবা সার্জিক্যাল এমআরের মাধ্যমেও করা যেতে পারে৷ যেখানে পরিবারপরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যর্থ হয় অথবা আনপ্ল্যান্ড প্রেগনেন্সি বা ধর্ষণের ঘটনা ঘটে, সেখানে তো এটার মূল্য কিছুটা থাকেই৷
গর্ভপাত কীভাবে এড়ানো যায়?
গর্ভপাত এড়াতে হলে প্রথম থেকেই স্বাস্থ্যগত চেকআপ করতে হবে৷ কোনো অসংগতি বা সমস্যা বা রোগ থাকলে তার চিকিৎসা করাতে হবে৷ সঠিকভাবে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণ করলে গর্ভপাত এড়ানো সম্ভব হবে৷ স্বামী বা স্ত্রী শুধু নয়, সমাজের সবার সচেতনতা তৈরি হলে এটা এড়ানো সম্ভব৷
গর্ভপাত৷ অনাকাঙ্খিত সন্তান না নিতে বিশ্বের প্রায় সব দেশেই চলছে ভ্রুণ হত্যা৷ আর্জেন্টিনায় গর্ভপাত নিষিদ্ধ৷ তারপরও গর্ভপাত ঘটাতে গিয়ে অনেকে প্রাণ হারাচ্ছেন, অনেকে আর কোনোদিন মা হতে পারছেন না৷
ছবি: Lisa Franz, Guadalupe Gómez Verdi, Léa Meurice
স্বাধীনতা...
‘শরীরটা আমার নিজের’ – আর্জেন্টিনার মেয়েরা এখনো স্বাধীনভাবে এ কথা ভাবতে পারেন না৷ গর্ভপাত সেখানে নিষিদ্ধ৷ তা সত্ত্বেও গর্ভপাত চলছে৷ ২৭ বছর বয়সি ক্যামিলাও গর্ভপাত ঘটিয়েছেন, তারপর নিজের ঘাড়ে এঁকেছেন উল্কি, সেখানে লেখা, ‘স্বাধীনতা’৷ তাঁর এ ছবি ‘১১ সপ্তাহ, ২৩ ঘণ্টা, ৫৯ মিনিট – আর্জেন্টিনায় অবৈধ গর্ভপাত’ শীর্ষক প্রদর্শনীতে দেখানো হচ্ছে৷
ছবি: Goméz Verdi, Franz, Meurice
নববর্ষের প্রাক্কালে...
এ ছবিতে মারা নামের একটি মেয়ের জীবনের গল্প বলার চেষ্টা করা হয়েছে৷ ২১ বছর বয়সে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে মারাকে তাঁর বয়ফ্রেন্ডের পরিবার, ‘গর্ভপাত ঘটালে আমরা অভিযোগ দায়ের করবো’ – বলে শাসিয়েছিল৷ হুমকি দিলেও ছেলেবন্ধুর সটকে পড়া কিন্তু তাঁরা ঠেকাননি৷ সঙ্গী চলে যাওয়ার ১২ সপ্তাহ পর বাধ্য হয়ে মারা ব্যাপারটি খুলে বলেন মাকে৷ তারপর ২০০২ সালের ৩১ ডিসেম্বর অবৈধভাবে গর্ভপাত ঘটিয়ে আবার নতুন জীবন শুরু করেন মারা৷
ছবি: Lisa Franz, Guadalupe Gómez Verdi, Léa Meurice
পুরুষেরও ভোগান্তি
গর্ভপাত অনেক সময় পুরুষদেরও বিপদে ফেলে৷ ফোটোগ্রাফার লিসা ফ্রানৎস, গুয়াদালুপে গোমেজ এবং লেয়া মরিসের কাজগুলো তেমন গল্পগুলোই তুলে ধরছে৷ পেদ্রো নামের এই তরুণ গর্ভপাতের ব্যাপারে তাঁর গার্লফ্রেন্ডকে শুধু সমর্থনই করেননি, তাঁকে ক্লিনিকেও নিয়ে গিয়েছিলেন৷ কিন্তু গর্ভপাত ঘটানোর পর বিষয়টি নিয়ে তিনি বন্ধুদের সঙ্গে কথাও বলতে পারেননি৷ সবার আচরণ দেখে মনে হচ্ছিল, পেদ্রো যেন খুব বড় কোনো অপরাধ করে ফেলেছেন!
ছবি: Lisa Franz, Guadalupe Gómez Verdi, Léa Meurice
বাড়িতেই গর্ভপাত
অন্তঃসত্ত্বার পেটে ঘুষি মেরে ভ্রুণ হত্যা, তারপর কাপড়ের হ্যাঙার আর কাপড় সেলাই করার সুঁচ ব্যবহার করে ‘জঞ্জাল’ সাফ করে দেওায়া – আর্জেন্টিনার অনেক অঞ্চলে এভাবেই ঘরে ঘরে হয় গর্ভপাত৷ কোনো ডাক্তার বা নার্স নয়, ঘরের মেয়েরাই এভাবে কাজ সারেন৷ ফলে অকালে ঝরে যায় অনেক নারীর প্রাণ৷
ছবি: Lisa Franz, Guadalupe Gómez Verdi, Léa Meurice
বছরে অন্তত একশ জন...
গর্ভপাত ঘটাতে গিয়ে আর্জেন্টিনায় প্রতিবছর ৬০ হাজার থেকে ৮০ হাজারের মতো নারী জটিল সমস্যায় পড়ে হাসপাতালে ভর্তি হন৷ তাঁদের মধ্যে কমপক্ষে একশ জন সন্তানের আগমন রুখতে গিয়ে নিজেদেরই মৃত্যু ডেকে আনেন৷ আর্জেন্টিনার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মনে করে, বিশেষত দরিদ্র অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে অবৈজ্ঞানিক উপায়ে গর্ভপাত ঘটাতে গিয়ে নিজেদের জীবনও বিপন্ন করছেন মেয়েরা৷
ছবি: Lisa Franz, Guadalupe Gómez Verdi, Léa Meurice
১৫০০ ইউরোয় মুশকিল আসান
গর্ভপাত আইনত দণ্ডনীয় হলেও আর্জেন্টিনায় টাকা দিলে এ কাজ সহজেই হয়৷ টাকাটা অবশ্য বেশিই লাগে, কোনো কোনো ডাক্তার এ জন্য ১০ হাজার পেসো বা ১৫০০ ইউরোও নিয়ে থাকেন গর্ভপাত ঘটাতে ইচ্ছুক নারীদের কাছ থেকে৷ জার্মান কারদোসো একজন সার্জন৷ তবে আর্জেন্টাইন ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হয়েও তিনি লড়ছেন গর্ভপাতের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার দাবির পক্ষে৷
ছবি: Lisa Franz, Guadalupe Gómez Verdi, Léa Meurice
নারীর পাশে নারী
‘ডিম্বাশয় থেকে তোমার গোলাপরেণু সরিয়ে নাও’ – এভাবেই গর্ভপাতকে আইনসিদ্ধ করানোর আন্দোলনের পক্ষে সোচ্চার আর্জেন্টিনার নারী অধিকার সংগঠন ‘লা রেভুয়েলতা’৷ ক্যাথলিক খ্রিষ্টান প্রধান দেশ আর্জেন্টিনায় বেশ কিছু মানবাধিকার সংগঠন এ দাবির পক্ষে৷ ‘লা রেভুয়েলতা’ শুধু দাবি আদায়ে সোচ্চার নয়, গর্ভপাতে ইচ্ছুক নারীদের উপযুক্ত পরামর্শ দিয়ে গর্ভপাতে সহায়তাও করে তারা৷
ছবি: Lisa Franz, Guadalupe Gómez Verdi, Léa Meurice
দিকনির্দেশনার অভাব
এলুনের বয়স এখন ২১৷ ‘লা রেভুয়েলতা’-র সহায়তায় তিনি গর্ভপাত ঘটিয়েছেন৷ ‘কখন মা হবো, এ সিদ্ধান্ত আমিই নেবো’ – এলুনে এমন কথা বলেছেন ঠিকই, তবে এতদিনে তিনি জেনে গেছেন যে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে গর্ভপাত ঘটানোও তাঁর দেশে খুব একটা নিরাপদ নয়৷ ডাক্তাররা ওষুধ কখন, কিভাবে খেতে হবে তা না বলেই বিক্রি করে দেন৷ ফলে অজ্ঞতার ঝুঁকি থেকেই যায়, আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার সহায়তা নিতে চেয়েও মৃত্যু এড়াতে পারেন না অনেক নারী৷
ছবি: Lisa Franz, Guadalupe Gómez Verdi, Léa Meurice
জেলখানায় গর্ভপাত
সোনিয়া সানচেজ ছিলেন পতিতা৷ অবৈধভাবে পতিতাবৃত্তির অভিযোগে জেল খেটেছেন অনেকবার৷ কারাবন্দি অবস্থায় গর্ভপাতও ঘটিয়েছেন৷ এক খদ্দের তাঁর মা হতে চাওয়া, না চাওয়ার স্বাধীনতাকেও কিনে নিয়েছিলেন৷ পতিতালয়ের মালিককে বাড়তি টাকা দেয়ায় কনডম ছাড়াই তিনি মিলিত হতেন৷ ফলশ্রুতিতে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন সোনিয়া৷ এই তরুণী এখন নেমেছেন গর্ভপাতের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে৷ ইতিমধ্যে সাফল্যের দেখাও পেয়েছেন৷
ছবি: Lisa Franz, Guadalupe Gómez Verdi, Léa Meurice
আর নীরবতা নয়...
ছবিতে দেখা যাচ্ছে মনিকা নামের এক নারীর শরীরের অনাবৃত একটি অংশ৷ লিসা ফ্রানৎস, গুয়াদালুপে গোমেজ এবং লেয়া মরিসের তোলা ছবি নিয়ে ‘১১ সপ্তাহ, ২৩ ঘণ্টা, ৫৯ মিনিট – আর্জেন্টিনায় অবৈধ গর্ভপাত’ শীর্ষক যে প্রদর্শনী চলছে, সেখানে এ ছবিটিও দেখানো হচ্ছে৷ নিজের এমন একটা ছবি দেখানোর অনুমতি দেয়া মনিকা গর্ভপাতের পক্ষে নিজ বক্তব্য তুলতে গিয়ে শুধু বলেছেন, ‘এটা আমার দেহ’৷
ছবি: Lisa Franz, Guadalupe Gómez Verdi, Léa Meurice
10 ছবি1 | 10
গর্ভপাত হওয়া একজন নারী কী কী ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হন?
যাদের বেশি বেশি গর্ভপাত হয়, তাদের তো সমাজিক সমস্যা আছেই৷ যাদের সন্তান নেই, তাদের তো সমাজে খারাপ অবস্থার মধ্যে থাকতে হয়৷ আর যারা বেশি বেশি গর্ভপাত করায়, তাদের ভবিষ্যতে অনেক রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে৷ তাদের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে, ভবিষ্যতে আর সন্তান না-ও হতে পারে৷ যৌন প্রদাহ, জরায়ুতে সংক্রমণ হতে পারে৷ পিরিয়ড নিয়মিত না হওয়াসহ অনেক রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে৷ এগুলোকে আমরা সব সময় নিরুৎসাহিত করি৷
গর্ভপাতকে কী উৎসাহিত বা নিরুৎসাহিত করা উচিত?
যারা অবৈধভাবে গর্ভপাত করান বা আনহাইজেনিকভাবে গর্ভপাত করান, তাদের বা আনসেফ গর্ভপাতকে অবশ্যই নিরুৎসাহিত করা উচিত৷ তবে একটা পার্ট রয়ে গেছে মেডিক্যাল টার্মিনেশন৷ এটা ডক্টরদের কাছে থেকে যাবে৷ এটার প্রয়োজন থাকলে আমরা ডক্টররা সব সময় নেব৷ যারা অনৈতিকভাবে বা অবৈধভাবে এটা করাচ্ছে, সেটা আমরা সব সময় নিরুৎসাহিত করব৷ সেটা সামাজিক অবক্ষয়, শারীরিক বা মানসিক সব দিক থেকেই ক্ষতিকর৷
যারা সন্তান নিতে চান, গর্ভপাত এড়াতে তাদের প্রতি আপনার পরামর্শ কী?
আমার পরামর্শ হলো – তারা সম্পূর্ণভাবে সুস্থ আছেন কিনা তা দেখার জন্য তাদের শারীরিক চেকআপ দরকার৷ যেমন ইউরিনারি ইনফেকশনের চিকিৎসা নিয়ে নেয়াই ভালো৷ ডায়াবেটিস বা অন্য কোনো রোগ থাকলে সেটা আগে থেকেই সারিয়ে নেয়া ভালো৷ এটার জন্য তাকে আগে থেকেই সচেতন হতে হবে৷ আমরা কিছু ওষুধ দেই, যেমন ফলিক অ্যাসিড, যাতে গর্ভপাত না হয় সেজন্য৷ এই ফলিক অ্যাডিস বা ওষুধটা অনেক কার্যকরী৷ যে সমস্ত কারণে গর্ভপাত হতে পারে, সে জন্য আমরা তাদের পরামর্শ দিতে পারি৷ এর জন্য শারীরিক সুস্থতা ও মানসিক প্রস্তুতি নিয়েই তাদের এগুনো উচিত৷
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷