দক্ষিণ এশিয়ায় দেশগুলোতে গ্রীষ্মে গরমের মাত্রা বেড়েই চলেছে৷ সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে বৈশ্বিক উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে ২১০০ সালের শেষ নাগাদ আর্দ্র গরম এতটাই চরমে উঠবে যে মানুষের বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে৷
বিজ্ঞাপন
দক্ষিণ এশিয়ায় বিশ্বের এক পঞ্চমাংশ মানুষের বাস৷ জার্নাল সায়েন্স অ্যাডভান্স তাদের নতুন প্রতিবেদনে ভয়াবহ দাবদাহ সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়ে বলছে, গ্রীষ্মের তাপপ্রবাহ যদি এমন রূপ ধারণ করে, যেখানে তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা অনেক বেশি হয়, সেসময় কোনো সুরক্ষা ছাড়া মানুষের বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে যাবে৷
দু'টো জলবায়ু মডেলের ভিত্তিতে গবেষণাটি করা হয়েছে৷ একটি হলো ‘বিজনেস-অ্যাজ-উইজুয়াল’ পরিস্থিতি, যেখানে বলা হচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ন্ত্রণে জোরালো পদক্ষেপ না নেয়া এবং দ্বিতীয়টি হলো বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি গড়ে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে রাখা৷
তবে এবারে গবেষণাটিতে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে, যা আগে কখনো হয়নি৷ আর তা হলো এটি কেবল তাপমাত্রার উপর জোর দেয়নি৷ গবেষকরা বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন ‘ওয়েট-বাল্ব টেম্পারেচার', অর্থাৎ তাপমাত্রা, আর্দ্রতা এবং এর সমন্বয়ে মানুষের শরীর ঠান্ডা হতে কত সময় লাগে এই তিনটি বিষয়ের সমন্বয়কে৷ গবেষণায় ‘ওয়েট-বাল্ব টেম্পারেচার’ এর মাত্রা ধরা হয়েছে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷ অর্থাৎ এর উপরে তাপমাত্রা পৌঁছালে মানুষের বেঁচে থাকা কঠিন হবে৷ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই শতকের শেষ নাগাদ ‘বিজনেস-অ্যাজ-উইজুয়াল’ পরিস্থিতিতে দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশে ‘ওয়েট-বাল্ব টেম্পারেচার’ ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হবে, অর্থাৎ মানুষের সহনীয় তাপমাত্রার উপরে উঠে যাবে৷
দক্ষিণ এশিয়ার ৩০ ভাগ মানুষ এই চরম দাবদাহের শিকার হবে বলে জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে৷ এতে আরও বলা হয়েছে যেসব এলাকা ঘনবসতিপূর্ণ এবং কৃষিজমি রয়েছে, যেসব এলাকা হয়ে উঠবে চরমভাবাপন্ন৷ কৃষক, মজুর ও শ্রমিকদের বেশিরভাগই কাজ করেন বাইরে, অর্থাৎ ফ্যান বা এয়ারকন্ডিশনের সাহায্য পাবেন না তারা৷ ফলে হিট স্ট্রোকের কবলে পড়বেন তারা৷ বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান আগামী কয়েক দশকে সবচেয়ে বেশি তাপ্রবাহের কবলে পড়বে বলে জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে৷ ২০১৫ সালে এর কিছুটা প্রভাব দেখা গেছে৷ ঐ বছর গ্রীষ্মে চরম দাবদাহে ভারত ও পাকিস্তানে সাড়ে তিন হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে৷
তবে গবেষকরা বলছেন, তারা যে মডেল তৈরি করেছেন এটা একটা আশা জাগাতে পারে৷ কারণ এই মডেলে উল্লেখ করা হয়েছে, কী কী পদক্ষেপ নিলে ‘ওয়েট-বাল্ব টেম্পারেচার’ বৃদ্ধির মাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখা সম্ভব হবে৷ বর্তমানে এই তিনটি দেশে ‘ওয়েট-বাল্ব টেম্পারেচার’-এর মাত্রা ৩১ ডিগ্রিতে পৌঁছে গেছে৷
গবেষণাটির প্রধান গবেষক যুক্তরাষ্ট্রের এমআইটি-র গবেষক এলফাতিহ এলতাহিরহে সংবাদ সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, ‘‘কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের মাধ্যমে আমরা এই বিপদ থেকে রক্ষা পেতে পারি৷ এটা এমন একটা বিষয় যা এড়িয়ে যাওয়ার বা উপেক্ষা করার উপায় নেই৷’’
এপিবি/ডিজি (এপি, এএফপি, রয়টার্স)
গ্রীষ্মের গরম যেভাবে মোকাবিলা করে তারা
হ্যাঁ, জার্মানিতেও গরম পড়ে৷ মাঝেমাঝে তা অসহনীয় পর্যায়েও পৌঁছায়৷ এই ছবিঘরে থাকছে জার্মানিতে মানুষ এবং প্রাণিরা কিভাবে গরমে মানিয়ে চলে, সে সম্পর্কে কিছু তথ্য৷ ভালো কথা, জার্মানদের বাড়িতে কিন্তু এসি নেই!
ছবি: picture alliance/dpa/P. Pleul
সাঁতারের মৌসুম
বার্লিনে ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর সারব্রুকেনে ৩৭ ডিগ্রি – জার্মানিতে এসে গেছে গ্রীষ্মকাল৷ এখানে দাবদাহের আরেক অর্থ হচ্ছে সুইমিং পুলগুলোর ভালো ব্যবসা৷ আর সেই ব্যবসা শীঘ্রই আরো ভালো হওয়ার ইঙ্গিত মিলছে৷ জার্মানির অনেক রাজ্যে গ্রীষ্মের ছুটি শুরু হচ্ছে, ফলে শিক্ষার্থীদের ভিড় আরো বাড়বে সুইমিং পুলে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S.Kahnert
হ্যাট হারাবেন না
প্রচণ্ড গরমে হিটস্ট্রোক থেকে বাঁচতে চাইলে কিছু আগাম সতর্কতা নিতে হবে আপনাকে৷ তার একটি হচ্ছে, যতটা সম্ভব ছায়ায় থাকা৷ এ ক্ষেত্রে শিশুদের এবং টাক মাথার মানুষদের জন্য অপরিহার্য হচ্ছে হ্যাট৷ বাকিদেরও এটা পরা উচিত৷ হ্যাট পরলে সানস্ট্রোক থেকে বাঁচা যায়৷ মাথায় সরাসরি সূর্যের আলো দীর্ঘসময় ধরে পড়লে এটা হতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Sauer
বয়োজ্যেষ্ঠদের ঝুঁকি
বিশেষ করে বয়োজ্যেষ্ঠদের সতর্ক থাকতে হবে৷ তাঁদের মধ্যে অনেকেরই তৃষ্ণার অনুভূতি কমে গেছে, ফলে তাঁরা পর্যাপ্ত পানি পান করেন না৷ ফলে গরম বাড়লে তাঁদের স্বাস্থ্যসংক্রান্ত নানা রকমের জটিলতা দেখা দিতে পারে৷ জার্মানিতে ২০০৩ সালের দাবদাহে সাত হাজার মানুষ মারা যায়, যাঁদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন প্রবীণ৷
ছবি: picture alliance/dpa/S. Gollnow
ঠাণ্ডা থাকুন
চলতি গ্রীষ্ম ২০০৩ সালের মতো গরম নয়৷ সেই বছর কার্লসরুয়েতে তাপমাত্রা ৪০ দশমিক দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসে গিয়ে ঠেকেছিল৷ তবে এ বছরও গরম অপ্রত্যাশিতভাবে বাড়তে পারে৷ ফলে ঠাণ্ডা থাকার যে কোনো সুযোগই আপনার নেয়া উচিত৷ নিরাপদ থাকতে গোসলের পরে কিংবা সুইমিং পুলে হাঁটাহাঁটির সময় সানস্ক্রিন ক্রিম লাগাতে ভুলবেন না৷
ছবি: Imago/epd/S. Arend
লিও গোসল করতে ভালোবাসে
প্রাণিদের মধ্যে যেগুলোর শরীরে লোমের মোটা আস্তরণ আছে, তাদের চামড়া রোদে পোড়ার ঝুঁকি নেই৷ তবে তাদেরও গরম লাগে৷ প্রাণিরা গরম থেকে বাঁচতে তাই ছায়ায় সময় কাটায় বা ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করে৷
ছবি: Getty Images/C. Sung-Jun
বরফজমাট খাবার
প্রচণ্ড গরমের সময় চিড়িয়াখানায় থাকা পশুদের বরফে জমে থাকা মাংস খেতে দেয়া হয়৷ ছবিতে একটি বাঘকে মুরগির মাংস খেতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/C. Sung-Jun
আইসক্রিম ভালোবাসে জার্মানরা
আইসক্রিমে জার্মানদের প্রিয় ফ্লেভার হচ্ছে ভ্যানিলা বা স্ট্রবেরি৷ গতবছর একজন জার্মান গড়ে প্রায় আট লিটার করে আইসক্রিম খেয়েছেন৷ আর এর অধিকাংশই খাওয়া হয়েছে গ্রীষ্মকালে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A.Rüsche
দাবানলের ঝুঁকি
গরমের ব্যাপকতা বৃদ্ধি পেলে বনরক্ষীদের চিন্তাও বেড়ে যায়৷ দীর্ঘ সময় ধরে আবহাওয়া গরম ও শুষ্ক থাকলে দাবানলের ঝুঁকি বেড়ে যায়৷ পর্তুগালে গত কয়েকদিনে বনে আগুন লাগার ঘটনায় কমপক্ষে ৬৪ ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছেন৷ জার্মানিতেও এ রকম প্রাণহানির ঝুঁকি রয়েছে৷ তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পর্তুগালের মতো আগুনের পরিধি বাড়ার সুযোগ জার্মানিতে নেই, কেননা, এখানকার বনগুলো ছোট ছোট এবং বিচ্ছিন্ন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Wolf
চা পান করুন
বাইরে যখন গরম, তখন আপনার শরীরের ভেতরেও গরমের দরকার আছে৷ হ্যাঁ, শুনতে অস্বাভাবিক শোনালেও কুসুম গরম চা আপনাকে গরমে স্বস্তি দিতে পারে৷ চা পান করলে আপনার শরীরে হালকা ঘাম হতে পারে, যা উপকারী৷
ছবি: picture alliance/WILDLIFE
পোশাক নির্বাচনও গুরুত্বপূর্ণ
চা পান করার পরও যদি আপনার গরম লাগে তাহলে বুঝতে হবে, সম্ভবত আপনি ভুল পোশাক পরেছেন৷ গ্রীষ্মের জন্য আদর্শ পোশাক হচ্ছে হালকা রংয়ের ঢিলাঢালা কাপড়৷ তখন আপনার শরীরের তাপমাত্রা বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে৷ লং স্লিভ ব্লাউজ এবং ভারী জিন্স গ্রীষ্মের জন্য আদর্শ নয়৷