আউট হয়ে গেলেন সাকিব৷ প্রথম ইনিংসের মতো এবার আর ত্রাণকর্তা হতে পারেননি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার৷ তবে মুশফিক তখনো ছিলেন নির্ভরতার প্রতীক হয়ে৷ সুবাদে শ্রীলঙ্কাকে চার উইকেটে হারিয়ে শততম টেস্টকে স্মরণীয় করে রেখেছে বাংলাদেশ৷
বিজ্ঞাপন
দু'দিন আগে, অর্থাৎ এ ম্যাচের তৃতীয় দিনে দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ দুই ক্রিকেটার সাকিব আর মুশফিকের ব্যাটে ভর করেই ম্যাচে ফিরেছিল বাংলাদেশ৷ শ্রীলঙ্কার ৩৩৮ রানের প্রথম ইনিংসটাকে চ্যালেঞ্জ জানানো সম্ভব হয়েছিল তাঁদের কারণেই৷ মুশফিক ৫২ রানে আউট হলেও সাকিব পেয়েছিলেন অষ্টম টেস্ট সেঞ্চুরি৷ তাঁর ১১৫ রানের ইনিংসের সঙ্গে এই ম্যাচেই টেস্টঅভিষিক্ত মোসাদ্দেক হোসেনের তাক লাগানো ৭৫ রানের ঝকঝকে একটি ইনিংস যোগ হওয়ায় ৪৬৭ রানে ইনিংস শেষ করে ১২৯ রানের লিডও পেয়েছিল বাংলাদেশ৷ বলা যায়, ওই ১২৯ রানই গড়ে দিয়েছে ব্যবধান৷ নইলে আবার টেলএন্ডারদের দৃঢ়তায় ঘুরে দাঁড়ানো শ্রীলঙ্কা ৩১৯ রান করেই কিন্তু জমিয়ে দিয়েছিল ম্যাচ৷ ১৯১ রানের জয়ের লক্ষ্য আপাত দৃষ্টিতে সহজ মনে হলেও, হেরাথ এবং পেরেরার ঘূর্ণি বলে জয়ের হাতছানি কিন্তু স্বাগতিকরাও দেখতে শুরু করেছিল৷
তাঁদের সে স্বপ্ন চুরমার করে শততম টেস্টে বাংলাদেশকে ঐতিহাসিক এক জয় এনে দেয়ায় সবচেয়ে বড় অবদান তামিম ইকবালের৷ বাঁ হাতি ওপেনার ১২৫ বলে ৭টি চার ও একটি ছক্কার সহায়তায় ৮২ রান করে জয়টাকে একেবারে ধরা-ছোঁয়া দূরত্বে নিয়ে এসেছিলেন৷ সাব্বিরে সঙ্গে তাঁর ১০৯ রানের জুটি গড়ে ওঠায় বাংলাদেশের স্কোর তখন ২ উইকেটে ১৩১৷
ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ
কলম্বোর পি সারা ওভালে শ্রীলঙ্কাকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ৷ নিজেদের শততম টেস্টকে স্মরণীয় করে রাখার এর চেয়ে ভালো উপায় আর কী হতে পারতো? ছবিঘরে থাকছে ঐতিহাসিক এ জয়ের কিছু মুহূর্ত এবং জয়ের নায়কদের কথা....
ছবি: Getty Images/AFP/I. S. Kodikara
মুস্তাফিজের দুর্দান্ত বোলিং
দীনেশ চান্ডিমালের সেঞ্চুরির সুবাদে প্রথম ইনিংসে খুব বড় স্কোরের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছিল শ্রীলঙ্কা৷ তা যে সম্ভব হয়নি, তার অনেকটা কৃতিত্ব বাংলাদেশের তরুণ পেসার মুস্তাফিজুর রহমানের৷ ৫০ রানে মাত্র দু'টি উইকেট নিলেও প্রতিপক্ষের মনে আতঙ্ক ছড়িয়েছিলে তিনি৷ দ্বিতিয় ইনিংসেও নিয়েছেন ৭৮ রানে ৩ উইকেট৷
ছবি: Getty Images/AFP/I. S. Kodikara
মেহেদি হাসান মিরাজও কম যাননি
তবে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল বোলার স্পিনার মেহেদিন হাসান মিরাজ৷ ৯০ রানে ৩ উইকেট নেন তিনি৷ দ্বিতীয় ইনিংসে পেয়েছেন মাত্র এক উইকেট৷ তবে সেই উইকেটটা ছিল প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান চাণ্ডিমালের৷
ছবি: Getty Images/AFP/I. S. Kodikara
সাকিবের সেঞ্চুরি
ইনিংসের শুরুতে খুব নড়বড়ে ছিল তাঁর ব্যাটিং৷ তবে উইকেটে থিতু হওয়ার পর আর ফিরে তাকাননি সাকিব আল-হাসান৷ তাঁর অসাধারণ এক সেঞ্চুরি (১১৬) বাংলাদেশকে প্রাথমিক বিপদ কাটিয়ে লিড নিতে সহায়তা করে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/E. Jayawardena
বল হাতেও উজ্জ্বল সাকিব
ব্যাটিংয়ের পর বল হাতেও সাকিব সফল৷ শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় ইনিংসে ৭৪ রানে ৪ উইকেট নিয়ে তিনিই বাংলাদেশের সফলতম বোলার৷ বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার প্রথম ইনিংসে নিয়েছিলেন দুই উইকেট৷ এমন অলরাউন্ড পারফর্ম্যান্সের জন্য সিরিজ সেরার পুরস্কারটাও তাঁর হাতেই উঠেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/I. S. Kodikara
তামিমের অনবদ্য ৮২
দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুটা কিন্তু ভালো হয়নি৷ প্রথম ইনিংসে ফিফটি করা (৬১) সৌম্য সরকার এবার (১০) ব্যর্থ৷ তারপর রানের খাতা না খুলেই ইমরুল কায়েস আউট৷ ২২ রানে দুই উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ তখন ধুঁকছে৷ সেখান থেকে যে স্মরণীয় জয়টা এলো, তার পেছনে ওপেনার তামিম ইকবালেরই সবচেয়ে বড় অবদান৷ ১২৫ বলে সাতটি চার ও একটি ছক্কার সহায়তায় ৮২ রানের অনবদ্য এক ইনিংসের জন্য ম্যান অব দ্য ম্যাচও হয়েছেন তিনি৷
ছবি: Getty Images/AFP/I. S. Kodikara
মুশফিক, সাব্বির, মোসাদ্দেকের অবদান
বাংলাদেশের শততম টেস্টে তাঁর অভিষেক৷ অভিষেক টেস্টের প্রথম ইনিংসেই ৭৫ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেন মোসাদ্দেক হোসেন৷ এছাড়া সাব্বির প্রথম ইনিংসে করেন ৪২ এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ৪১ রান৷ দলের বিপর্যয়ে হাল ধরার দায়িত্ব এবারও পালন করেছেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম৷ প্রথম ইনিংসে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ৫২ রান৷ দ্বিতীয় ইনিংসে মেহেদি হাসান মিরাজ উইনিং স্ট্রোকটা নেয়ার সময় ২২ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি৷
ছবি: Getty Images/AFP/I. S. Kodikara
6 ছবি1 | 6
একটু রয়েসয়ে খেললেই নিজের নবম টেস্ট সেঞ্চুরি আর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয়টা অনায়াসে হয়ে যায়৷ কিন্তু তামিম আবার দেখালেন, অসাধারণ সব শট খেলে জয়ের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়ে আত্মঘাতী হওয়ায় তাঁর জুড়ি মেলা ভার৷ পেরেরাকে ছক্কা মারতে গিয়ে বল তুলে দিলেন চান্ডিমালের হাতে৷ বাংলাদেশের অনেক সমর্থকের মনেই তখন ২০১২ সালের এশিয়া কাপ ফাইনালের স্মৃতি উঁকি দিতে শুরু করেছে৷ সেবার এভাবেই উমর গুলকে উইকেট উপহার দিয়ে ফিরে এসেছিলেন তামিম৷ মাত্র ২ রানে বাংলাদেশ হেরে যাওয়ায় এশিয়া কাপ জিতেছিল পাকিস্তান৷
কিন্তু এবার সেরকম হয়নি৷ সাব্বির রহমানের ৪১, সাকিব আল-হাসানের ১৫, মোসাদ্দেকের ১৩ এবং অধিনায়ক মুশফিকের হার-না-মানা ২২ রানের সুবাদে ছয় উইকেট হারিয়েই ১৯১ রান করে ফেলেছে বাংলাদেশ৷ উইনিং স্ট্রোকটা অবশ্য মুশফিক খেলতে পারেননি৷ সেই সৌভাগ্য মেহেদি হাসান মিরাজের৷ ডান হাতি এই অফব্রেক বোলিং অলরাউন্ডার শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক হেরাথের ফুলটসে সুইপ করে বল শর্ট ফাইন লেগ দিয়ে সীমানার দিকে পাঠিয়েই দৌড়ে নিয়ে নেন দুই রান৷ তারপর শুরু শততম টেস্ট জিতে সিরিজে সমতা ফেরানোর উল্লাস৷ ঐতিহাসিক এই সিরিজে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পেয়েছেন সাকিব আল-হাসান৷তবে ম্যাচ সেরা হয়েছেন তামিম ইকবাল৷