উদাহরণের যুক্তি জোরালো করতে কখনো-সখনো দরকার পড়ে ব্যতিক্রমের৷ ঠিক তেমনি ঘটনার উজ্জ্বলতা বাড়ানোর জন্য অঘটনের প্রয়োজনও রয়েছে বৈকি৷ এবারের জার্মানি সেই ধারাবাহিকতার বাহক মাত্র৷
বিজ্ঞাপন
নিজেরা জ্বলে নিঃশেষ হয়ে গিয়ে বিশ্বকাপের আলোটা ভালোভাবে জ্বেলে গেল ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা৷ বুঝিয়ে গেল, বিশ্বকাপ শুধু দু'হাত ভরে দেয় না, দশ হাতে কেড়েও নেয়!
এ এক আশ্চর্য ধারা! ১৯৯৮ বিশ্বকাপের শিরোপাজয়ী ফ্রান্স চার বছর পর প্রথম রাউন্ডের গণ্ডি পেরোতে পারে না৷ ২০০২-এর ব্রাজিল পরেরবার তা পেরেছিল বটে, সেটিকে ব্যতিক্রম প্রমাণ করেছে পরের আসরগুলো৷ ২০০৬ সালের চ্যাস্পিয়ন ইটালি যেমন ২০১০-এ পৌঁছতে পারে না নকআউট রাউন্ডে৷ একইভাবে ২০১০ আসরের দাপুটে স্পেন চার বছর পর কোমড়ভাঙা এক সাপ কেবল, যাঁদের ফোঁসফোঁসানি রয়েছে কিন্তু প্রতিপক্ষকে বিষদাঁতে কাটার সাধ্য নেই৷ প্রথম রাউন্ডে তাই বাদ পড়ে যায় ‘লা রোসা'রা৷
তাই বলে জার্মানিও! ইওয়াখিম ল্যোভের এই দলও!
২০১৪ আসরে শুধু বিশ্বকাপ জয়ের জন্য না, সেমিফাইনালে ব্রাজিলকে ৭-১ গোলে হারানোর কারণেও ফুটবল ইতিহাসে অমরত্ব দলটির৷ তারা কিনা ২০১৮-তে এসে মেক্সিকো, সুইডেন, দক্ষিণ কোরিয়ার সমন্বয়ে গড়া গ্রুপ থেকে নকআউট রাউন্ডে উঠতে পারে না! চতুষ্টয়ের মধ্যে হয় চতুর্থ! এবারের সর্বনাশ চূড়ান্ত হবার পরের দিন জার্মান দৈনিক ‘বিল্ড'-এর সংবাদ শিরোনাম তাই কী যথার্থই না মনে হয়! গেলবারের ৭-১ গোলের জয়ের পর উল্লাসের ছবির সঙ্গে যে শিরোনাম দিয়েছিল, এবার দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে ০-২ গোলের হারের ছবি দিয়েও একই শিরোনাম, ‘ওনে ভর্টে!', অর্থাত্, বাকরুদ্ধ৷
সত্যিই তাই৷ অবিশ্বাস্য বললেও কম বলা হয়! গেলবারেরটি যেমন, এবারও তেমন৷
বিশ্বকাপে বেশি গোল করেছেন যাঁরা
বিশ্বকাপ শুরুর আগে বেশি আলোচনায় ছিলেন মেসি, রোনাল্ডো, নেইমাররা৷ তারকাদ্যুতিতে যে অনেক এগিয়ে তাঁরা! কিন্তু মাঠের পারফরম্যান্সে তাঁরা থেকে গেলেন নিষ্প্রভ৷ সেখানে সবচেয়ে উজ্জ্বল হ্যারি কেন৷ তাঁর পরে কারা?
ছবি: picture-alliance/V.R.Caivano
হ্যারি কেন, ৬ গোল
বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ গোলদাতাকে ‘গোল্ডেন বুট’ পুরস্কার দেয়ার চল শুরু ১৯৮২-র আসর থেকে৷ সেবার সবাইকে অবাক করে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ইটালি৷ আরো অবাক করেছিলেন পাওলো রসি৷ আসর শুরুর আগে যাঁকে কেউ প্রায় চিনতোই না, সেই রসিই পুরস্কারটি জিতেছিলেন প্লাতিনি, জিকো, মারাদোনাদের পেছনে ফেলে৷ এবারের আসরে পানামার বিপক্ষে একটি হ্যাটট্রিকসহ মোট ৬ গোল করায় ‘গোল্ডেন বুট’ জিতে নিলেন ইংল্যান্ডের হ্যারি কেন৷
ছবি: Reuters/C. Barria
গ্রিসমান, ৪ গোল
২০ বছর পর ফ্রান্স আবার চ্যাম্পিয়ন৷ দলকে চ্যাম্পিয়ন করায় গ্রিসমানের অবদান ৪ গোল৷
ছবি: Reuters/A. Vaganov
কিলিয়ান এমবাপে, ৪ গোল
আর্জেন্টিনাকে বলতে গেলে একাই বিদায় করেছেন তিনি৷ ১৯ বছর বয়সি এ ফরোয়ার্ড নিজে করেছেন দুই গোল আর পেনাল্টি আদায় করে আরেকটি গোলেও রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান৷ ফাইনাল শেষে তাঁর নামের
পাশে লেখা চার গোল৷ এমবাপের মাঝে আগামীর সুপারস্টারকে দেখতে শুরু করেছেন অনেকেই৷
ছবি: Reuters/D. Martinez
রোমেলু লুকাকু, ৪ গোল
বেলজিয়ামের ফরোয়ার্ড লুকাকুও কম যান না৷ ইংল্যান্ডের হয়ে প্রথম দুই ম্যাচে ১৫৩ মিনিট খেলে ৫ গোল করেছেন হ্যারি কেন৷ লুকাকু খেলেছেন তার চেয়েও কম, মাত্র ১৪৯ মিনিট৷ ওই সময়েই আদায় করে নিয়েছেন ৪ গোল৷
ছবি: imago/Photonews/Panoramic
ডেনিস চেরিশেভ, ৪ গোল
রাশিয়ার এই মিডফিল্ডারও করেছেন ৪ গোল৷ তবে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে করা গোলটিই ছিল এ আসরে তাঁর শেষ গোল৷ কারণ, সেই ম্যাচ টাইব্রেকারে হেরে যাওয়ায় তাঁর দেশ রাশিয়ার জন্য শেষ হয়ে গেছে বিশ্বকাপ অভিযান৷
ছবি: Reuters/F. Bensch
ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো, ৪ গোল
পর্তুগালের প্রথম তিন ম্যাচ শেষে ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর নামের পাশেও লেখা হয়ে যায় ৪ গোল৷ তারপর অবশ্য আর গোলের দেখা পাননি৷ তাঁর বিশ্বকাপ জয়ের বাসনা অপূর্ণ রেখেই উরুগুয়ের কাছে হেরে দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে বিদায় নিয়েছে পর্তুগাল৷
ছবি: Reuters/M. Sezer
এডেন হ্যাজার্ড, ৩ গোল
বেলজিয়ামের হ্যাজার্ড ৭ ম্যাচে করেছেন ৩ গোল৷ দলের সাফল্যে তাঁর অবদান অবশ্য তার চেয়ে অনেক বেশি৷ মধ্যমাঠে দলের মধ্যমণিই ছিলেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/V.R.Caivano
মারিও মানসুকিচ, ৩ গোল
ক্রোয়েশিয়ার এই ফরোয়ার্ডও সাত ম্যাচ খেলে করেছেন ৩ গোল৷
ছবি: picture-alliance/GES/M. Gilliar
ইভান পেরিসিচ, ৩ গোল
মদ্রিচ, মানসুকিচের মতো ক্রোয়েশিয়ার ইভান পেরিসিচের খেলাও এবার সবার নজর কেড়েছে৷ ৭ ম্যাচে তিনিও করেছেন ৩ গোল৷
ছবি: Reuters/D. Staples
এডিনসন কাভানি, ৩ গোল
প্রথম রাউন্ডে একেবারেই নিষ্প্রভ ছিলেন তিনি৷ তিন ম্যাচে করেছিলেন মাত্র ১ গোল৷ কিন্তু ঠিক সময়েই জ্বলে উঠে উরুগুয়েকে তুলে দিয়েছেন কোয়ার্টার ফাইনালে৷ কাভানির জোড়া গোলের কারণেই রোনাল্ডোর আশাভঙ্গ হয়েছে, বিদায় নিয়েছে পর্তুগাল৷
ছবি: Reuters/T. Hanai
আর্টেম জিয়ুবা, ৩ গোল
রাশিয়ার এই ফরোয়ার্ডে প্রথম রাউন্ড শেষ করেছিলেন দুই গোল নিয়ে৷ কিন্তু দ্বিতীয় রাউন্ডে স্পেনকে বিদায় করা ম্যাচে এক গোল করায় তিনিও উঠে এসেছে স্বদেশী চেরিশেভের পাশে৷
ছবি: Reuters/F. Bensch
ইয়েরি মিনা, ৩ গোল
খামেস রদ্রিগেস দলে থাকতেও এবার কলম্বিয়ার ইয়েরি মিনা নজর কেড়েছেন৷ দ্বিতীয় রাউন্ডে ইনজুরির জন্য খেলতে পারেননি রদ্রিগেস৷ মিনার গোলেই ম্যাচে সমতা ফিরিয়েছিল কলম্বিয়া৷ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেই ম্যাচ টাইব্রেকারে হেরে যাওয়ায় অবশ্য সেখানেই শেষ হয়ে যায় কলম্বিয়া আর মিনার ২০১৮-র বিশ্বকাপ মিশন৷
ছবি: Reuters/C. Garcia Rawlins
দিয়েগো কস্তা, ৩ গোল
পর্তুগালের বিপক্ষে তিনি যেন রোনাল্ডোর সঙ্গে গোল করার প্রতিযোগিতায় নেমেছিলেন৷ তবে কস্তা দুই গোল করে থামলেও রোনাল্ডো থেমেছেন শেষ মুহূর্তের গোলে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করে৷ প্রথম রাউন্ড শেষ করেছিলেন তিন ম্যাচে তিন গোল নিয়ে৷ তারপরই স্পেনের বিদায় এবং কস্তার জন্যও বিশ্বকাপ আপাতত শেষ৷
ছবি: Reuters/L. Nicholson
জন স্টোনস, ২ গোল
এই তালিকায় জন স্টোনসের নামটা কিন্তু বিস্ময় জাগানোর মতো৷ ডিফেন্ডার হয়েও ইতিমধ্যে করে ফেলেছেন ২ গোল৷ পানামাকে ৬-১ গোলে হারিয়ে এ আসরে প্রথম রাউন্ডে সবচেয়ে বড় জয়ের রেকর্ডটি গড়েছে ইংল্যান্ড৷ সেই ম্যাচেই দুই গোল করেছিলেন স্টোনস৷
ছবি: Reuters/M. Childs
ফিলিপে কুটিনিয়ো, ২ গোল
নেইমার যখন গোলের দেখা পাচ্ছেন না, তখনই ত্রাণকর্তার ভূমিকায় অবতীর্ন হয়েছিলেন কুটিনিয়ো৷ প্রথম ম্যাচে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ব্রাজিলের একমাত্র গোলটি এসেছিল তাঁর পা থেকেই৷ কোস্টারিকা ম্যাচেরও গোল-বন্ধ্যাত্ব ঘুচিয়েছিলেন প্রথম পর্বের পারফর্ম্যান্সে নেইমারসহ অনেক বড় তারকাকেই ছাড়িয়ে যাওয়া এই মিডফিল্ডার৷
ছবি: Reuters/D. Staples
মোহামেদ সালা, ২ গোল
ভক্তদের অনেক আশা ছিল তাঁর কাছে৷ কিন্তু ইনজুরির কারণে বেশি কিছু করতে পারেননি মিশরের মোহামেদ সালা৷ দুই ম্যাচ খেলে করেছেন দুই গোল৷
ছবি: Reuters/H. Romero
আরো যাঁদের ২ গোল
ব্রাজিলের নেইমার, জাপানের তাকাশি ইনুই, নাইজেরিয়ার আহমেদ মুসা, ক্রোয়েশিয়ার লুকা মডরিচ, উরুগুয়ের লুই সুয়ারেজ, সুইডেনের আন্দ্রেয়াস গ্রাঙ্কভিস্ট, আর্জেন্টিনার আগুয়েরো, দক্ষিণ কোরিয়ার সন হিউংমিন, টিউনিশিয়ার খাজরি আর অস্ট্রেলিয়ার জেডিনারও করেছেন দু’টি করে গোল৷
ছবি: Reuters/C.G. Rawlins
পারলেন না মেসি
এবারও বিশ্বকাপ জেতা হলোনা লিওনেল মেসির৷ দ্বিতীয় রাউন্ডেই আর্জেন্টিনার ৪-৩ গোলে হেরে গেছে ফ্রান্সের কাছে৷ মেসির বিশ্বকাপ মিশনও শেষ হয়েছে মাত্র ১ গোল নিয়ে!
ছবি: Getty Images/G. Rossi
18 ছবি1 | 18
১৭ জুন মস্কোর লুজনিকি স্টেডিয়ামে নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলে জার্মানি৷ মেক্সিকোর বিপক্ষে৷ মিডিয়া ট্রিবিউনে বসে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের হারের সাক্ষী ছিলাম সেদিন৷ এরপর উপস্থিত জার্মান কোচ ল্যোভের সংবাদ সম্মেলনেও৷ নিজ দলের ভুলগুলো মেনে নেন অকপটে৷ কিন্তু গেল চার বিশ্বকাপের মধ্যে তিনবার ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের প্রথম রাউন্ডে বিদায়ের ইতিহাস মনে করিয়ে যখনই এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, তাচ্ছিল্যের হাসিতে তা উড়িয়ে দেন ল্যোভ, ‘‘ওদের বেলায় কেন অমন হয়েছে, আমি জানি না৷ কিন্তু নিশ্চিত থাকতে পারেন, আমাদের তা হবে না৷ দ্বিতীয় রাউন্ডে যাবোই৷'' প্রথাগত জার্মান বিশ্বাস৷ সেই চেনা আত্মবিশ্বাস, সেই জানা অহংকার৷ পরের খেলায় সুইডেনকে শেষ মুহূর্তের গোলে হারানোর পরও এর প্রতিফলন৷ জেরোম বোয়াটেংয়ের লাল কার্ডে ১০ জনের দলে পরিণত হয়েও টনি ক্রুসের গোলে জেতে তারা৷ এরপর এই মিডফিল্ডারের আস্ফালন, ‘‘জার্মানি যেমনভাবে খেলেছে, তেমন খেলার বুকের পাটা বিশ্বের বেশি দলের নেই৷''
দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে হারের পর সেটি শোনায় ক্ষয়িষ্ণু সাম্রাজ্যের রাজা-মন্ত্রীদের ফাঁকা বুলির মতো৷ ওই সর্বনাশের গান ছিল ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার খেলাতেও৷ বিশেষত আর্জেন্টিনার৷ দিনকয়েক আগে ৩১তম জন্মদিন পালন করা লিওনেল মেসির জন্য বিশ্বকাপ জয়ের শেষ সুযোগ হিসেবে ধরা হচ্ছে এই টুর্নামেন্টকে৷ সেখানে কিনা আইসল্যান্ডের সঙ্গে ড্র দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করে আলবিসেলেস্তেরা! সঙ্গে আবার স্বয়ং মেসির পেনাল্টি মিস৷ পরের খেলায় তো ক্রোয়েশিয়ার কাছে ০-৩ গোলে হেরেই যায়৷ গভীর গিরিখাতের কিনারায় এসে দাঁড়ায় আর্জেন্টিনা৷ নাইজেরিয়ার বিপক্ষে শেষ ম্যাচ জিততেই হবে৷ ১৯৮২ সাল থেকে বিশ্বকাপ কাভার করা আর্জেন্টাইন সাংবাদিক সের্হিয়ো লেভেনোস্কিকে খেলার আগের দিন মিডিয়া সেন্টারে খুব আত্মবিশ্বাসী দেখায়নি, ‘‘এবার তো আমরা খুব ভালো খেলছি না৷ দেখা যাক, মেসি যদি ভালো খেলে, তাহলেই আমাদের সুযোগ আছে৷''
নাইজেরিয়ার বিপক্ষে মেসি করেছেন চোখ ধাঁধানো এক গোল৷ সেটিও আর্জেন্টিনাকে দ্বিতীয় রাউন্ডে তোলার জন্য যথেষ্ট ছিল না৷ নির্ধারিত সময়ের মিনিট পাঁচেক যখন বাকি, তখনো যে খেলা ১-১ সমতায়! সময়ের দাবিতে অপ্রত্যাশিত নায়ক হয়ে আবির্ভাব তখন মার্কোস রোহোর৷ এই ডিফেন্ডারের গোলে এ যাত্রা রক্ষা হয় আর্জেন্টিনার; ওঠে দ্বিতীয় রাউন্ডে৷
পরদিনই খানিকটা অস্বস্তির খচখচানি দেখেছি ব্রাজিল সমর্থকদের মাঝে৷ মস্কোর স্পার্তাক স্টেডিয়ামে৷ আর্জেন্টিনার মতো অত হতশ্রী অবস্থা তাঁদের নয়৷ তবু প্রথম দুই খেলায় চার পয়েন্ট পাবার পর শেষ ম্যাচে সার্বিয়ার কাছে হেরে গেলে বিশ্বকাপ থেকে ব্রাজিলও বিদায় হতো৷ ফোলহা সাও পাওলোর সাংবাদিক জোকা কাফুরি এই ম্যাচের আগে আশার কথাই শুনিয়েছেন, সঙ্গে জার্মানির বিদায়ে হতাশাও, ‘‘খুব ভালো বিশ্বকাপ হচ্ছে৷ রাশিয়া খুব ভালো আয়োজন করছে৷ আমি আশা করি, ব্রাজিল শিরোপা জিতবে৷ তবে তা কঠিন৷ নেইমার দুষ্টু ছেলে৷ আশা করছি, আজ ও ভালো খেলবে৷ তবে জার্মানির বিদায়টা খুব বড় চমক৷ আমরা আশা করছিলাম ৭-১ গোলের প্রতিশোধ নেবো৷ সেটি হলো না৷ ওরা তো দ্বিতীয় রাউন্ডেই উঠতে পারলো না৷''
জার্মানি না পারলেও ব্রাজিল পেরেছে৷ আদেনর বাক্কি তিতের দল সাম্বার সৌরভ ছড়ানো ফুটবলে জিতেছে ২-০ গোলে৷ আর টুর্নামেন্টের তিন ম্যাচে সেলেসাওদের ধারাবাহিক ক্রমোন্নতি তাদের শিরোপা জয়ের অন্যতম ফেভারিটের আসনে বসিয়ে দিয়েছে৷ ব্রাজিলিয়ান দৈনিক ‘জোয়াও মালদো'র সাংবাদিক মাউরিও ফরসিওকা জাতীয় দল নিয়ে আশাবাদী, ‘‘আজ বিশ্বকাপে সেরা ফুটবল খেলেছে ব্রাজিল৷ তিতে প্রথম থেকেই জানতেন, কী করতে চাইছেন৷ ধৈর্য ধরে খেলিয়েছেন দলকে৷ আমরা চোখ ধাঁধানো ম্যাচ হয়তো খেলিনি, তবে খুব ভালো খেলেছি৷'' টুর্নামেন্ট জয়ে আরো কিছু প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা বলেছেন তিনি, ‘‘ফ্রান্স, বেলজিয়াম ভালো দল৷ আর্জেন্টিনাও খুব শক্তিশালী৷ ওদের মেসি আছে৷ ওঁর যদি খুব ভালো দিন যায়, তাহলে আর্জেন্টিনাকে আটকানো কঠিন৷''
রাশিয়া বিশ্বকাপের সব প্রথম
রাশিয়া বিশ্বকাপে ফেবারিটদের সাথে সমানে পাল্লা দিচ্ছে তথাকথিত ছোট দলগুলিও৷ এই ফাঁকে চলুন দেখে নেয়া যাক এই বিশ্বকাপের কিছু প্রথম...
ছবি: Getty Images/C. Rose
প্রথম গোল
সৌদি আরবের বিপক্ষে উদ্বোধনী ম্যাচে প্রথম গোল দেন রাশিয়ার ইউরি গাজিনস্কি৷ সেই সূত্রে এটি রাশিয়া বিশ্বকাপেরও প্রথম গোল৷ এরপর অবশ্য সৌদি আরবকে আরো চার চারটি গোল হজম করতে হয়৷ ফলে বিশ্বকাপের প্রথম জয়ও উঠেছে রাশিয়ার ঘরেই৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/D. Bandic
প্রথম আত্মঘাতি গোল
মরোক্কোর বিরুদ্ধে ইরান নিজের চেষ্টায় নয়, বরং খেলার ইনজুরি টাইমের শেষ মুহূর্তে পেয়েছে আত্মঘাতী গোল৷ মরোক্কোর আজিজ বুহাদ্দুজার এই গোলে বিশ্বকাপের ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো একটি ম্যাচ জয় করতে সক্ষম হয় ইরান৷
ছবি: Reuters/D. Martinez
প্রথম হ্যাটট্রিক
বিশ্বকাপের প্রথম বড় ম্যাচে মুখোমুখি হয় স্পেন-পর্তুগাল৷ গোলের বন্যায় ভেসে যায় ম্যাচটি৷ দুই দল মিলে ৬ গোল হলেও, জয় নিয়ে ঘরে ফিরতে পারেনি কেউই৷ তবে পর্তুগালের হয় তিনটি গোলই করেছেন সেনসেশনাল ফুটবলার ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো৷ এটিই রাশিয়া বিশ্বকাপের প্রথম হ্যাটট্রিক৷
ছবি: Reuters/M. Sezer
প্রথম হলুদ কার্ড
এই রেকর্ডও রাশিয়ার দখলেই৷ সৌদি আরবের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেই ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেন রাশিয়ার আলেক্সান্ডার গোলোভিন৷
ছবি: Reuters/C. Recine
প্রথম লাল কার্ড
জাপানের বিপক্ষে ম্যাচে হার্ড ট্যাকল করায় বিশ্বকাপের প্রথম লাল কার্ড দেখেন কলম্বিয়ার কার্লোস সানচেজ৷ শুধু তাই না, তার ফাউলের কারণে একটি পেনাল্টিও পায় জাপান৷ ম্যাচটি ২-১ গোলে জিতেও নেয় জাপান৷
ছবি: Reuters/D. Sagolj
প্রথম ভিএআর
এই বিশ্বকাপেই প্রথম চালু হয়েছে ভার্চুয়াল অ্যাসিসট্যান্ট রেফারি বা ভিএআর৷ ফ্রান্স-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে জশুয়া রিডসনের ট্যাকলে অস্ট্রেলিয়ার ডিবক্সে পড়ে যান ফ্রান্সের অ্যান্টনিও গ্রিজমান৷ উরুগুয়ের রেফারি আন্দ্রেস কুনহা প্রথমে খেলা চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিলেও পরবর্তীতে প্রথমবারের মতো ব্যবহার করেন ভিএআর, সিদ্ধান্ত পালটে ঘোষণা দেন পেনাল্টির৷ ম্যাচে ২-১ গোলে জয় পায় ফ্রান্স৷
ছবি: Reuters/S. Perez
প্রথম অঘটন
মোস্ট ফেবারিট আর্জেন্টিনাকে জয় নিতে দেয়নি আইসল্যান্ড৷ রুখে দিয়েছে ১-১ গোলে৷ হেক্সা মিশনে আসা ব্রাজিলকেও সুইজারল্যান্ড আটকে ফেলে ১-১ গোলে৷ কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন জার্মানির৷ মেক্সিকোর দারুণ গতির সামনে ১-০ গোলে হার মানতে হয় জার্মানিকে৷
ছবি: Reuters/C. Recine
7 ছবি1 | 7
ফ্রান্সও খেলছে ফেভারিটের মতো৷ দ্বিতীয় রাউন্ডেই অবশ্য আর্জেন্টিনার মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাদের৷ টুর্নামেন্ট শুরুর দুই দিন আগে কোচ লোপেতেগিকে বরখাস্তের ধাক্কা সামলে স্পেন হয়েছে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন৷ ইংল্যান্ডের শুরুটাও আশা জাগানিয়া৷ বেলজিয়ামেরও৷ আর বছর দুয়েক আগে ইউরো চ্যাম্পিয়ন হয়ে সবাইকে চমকে দেয়া ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর পর্তুগালও বিশ্বকাপ দৌড়ে রয়েছে ভালোমতোই৷
আর রয়েছে স্বাগতিক রাশিয়া৷ মাঠের ফুটবলে এ দলটির সম্ভাবনা গোনায় ধরেনি কেউ; আয়োজনের দিক দিয়েই বরং চ্যাম্পিয়ন হতে চেয়েছিল তারা৷ সেই আয়োজন নিয়ে বড় ধরনের অভিযোগ ওঠেনি এখনো৷ আর মাঠের ফুটবলেও তো প্রথম দুই ম্যাচে সৌদি আরব ও মিশরকে হারিয়ে নকআউট পর্ব নিশ্চিত করেছে তারা৷
এছাড়া প্রথম রাউন্ডে আলোচনার বড় জায়গাজুড়ে ছিল ভিএআর প্রযুক্তি৷ অনেক অনেক পেনাল্টি৷ অনেকগুলো ম্যাচের শেষ মুহূর্তের রোমাঞ্চকর নিষ্পত্তি৷
বিশ্বকাপ তাই নিজের মতো করেই রং ছড়াচ্ছে ক্রমশ৷ নিজস্ব নিয়ম মতোই বিকশিত হচ্ছে শতদলে৷ তাতে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন জার্মানির রং মুছে গেলেইবা কী! কালো-লাল-হলুদ পতাকার পাঁপড়ি ঝরে গেলেইবা কী!