এখনো পর্যন্ত ৩৯ হাজার মানুষের প্রাণ গেছে এই ভূমিকম্পে। জাতিসংঘের আশঙ্কা এই সংখ্যা ৫০ হাজারে পৌঁছাবে।
বিজ্ঞাপন
গত এক দশকে এত বড় দুর্যোগ পৃথিবী দেখেনি। মঙ্গলবার এই দাবি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও)। রীতিমতো বিবৃতি দিয়ে তারা জানিয়েছে, ''এই দুর্যোগের উৎসে এখনো পৌঁছাতে পারিনি আমরা। সব মিলিয়ে ঠিক কতটা ক্ষতি হয়েছে, তা-ও এখনো অস্পষ্ট। এ এক ভয়াবহ অবস্থা।''
এদিকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান মঙ্গলবার জানিয়েছেন, তার দেশে মৃতের সংখ্যা ৩৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। সব মিলিয়ে তুরস্কে মৃতের সংখ্যা এখন ৩৫ হাজার ৪১৮। সিরিয়ায় মৃতের সংখ্যা এক হাজার ৪১৪। যদিও সিরিয়ায় উদ্ধারকাজ খুবই ধীরগতিতে হচ্ছে। সিরিয়ায় উদ্ধারকারী একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন অবশ্য দাবি করেছে, সেখানে মৃতের সংখ্যা দুই হাজার ছাড়িয়ে গেছে। তবে সরকার এখনো সেই নম্বর ঘোষণা করেনি। তুরস্কের উদ্ধারকারীরা জানিয়েছেন, এখনো প্রাণের খোঁজ চালাচ্ছেন তারা। তবে ঘটনার আটদিন পার হয়ে যাওয়ার পর জীবিত ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া মুশকিল। সোম এবং মঙ্গলবারও অবশ্য কিছু জীবিত ব্যক্তিকে খুঁজে পাওয়া গেছিল।
ভূমিকম্পে বেঁচে যাওয়ারা এখন প্রচণ্ড শীত ও ক্ষুধার কবলে
তুরস্ক ও সিরিয়ায় শতাব্দীর অন্যতম ভয়াবহ ভূমিকম্পে বেঁচে যাওয়ারা ভয়ঙ্কর দিন পার করছেন৷ আশ্রয় ও স্বজন হারানো হাজারো মানুষের জন্য রাস্তা আর, অস্থায়ী শিবিরই হয়ে উঠেছে বাড়ি-ঘর৷
ছবি: Suhaib Salem/REUTERS
খোলা আকাশের নীচে
ভূমিকম্পের প্রায় সপ্তাহ পেরুলেও ধ্বংসস্তূপ সরানোর এখনও কোনো কুলকিনারা করা যায়নি৷ এখনও বহু মানুষ আটকা পড়ে আছেন কংক্রিটের নীচে৷ স্বজনরা অপেক্ষায় আছেন প্রিয়জনের খবর জানতে৷ তুরস্কের কাহরামানমারাসে ধ্বসে পড়া ভবনের পাশে তেমনই কয়েকজনকে দেখা যাচ্ছে অপেক্ষার প্রহর গুণতে৷
ছবি: Suhaib Salem/REUTERS
তাঁবুতে আশ্রয়
ভূমিকম্পে আশ্রয় হারানো মানুষদের জন্য কোথাও কোথাও আশ্রয় শিবির খোলা হয়েছে৷ তুরস্কের গাজিয়ানটেপে একটি ফুটবল খেলার মাঠে তাঁবু টানিয়ে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে৷
ছবি: Irakli Gedenidze/REUTERS
তীব্র ঠান্ডা
এর মধ্যে বইছে শৈত্য প্রবাহও৷ হিমাঙ্কের নীচে নেমে যাওয়া তাপমাত্রায় রাতারাতি আশ্রয়হীন হয়ে পড়া মানুষেরা পড়েছেন ভয়ানক বিপাকে৷
ব্যক্তি বা সংগঠনের উদ্যোগে আশ্রয়হীন মানুষদের জন্য খাওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে৷ তুরস্কের কাহরামানমারাসে এক ব্যক্তিকে খাবার বিতরণ করতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Suhaib Salem/REUTERS
যাওয়ার জায়গা নেই
চারদিকে ধ্বংসযজ্ঞের চিহ্ন৷ সন্তানকে নিয়ে কোথায় যাবেন জানা নেই এই নারীর৷ ছবিটি তুরস্কের হাতায় তোলা৷
ছবি: Umit Bektas/REUTERS
দুঃসহ পরিবেশ
বিভিন্ন স্থানে গড়ে তোলা অস্থায়ী ক্যাম্পগুলোতে যথেষ্ট খাবার, ঔষধ, এমনকি টয়লেটের ব্যবস্থাও নেই৷ আলিহান কাভাসোগলু নামের এক নারী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা আক্রান্ত হয়ে পড়ছি৷ টয়লেটের কোনো ব্যবস্থা নেই৷ সবাইকে বাইরেই কাজ সারতে হয়৷ চারদিকে এত দুর্গন্ধ যে রাতে আমরা ঘুমাতেও পারি না৷’’
ছবি: Benoit Tessier/REUTERS
চলছে উদ্ধারকাজ
ভূমিকম্পের প্রায় এক সপ্তাহ পরও সৌভাগ্যবান অনেককে জীবিত উদ্ধার সম্ভব হচ্ছে৷ স্বজন হারানোরা এখনও তাই আশায় বুক বেঁধে আছেন৷ রাতেও ধ্বংস্তূপের পাশে আগুন জ্বালিয়ে তারা অপেক্ষা করছেন৷
ছবি: Suhaib Salem/REUTERS
হতাশা
সময় গড়ানোর সাথে সাথে অবশ্য বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে এসেছে৷ শেষ পর্যন্ত স্বজনদের দেখা পাবেন কিনা জানেন না আপনজনেরা৷ ক্ষুধা, ক্লান্তি, অনিশ্চয়তা সব মিলিয়ে ভয়াবহ হতাশা গ্রাস করেছে বেঁচে যাওয়া মানুষদের৷
ছবি: Kyodo/picture alliance
9 ছবি1 | 9
এর্দোয়ান মঙ্গলবার এই ভূমিকম্পকে পরমাণু বোমা বিস্ফোরণের সঙ্গে তুলনা করেছেন। তার কথায়, পরমাণু বিস্ফোরণ হলে এমন ভয়াবহতা দেখা যায়। এদিন তিনি জানিয়েছেন, সব মিলিয়ে দুই দশমিক দুই মিলিয়ন মানুষ গৃহহীন। হাজার হাজার বাড়ি বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ডিডাব্লিউয়ের রিপোর্টার ঘটনাস্থলে পৌঁছে জানিয়েছেন, শহরের ভিতর একটি বাড়ি সোজা দাঁড়িয়ে নেই। ভূমিকম্পে সমস্ত ধসে পড়েছে। কার্যত এক মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে দক্ষিণ তুরস্কের বিপর্যস্ত অঞ্চল।
আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি আরো বেশি সাহায্যের প্রয়োজনের কথা বলেছেন। বিভিন্ন দেশ থেকে সাহায্য এবং উদ্ধারকারী দল ইতিমধ্যেই তুরস্কে গিয়ে পৌঁছেছে।