গুজব ও ভুয়া তথ্য ছড়ানোর অভিযোগে অসংখ্য অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলেছে ফেসবুক ও টুইটার৷ বেশিরভাগ অ্যাকাউন্টই রাশিয়া ও ইরানের৷ অভিযোগ রয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের অন্তবর্তীকালীন নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে এরা কাজ করছিল৷
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার ফেসবুক ঘোষণা দিয়েছে যে, এটি সাড়ে ছয়শ' পেজ, গ্রুপ ও অ্যাকাউন্ট মুছে দিয়েছে৷ কারণ হিসেবে বলা হয়েছে যে, এদের আচরণ বিশ্বাসযোগ্য নয়৷ তাদের দেয়া তথ্যমতে, এসব অ্যাকাউন্ট বা পেজের অনেকগুলোর সঙ্গেই রাশিয়ার সামরিক গোয়েন্দাদের যোগসাজশ আছে৷ এছাড়া ইরান থেকেও বেশ কিছু অ্যাকাউন্ট পরিচালিত হচ্ছে যাদের আচরণ সন্দেহজনক৷
তবে রাশিয়া ও ইরানের অ্যাকাউন্টগুলো যোগসাজশে কিছু করছে কি তা নিশ্চিত করতে পারেনি ফেসবুক কর্তৃপক্ষ৷ তবে তাদের কৌশল একইরকম বলে জানিয়েছেন স্বয়ং ফেসবুক প্রধান নির্বাহী মার্ক সাকারবার্গ৷
‘‘এই তদন্তে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি,'' বলেন তিনি৷
এদিকে একইদিন টুইটারও ঘোষণা দিয়েছে, তারা ২৮৪টি অ্যাকাউন্ট বাতিল করেছে৷ এগুলোর বেশিরভাগই ইরান থেকে পরিচালিত হচ্ছিল বলে জানায় তারা৷ তারা একযোগে তথ্যবিভ্রাট করছে বলে অভিযোগ তাদের৷
সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান ফায়ারআই ফেসবুক-টুইটারকে তাদের প্ল্যাটফর্মে ইরানের তৎপরতা সম্পর্কে হুঁশিয়ার করে দিয়েছে৷
‘‘তাদের তৎপরতা শুধু যে আসছে যুক্তরাষ্ট্রের অন্তবর্তীকালীন নির্বাচনেই প্রভাব তৈরির জন্য করা হয়েছে, তা নয়, বরং তা মার্কিন জনগণ ও রাজনীতিকেও ছাড়িয়ে আরো গভীরে গিয়েছে৷'' বিবৃতি দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি৷নিজেদর রাজনৈতিক অভিসন্ধি বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন ভুয়া সাইট ও সামাজিক গণমাধ্যম ব্যবহার করে ইরান এসব ভুয়া তথ্য যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও যুক্তরাজ্য, মধ্যপ্রাচ্য ও ল্যাটিন অ্যামেরিকার জনগণকে উদ্দেশ্য করে প্রচার করে বলে দাবি করেছে ফায়ারআই৷
How to spot fake news
01:41
ফেসবুকের তথ্যমতে, যেসব গ্রুপকে তারা চিহ্নিত করেছে তার একটি ‘লিবার্টি ফ্রন্ট প্রেস'৷ এর সাথে সম্পৃক্ত ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে প্রায় ১ লাখ ৫৫ হাজার অ্যাকাউন্ট আছে৷ এদের ওয়েবসাইট রেজিস্ট্রেশন, আইপি অ্যাড্রেস ও অ্যাডমিনিস্ট্রেটর অ্যাকাউন্টগুলো নিরীক্ষা করে দেখা গেছে, এদের সঙ্গে ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের যোগাযোগ আছে৷
ফায়ারআইয়ের মতে, ইরান থেকে ‘সৌদিবিরোধী, ইসরায়েল বিরোধী ও ফিলিস্তিনের পক্ষে' প্রপাগান্ডা ছড়ানো হয়৷ফেসবুক ও টুইটার তাদের প্ল্যাটফর্মগুলোতে ভুয়া তথ্য ছড়ানো বন্ধে তৎপরতা ব্যাপক বাড়িয়েছে৷ বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সংসদ সদস্যদের একাংশের অন্তবর্তীকালীন নির্বাচনকে সামনে রেখে এই তৎপরতা অনেক বেড়েছে৷
জেডএ/এসিবি (এপি, রয়টার্স)
ভাইরাল হওয়া কিছু ভুয়া খবর
আজকাল সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অনেক তাজা খবর শেয়ার করা হয়৷ কিন্তু সেই খবরগুলোতে অনেক ভুয়া খবরও থাকে৷ অনেক সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা বিভ্রান্তও হন৷ ছবিঘরে থাকছে ২০১৬ সালে সবচেয়ে বেশি ছড়ানো কয়েকটি ভুয়া খবর৷
একটি ফেসবুক লাইভে দেখাচ্ছিল আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র থেকে নভোচারীদের স্পেসওয়াক করার দৃশ্য৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় তা ভাইরাল হয়ে যায়৷ ইউএনআইএলএডি, ভাইরাল ইউএসএ এবং ইন্টারেসটিনেট- এটি পোস্ট করার পর ফেসবুকে বিপুল পরিমাণ লাইক ও শেয়ার হয়৷ কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, ফুটেজের কোথাও নাসা বা ফেসবুকের লাইভ স্ট্রিম কথাটির উল্লেখ ছিল না৷ পরে নাসা’র এক মুখপাত্র জানান, ভিডিওটি ২০১৩ সালে রুশ নভোচারীদের ধারণ করা ভিডিও৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Nasa
করোনা বিয়ারের প্রতিষ্ঠাতার উইল
২০১৬ সালের অন্যতম ভাইরাল খবর এটি-করোনা বিয়ার-এর প্রতিষ্ঠাতা আন্তোনিও ফার্নান্দেজ মৃত্যুর আগে তাঁর জন্মভূমি স্পেনের একটি গ্রামের ৮০টি পরিবারের মধ্যে ২০ কোটি ইউরো দান করার উইল করে গেছেন৷ ডেইলি মেইল প্রথমে খবরটি প্রকাশ করে স্থানীয় পত্রিকার বরাত দিয়ে৷ পরে আরটি, দ্য ইন্ডেপেন্ডেন্ট, দ্য মিররসহ বেশ কয়েকটি সংবাদপত্রও তা প্রকাশ করে৷ পরে ফার্নান্দেজের পরিবার প্রতিবাদ জানানোয় তারা খবরটি সরিয়ে ফেলে৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/M. Rourke
ধর্ষণের ভুয়া খবর
২০১৬ সালের জানুয়ারিতে বার্লিনে লিজা নামের এক জার্মান কিশোরীকে এক দল অভিবাসীর ধর্ষণ করার খবর ভাইরাল হয়ে যায়৷ বিশেষ করে রুশ মিডিয়ায় খবরটি বিপুল কভারেজ পায়৷ পরে কিশোরীটি জানায়, সে সব কিছু বানিয়ে বলেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Wuestenhagen
মার্কিন নির্বাচন
মার্কিন নির্বাচনে যে ভুয়া খবরটি সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছিল তাতে ছিল ২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অপরাধের মাত্রার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের ফলাফলের তুলনা৷ এছাড়া নির্বাচনের ফলাফলের এমন একটি মানচিত্র ওয়াশিংটন পোস্ট প্রকাশ করেছিল, যেটির দিকে ভালোভাবে তাকালে বোঝা যায় একেবারে ওপরে ২০১২ সালের উল্লেখ রয়েছে৷
ট্রাম্প এবং সিম্পসন
সিম্পসন কার্টুনে বেশ কিছু ভবিষ্যদ্বাণী থাকে৷ আর এ কারণে ট্রাম্প নির্বাচনে জেতার পর একটি ট্রল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়, যেখানে বলা হয় সিম্পসনে আগেই বলা হয়েছিল, ট্রাম্প নির্বাচনে জিতবেন৷ কিন্তু বাস্তবে এমন কিছু হয়নি৷ অথচ টুইটারে বাস্তব আর পুরোনো ভুয়া সিম্পসনের ছবি দেয়ায় নিউজটি ভাইরাল হয়ে যায়৷
ছবি: INTERTOPICS / Taschen-Verlag
শোকার্ত ক্যাঙ্গারু
ডেইলি মেইল এমন একটি ছবি প্রকাশ করে যেখানে দেখানো হয় এক পুরুষ ক্যাঙ্গারু নারী ক্যাঙ্গারুকে দুই হাতে ধরে অশ্রুসজল চোখে তাকিয়ে আছে৷ ইভান সুইৎজারের তোলা ছবিটি এভাবে উপস্থাপনের কারণে ভাইরাল হয়ে যায়৷ তবে ভেটেরিনারি বিশেষজ্ঞরা জানান, নারী ক্যাঙ্গারুর সঙ্গে যৌন মিলনের ইচ্ছে জাগলে পুরুষ ক্যাঙ্গারুর চোখ অশ্রুসজল হয়, তখনই তারা দুই হাত দিয়ে ঝাঁকিয়ে নারী ক্যাঙ্গারুকে উত্তেজিত করার চেষ্টা করে৷
ছবি: DW/C. Atkinson
বিখ্যাত গণমাধ্যমের নকল
ভুয়া খবর প্রচারকারীরা জনপ্রিয় এবং বিখ্যাত ওয়েবসাইটগুলোকে নকল করে ৷ ফলে মানুষ খুব ভালোভাবে লক্ষ্য না করলে বুঝতে পারে না, সেগুলো প্রকৃত ওয়েবসাইট, নাকি ভুয়া৷ যেমন, এবিসি নিউজ ডট কম এর সঙ্গে ডট সিও যুক্ত করে (ABCnews.com.co), ব্লুমবার্গের সঙ্গে ডট এমএ যুক্ত করে, ওয়াশিংটন পোস্ট ডট কম- এর সঙ্গে ডট সিও যুক্ত করে কয়েকটি ভুয়া সংবাদ সাইট তৈরি করা হয়েছে৷ এসব ওয়েবসাইটের কাজই ভুয়া সংবাদ পরিবেশন করা৷