বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবি ঘোষণা করেছেন৷
বিজ্ঞাপন
স্থানীয় পত্রপত্রিকার খবরে বলা হয়, শনিবার দিনভর সারা রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে সমাবেশ, মিছিল ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন আন্দোলনকারীরা৷
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিপুল সমাবেশ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা বিক্ষোভ কর্মসূচিতে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হন শিক্ষার্থীসহ অসংখ্য বিক্ষোভকারী৷
স্থানীয় পত্রপত্রিকাগুলো বলছে, ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শনিবার দুপুর থেকেই জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ৷
প্রত্যক্ষদর্শীর বরাতে ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার দ্য ডেইলি স্টার খবর দিয়েছে, হালকা বৃষ্টি উপেক্ষা করে দুপুর ১২টার দিক থেকে জড়ো হতে থাকেন বিক্ষোভকারীরা। ৩টার দিকে সেখানে সমবেত মানুষের সংখ্যা হয়ে যায় কয়েক হাজার৷
দৈনিক প্রথম আলো বলছে, বিকেলেও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আসছিলেন৷
শহীদ মিনারে জড়ো হওয়া আন্দোলনকারীরা শ্লোগানে মুখর করে তুলেছেন পুরো এলাকা৷ এ সময় অনেকের হাতেই নানা প্ল্যাকার্ড দেখা গেছে৷
এদিকে, শনিবার রাজধানী ঢাকার আরো বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ হয়েছে৷ এর মধ্যে মিরপুর, সায়েন্স ল্যাবসহ আরো কয়েকটি জায়গায় সমাবেশের খবর পাওয়া গেছে৷
মিরপুর ১০ নম্বরে অবস্থান
দ্য ডেইলি স্টারের খবরে দেখা গেছে, রাজধানীর মিরপুরেও শনিবার দুপুর ১২টার দিকে বিক্ষোভ শুরু করেন আন্দোলনকারীরা৷
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে পত্রিকাটি বলছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে আন্দোলনকারীরা জড়ো হতে শুরু করেন৷ মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বরে অবস্থান নেন তারা৷ ৯ দফা দাবিসহ বিভিন্ন রকমের শ্লোগান দিতে থাকেন তারা৷
পরে দুপুর ১টার দিকে গোলচক্কর কেন্দ্রিক সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়৷
সায়েন্স ল্যাবে বিক্ষোভ মিছিল
শনিবার দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর সায়েন্সল্যাবে বিক্ষোভ করেছেন আন্দোলনকারীরা৷ ‘সারা দেশে ছাত্র-নাগরিকদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলা করে খুনের প্রতিবাদ ও নয় দফা' দাবিতে তারা বিক্ষোভ মিছিল করেন৷
প্রথম আলো লিখেছে, আন্দোলনকারীদের মধ্যে একজন ঘোষণা দেন, ‘‘আমরা এখানে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করতে এসেছি৷ আমরা বিশ্বাস করি, পুলিশ আমাদের ওপর আক্রমণ করবে না৷''
সায়েন্স ল্যাব মোড়ে এ সময় অনেক পুলিশ সদস্য অবস্থান করছিলেন বলে জানিয়েছে পত্রিকাটি৷
এদিকে, ঢাকার বাইরেও বিক্ষোভ করেছেন আন্দোলনকারীরা৷
বাংলাদেশে কোটা আন্দোলন নিয়ে আলোচিত মন্তব্যগুলো
বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে চলমান ঘটনাপ্রবাহে সরকারপ্রধান থেকে শুরু করে নীতিনির্ধারক, বিরোধী, আন্দোলনকারী, আদালতসহ বিভিন্ন পক্ষের বক্তব্য আলোচিত হয়েছে৷ তারই কয়েকটি থাকছে ছবিঘরে...
ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS
‘৪ জুলাইয়ের মধ্যে সুরাহা করতে হবে’
মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাই কোর্টের দেওয়া রায়ের পর আন্দোলনের নামেন শিক্ষার্থীরা৷ ১ জুলাই ঢাকার সমাবেশে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ এর অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘‘৪ জুলাইয়ের মধ্যে আইনিভাবে আমাদের দাবির চূড়ান্ত সুরাহা করতে হবে৷’’
ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP
‘এত আন্দোলন কিসের’
৪ জুলাই প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান হাইকোর্টের দেওয়া রায় নিয়ে আপিল বিভাগের শুনানিতে বক্তব্য রাখেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এত আন্দোলন কিসের রাস্তায় শুরু হয়েছে? আন্দোলনের চাপ দিয়ে কি হাইকোর্টের রায়, সুপ্রিম কোর্টের রায় পরিবর্তন করবেন?’’
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A.M. Ahad
‘লিমিট ক্রস করে যাচ্ছেন’
১১ জুলাই সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, অনেকে শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে৷ পানি ঘোলা করার চেষ্টা করছে। শিক্ষার্থীরা ভুলপথে যাবেন না বলেও মন্তব্য করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘শিক্ষার্থীরা লিমিট ক্রস (সীমা অতিক্রম) করে যাচ্ছেন৷’’
ছবি: bdnews24.com
‘আদালতেই সমাধান করতে হবে’
চীন সফর শেষে ১৪ জুলাই গণভবনে সংবাদ সম্মেলন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘‘কোটা বিষয়ে আমার কিছু করার নেই। মামলার পর আদালত যে রায় দেন, এতে নির্বাহী বিভাগের কিছু করার নেই। আদালতেই সমাধান করতে হবে৷’’ আরেক প্রশ্নের প্রেক্ষিতে বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরা পাবে না? তাহলে কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা চাকরি পাবে?’’
ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS
‘শেষ দেখিয়ে ছাড়বো’
১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল শুরুর আগে সাংবাদিকদের ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘‘রাজনৈতিকভাবে এটি (কোটা সংস্কার আন্দোলন) মোকাবিলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ যারা আজও এই বাংলাদেশে থেকে ‘আমি রাজাকার’ বলার হিম্মত দেখায়, তাদের শেষ দেখিয়ে ছাড়বে ছাত্রলীগ৷’’
ছবি: DW
‘জবাব ছাত্রলীগই দেবে’
একই দিনে সংবাদ সম্মেলন করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘‘কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকার’ স্লোগানের জবাব ছাত্রলীগই দেবে৷’’ ১৭ জুলাই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের তিনি বলেন, ‘আমাদের সারা দেশের প্রত্যেক নেতা-কর্মীকে আমাদের নেত্রীর পক্ষ থেকে নির্দেশ দিচ্ছি, সারা দেশে সতর্ক হয়ে শক্ত অবস্থান নিয়ে এ অশুভ অপশক্তিকে প্রতিহত করতে হবে। কোনো অপশক্তির সঙ্গে আপস করা যাবে না৷’’
ছবি: Mamun Sohag
‘ছাত্রসমাজ উচ্চ আদালত থেকে ন্যায়বিচারই পাবে’
সহিংসতা ও প্রাণহানির ঘটনার পর ১৭ জুলাই জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী৷ তিনি বলেন, ‘‘সর্বোচ্চ আদালতের রায় আসা পর্যন্ত ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করার জন্য আমি সকলকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি। আমার বিশ্বাস, আমাদের ছাত্রসমাজ উচ্চ আদালত থেকে ন্যায়বিচারই পাবে, তাদের হতাশ হতে হবে না।’’
ছবি: PID Bangladesh
‘বিএনপি সরাসরি জড়িত নয়’
১৭ জুলাই বায়তুল মোকাররম মসজিদে গায়েবানা জানাজার পর দেওয়া বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বিএনপি সরাসরি জড়িত নয়৷ তবে এ আন্দোলনে বিএনপির নৈতিক সমর্থন রয়েছে৷’’
ছবি: DW
‘আমরাও এভাবে আন্দোলনকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেছিলাম’
জাতীয় পার্টির রওশন এরশাদপন্থি দলের নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ (ফাইল ছবিতে বাম থেকে প্রথম) একই দিন সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘‘এ আগুন থামান। এ আগুন নেভানোর দায়িত্ব সরকারের।... সময় খুব কম৷ আমরাও সরকারে (এরশাদ আমলে) ছিলাম। আমরাও এভাবে আন্দোলনকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেছিলাম। নূর হোসেন মারা যাওয়ার পর অনেকে বলেছিলেন, টোকাই মারা গেছে, কী হবে? কিন্তু আমি বলেছিলাম, না, এই নূর হোসেন একক কোনো ব্যক্তি নয়।’’
ছবি: DW
‘ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে গেছে’
ইন্টারনেট বন্ধ নিয়ে নানা রকমের বক্তব্য দিয়েছেন জুনাইদ আহমেদ পলক৷ ১৮ জুলাই তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্বার্থান্বেষী মহলের নানা গুজব আর অস্থিতিশীল পরিস্থিতির জন্য সাময়িকভাবে মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়েছে।’ ২৪ জুলাই ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘‘...ইন্টারনেট বন্ধ করিনি, ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে গেছে৷’’
ছবি: PID Bangladesh
জাতিসংঘ ও বিশ্বনেতাদের প্রতি ইউনূসের আহ্বান
২২ জুলাই এক বিবৃতিতে শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘‘প্রতিবাদের অধিকার আদায় করতে গিয়ে যারা সহিংসতার শিকার হয়েছেন , সেই সহিংসতা থামাতে সামর্থের সবটুকু করার জন্য আমি জরুরি ভিত্তিতে জাতিসংঘ ও এবং বিশ্বনেতাদের আহ্বান জানাচ্ছি৷’’ পরে তার এই বিবৃতিকে রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল বলে উল্লেখ করেছেন ওবায়দুল কাদের৷
ছবি: Mahmud Hossain Opu/AP/picture alliance
‘লোগো ভুলে মোছা হয়নি’
২৩ জুলাই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের কাছে দেওয়া বক্তব্যে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘‘দেশে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকার সুযোগ নিয়ে বিদেশে বাংলাদেশ নিয়ে মনগড়া কনটেন্ট (আধেয়) বানিয়ে গুজব ছড়ানোর অপতৎপরতা প্রতিরোধে বিদেশের মিশনগুলো কাজ করছে৷’’ আন্দোলন দমনে জাতিসংঘের লোগো–সংবলিত যান ব্যবহার নিয়ে জাতিসংঘের উদ্বেগের বিষয়ে ২৪ জুলাই তিনি বলেন, ‘‘জাতিসংঘের লোগো ভুলে মোছা হয়নি৷’’
ছবি: Rauoof Ganie/DW
‘এত রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে কোটা সংস্কার চাইনি’
২৩ জুলাই সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনের সমন্বয়কদের একজন নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘‘এত রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আমরা কোটা সংস্কার চাইনি। আমরা সব হতাহতের বিচার চাই। আমাদের চূড়ান্ত দাবি ক্যাম্পাসগুলোতে গিয়ে সবার সঙ্গে আলোচনা করে জাতির সামনে পেশ করতে চাই। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় আছি। আমরা এই পরিস্থিতির অবসান চাই। হতাহতের বিচার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে৷’’
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
‘ডিবি একটি আস্থার জায়গা’ এবং ‘জাতিকে নিয়ে মশকরা’
নিরাপত্তার স্বার্থে হাসপাতাল থেকে আন্দোলনকারীদের পাঁচ সমন্বয়ককে তুলে আনা হয়েছে বলে জানান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) প্রধান হারুন অর রশীদ৷ জোর করে তাদের কাছ থেকে বিবৃতি আদায়ের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ডিবি একটি আস্থার জায়গা। সেখানে কাউকে আটকে রাখা হয় না৷ পরবর্তীতে শুনানিতে হাইকোর্ট বলেন, ‘‘ জাতিকে নিয়ে মশকরা কইরেন না। যাকে নেন ধরে, একটি খাবার টেবিলে বসিয়ে দেন৷’’
ছবি: DW
‘নিরাপত্তা বাহিনীর পোশাক পরে হামলা চালিয়েছে’
২৪ জুলাই নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘‘আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর দুর্বৃত্তরা পুলিশ ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর পোশাক পরে হামলা চালিয়েছে৷’’
ছবি: DW
‘নির্বিচার হত্যা কেন’
সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা জি এম কাদের ৩১ জুলাই রংপুরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘হেলিকপ্টার থেকে গুলি করা হয়েছে, বহুতল ভবন থেকে গুলি করা হয়েছে৷ এতে অনেক নিরীহ মানুষ মারা গেছে৷ শিশু মারা গেছে৷ যারা মারা গেছে, সরকার এখন পর্যন্ত তাদের সন্ত্রাসী প্রমাণ করতে পারেনি৷ এখানে আমার প্রশ্ন, এই নির্বিচার হত্যা চালালো কেন? সরকার যদি সন্ত্রাসীদের দমন করতে চায়, তাহলে আগে থেকে চিহ্নিত করে দমন করতে পারতো৷’’
ছবি: DW
16 ছবি1 | 16
কুমিল্লায় আন্দোলনকারীদের মিছিলে গুলি
এদিকে, কুমিল্লায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে যুবলীগ হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে৷
প্রত্যক্ষদর্শী ও শিক্ষার্থীদের বরাতে দৈনিক প্রথম আলো এতে ২৬ জন আহত হবার খবর দিয়েছে। এদের মধ্যে পাঁচ শিক্ষার্থীকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শনিবার বেলা সোয়া একটার দিকে কুমিল্লা নগরীর রেসকোর্স এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে পত্রিকাটি।
খবরে বলা হয়, ৯ দফা দাবিতে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা কুমিল্লা জিলা স্কুলের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে পুলিশ লাইনস এলাকার দিকে যাচ্ছিলেন। মিছিলটি রেসকোর্স এলাকায় পৌঁছালে পেছন থেকে যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা–কর্মীরা ধাওয়া দেন। এ সময় অন্তত ৩০টি গুলি করা হয়। আন্দোলনকারীরা গুলিবিদ্ধ পাঁচ শিক্ষার্থীকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান।
এদিকে প্রথম আলোর খবরে প্রকাশ, পৃথক ঘটনায় বেলা ১টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চান্দিনায় উপজেলা সহকারী কমিশনারের (এসি ল্যান্ড) গাড়িতে আগুন দিয়েছেন বিক্ষুব্ধ একদল আন্দোলনকারী।
চট্টগ্রামে নিউমার্কেট মোড়ে বিপুল সমাবেশ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে শনিবার দুপুর আড়াইটার দিকে চট্টগ্রামের নিউমার্কেট মোড়ে শুরু হয় ছাত্র-জনতার সমাবেশ৷
দ্য ডেইলি স্টারের খবরে জানা গেছে, এতে অংশ নিতে জড়ো হয়েছেন বিপুল সংখ্যক ছাত্র-জনতা৷ নিউমার্কেট এলাকায় বন্ধ হয়ে গেছে যান চলাচল৷
এ সময় কোতোয়ালী থানার দিক থেকে আসা সড়ক ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছেন শিক্ষার্থীরা৷
পত্রিকাটি বলছে, নগরীর রিয়াজ উদ্দিন বাজার আমতলি মোড়, স্টেশন রোড, সদরঘাট রোড, সিটি কলেজের মোড়সহ বিভিন্ন এলাকায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে৷
সারাদেশে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও হত্যার প্রতিবাদ এবং নয় দফা দাবিতে টাঙ্গাইলে ছাত্রজনতার উপস্থিতিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ চলছে৷
শনিবার সকাল ১১টার দিকে টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সামনে নজরুল সরণী সড়কে সমবেত হন টাঙ্গাইল জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসাবিক্ষোভকারীরা৷ শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ সেখানে শ্লোগান দিতে থাকেন৷
দ্য ডেইলি স্টারের খবরে দেখা গেছে, জেলার সখীপুরে আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনা ঘটেছে৷ এ সময় সংঘর্ষ শুরু হলে দুপুর পর্যন্ত পুলিশসহ অন্তত ১৫ জন আহত হবার খবর দিয়েছে পত্রিকাটি৷
কুষ্টিয়ায় বিক্ষোভ
কুষ্টিয়ায় বৃষ্টির মধ্যে চার কিলোমিটার হেঁটে মিছিল করেছেন আন্দোলনকারীরা৷
দ্য ডেইলি স্টারের প্রতিবেদন বলছে, শনিবার দুপুর ১২টার দিকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের সামনে থেকে মিছিল শুরু হয়৷ সেখান থেকে সাদ্দাম বাজার হয়ে চৌড়হাস মোড়ে গিয়ে কিছুক্ষণ অবস্থান করে৷ এরপর মিছিলটি মজমপুর গেটে অবস্থান নেয়৷ জেনারেল হাসপাতালের সামনেই মিছিলটি শেষ হবার কথা৷
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে মিছিলে শিক্ষার্থী, অভিভাবক, বিভিন্ন শ্রেণির-পেশার মানুষ ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশ নেন৷
পত্রিকাটি বলছে, এই কর্মসূচি ঘিরে পুলিশ কাউকে বাধা দেয়ার বা আটকের চেষ্টা করেনি, তবে সতর্ক অবস্থানে ছিল বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা৷
খুলনায় পুলিশ সদস্য হত্যার ঘটনায় মামলা
খুলনায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশ সদস্য সুমন কুমার ঘরামীকে (৩৩) পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে৷ গতকাল শুক্রবার রাতে লবণচরা থানার উপপরিদর্শক মোস্তফা সাকলাইন বাদী হয়ে মামলাটি করেন৷ মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় প্রায় এক হাজার ২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে৷
রংপুর ও বগুড়ায় মিছিল ও সমাবেশ
দ্য ডেইলি স্টারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, শনিবার রংপুর প্রেসক্লাব চত্বরে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে অংশ নিতে আসেন অভিভাবক ও শিক্ষকরা৷
দুপুর ১২টার দিকে তাদের বিক্ষোভ মিছিল প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে৷ এ সময় জিলা স্কুল মোড়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন আন্দোলনকারীরা৷
এদিকে বগুড়ায় শনিবার বিকেল ৩টায় শহরের সাতমাথা এলাকায় শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ কয়েক হাজার মানুষ জড়ো হন৷ এ সময় তারা ৯ দফা দাবিতে শ্লোগান দেন৷
দ্য ডেইলি স্টারের প্রতিবেদন বলছে, বিকেল ৪টার দিকে বিক্ষোভকারীরা সার্কিট হাউসের দিকে যেতে চাইলে বিক্ষোভকারীদের বাধা দেয় পুলিশ৷ এসময় তাদের সরিয়ে দিতে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে৷