জেসিন্ডা আর্ডান পদত্যাগ করার পর নিউজিল্যান্ডের নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন ক্রিস হিপকিন্স।
বিজ্ঞাপন
বুধবার শপথ নিয়েছেন ক্রিস হিপকিন্স। গত সপ্তাহে আচমকাই প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন নিউজিল্যান্ডের বহু চর্চিত প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডান। এদিন শপথ নিয়ে ক্রিস বলেছেন, ''জীবনের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব পালন করতে চলেছি। কথা দিচ্ছি, সমস্ত দায়িত্ব সম্পূর্ণ গুরুত্বদিয়ে পালন করার চেষ্টা করব।''
বিশ্ব নেতৃত্বের আদর্শ এখন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী
জাসিন্ডা আর্ডার্ন৷ নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী থেকে তিনি এখন পরিণত হয়েছেন বিশ্বকে শান্তির পথে নেতৃত্ব দেয়ার দূত হিসেবে৷ তার উত্থানের গল্প থাকছে এই ছবিঘরে৷
ছবি: Reuters/A. Wiegmann
যোগাযোগের ছাত্রী
১৯৮০ সালে জন্ম নেয়া আর্ডার্নের বেড়ে ওঠা মুরুপাড়া নামে নিউজিল্যান্ডের মাউরি আদিবাসী অধ্যুষিত একটি ছোট্ট শহরে৷ যেখানে শিশুদের পায়ে দেয়ার মতো জুতা ছিল না, এমনকি দুপুরে তারা খাবারও পেত না৷ এই ঘটনাই তাকে রাজনীতিতে উদ্বুদ্ধ করে৷ উচ্চ মাধ্যমিক শেষে আর্ডার্ন পড়াশোনা করেন যোগাযোগ বিদ্যায়৷ তার আগে ১৭ বছর বয়সেই যুক্ত হন নিউজিল্যান্ডের লেবার পার্টির রাজনীতিতে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Baker
বিশ্ব রাজনীতির পাঠ
স্নাতক শেষ করে আর্ডার্ন নিউজিল্যান্ডের লেবার পার্টির একজন সংসদ সদস্যের অধীনে গবেষক হিসেবে কাজ করেন৷ ২০০৫ সালে পাড়ি জমান ব্রিটেনে৷ আড়াই বছর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের মন্ত্রীসভার দপ্তরে চাকরি করেন৷ ২০০৭ সালে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব সোশ্যালিস্ট ওয়েলথের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘুরে বেড়িয়েছেন আলজেরিয়া, চীন, ভারত, ইসরায়েল, জর্ডার্ন ও লেবাননে৷
ছবি: Reuters/A. Wiegmann
জাতীয় রাজনীতির পথ চলা
২০০৮ সালে আর্ডার্ন লেবার পার্টির সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েও ১৩,০০০ ভোটে হেরে যান৷ কিন্তু দেশটির সংবিধানিক নিয়মে তিনি সংসদে যাওয়ার সুযোগ পান৷ ২৮ বছর বয়সে সর্বকনিষ্ঠ রাজনীতিবিদ হিসেবে জায়গা করে নেন হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভে৷
ছবি: Getty Images/P. Walter
‘জাসিডামেনিয়া’
২০১৭ সালে লেবার পার্টির উপ প্রধান নির্বাচিত হন আর্ডার্ন৷ নির্বাচনের দু’মাস আগে দলটির প্রধান পদত্যাগ করলে সেই ভারও চাপে তার কাঁধে৷ নির্বাচনি প্রচারে তরুণদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় হন আর্ডার্ন৷ তাকে নিয়ে এসময় দেশটিতে জনপ্রিয়তার যে ঢেউ উঠে, তা পরিচিত ‘জাসিডামেনিয়া’ নামে৷
ছবি: Getty Images/P. Walter
বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ নারী প্রধানমন্ত্রী
মাত্র দু’মাসের নেতৃত্বে অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাই দলকে নির্বাচনে বিজয়ী করেন আর্ডার্ন৷ ২০১৭ সালে ৩৮ বছর বয়সে বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন৷ নিউজিল্যান্ডের ১৫০ বছরের ইতিহাসেও তিনি সবচেয়ে কম বয়সি সরকার প্রধান৷
ছবি: picture-alliance/Zumapress
প্রভাবশালী নারী
আর্ডার্ন সমকামী বিবাহের সমর্থক৷ জলবায়ু পরিবর্তন, শিশু দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে তিনি উচ্চকিত৷ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, নিউজিল্যান্ডের সরকার হবে সহানুভূতিশীল৷ ২০১৮ সালে ‘ফোর্বসের পাওয়ার উইমেনের’ তালিকায় জায়গা করে নেন তিনি৷ আছেন টাইম ম্যাগাজিনে সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির তালিকাতেও৷
ছবি: Reuters/A. Wiegmann
সন্তান জন্ম
টিভি উপস্থাপক ক্লার্ক গেফোর্ডকে বেছে নিয়েছেন তিনি সঙ্গী হিসেবে৷ ২০১৮ সালের ২২ জুন বেনজির ভুট্টোর পর বিশ্বের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বকালে সন্তানের জন্ম দেন আর্ডার্ন৷ এজন্য মাত্র ছয় সপ্তাহের মাতৃত্বকালীন ছুটি নিয়েছিলেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Office of the Prime Minister of New Zealand/D. Henderson
সন্তান কোলে জাতিসংঘে
বিশ্বে প্রথমবার কোনো প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের কক্ষে সন্তান নিয়ে বক্তৃতা দিতে যান৷ তিনি জাসিন্ডা আর্ডার্ন৷ গত বছর নেলসন ম্যান্ডেলা পিস সামিটে অংশ নিয়ে আর্ডার্ন বিশ্ব গণমাধ্যমে খবরের শিরোনাম হয়েছেন৷ বক্তৃতা দেয়ার সময় সন্তান ছিল সঙ্গী ক্লার্ক গেফোর্ডের কোলে৷
ছবি: Reuters/C. Allegri
ক্রাইস্টচার্চের ঘটনায় প্রতিক্রিয়া
ক্রাইস্টচার্চে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ৫০ জনকে হত্যার পর জাসিন্ডা আর্ডার্নকে নতুন করে চেনে বিশ্ব৷ এই ঘটনার অভিযুক্তকে কোনো কার্পণ্য না করেই সন্ত্রাসী ও জঙ্গি হিসেবে অভিহিত করেন তিনি৷ দ্রুত অস্ত্র আইন পরিবর্তনের ঘোষণা দেন৷ মুসলমানদের উদ্দেশ্যে জানান, নিউজিল্যান্ড মোটেও এমনটা নয়৷ এই দেশে তারা স্বাধীনভাবেই থাকতে পারবে৷
ছবি: Reuters/E. Su
হিজাবে আর্ডার্ন
জাসিন্ডা আর্ডার্ন ক্রাইস্টচার্চের ঘটনার পর ছুটে যান নিহতদের স্বজনদের কাছে৷ তাদের জড়িয়ে ধরেন, সমবেদনা প্রকাশ করেন৷ শুধু তাই নয়, মুসলমানদের সাথে একত্মতার প্রকাশ হিসেবে তিনি একাধিক দিন হিজাব পরে বেরিয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/TVNZ
সংসদে আরবি ভাষা
২০১৯ সালে ১৯ মার্চ সংসদে বক্তব্য দেন আর্ডার্ন৷ শুরুতেই সবাইকে ‘আস সালামু আলাইকুম’ বলে সম্বোন্ধন করেন তিনি৷ জানান ক্রাইস্টচার্চের ঘটনায় অভিযুক্তের নামও তিনি কখনও মুখে আনবেন না৷
ছবি: Getty Images/M. Tantrum
করোনার বিরুদ্ধে লড়াই
করোনা প্রতিরোধে বিশ্বে যে কয়টি দেশ সাফল্য পেয়েছে তার একটি নিউজিল্যান্ড৷ আর্ডার্নের নেতৃত্বে দেশটির সরকার করোনা ভাইরাসকে কখনো হুমকি হতে দেয়নি৷ শুরুতেই সীমান্ত বন্ধ করে কড়াকড়ি আরোপ করে সরকার৷ সামাজিক দূরত্ব, কোয়ারান্টিন, আইসোলেশনসহ বিভিন্ন নিয়মগুলো সুচারুভাবে পালন করা হয়৷ চলে বিস্তৃত পরিসরে করোনার পরীক্ষা৷ ফলাফল অন্য দেশগুলো যখন হিমশিম পরিস্থিতিতে তখন অনেকটাই নির্ভার নিউজিল্যান্ড৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Mitchell
12 ছবি1 | 12
এদিন ক্রিসের সঙ্গে কারমেল সেপুলোনি ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন। প্যাসিফিক আইল্যান্ড থেকে এই প্রথম কেউ নিউজিল্যান্ড প্রশাসনে এত বড় পদ পেলেন।
গত সপ্তাহে আচমকাই পদত্যাগ করার কথা জানিয়েছিলেন নিউজিল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা। তিনি বলেছিলেন, নিউজিল্যান্ডের বহু দুঃসময়ের সাক্ষী তিনি। ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সন্ত্রাসী হামলা এবং করোনা অতিমারী সামলাতে হয়েছে তাকে। এবার কাজ থেকে অব্যাহতি দিয়ে নিজের কাজ এবং পরিবারের সঙ্গে থাকতে চান তিনি। পার্লামেন্টে একথা জানিয়ে গভর্নমেন্ট হাউসে রাজা চার্লসের প্রতিনিধির হাতে পদত্যাগপত্র তুলে দিয়েছিলেন জেসিন্ডা। তার পদত্যাগের কথা শুনে পার্লামেন্টের সাংসদেরা কার্যত হতবাক হয়ে পড়েছিলেন।
এদিন শপথ নিয়ে নতুন প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, প্যানডেমিক-পরবর্তী অর্থনীতিকে চাঙ্গা করাই তার প্রথম এবং প্রধান কাজ। নিউজিল্যান্ডের ৪১তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এদিন শপথ নিয়েছেন তিনি। এদিনই প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠকে বসার কথা তার।