তৃতীয়বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিলেন মোদী। এবার শরিক দলের থেকে পাঁচজন পূর্ণ মন্ত্রী নিয়েছেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
মোট ৭২জন মন্ত্রীকে নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করলেন মোদী। তার মধ্যে ৩০ জন পূর্ণমন্ত্রী, পাঁচজন স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বাকিরা রাষ্ট্রমন্ত্রী।
নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী শপথ নেন হিন্দিতে এবং ঈশ্বরের নামে শপথ নেন। মোদীর পর শপথ নেন রাজনাথ সিং, অমিত শাহ, নীতিন গড়করি, জে পি নাড্ডা, শিবরাজ সিং চৌহান, নির্মলা সীতারামন। এর মধ্যে নির্মলা, জয়শঙ্কর, প্রহ্লাদ জোশী শপথ নেন ইংরাজিতে।
জে পি নাড্ডা মন্ত্রী হওয়ায় বিজেপি সভাপতির পদ খালি হবে। কারণ, বিজেপি-তে সচরাচর এক ব্যক্তি এক পদ নীতি নেয়া হয়।
লোকসভা ভোটের আগে মোনহরলাল খাট্টারকে হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছাড়তে হয়। তিনি লোকসভায় লড়েন এবং জিতে আসেন। তাকে কেন্দ্রে মন্ত্রী করা হলো। শিবরাজ সিং চৌহানকেও মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী করা হয়নি। তাকেও কেন্দ্রে মন্ত্রী করা হয়েছে।
সি আর পাটিলকেও পূর্ণমন্ত্রী করা হয়েছে। তিনি গুজরাটের নেতা। তিনি দলের তরফে প্রধানমন্ত্রী মোদীর কেন্দ্র বারাণসীর দায়িত্বেও ছিলেন।
রাও ইন্দ্রজিৎ সিং, জিতেন্দ্র সিং, অর্জুনরাম মেঘওয়াল, প্রতাপরাও গনপতরাও যাদব এবং আরএলডি নেতা জয়ন্ত চৌধুরীকে স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রমন্ত্রী করা হয়েছে।
জিতে আসার পরও এবার মন্ত্রী করা হয়নি অনুরাগ ঠাকুরকে। গত মন্ত্রিসভায় অনুরাগ তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ছিলেন।
শরিক দলের পূর্ণমন্ত্রীরা
শরিক দলের নেতাদের মধ্যে সবচেয়ে আগে শপথ নেন জেডিএস নেতা কুমারস্বামী। তিনিও ইংরাজিতে শপথ নেন।
বিহারের শরিক দল হাম নেতা ও বিহারের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী জিতনরাম মাঁঝি পূর্ণমন্ত্রী হয়েছেন। জেডিইউ নেতা রাজীব রঞ্জন সিং বা লালন সিং-কেও পূর্ণমন্ত্রী করা হয়েছে।
তেলুগু দেশম নেতা ৩৪ বছর বয়সী রামমোহন নাইডু পূর্ণমন্ত্রী হয়েছেন। চিরাগ পাসোয়ানও পূর্ণমন্ত্রী হয়েছেন। এক্ষেত্রে পরিবারবাদ বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি।
২০১৪ ও ২০১৯-এর তুলনায় এই প্রথম এতজন শরিক নেতাকে পূর্ণমন্ত্রী করা হলো। এবার যেহেতু বিজেপি পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি, তারা শরিক দলের উপর নির্ভরশীল, তাই এতজনকে পূর্ণমন্ত্রী করতে হয়েছে মোদীকে। তবে চন্দ্রবাবাু নাইডু ও নীতীশ কুমার একাধিক পূর্ণমন্ত্রী দাবি করলেও তা মানা হয়নি।
ভারতে নতুন সরকারের সামনে যে চ্যালেঞ্জগুলি অপেক্ষা করছে
পরপর তৃতীয়বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী৷ কিন্তু তার ও সরকারের সামনে প্রচুর চ্যালেঞ্জ রয়েছে৷
ছবি: RAJAT GUPTA/EPA
বেকার-সমস্যা
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের শ্রমিকদের নিয়ে প্রকাশ করা সমীক্ষায় বলা হয়েছে, এই বছর জানুয়ারি থেকে মার্চে সারা দেশের শহরগুলিতে ১৪ থেকে ২৯ বছর বয়সিদের মধ্যে ১৭ শতাংশ বেকার৷ গোটা ১২ রাজ্যে বেকারের সংখ্যা ২০ শতাংশের বেশি এবং একটি রাজ্যে তা ৩০ শতাংশের বেশি৷ ফলে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা নতুন সরকারের কাছে খুব বড় একটা চ্যালেঞ্জ৷
ছবি: DW
ছোট ও মাঝারি শিল্পের অবস্থা
ভারতে ছোট ও মাঝারি শিল্প ১১ কোটি মানুষকে কর্মসংস্থান দেয়৷ কিন্তু ধীরে ধীরে ছোট ও মাঝারি শিল্পের অবস্থা খারাপ হচ্ছে৷ ফলে সেখানে কর্মসংস্থান বাড়ছে না৷ চাপ গিয়ে পড়ছে কৃষি, নির্মাণ ও অনানুষ্ঠানিক খাতে৷ সেখানেও কর্মসংস্থানের সুযোগ খুব বেশি বাড়ছে না, কাজের মানও বাড়ছে না৷ ফলে নতুন সরকারের সামনে ছোট ও মাঝারি শিল্পকে চাঙা করার চ্যালেঞ্জ থাকছে৷
ছবি: Manish Kumar/DW
দক্ষ শ্রমিকের চ্যালেঞ্জ
বড় শিল্পগুলিতে অটোমেশন ও রোবট ব্যবহার বাড়ছে৷ সেখানে কর্মসংস্থানের সুযোগও কমছে৷ এই অবস্থায় দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা বাড়ছে৷ ফলে স্কিল ডেভলাপমেন্ট কর্মসূচি খুবই জরুরি৷ ভারতে এই কর্মসূচি চলছে৷ বণিকসভা সিআইআই-এর রিপোর্ট বলছে, বিভিন্ন ক্ষেত্রের চাহিদা মেটাতে গেলে ৩০ কোটি দক্ষ শ্রমিক চাই৷ প্রবীণ সাংবাদিক জয়ন্ত রায়চৌধুরী বলেছেন, ‘‘দক্ষ শ্রমিক এখন বাজারে আসছে, কিন্তু তারা সংস্থার চাহিদা মেটাতে পারছে না৷’’
ছবি: AP
জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ
গতবছর হিমাচল, উত্তরাখণ্ড, সিকিম-সহ বিভিন্ন জায়গায় ক্লাউড বার্স্ট বা মেঘ ফাটা বৃষ্টির ফলে চকিত বন্যা হয়েছে৷ হিমাচলে ১০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে রাজ্য সরকারের দাবি৷ কিছুদিন আগে মুম্বই, চেন্নাই, বেঙ্গালুরুতে একদিনে রেকর্ড বৃষ্টি হয়ে শহর ডুবেছে৷ জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছে ভারত৷ বিশ্বব্যাংকের রিপোর্ট বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ভারতে অসুবিধায় পড়বে গরিবরা৷ অপুষ্টি বাড়বে৷
ছবি: DW
গরম বাড়ছে
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গরমের তীব্রতা বাড়ছে৷ দিল্লির তাপমাত্রা প্রায় ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁয়েছে৷ দেশের একটা বড় অংশ তাপপ্রবাহের মধ্যে পড়েছে৷ এপ্রিলে বিদ্যুতের চাহিদা নয় দশমিক চার শতাংশ বেড়েছে৷ জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ৷
ছবি: Sudipta Das/NurPhoto/IMAGO
স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলা
কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারগুলি গরিবদের জন্য বিমা প্রকল্প এনেছে৷ কিন্তু স্বাস্থ্য পরিকাঠামো এখনো অবহেলিত৷ গ্রামের দিকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে সুযোগসুবিধার একান্ত অভাব৷ ভালো চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য পরীক্ষার সুযোগ পাওয়া যায় না৷ বেসরকারি হাসপাতালগুলি অত্যন্ত ব্যয়বহুল৷ ১৪০ কোটি মানুষের জন্য ভালো স্বাস্থ্য পরিষেবা গড়ে তোলা সরকারের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ৷
ছবি: Nehal Johri/DW
জিনিসের দাম কমানো
এবারের লোকসভা ভোটে বিভিন্ন রাজ্যের মানুষ জিনিসের দাম নিয়ে অসন্তোষের কথা বলেছেন৷ ২০২৩-২৪ সালে কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধির হার কমে দাঁড়িয়েছিল এক দশমিক চার শতাংশে৷ এবারও গমের উৎপাদন আগেরবারের তুলনায় কম হবে বলে মিল মালিকদের সংগঠন জানিয়ে দিয়েছে৷ ডাল, তৈলবীজ, মশলার ক্ষেত্রেও একই সাবধানবানী শোনা যাচ্ছে৷ এই অবস্থায় দাম কমানোটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ৷
ছবি: Avijit Ghosh/REUTERS
কৃষকদের দাবি মেটানো
লোকসভা নির্বাচনের আগে আবার কৃষক বিক্ষোভ হয়েছে৷ কৃষকদের দাবি, ন্যূনতম সংগ্রহ মূল্যকে আইনি স্বীকৃতি দিতে হবে৷ অর্থাৎ, কেউ যদি সরকারের বেঁধে দেয়া দামের থেকে কম দাম দিয়ে ফসল কেনে তাহলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে বিবেচিত হবে৷ প্রধানমন্ত্রী মোদী কৃষকদের এই দাবি মানতে এতদিন রাজি হননি৷ এবার কৃষকদের দাবি মানা বা তাদের ক্ষোভ প্রশমিত করাটা নিঃসন্দেহে সরকারের সামনে চ্যালেঞ্জ৷
ছবি: Elke Scholiers/Getty Image
8 ছবি1 | 8
সাত দেশের অতিথিরা
শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মুইজ্জু, নেপালের প্রধানমন্ত্রী প্রচণ্ড, মরিশাস ও ভুটানের প্রধানমন্ত্রী, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট-সহ সাতজন বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধান এই শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে শাহরুখ খান
শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বলিউডের তারকারা। শাহরুখ খান, অক্ষয় কুমারের পাশাপাশি ছিলেন অনিল কাপুর, রাজকুমার হিরানি এবং রজনীকান্ত।
শিল্পপতি মুকেশ আম্বানি ও গৌতম আদানিও উপস্থিত ছিলেন।