তৃতীয়বারের জন্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ শপথ নেয়ার পর মমতার ঘোষণা- করোনা ও সহিংসতা থামানো হবে তার প্রথম কাজ৷
বিজ্ঞাপন
তৃতীয়বারের জন্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শপথ নেয়ার পর মমতার ঘোষণা- করোনা ও সহিংসতা থামানো হবে তার প্রথম কাজ।
রাজভবনে অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে মাত্র পঞ্চাশ জন অভ্যাগতের সামনে শপথ নিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি শপথ নিয়েছেন বাংলায়। পরনে ছিল সাদা সুতির শাড়ি। পায়ে সাদা হাওয়াই চটি। রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় তাকে শপথবাক্য পাঠ করান।
শপথ নিয়ে মমতা বলেন, তিনি প্রথমেই যে দুটি বিষয় রুখতে চান, তা হলো করোনা এবং সহিংসতা। করোনা নিয়ে তিনি নবান্নে দুপুরেই বৈঠক ডেকেছেন। জানিয়েছেন, তারপরেই কী কী সিদ্ধান্ত নেয়া হলো, তা তিনি জানিয়ে দেবেন। আর সহিংসতা নিয়ে তার বার্তা- বুধবার থেকে তিনি দায়িত্ব নিলেন, এখন কাউকে ছাড়বেন না, কেউ সহিংসতা করলে কঠোর ব্যবস্থানিতে পিছপা হবেন না৷
মমতা বলেন, এতদিন প্রশাসন ছিল নির্বাচন কমিশনের হাতে, এবার তার হাতে এলো। তিনি বলেন, ‘‘আমি প্রশাসনে দক্ষ কর্মীদের নিয়ে আসবো।’’
রাজ্যপাল ধনখড় বলেন, ‘‘প্রথম কাজ হলো এই সহিংসতা বন্ধ করা। এটা গণতন্ত্রবিরোধী। আমার আশা, মুখ্যমন্ত্রী আইনের শাসন বহাল করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেবেন।’’ মমতাকে ‘ছোট বোন’ বলে সম্বোধন করে তিনি বলেন, ''আমি আশা করবো, সকলে দলগত স্বার্থের উপরে উঠে কাজ করবেন।’’
পশ্চিমবঙ্গে জয়ের প্রতিক্রিয়া, হারের সাফাই
পশ্চিমবঙ্গে তৃতীয়বারের জন্য সরকার গঠন করবে তৃণমূল। তৃণমূলের বিপুল জয়ের পর কে কেমনভাবে হার বা জয়ের প্রতিক্রিয়া দিলেন?
ছবি: AP Photo/picture alliance
বাংলা পারে, বললেন মমতা
মমতা-ঝড়ে উড়ে গেছে মোদী-শাহের বিজেপি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম প্রতিক্রিয়া, ''বাংলা পারে। এটা বাংলার জয়।'' পরে বললেন, ''এই জয় বাংলার মানুষকে বাঁচিয়ে দিল।'' নন্দীগ্রামের খবরে মমতা বললেন, ''আমরা পুনর্গণনা চাই।'' আদালতে যাওয়ার কথাও বললেন। তবে মমতা জানিয়ে দিয়েছেন, এখন বিজয় উৎসব নয়। এখন প্রথম কাজ, করোনার মোকাবিলা করা। তাই সকলের জন্য বিনা পয়সায় মোদীর কাছ থেকে টিকা চেয়েছেন। না দিলে ধরনার হুমকিও।
ছবি: AFP/Getty Images
মোদীর টুইট
পশ্চিমবঙ্গের ফল বেরনোর পর টুইট করে নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মমতাকে অভিনন্দন জানিয়ে মোদী বলেছেন, বিধানসভায় তাদের উপস্থিতি বিপুলভাবে বেড়েছে। বিজেপি এখন রাজ্যের মঙ্গলের জন্য কাজ করে যাবে। অমিত শাহও বলেছেন, বিজেপি শক্তিশালী বিরোধী দল হিসাবে রাজ্যের মানুষের স্বার্থে ও উন্নতির জন্য কাজ করবে।
ছবি: Kuntal Chakrabarty/IANS
দিলীপ ঘোষের সাফাই
বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, তারা যে লক্ষ্য নিয়েছিলেন, সেই তুলনায় তাদের সাংগঠনিক শক্তি ছিল না। তাদের আরো লড়াই করতে হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২৫ বছর লড়াই করে ক্ষমতায় এসেছেন। বিজেপি-কেও রাজ্যে অনেক পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে।
ছবি: Imago Images/Pacific Press Agency/S. Paul
অধীরের যুক্তি
অধীর চৌধুরী বলছেন, ''সাম্প্রদায়িক প্রচারের কাছে হেরেছি। মমতা সাম্প্রদায়িক প্রচার করলেন। মোদীকে ঠেকাতে দিদিকে ভোট দাও। কংগ্রেস যে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে মোদীর বিরুদ্ধে লড়ছে, লড়বে সেই ভরসা মুসলিমরা রাখতে পারলেন না। আমরা বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছি। শীতলকুচিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে মুসলিমরা মারা গেলেন। প্রচার হলো, মোদী মুসলিমদের মারবে। এর মোকাবিলা আমরা করতে পারলাম না।''
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
হার স্বীকার রাহুল গান্ধীর
ভোটে বিপর্যয়ের পর রাহুল গান্ধী বলেছেন, ''আমরা সবিনয়ে হার স্বীকার করে নিলাম। আমাদের নেতা ও কর্মী, যারা কাজ করেছেন এবং লাখ লাখ মানুষ যারা আমাদের সমর্থন করেছেন, সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমরা আমাদের মতাদর্শ ও মূল্যবোধের লড়াই চালিয়ে যাব।''
ছবি: Getty Images/AFP/S. Hussain
বিমান বসুর বক্তব্য
জন্মলগ্নের পরে এই প্রথম বামেদের কোনো প্রতিনিধি বিধানসভায় থাকবেন না। বাম জোটের তরফে বিমান বসু বলেছেন, ''জনগণ বিজেপি-কে পরাস্ত করতে চেয়েছিলেন। তাই তৃণমূল লাভবান হয়েছে। আমরা যৌথ পর্যালোচনা করব। এই হার থেকে শিক্ষা নেব। আমাদের দায়িত্ব আরো বেড়ে গেল।''
ছবি: UNI
আইএসএফ চুপ
ভোটের কিছুদিন আগে দল গঠন করেছিলেন ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি। ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট বা আইএসএফ। তারা হাত মেলায় বাম ও কংগ্রেসের সঙ্গে। জোটের হয়ে একমাত্র জয় আব্বাসের ভাই নওসাদ সিদ্দিকির। কিন্তু এরপর প্রতিক্রিয়া দেননি আব্বাস। তবে দিল্লিতে কংগ্রেস মুখপাত্র বলেছেন, আইএসএফের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভালো হয়েছে না ভুল হয়েছে, তা পরে পর্যালোচনা করা হবে।
ছবি: Naushad Bhai
পিকে-র প্রতিক্রিয়া
তৃণমূলকে জেতানোর পিছনে তার কৌশলও কাজ করেছে। সেই প্রশান্ত কিশোর বা পিকে-র প্রতিক্রিয়া, ''কঠিন লড়াই ছিল। নরেন্দ্র মোদীর জনপ্রিয়তা আছে বলে বিজেপি সব লড়াই জিতবে তার কোনো মানে নেই।'' পিকে দাবি করেছিলেন, বিজেপি একশ ছুঁতে পারবে না। সেটা মিলেছে। তারপরেও পিকে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে তোপ দেগে বলেছেন, ''আমাদের প্রচার করতে অসুবিধা হচ্ছিল।'' তবে এই জয়ের পর তার ঘোষণা, আর কোনো দলের হয়ে কাজ করবেন না তিনি।
ছবি: Hindustan Times/Imago Images
8 ছবি1 | 8
মমতার শপথগ্রহণে উপস্থিত ছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রশান্ত কিশোর, ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস, সৌগত রায়, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো নেতারা। কংগ্রেসের তরফ থেকে সেখানে উপস্থিত ছিলেন প্রদীপ ভট্টাচার্য। বিজেপি বা বামেদের কোনো প্রতিনিধি অনুষ্ঠানে ছিলেন না।
করোনা ঠেকানো ও সহিংসতা বন্ধ করাটা মমতার পক্ষে কতটা কঠিন? প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র এ বিষয়ে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মমতা সকলকে বিনা পয়সায় টিকা দেয়ার চেষ্টা করবেন, এটা ঠিক। তিনি স্বাস্থ্যসাথী বা প্রতিটি পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকার বিমা করিয়ে দিচ্ছেন। সেই কাজও জারি থাকবে৷’’ কিন্তু শুভাশিস মনে করেন, ‘‘সহিংসতা মমতার একার পক্ষে বন্ধ করা কঠিন। কারণ, প্রতিটি রাজনৈতিক দল নিজের সুবিধামতো এতে মদত দেয়। সব রাজনৈতিক দলকে এক হয়ে এটা বন্ধ করতে হবে৷’’