1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শবে বরাত: ধর্মীয় মোড়কে সামাজিক আচার

৮ এপ্রিল ২০২০

কয়েকবছর আগে জার্মানিতে আসার পর একদিন মসজিদে ভিনদেশি একজনের সঙ্গে শবে বরাত নিয়ে কথা বলছিলাম৷ জার্মানিতে ঠিক কবে শবে বরাত পালিত হবে, জানতে চেয়েছিলাম৷ 

ছবি: bdnews24.com

কিন্তু দেখলাম, শবে বরাত শব্দটির সঙ্গে সে পরিচিত নয়৷ একটু অবাক হলাম৷ তারপর ভাবলাম, হয়ত তার দেশে এটিকে অন্য নামে ডাকা হয়৷ তাই বাংলাদেশে যেদিন শবে বরাত হবে সেটির আশেপাশে কোনোদিন জার্মানিতে মসজিদে বড় কিছু হবে কিনা, সেটি জানতে চাইলাম৷ কিন্তু আবারও অবাক হলাম৷ কারণ এবারও সে এমন কিছুর তথ্য দিতে পারল না৷ 

পরে একসময় জানলাম, শবে বরাত বিষয়টি আসলে উপমহাদেশের বিষয়! শুধুমাত্র বাংলাদেশ, ভারত আর পাকিস্তানের মুসলমানরা এদিন সারারাত মসজিদে থেকে আল্লাহকে ডাকেন৷ 

অনেকে হয়ত আরও আগে থেকেই এই বিষয়টি জানেন৷ কিন্তু আমি প্রথম জানার পর একটু স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েছিলাম৷ কারণ আশি-নব্বইয়ের দশকে বেড়ে ওঠা আমার কাছে শবে বরাত মানে বন্ধুদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যত বেশি সম্ভব নামাজ পড়া, সারারাত মসজিদে থাকার চেষ্টা করা৷ আর তার আগে সন্ধ্যায় আটার রুটি আর হালুয়া খাওয়া৷ মজাদার এসব খাবার প্রতিবেশীদের মধ্যেও দেয়া-নেয়া চলত৷ 

জুমার নামাজ ঠেকাতে কারফিউ!

02:57

This browser does not support the video element.

শবে বরাতের গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে ইমাম বলতেন, এই রাতে আগামী এক বছরের জন্য মানুষের ভাগ্য নির্ধারণ করা হয়৷ এই কথা শুনে আমরা বন্ধুরা যতটা সম্ভব এবাদতের চেষ্টা করতাম৷ এই একটা রাত কষ্ট করলে সকালে মনে হতো পুরো বছরের জন্য একটা কিছু করে ফেলেছি! অনেকে সারা রাত নফল এবাদত করে ফজরের ফরজ নামাজ না পড়েই ঘুমিয়ে পড়ত৷ অথচ নফল কখনই ফরজের সমান হতে পারেনা৷

একসময় শবে বরাত আর শবে কদরকে প্রায় একই সমান গুরুত্বপূর্ণ মনে হতো৷ কারণ বাংলাদেশে এই দুইদিনই জাতীয় ছুটি৷ এবং মুসল্লিরা এই দুইদিনই সারারাত এবাদতের চেষ্টা করেন৷

কিন্তু এখন জানি কোরানে শবে বরাত নিয়ে কিছু বলা নেই৷ অথচ শবে কদর নিয়ে একটি পুরো সূরাই আছে৷ 

তাহলে বাংলাদেশে শবে বরাত কীভাবে এলো? ইতিহাসবিদরা বলেন, উনিশ শতকের শেষ দিকে ঢাকার নবাবরা বড় করে শবে বরাত পালন শুরু করেন৷ তার একটা অন্যতম কারণ ছিল, হিন্দুদের আধিপত্য়ের সঙ্গে পাল্লা দেয়া৷ তাই শবে বরাতকে অনেকটা উৎসবের মোড়ক দেন মুসলিম নবাবরা৷ তারা আলোকসজ্জার ব্য়বস্থা করেন আর রুটি-হালুয়া খাওয়া শুরু করেন৷ মহানবি (সা:) যেহেতু মিষ্টি খেতে পছন্দ করতেন তাই হালুয়ার প্রচলন শুরু করেন নবাবরা৷

আর উপমহাদেশে শবে বরাত এসেছিল তারও আগে ভারতের সেই সময়কার নও-মুসলিমদের হাত ধরে৷ তাঁরা যেহেতু আগে হিন্দু ছিলেন তাই দীপাবলির কিছু আচার শবে বরাতের সঙ্গে যোগ করে দিয়েছিলেন৷ ধারণা করা হয়, এখনকার আলোকসজ্জার বিষয়টি এসেছে সেখান থেকে৷ 

জাহিদুল হক, ডয়চে ভেলেছবি: DW/Matthias Müller

তাহলে এবার প্রশ্ন, শবে বরাত বিষয়টি আসলো কীভাবে? আগেই বলেছি কোরানে শবে বরাতের কথা নেই৷ ‘হাসান হাদিস' নামে পরিচিত দ্বিতীয় স্তরের হাদিসে (যে হাদিস রচনার সময় বর্ণনাকারীদের স্মৃতিশক্তির দুর্বলতার প্রমাণ পাওয়া গেছে) ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’ বা মধ্য শাবানের রাত হিসেবে শবে বরাতের উল্লেখ আছে৷ অর্থাৎ হিজরি শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত৷ এই রাতে আল্লাহ মুশরিক ও হিংসুক ব্যতীত তাঁর সৃষ্টির সকলকে ক্ষমা করেন বলে ঐ হাদিসে উল্লেখ আছে৷ 

ইসলামের ইতিহাস থেকে জানা যায়, আজ থেকে প্রায় এক হাজার বছর আগে (সম্ভবত ৪৪৮ হিজরিতে, এখন চলছে ১৪৪১ হিজরি) মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে শবে বরাত পালিত হতো৷ এরপর একসময় তা বন্ধ হয়ে যায়৷ 

তবে ইরানের শিয়ারা এই দিন ইমাম মাহাদির জন্মদিন পালন করে থাকে৷ তাই ইরানে আজও সেটি সরকারি ছুটির দিন এবং এদিন আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে৷

ভারতের নও-মুসলিমরা ইরানের শিয়াদের কাছ থেকে শবে বরাতের রীতি গ্রহণ করায় আজও আমরা বাংলাদেশে সেভাবে শবে বরাত পালন করে থাকি৷

তবে করোনা ভাইরাসের কারণে সরকার এবছর সবাইকে ঘরেই শবে বরাতের এবাদত করার পরামর্শ দিয়েছেন৷ তাই এবার আর সবসময়ের মতো মসজিদে গিয়ে সারারাত নামাজ পড়া হবে না৷ কিন্তু তাতে মনে কষ্ট পাওয়ার কিছু নেই৷ কারণ শবে বরাত আসলে ধর্মীয় মোড়কে একটি সামাজিক আচার, যা একবছর পালন না করলে কোনো পাপ হবে না৷ 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ