1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শব্দদূষণ: আইন থাকলেও প্রয়োগ নেই

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২১ জানুয়ারি ২০১৮

বাংলাদেশে বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় শব্দদূষণ এক নীরব ঘাতকে পরিণত হয়েছে৷ শব্দদূষণের বিরুদ্ধে আইন থাকলেও তার প্রয়োগ নেই৷ গবেষণায় দেখা গেছে, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ঢাকার মোট জনসংখ্যার তিন ভাগের এক ভাগ কানে কম শুনবে৷

কনসার্টে উচ্চ শব্দছবি: DW/Arafatul Islam

গত বৃহস্পতিবার রাতের ঘটনা৷ ঢাকার ওয়ারিতে ১১ তলা ভবনের ছাদে একটি বিয়ের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান চলছিল৷ আর সেই অনুষ্ঠানে উচ্চশব্দে গান বাজানো হচ্ছিল৷ সেই ভবনের ৯ম তলার বাসিন্দা নাজমুল হক (৬৫) একজন হৃদরোগী, যাঁর বাইপাস সার্জারি হয়েছে৷ তার ছেলে নাসিমুল কয়েকবার গিয়ে রোগীর অসুবিধার কথা জানালেও যারা গান বাজাচ্ছিল, তারা শোনেনি৷ গান বাজানোর প্রতিবাদ করায় পরদিন সকালে নাসিমুলকে ডেকে নিয়ে মারধোর করে ফ্ল্যাট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলতাফ হোসেন৷ গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানটি ছিল তার ভাইয়ের ছেলের৷ ছেলেকে মারধোরের হাত থেকে বাঁচাতে এগিয়ে গেলে অসুস্থ হয়ে পরেন বাবা নাসিমুল হক এবং পরে মারা যান৷ এই ঘটনার পর পুলিশ আলতাফ হোসেনসহ চারজনকে আটক করেছে৷ এ তো গেলো মাত্র একটা ঘটনা৷

ঢাকায় এরকম বিয়ে বা গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানসহ নানা সামাজিক-রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে উচ্চ শব্দে মাইকে গান বাজানো একটা স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে৷ আর রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নেতার জন্মদিন, মৃত্যুবার্ষিকী বা বিশেষ দিবসগুলোতে  সারাদিন-রাত ধরে উচ্চশব্দে মাইক বাজালেও কেউ তার প্রতিবাদ করার সাহস পান না৷

আর শীতকাল এলেই এলাকায় এলাকায় ওয়াজ মাহফিল, কোথাও আবার কীর্তন চলে৷ এবং এসব মাহফিলে একাধিক মাইক বাজানো হয় উচ্চশব্দে৷ ফলে শব্দ দূষণ ভয়াবহ আকার ধারণ করে৷ আর ঢাকা শহরে যানবাহনের অতিরিক্ত শব্দ তো আছেই৷

বেসরকারি সংস্থা ‘ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট' ঢাকা শহরের ১০টি স্থানের শব্দ পরিমাপ করে দেখেছে৷ ঢাকায় নির্ধারিত মানদণ্ডের চেয়ে গড়ে প্রায় দেড় গুণ বেশি শব্দ সৃষ্টি হয়৷ জরিপে দেখা গেছে, উত্তরার শাহজালাল অ্যাভিনিউতে শব্দ মাত্রা সর্বোচ্চ ৯৩ দশমিক ৫ ডেসিবেল, মিরপুর-১ এ সর্বোচ্চ ৯৬ ডেসিবেল, পল্লবীতে সর্বোচ্চ ৯১ দশমিক ৫ ডেসিবেল, ধানমন্ডি বালক বিদ্যালয়ের সামনে সর্বোচ্চ ১০৭ দশমিক ১, ধানমন্ডি ৫ নম্বর সড়কে সর্বোচ্চ ৯৫ দশমিক ৫, নিউমার্কেটের সামনে সর্বোচ্চ ১০৪ দশমিক ১, শাহবাগে সর্বোচ্চ ৯৭ দশমিক ৩ এবং সচিবালয়ের সামনে সর্বোচ্চ ৮৮ ডেসিবেল৷

‘ঢাকা শহরের বেশিরভাগ এলাকায় এখন শব্দের সার্বক্ষণিক গড় মাত্রা ১০০ ডেসিবেল’

This browser does not support the audio element.

‘ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট' এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার মারুফ হাসান জানান, ‘‘বাংলাদেশে গ্রহণযোগ্য শব্দের মাত্রার পাঁচটি ভাগ আছে, এলাকা ভিত্তিতে৷ আর সেই হিসেবে শব্দের গ্রহণযোগ্য মাত্রা হল ৪০ থেকে ৭০ ডেসিবেল৷ আমরা পরীক্ষায় দেখেছি, কোথাও কোথাও শব্দের মাত্রা গ্রহণযোগ্য মাত্রার তিনগুণেরও বেশি৷''

তিনি বলেন, ‘‘ঢাকায় সাধারণভাবে যানবাহন ও হর্নের শব্দই শব্দদূষণের মূল কারণ৷ তবে এর বাইরে রাজনৈতিক, সামাজিক এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠানে উচ্চশব্দে মাইক বা সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার আর একটি বড় কারণ৷ যদি আমরা ইনডোর শব্দ দূষণের দিকটি বিবেচনায় নেই তাহলে টাইলস লাগানো, মিউজিক সিস্টেমে জোরে গান বাজানো, ড্রিলিং এগুলোর শব্দ রয়েছে৷''

উচ্চমাত্রার শব্দের কারণে মানুষের শ্রবণশক্তি হ্রাস, বধিরতা, হৃদরোগ, মেজাজ খিটখিটে হওয়া, আলসার, বিরক্তি সৃষ্টি হয়৷  সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন শিশু এবং বয়স্করা৷ এমনকি গর্ভে থাকা সন্তানও শব্দদূষণে ক্ষতির শিকার হয়, অর্থাৎ তাদের শ্রবণশক্তি খুব দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়৷ স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের নাক, কান ও গলা বিভাগের প্রধান ডা. মনি লাল আইচ লিটু বলেন, ‘‘এক গবেষণায় দেখা গেছে এইভাবে শব্দদূষণ অব্যাহত থাকলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ঢাকা শহরের মোট জনসংখ্যার তিন ভাগের এক ভাগ কানে কম শুনবে৷''

‘কোথাও কোথাও শব্দের মাত্রা গ্রহণযোগ্য মাত্রার তিনগুণেরও বেশি’

This browser does not support the audio element.

তিনি বলেন, ‘‘বয়স্ক এবং অসুস্থরা এই শব্দ দূষণের বড় শিকার৷ এছাড়া শব্দ দূষণের ফলে সড়কে দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে৷ কারণ শব্দ দূষণে মেজাজ খিটখিটে হয়, মনোযোগ নষ্ট হয়৷ শব্দের সর্বোচ্চ গ্রহণযোগ্য মাত্রা ৬০ ডেসিবেল, সেখানে ঢাকা শহরের বেশিরভাগ এলাকায় এখন শব্দের সার্বক্ষণিক গড় মাত্রা ১০০ ডেসিবেল৷''

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, আবাসিক এলাকায় শব্দের মাত্রা দিনের বেলা ৫৫ ডেসিবেল, রাতে ৪৫ ডেসিবেল হওয়া উচিত; বাণিজ্যিক এলাকায় দিনে ৬৫ ডেসিবেল, রাতে ৫৫ ডেসিবেল; শিল্পাঞ্চলে দিনে ৭৫ ডেসিবেল, রাতে ৬৫ ডেসিবেলের মধ্যে শব্দ মাত্রা থাকা উচিত৷ আর হাসপাতালে সাইলেন্স জোন বা নীরব এলাকায় দিনে ৫০, রাতে ৪০ ডেসিবেল শব্দ মাত্রা থাকা উচিত৷

বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫-এর ক্ষমতাবলে শব্দ দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা-২০০৬ প্রণয়ন করা হয়৷ বিধিমালার আওতায় নীরব, আবাসিক, মিশ্র, বাণিজ্যিক ও শিল্প এলাকা চিহ্নিত করে শব্দের মানমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে৷ আইন অমান্য করলে প্রথমবার অপরাধের জন্য এক মাস কারাদণ্ড বা অনধিক পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড এবং পরবর্তী অপরাধের জন্য ছয় মাস কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে৷ কিন্তু বাস্তবে এই আইনের তেমন প্রয়োগ দেখা যায় না৷

ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মারুফ হাসান জানান, ‘‘আইনে ধর্মীয় অনুষ্ঠানসহ আরো কিছু বিষয়ে ব্যতিক্রম আছে৷ তবে সর্বোচ্চ পাঁচ ঘণ্টা এবং রাত ১০টার পর কোনোভাবেই উচ্চ শব্দের কোনো অনুষ্ঠান করা যাবে না৷ পুলিশের স্বপ্রণোদিত হয়ে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার অধিকার আছে৷ আর পাবলিক প্লেসে অনুষ্ঠানের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আগাম অনুমতি নেয়ার বিধান রয়েছে৷''

এ বিষয়ে আপনার কোন বক্তব্য থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ