1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শব্দের স্বাধীনতার চর্চা, ‘অপচর্চা’ ও শঙ্কা

তায়েব মিল্লাত হোসেন ঢাকা
৫ মার্চ ২০২১

ভাষার প্রশ্নে নতুন করে পুরোনো বিতর্ক৷ এতে শব্দ থেকে শব্দে, বর্ণ থেকে বর্ণে প্রকাশিত হয়ে পড়ছে কারো কারো ‘সাম্প্রদায়িকতা’৷ কেউ কেউ যেনবা কণ্ঠরোধ করার ‘স্বৈরাচারী’ ভূমিকায়৷

ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman

অভিজাত শ্রেণির অন্দরমহল থেকে বাংলা ভাষার জন্ম হয়নি৷ হাজার হাজার বছরের হিসেব হাতে নিলে রাজভাষার মর্যাদার যে কাল- সেটাও বলবার মতো সময় আসলে নয়৷ কারণ, এটা সত্যিকারের সাংবিধানিক ভিত্তি পায় অর্ধশতক আগে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মধ্য দিয়ে৷ অন্যদিকে বাংলা ভাষা তার আদিকাল থেকেই লালিত-পালিত হয়েছে তৃণমূলে, মাটির কাছে৷ তাকে সইতে হয়েছে কেন্দ্রের গঞ্জনা৷ দেখতে হয়েছে দেবালয়ের চোখ রাঙানি৷ আবার বাংলার ঘরে জোর করে হানাদারের মতো ঢুকে পড়েছে বিদেশি শব্দ৷ বিপরীতে সময়ের প্রয়োজনে প্রবেশদ্বার উন্মুক্ত রাখা- এমনটাও হয়েছে৷ যার কারণে শুধু খাঁটি বাংলা শব্দ নিয়েই সমৃদ্ধ নয় বাংলাভাষা৷ আছে আরো নানান ভাষার নানান শব্দের মিশেল৷ সেটা হয়েছে হাজার হাজার বছরে, স্বতস্ফূর্তভাবে৷ আর কৃত্রিম পরিবর্তন-পরিবর্ধন কিংবা আরোপিত কিছু একটা সময়ের পর ঝরে গেছে৷ কারণ, ভাষার বিশুদ্ধতা রক্ষার যে লড়াই- সেটা ছিল হাজার বছর আগে, হোক আনুষ্ঠানিক কিংবা অনানুষ্ঠানিকভাবে, যা আজো বর্তমান, থেকে যাবে ভবিষ্যতেও৷

শুদ্ধতার চেয়েও বড় লড়াইয়ে নামতে হয়েছে বাংলার ভাষা, তার শব্দ, তার অক্ষরকে৷ কারণ, এগুলো না রাখা বা পাল্টে ফেলার চেষ্টাও কম পাওয়া যায় না ইতিহাসে৷ পাকিস্তানপর্বের শুরুতেই বাংলার বদলে পূর্ববঙ্গের বাঙালিদের কাঁধে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দু চাপানোর উদ্যোগ ঠেকাতে হয়েছে ভাষা আন্দোলন৷ সেই সময়ে বাংলা বর্ণ বদলেরও নানা চক্রান্ত ছিল৷ এ বিষয়টি এবার একুশের এক অনুষ্ঠানে স্মরণ করিয়ে দেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷

ধর্ম ছাড়া ভাষার অস্তিত্ব কল্পনা করা সম্ভব না: সোহেল হাসান গালিব

This browser does not support the audio element.

২১ ফেব্রুয়ারি তিনি বলেন, ‘‘আমাদের ভাষার উপরে আঘাত এমনভাবে এসেছে, প্রথমে এলো আরবি হরফে বাংলা লিখতে হবে৷ পরবর্তীতে ছিল লাতিন হরফে বাংলা লেখা৷ এগুলো সংগ্রাম করে ঠেকানো হয়েছে৷’’

বাংলা ভাষার উপর যখন যে আঘাত এসেছে, তাতে কখনো ছিল রাজনৈতিক কারণ, কখনো ছিল ধর্মীয় কারণ৷ কখনোবা এ দুটো বিষয় ছিল যৌথভাবেই৷ মুদ্রার অপর পিঠে বাংলা ভাষার ব্যবহারিক দিকে রাজনীতি আর ধর্ম অনেক প্রভাবশালী ভূমিকা নিয়ে বর্তমান৷ বাংলায় ধর্ম ও রাজনীতির এই প্রতাপ কেন- এমন প্রশ্নে কবি ও শিক্ষক সোহেল হাসান গালিব ডয়চে ভেলের বাংলা বিভাগকে বলেন, ‘‘ধর্ম এবং রাজনীতি আমাদের জীবনে খুবই প্রবল৷ সুতরাং যেকোনো ভাষার ক্ষেত্রেই সেটার শব্দ, বাকবিভঙ্গ, মেটাফর- এগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে ধর্ম একটা গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে৷ স্বাভাবিকভাবেই এটাকে বাদ দিয়ে কোনো ভাষার অস্তিত্ব কল্পনা করাই সম্ভব না৷ বাংলা ভাষার ক্ষেত্রেও একই কথা৷’’

কিন্তু ধর্মালয়ের ভাষা নয় বলে বাংলাকে প্রায়ই বিরূপ মনোভাবের মুখে পড়তে হয়েছে যুগের পর যুগ৷ অনেক বছর আগে এমন আচরণ করেছেন উচ্চবর্ণের হিন্দু পণ্ডিতরা৷ সংস্কৃত দিয়ে বাংলাকে শেকল পরাতে চেয়েছেন তারা৷ অন্যদিকে মধ্যযুগ থেকে পাকিস্তান পর্ব পর্যন্ত দেখা যায় আরেক ঘরানার সিলসিলা৷ আরব-ইরানের উত্তরাধিকার দাবি করা লোকগুলো বাংলাকে বরাবরই বাঁধতে চেয়েছে আরবি-ফারসি-উর্দুর সুরেছন্দে৷ এমনকি আমাদের ভেতরেই বাংলার নিন্দুক ছিল৷ তাই তো এই অমর্যাদা দেখে মধ্যযুগের কবি আবদুল হাকিম দুঃখে ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েন৷ লিখেন,

‌‘‘যে সব বঙ্গেত জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী৷

সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি৷৷’’

বাংলা ভাষায় আত্মীকৃত শব্দগুলো আর বিদেশি নয়: স্বকৃত নোমান

This browser does not support the audio element.

তবে হিংসা-দ্বেষ-শ্লেষের মাঝেও বাংলামুলুকের বহুত্ববাদী সংস্কৃতিতে তবিয়তেই টিকে থাকতে পেরেছে বাংলা ভাষা৷ এখানে প্রতিবেশী ‘জল’ খেতে চেয়ে পেয়েছে ‘পানি’৷ বিনাদ্বিধায় তা পান করে প্রাণ ভরে নিয়েছে আমজনতা৷ অথচ সমাজজীবনের সম্প্রীতির এই আবহ প্রায়ই হুমকির মুখে পড়ে যাচ্ছে রাজনৈতিক অস্থিরতায়৷ বিশেষ করে সদ্যই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বন্ধের দাবিতে আন্দোলনরত একটি পক্ষ যখন ‘জান’, ‘জবান’, ‘ইনসাফ’, ‘ইনসানিয়াত’ শব্দ ব্যানারে নিয়ে হাজির হলো মাঠে, তখন অন্য একটি পক্ষ দাঁড়িয়ে গেল, যারা অধিকার আদায়ের আন্দোলনে ’প্রাণ’, ’ভাষা’, ’ন্যায়বিচার’, ‘মানবতা’- এমন শব্দের ব্যবহারই দেখে এসেছে অনেক দিন৷ এ দুই পক্ষ অবশ্য মাঠে নয়, তর্ক-বিতর্কে মেতেছে বিভিন্ন সমাজমাধ্যমে নয়তো সংবাদমাধ্যমে৷ একপক্ষ যেনবা অনপক্ষের শব্দের স্বাধীনতা ‘কাইড়া’ নিতে চায়৷ এটা শুধু কথা নিয়েই লড়াই, নাকি জড়িয়ে আছে রাজনীতিও- জানতে চাইলে কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক স্বকৃত নোমান বলেন, ‘‘ভাষাও একটি রাজনীতি৷ যারা ভাষার রাজনীতিটা বুঝেন না, তারা রাজনীতিটাও ঠিকঠাক মতো বুঝেন না৷ সাম্প্রতিকালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিরুদ্ধে যারা আন্দোলন করেছে, তাদের একটি স্লোগান হচ্ছে জান ও জবান৷ এর বিপরীতে যখন বিতর্ক উঠলো, একটি শ্রেণি বলছে আওয়ামী লীগের মধ্যেও বাংলা শব্দ নেই৷ আওয়ামী উর্দু শব্দ, লীগ ইংরেজি শব্দ৷ আমি মনে করি, যেসব বিদেশি শব্দ বাংলা ভাষায় আত্মীকৃত হয়েছে, এগুলো আর বিদেশি নয়৷ যেমন আওয়ামী এখন আর বিদেশি শব্দ নয়, লীগও বিদেশি শব্দ নয়৷’’

তায়েব মিল্লাত হোসেন সাংবাদিক
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ