করোনা সংকটে সব দেশের অর্থনীতিই এখন বিপর্যস্ত৷ কত লাখ কল-কারখানা যে বন্ধ রয়েছে, বলা মুশকিল৷ কিন্তু ‘শয়তানের’ অনেকগুলো কারখানা এখনো খোলা৷ যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কথা শুনে এ বিষয়ে আরো নিশ্চিত হওয়া গেল৷
বিজ্ঞাপন
করোনা সংক্রমণে দু লাখেরও বেশি মানুষ মারা গেছে৷ সংক্রমণ ছড়িয়েছে কমপক্ষে ১৮৫টি দেশে৷ কোথাও কোনো উৎসব-আনন্দ নেই৷ উপাসনা, ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানও হচ্ছে সংক্রমণের হুমকির কথা মাথায় রেখে, খুব সীমিত পরিসরে৷
পরিসংখ্যান খুঁজলে দেখা যাবে এই মুহূর্তে পৃথিবীর সব দেশেই অপরাধপ্রবণতা অনেক কমেছে৷ চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি করত যারা, তারাও এখন হয়তো নিজের এবং নিজের পরিবারের, নিজের দেশের সবার সুস্থতা কামনা করছে৷ দেশে দেশে করোনা সংক্রমণে মৃতের সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে তাতে সব সুস্থ মনের মানুষ জগতের কল্যাণ চাইবে, এটাই স্বাভাবিক৷
কিন্তু ছিঁচকে চোর চৌর্যবৃত্তি বন্ধ রাখলেও, কিছু ‘বড় চোর’ তা পারেনি৷ তাই ত্রাণ চুরির অনেক ঘটনা দেখেছি৷ রমজান মাসেও মুনাফালোভীদের দাপট আমরা দেখছি৷ ভারত এবং আরো কোথাও কোথাও এই মহাসঙ্কটেও কিছু ধর্মান্ধের সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়ানোর অপচেষ্টা ব্যথিত করছে আমাদের৷ আগের তুলনায় কম হলেও সন্ত্রাসী হামলায় এখনো ঝরছে মানুষের প্রাণ - আমরা তা জেনে অবাক হচ্ছি, কষ্ট পাচ্ছি, বিষন্ন মনে ভাবছি, ‘‘এমন দুর্যোগেও মানুষ এমন করে কী করে!’’
কথায় বলে, ‘‘অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা৷’’ কথাটা সব সময়, সব পরিবেশে, সব মানুষের বেলায় আসলে খাটে না৷
অন্যের ক্ষতি করা, অন্যকে হিংসা করা, প্রতিপক্ষের সর্বনাশ করা যদি কারো ‘কাজ’ হয়, মহা দুর্যোগও তাকে কর্মহীন, অলস করতে পারে না৷ পরের অনিষ্ট সাধনের কাজ সে করে যায় ঠিকই৷
এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ মনে হয় ডনাল্ড ট্রাম্প এবং মাইক পম্পেও৷ করোনায় সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে৷ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রথমে করোনা ভাইরাসকে পাত্তা না দিয়ে কী ভুল যে করেছেন, তা বিলক্ষণ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন৷ কিন্তু নিজের ভুল স্বীকার করলে তো মুশকিল, নির্বাচনে ভরাডুবি হবে নির্ঘাত৷ তাই সারাক্ষণ তোপ দেখাচ্ছেন চীনের বিরুদ্ধে৷ নিষ্ফলা সেই তোপ৷ তাতে কোনো ক্ষতি হচ্ছে না চীনের, যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুর হারও কমছে না একেবারেই৷
হালে উত্তর কোরিয়ার দিকে খুব মনোযোগ দিয়েছেন ট্রাম্প৷ এই দুর্যোগে উত্তর কোরিয়ার কী হবে, ওরা দুর্ভিক্ষ থেকে বাঁচবে কী করে, কিম জং উন সুস্থ আছেন কিনা- এসব ভেবে ভেবে ট্রাম্প একেবারে হয়রান! পররাষ্ট্রমন্ত্রী পম্পেও গত কয়েকদিন ধরে কিম জং উনকে দেখা যাচ্ছে না কেন সেই চিন্তায় সবাইকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করছেন৷ যুক্তরাষ্ট্রে এত মানুষ মরছে, তবু ট্রাম্প, পম্পেওর ‘হুঁশ’ ফিরছে না৷ শয়তানের কিছু কারখানা কি তাহলে কোনোদিনই বন্ধ হবে না?
২০১৭ সালের ছবিঘরটি দেখুন...
উত্তর কোরিয়া ও কিম জং উনের বিশেষ কিছু জিনিস
উত্তর কোরিয়ায় যেখানে সাধারণ মানুষ নানা ধরণের সমস্যায় জর্জরিত বলে অভিযোগ রয়েছে, সেখানে নেতা কিম জং উনের আরাম-আয়েশ-বিলাসিতার কোনো কমতি নেই৷ দেখে নিন তার কিছু নমুনা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/D. Guttenfelder
অপূর্ব প্রাসাদ
উত্তর কোরিয়ার রাজধানী পিয়ং ইয়ং-এ এই বিশাল প্রাসাদ রয়েছে৷ কুমসুসান প্রাসাদটি কিম ইল সুং এর সময়ে নির্মাণ করা হয়েছে৷ বিশ্বে আর কোন কমিউনিস্ট নেতার এমন বিশাল প্রাসাদ নেই৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/D. Guttenfelder
হোটেল
রিউগইয়ং বিশ্বের সবচেয়ে বড় হোটেলগুলোর একটি৷ পিরামিড আকারের ১০৫ তলা এ হোটেলের নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৯৮৭ সালে৷ সেই সময় দেশে কিম ইল সুং এর শাসন ছিল৷ কিম ইল সুং ছিলেন কিম জং উনের দাদা৷ এখনও হোটেলের নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Yonhap
আকাশে শাসন
উত্তর কোরিয়ার কাছে বিভিন্ন ধরণের এক হাজারটি বিমান আছে, যেগুলোর বেশিরভাগ সোভিয়েত ইউনিয়ন অথবা চীনে তৈরি৷ এর মধ্যে রয়েছে যুদ্ধে ব্যবহার করা যায় এমন হেলিকপ্টার, যুদ্ধ বিমান, পরিবহন বিমান এবং ড্রোন৷ কিম জং উনের কাছে এএএম এবং ট্রিপল এ সিস্টেমের মতো কিছু বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও আছে৷
ছবি: Reuters/Kcna
স্কি রিসোর্ট
কিম জং উনের নির্দেশে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১,৩৬০ মিটার উঁচুতে মাসিকরিয়ং নামে এক জায়গায় একই নামে একটি স্কি রিসোর্ট বানানো হয়েছে৷ এই স্থানটি উত্তর কোরিয়ার সেনাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে৷ এর নির্মাণে ব্যয় হয়েছে সাড়ে তিন কোটি মার্কিন ডলার৷ পর্যটকদের জন্য এখানে ১২০ কক্ষ বিশিষ্ট হোটেল রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/Kyodo/MAXPPP
জং উনের মোবাইল নেটওয়ার্ক
শোনা যায়, উত্তর কোরিয়ায় কেবল কিম জং উন এবং তাঁর কাছের মানুষদের ব্যবহারের জন্য একটি বিশেষ মোবাইল নেটওয়ার্ক রয়েছে৷ কোরীয় লিংক নেটওয়ার্কের প্রযুক্তি পরিচালক আহমাদ আল নোয়ামিনি জানিয়েছে, সাধারণ মানুষ এই মোবাইল পরিষেবার সুবিধা ভোগ করতে পারে না৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/KCNA via KNS
ব্যক্তিগত দ্বীপ
দেশের উপকূলীয় এলাকায় একটি গোপন দ্বীপ রয়েছে৷ কিম জং উনের অতিথি হয়ে উত্তর কোরিয়া গিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের কোনো এক তারকা৷ এই দ্বীপে রাখা হয়েছিল তাঁকে৷ শোনা যায়, এখানে আনন্দ বিনোদনের সবধরনের ব্যবস্থা রয়েছে৷ কিম জং উনের ব্যক্তিগত হেলিকপ্টার অবতরণের জায়গাও রয়েছে সেখানে৷
ছবি: Tourism DPRK
গল্ফ কোর্স
কিম জং উনের উত্তর কোরিয়ায় অসাধারণ কিছু গল্ফ ক্লাব রয়েছে৷ সরকারি কর্মচারীরা গল্ফ ক্লাবগুলোকে সবসময় ঝকঝকে করে রাখে৷ গল্ফ ছাড়া উত্তর কোরিয়ায় ফুটবল, বাস্কেটবল, আইস হকি আর কুস্তি জনপ্রিয় খেলা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Kyodo
সেনা ঘাঁটি
উত্তর কোরিয়ার নৌবাহিনীতে অনেক যুদ্ধ জাহাজ, টহল নৌকা এবং বড় বড় সামরিক জাহাজ রয়েছে৷ নিজেদের সামরিক শক্তিকে শক্তিশালী করা উত্তর কোরিয়ার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য৷ পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক শক্তিশালী দেশের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েছে দেশটি৷
ছবি: REUTERS/KCNA
বিলাসবহুল গাড়ি
শোনা যায়, ২০১৪ সালে কিম জং উন ১ দশমিক ৬ কোটি মার্কিন ডলার দিয়ে গাড়ি কিনেছিলেন৷ এর মধ্যে মার্সিডিজ বেনৎস, লিমোজিন আর আছে লাক্সারি স্পোর্টস কার৷
ছবি: Getty Images/AFP/E. Jones
পিয়ানো ভীষণ পছন্দ
শোনা যায়, কিম জং উনের কাছে ২০টিরও বেশি পিয়ানো আছে৷ এমন গুজবও রয়েছে যে, তিনি প্রতিদিনই পিয়ানো বাজান, আর যদি সুরের কোনো গণ্ডগোল হয়, সেটাকে তিনি পিয়ানোর দোষ হিসেবে মনে করেন, নিজের নয়৷
ছবি: Reuters/KCNA
সাবমেরিন
কিম জং উনের কাছে সোভিয়েত আমলের কিছু পুরানো সাবমেরিন রয়েছে৷ এছাড়া দেশটির কাছে আরো বেশ কয়েকটি চীনের সাবমেরিন রয়েছে৷ আর কিছু সাবমেরিন উত্তর কোরিয়ার সেনারা নিজেরাই তৈরি করেছে৷