রাজ্যের সেরা হাসপাতালে রোগীকে ভর্তি করাতে বেগ পেতে হচ্ছে বিধায়ককে। এমন ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো নিয়ে।
বিজ্ঞাপন
রোগীর তুলনায় শয্যার সংখ্যা কম। এর ফলে মরণাপন্ন রোগীকেও ভর্তি করাতে হিমশিম খাচ্ছে পরিবার। তার উপর কেন দুর্নীতিতে অভিযুক্তরা দিনের পর দিন পশ্চিমবঙ্গের সেরা হাসপাতাল এসএসকেএমে থাকছেন, তা নিয়ে বিরোধীরা প্রশ্ন তুলছে।
হয়রান বিধায়ক
মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে রোগী ভর্তি ঘিরে ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখা যায়। এমনই অভিজ্ঞতা মুখে নদিয়ার চাকদহের বিজেপি বিধায়ক বঙ্কিম ঘোষ। তিনি এক যুবককে ভর্তি করাতে এসে কয়েকদিন ধরে ঘুরছেন এসএসকেএমে।
বিজেপির যুবকর্মী ৩২ বছরের মিলন বিশ্বাস ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত। জেলায় চিকিৎসা না হওয়ায় তাকে 'রেফার' করা হয় কলকাতায়। শহরের এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করালে ইতিমধ্যেই বিল ১০ লক্ষের আশেপাশে পৌঁছেছে বলে দাবি পরিবারের। এই পরিস্থিতিতে মিলনকে এসএসকেএমে ভর্তি করানোর উদ্যোগ নেন বিধায়ক।
কলকাতার সরকারি হাসপাতাল: অনিয়মের রাজত্বে বেহাল চিকিৎসা
সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, সরকারি হাসপাতালে তার ভুল চিকিৎসা হয়েছে। তারপর সরকারি হাসপাতাল ঘুরে দেখল ডিডাব্লিউ।
ছবি: Subrata Goswami/DW
কলকাতায় ৪৮টি সরকারি হাসপাতাল
মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেলা, মহকুমা, ব্লক, গ্রামীণ হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র- সব মিলিয়ে পশ্চিমবঙ্গের জনসাধারণের জন্য সরকারি চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে প্রায় চোদ্দ হাজারটি জায়গায়। কলকাতা শহরে ৪৮টি সরকারি হাসপাতাল সহ বেশকিছু স্বাস্থ্যকেন্দ্রও রয়েছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
অভিযোগ প্রচুর
সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে সাধারণ মানুষের অভিযোগ প্রথম থেকেই চলে আসছে। পশ্চিমবঙ্গও এর ব্যতিক্রম নয়। রোগীর তুলনায় পরিষেবার অপ্রতুলতা এবং মান নিয়ে বেজায় অসন্তুষ্ট জনগণ।
ছবি: Subrata Goswami/DW
এসএসকেএমের ছবি
পরের ছবিটি কলকাতার বিখ্যাত এসএসকেএম হাসপাতালের। সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল হিসেবে কলকাতা শহরের সবথেকে চর্চিত হাসপাতাল এই এসএসকেএম। অবস্থানগত কারণেও এখানে ভিড় সবথেকে বেশি হয়। অভিযোগ উঠছে শহরের এক নম্বর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালেও আউটডোর বিভাগে চিকিৎসকেরা প্রতিদিন দেরি করে আসছেন। ফলত রোগীর লাইন ভয়াবহ আকার নিচ্ছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
ভিআইপি ব্লক ঝকঝকে
এই এসএসকেএম হাসপাতালেই রয়েছে উডবার্ণ ব্লক। রাজ্যের নেতা মন্ত্রী আমলাদের কারনে যা এক দশক ধরে মাঝেমধ্যেই সংবাদ শিরোনামে থাকে। এই ব্লকের চিকিৎসা পরিষেবা নামি দামি বেসরকারি হাসপাতালের সমকক্ষ। প্রশ্ন উঠছে, সাধারণ মানুষ যদি এর সিকিভাগ পরিষেবাও পেত তাহলে বাংলার স্বাস্থ্যসেবার ছবিটা অন্যরকম হতো।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সাধারণ মানুষের চিকিৎসার জায়গা
সাধারণ মানুষের জন্য যে ব্যবস্থা রয়েছে তা অনেক ক্ষেত্রেই এরকম। ছবিটি চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের। এখানে চিকিৎসা করাতে আসা রোগীর অপেক্ষা করার জায়গা হয়েছে এই নোংরা অস্বাস্থ্যকর জায়গায়। যদিও হাসপাতাল চত্বর নোংরা করার দায় সাধারণ মানুষ ও কর্তৃপক্ষ দুই তরফেরই।
ছবি: Subrata Goswami/DW
মেডিকেল কলেজের হাল
হাসপাতালের এই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের দায় শুধুমাত্র প্রশাসনের নয়, সাধারণ মানুষেরও তা ওপরের ছবিতে স্পষ্ট। ছবিটি প্রায় দু-শতাব্দী পুরনো ঐতিহ্যবাহী কলকাতা মেডিকেল কলেজের।
ছবি: Subrata Goswami/DW
দালাল-চক্রের অভিযোগ
রয়েছে দালাল চক্রের অভিযোগ। কয়েকমাস আগেই দালাল চক্রের হাতে পড়ে সাগর দত্ত হাসপাতালে প্রাণ গিয়েছিল এক রোগীর। তবু দালাল চক্র বন্ধ করা যায়নি। হাসপাতালের বেড পেতে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে এই দালালেরা। এর পর ভালো পরিষেবা পাওয়ার জন্য আলাদা ভাবে টাকা।
ছবি: Subrata Goswami/DW
নয় ঘণ্টাতেও চিকিৎসা শুরু হয়নি
এই ছবিটি দুটোর সময়ের। ভোলা সাহানি নামের এই ব্যক্তি কুলিমজুরের কাজ করতে গিয়ে লরি থেকে পরে যান। ভোর পাঁচটায় তাকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। ৯ঘণ্টা পার হয়ে গেলে তার চিকিৎসা শুরু করানো যায়নি বলে অভিযোগ করছেন তার বাড়ির লোকেরা। বলছেন, সকাল থেকে তারা এই বিল্ডিং থেকে ওই বিল্ডিং-এ ঘুরে মরছেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
অভাবের কারণে
শুধুমাত্র ভালো চিকিৎসা পরিষেবার আশায় রাজ্যের বিভিন্ন অংশ থেকে রোগীরা ভিড় জমান কলকাতার নানান সরকারি হাসপাতালগুলোয়। সুমন রায় পঞ্চাশ কিলোমিটার দূর থেকে প্রতি সপ্তাহে আসেন মায়ের ওষুধ নিতে। তিনি জানালেন, বিনামূলে প্রায় সব ওষধই পান এখান থেকে। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মায়া বারুই জানালেন, ওষুধ বিনামূল্যে কিন্তু তার গুণাগুণ কম। বাইরের ওষুধ বেশি ভালো কাজ করে, কিন্তু অভাবের কারণেই এই ওষুধ নিতে এসেছেন তিনি।
ছবি: Subrata Goswami/DW
কেন এত দূরে আসা?
চল্লিশ কিলোমিটার দূরের দেগঙ্গা থেকে ফুলবাগানের শিশু হাসপাতালে সকাল বেলায় এসেছে এই পরিবার। দুপুরের খাওয়া সেরে নিচ্ছেন। চিকিৎসা করিয়ে বাড়ি ফিরতে ফিরতে সন্ধে হয়ে যাবে। জানালেন, তাদের অঞ্চলের হাসপাতালে আলাদা শিশু বিভাগ নেই তাই এত দূরে আসা।
ছবি: Subrata Goswami/DW
বাইরে ভালো, ভিতরে খারাপ
অনেকেরই অভিযোগ রয়েছে হাসপাতালের বহিরাঙ্গের সৌন্দর্যের দিকে বেশি নজর দিচ্ছে প্রশাসন। তার থেকে চিকিৎসার পরিকাঠামোর উন্নয়ন বেশি প্রয়োজন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
পুরসভার স্বাস্থ্যকেন্দ্র
কলকাতার ১৪৪টি ওয়ার্ডের সবকটিতেই ইউপিএইচসি বা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। কলকাতা মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের অধীন এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির মধ্যে কয়েকটি বেশ ভালো হলেও অধিকাংশেরই পরিষেবার মান খারাপ বলে অভিযোগ। শররবাসীদের অনেকেরই মত, যদি সঠিক স্বাস্থ্য পরিষেবা এখান থেকেই পাওয়া যেত তাহলে আর ছোটোখাটো জ্বরজ্বালার জন্য মানুষকে অনেক টাকা খরচ করে বেসরকারি ডাক্তার দেখাতে হতো না।
ছবি: Subrata Goswami/DW
যেভাবে অপেক্ষা করেন আত্মীয়রা
রোগীর অত্মীয়রা এভাবেই হাসপাতালে রাত কাটান। কোনোরকমে একটা জায়গা জোগাড় করে সেখানেই শুয়ে থাকতে হয় তাদের।
ছবি: Subrata Goswami/DW
ওপিডি-তেও প্রচুর চাপ
সরকারি হাসপাতালগুলির ওপিডি-তও প্রচুর চাপ রয়েছে। প্রচুর মানুষ সেখানে যান। তাদের দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়।
ছবি: Subrata Goswami/DW
14 ছবি1 | 14
কিন্তু যুবককে এখানে ভর্তি করাতে বেগ পেতে হচ্ছে বিধায়ককে। বঙ্কিমের বক্তব্য, "আমি একজন জনপ্রতিনিধি। আমাকেই যদি এখানে এভাবে ঘুরে বেড়াতে হয়, তা হলে সাধারণ মানুষের কী অবস্থা! কর্তৃপক্ষের আশ্বাসের পরও কাজ হয়নি।"
এসএসকেএম কর্তৃপক্ষের দাবি, বেসরকারি হাসপাতাল থেকে আসা রোগীর জন্য আইসিইউয়ে আট শতাংশের মতো শয্যা বরাদ্দ থাকে। আবেদনের ভিত্তিতে পরপর শয্যা দেয়া হয়। বিধায়কের আবেদন গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। কোনো রোগীকে শয্যা থেকে সরিয়ে জায়গা করে দেয়া সম্ভব নয়।
শয্যা অমিল
গত শনিবার এক রোগীর মৃত্যু ঘিরে একই ধরনের অভিযোগ উঠেছে। হাওড়ার বাসিন্দা আকলিমা বিবিকে শুক্রবার 'রেফার' করা হয়েছিল এসএসকেএম হাসপাতালে। এখানে শয্যা মেলেনি। তাকে 'রেফার' করা হয় ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে। সেখানেও একই পরিস্থিতি।
ফের আকলিমাকে নিয়ে এসএসকেএমে আসেন পরিজনরা। আউটডোরে দেখানো হলে চিকিৎসক জানান, ভর্তির প্রয়োজন নেই। পরিবারের দাবি, এরপর বাড়ি ফেরার আগেই অসুস্থ হয়ে পড়েন আকলিমা এবং তার মৃত্যু হয়।
শুধু এসএসকেএম নয়, কলকাতার অন্যান্য সরকারি হাসপাতালে মাঝেমধ্যেই রোগী ভর্তি নিয়ে এমন সমস্যা নজরে আসে। অনেক ক্ষেত্রেই পরিবার রোগীকে নিয়ে এক হাসপাতাল থেকে আর এক হাসপাতালে ছুটে বেড়ায়।
সরকারি হাসপাতালে এখন উন্নত চিকিৎসা মিলছে: ডা. সুদীপ্ত রায়
শাসক শিবিরে ক্ষোভ
তৃণমূল বিধায়ক ও রাজ্যের সাবেক মন্ত্রী মদন মিত্র এসএসকেএমের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান ছিলেন। কিছুদিন আগে এক রোগীকে ভর্তি করতে এসে তিনিও নাকাল হন। ক্ষোভে মদন বলেছিলেন, 'সে নো টু পিজি'। এখন এই হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন মদন সপ্তাহ দুয়েক আগে এসএসকেএমে 'দালালরাজ' নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন।
বীরভূমের তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায়ের মুখে একই ধরনের অভিযোগ শোনা গিয়েছে। রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজে রোগীকে ভর্তি করাতে পারেননি তিনি। শতাব্দীর বক্তব্য, "হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সদুত্তর না মেলায় রোগীকে নার্সিংহোমে ভর্তি করাতে হয়।" তিনি বঙ্কিম ঘোষের মতোই বলেছেন, "জনপ্রতিনিধির এই অবস্থা হলে আমজনতার কী হবে?"
শুধু ভর্তি নয়, সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই প্রশ্ন তুলেছেন। বিদেশ সফর পায়ে চোট পান মুখ্যমন্ত্রী। গত অক্টোবরে তার চিকিৎসা হয় এসএসকেএমে। তিনি পরে বলেন, "আমার ইনফেকশনটা সেপটিক টাইপের হয়ে গিয়েছিল ভুল চিকিৎসার জন্য।"
চিকিৎসা পর্যটনে ভারতের সেরা হাসপাতালগুলো
প্রতি বছর কয়েক লাখ বাংলাদেশি কেবল চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। সেখানকার চিকিৎসা পর্যটনে সেরা কয়েকটি হাসপাতালের কথা জেনে নিন ছবিঘরে৷
ছবি: Getty Images/AFP/X. Galiana
ভারতে মেডিক্যাল ভিসা
প্রতি বছর কয়েক লাখ বাংলাদেশি কেবল চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। ২০১৯ সালে মেডিক্যাল ভিসায় বাংলাদেশ থেকে ভারতে গিয়েছিলেন দুই লাখ ২৫ হাজার ৬৬৮ জন।
ছবি: Getty Images/AFP/X. Galiana
কলকাতায় ভিড় নেই
বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি রোগী কলকাতায় চিকিৎসা করাতে আসেন। এছাড়া আসেন বিপুল পরিমাণ আফগান রোগী। যে কারণে চিকিৎসা পর্যটনে কলকাতা দেশের মধ্যে অন্যতম। দক্ষিণ ভারতেও বহু রোগী চিকিৎসা করাতে যান।
ছবি: Getty Images/AFP/X. Galiana
চিকিৎসা পর্যটনের তালিকা
ভারতে বেশ কিছু সংস্থা চিকিৎসা পর্যটনের ব্যবস্থা করে। বিভিন্ন হাসপাতাল চেইনের সঙ্গে তাদের টাই আপ করা থাকে। তারই ভিত্তিতে বিদেশি রোগীদের কোন হাসপাতালে যাওয়া উচিত, তার পরামর্শ দেয় তারা।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A.Nath
এক নম্বরে অ্যাপোলো
কলকাতায় সবচেয়ে বেশি বিদেশি রোগী, বিশেষ করে বাংলাদেশের রোগী আসেন অ্যাপোলো হাসপাতালে। মাসে প্রায় ছয় হাজার রোগী গড়ে এই হাসপাতালে চিকিৎসা করান।
ছবি: DW/P. Samanta
এএমআরআই হাসপাতাল
অ্যাপোলোর পরেই রয়েছে এএমআরআই হাসপাতাল। সাধারণত এই হাসপাতালেও মাসে গড়ে পাঁচ হাজার বাংলাদেশের রোগী চিকিৎসা করাতে আসেন। এএমআরআই হাসপাতালের একাধিক ব্রাঞ্চ আছে। সল্টলেকের ব্রাঞ্চে বিদেশি রোগীর সংখ্যা বেশি। তবে এই মুহূর্তে কার্যত কোনও বিদেশি রোগী নেই এই হাসপাতালগুলিতে।
ছবি: DW/P.Samanta
রবীন্দ্রনাথ টেগোর হাসপাতাল
হার্টের চিকিৎসার জন্য বহু রোগী বিশিষ্ট চিকিৎসক দেবী শেঠির তৈরি রবীন্দ্রনাথ টেগোর হাসপাতালে যান। এছাড়াও ফোর্টিস, মেডিকা, রুবি জেনারেল হাসপাতালেও বহু বিদেশি চিকিৎসা করাতে আসেন।
ছবি: Getty Images/AFP/M. Sharma
দ্বিতীয় সারির হাসপাতাল
অ্যাপোলো বা এএমআরআই হাসপাতালে চিকিৎসার খরচ যাঁরা সামলাতে পারেন না, তাঁদের জন্য রয়েছে দ্বিতীয় সারির হাসপাতাল। ভিআইপি রোড এবং বাইপাসের ধারে এমন আরও অসংখ্য হাসপাতাল রয়েছে। রয়েছে চোখের হাসপাতালও। অপেক্ষাকৃত কম খরচে এই হাসপাতালগুলিতে বহু মধ্যবিত্ত বিদেশি চিকিৎসা করাতে আসেন।
ছবি: Getty Images/AFP/M. Sharma
ক্যান্সার চিকিৎসা
ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য অবশ্য সবচেয়ে বেশি বিদেশি মুম্বইয়ে যান, টাটার ক্যান্সার হাসপাতালে। তবে কলকাতাতেও টাটা ক্যান্সার হাসপাতাল তৈরি করেছে। এখন সেখানেও বহু বিদেশি চিকিৎসা করাতে আসছেন।
ছবি: Murali Krishnan
ভেলোর এখনও প্রথম
যাদের হাতে অর্থ বেশি, তাঁরা এখনও দক্ষিণ ভারতের ভেলোরে গিয়ে চিকিৎসা করাতে পছন্দ করেন। দক্ষিণ ভারতের ভেলোর অত্যন্ত নামকরা চিকিৎসা কেন্দ্র। বহু মানুষ মাসের পর মাস থেকে সেখানে চিকিৎসা করান। বিশেষ করে ক্রনিক অসুখের চিকিৎসায় ভেলোর এক নম্বরে।
ছবি: Getty Images/AFP/M. Vatsyayana
দক্ষিণের অ্যাপোলো, মিঅট
দক্ষিণ ভারতেও অ্যাপোলো হাসপাতালের চেইন রয়েছে। চেন্নাইয়ের অ্যাপোলো হাসপাতালে বহু বিদেশি চিকিৎসার জন্য যান। দিল্লির অ্যাপলো হাসপাতালেও প্রচুর বিদেশি রোগী চিকিৎসা করাতে আসেন। এ ছাড়াও দক্ষিণ ভারতে রয়েছে মিঅট হাসপাতাল চেইন।
ছবি: Adnan Abidi/Reuters
নেত্রালয়ে চোখ
চোখের চিকিৎসার জন্য কয়েক দশক ধরে এক নম্বর দক্ষিণ ভারতের নেত্রালয়। তবে গত কয়েক বছরে কলকাতাতেও বেশ কিছু ভালো চোখের হাসপাতাল তৈরি হয়েছে। দিশা, প্রিয়ম্বদা বিড়লা এর মধ্যে অন্যতম। নেত্রালয়ের ব্রাঞ্চ তৈরি হয়েছে কলকাতায়।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/C. Anand
সরকারি হাসপাতাল
বিদেশি রোগীরা ভারতের সরকারি হাসপাতালে খুব বেশি যান না। তবে অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট ফর মেডিক্যাল সায়েন্সে (এইমস) কিছু কিছু বিদেশি রোগী দেখা যায়। অন্য হাসপাতাল থেকে রেফার করলে তবেই তারা এইমসে আসেন।
সরকারি হাসপাতাল চিকিৎসা পর্যটনে নেই
চিকিৎসা পর্যটনের সঙ্গে বিশাল অঙ্কের ব্যবসা জড়িত। ফলে বিদেশি রোগীদের ভারতের সরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয় না। বস্তুত, ভারতের সরকারি হাসপাতালগুলিতে বেড পাওয়াও খুব কঠিন। তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের বক্তব্য, এখনও দেশের সরকারি হাসপাতালগুলি যে কোনও বেসরকারি হাসপাতালের চেয়ে অনেক এগিয়ে।
ছবি: picture-alliance/dpa
13 ছবি1 | 13
'রেফার' রোগ
জেলা থেকে যথেচ্ছ রোগীদের 'রেফার' করা হচ্ছে বলে সমস্যা বাড়ছে বলে অনেকের মত। এই সমস্যা কাটাতে স্বাস্থ্যভবন দুটি তালিকা জারি করে বলে, কোন চিকিৎসা জেলায় করা হবে ও কোনটি কলকাতায় করা জরুরি। যদিও 'রেফার'-এর প্রবণতা রয়ে গিয়েছে।
এসএসকেএমের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান ও তৃণমূল বিধায়ক ডা. সুদীপ্ত রায় বলেন, ‘‘সরকারি হাসপাতালে এখন উন্নত চিকিৎসা মিলছে। তাই প্রচন্ড ভিড় হচ্ছে। এসএসকেএমে আউটডোরে রোজ ১০ থেকে ১২ হাজার রোগী আসেন। ভর্তিযোগ্য সব রোগীর জন্য বেডের সংকুলান করা যাচ্ছে না। হাসপাতালের পরিসর বাড়ানো সম্ভব নয়। তাই জেলার হাসপাতালগুলিকে উন্নত করার চেষ্টা চলছে।"
সার্ভিস ডক্টরস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ডা. সজল বিশ্বাস ডয়চে ভেলেকে বলেন, "জেলা হাসপাতালে সব রোগের চিকিৎসার পরিকাঠামো নেই। তাই পরিকাঠামো গড়ে তুলতে হবে, নইলে প্রয়োজনে রেফার করতেই হবে। রোগীকে তো আর জেলায় রেখে মেরে ফেলা যায় না! পরিকাঠামো থাকা সত্ত্বেও রেফার হলে খতিয়ে দেখা দরকার।"
রাজনৈতিক 'আশ্রয়'
বিরোধীরা হাসপাতালের 'রাজনৈতিক ব্যবহার’ নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র এসএসকেএমে ভর্তি রয়েছেন। তাকে কেন শিশুদের জন্য বরাদ্দ কার্ডিওলজির শয্যা দেয়া হয়েছে, তা নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন কর্তৃপক্ষ।
বঙ্কিম ঘোষের বক্তব্য, ‘‘সুজয়কৃষ্ণের মতো দুর্নীতিতে অভিযুক্তরা আশ্রয় পাচ্ছেন হাসপাতালে। প্রকৃত রোগীদের বঞ্চিত করে তাদের বেড দেয়া হচ্ছে।’’ শাসক শিবিরের মতে, চিকিৎসার প্রয়োজনে কাউকে আইসিইউতে রাখা হতেই পারে।
ভদ্র যখন শিশুদের শয্যায়, সে সময় খবর আসে, মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে ২৪ ঘন্টায় নয় শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সেখানে শিশু রোগীর প্রচুর চাপ। এই শিশুদের একজন কি এসএসকেএমের শয্যায় ঠাঁই পেতে পারত না? প্রশ্ন উঠছে।