রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী অভিবাসীদের আবেদন গ্রহণ না হওয়া পর্যন্ত তাদের ডিটেনশন সেন্টারে রাখার ঘোষণা দিয়েছে বুদাপেস্ট৷ হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ওরবান অবশ্য মনে করেন, এই সিদ্ধান্তের কারণে ইইউর সঙ্গে তাঁর দেশের মতবিরোধ বাড়বে৷
ছবি: DW/A.V. Pal
বিজ্ঞাপন
হাঙ্গেরি বৃহস্পতিবার ঘোষণা দিয়েছে, দেশটির সীমান্তে তৈরি বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে শিপিং কন্টেইনারের মধ্যে সকল রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী অভিবাসীকে রাখা হবে৷ যারা রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন, তাদের সবাইকে কন্টেইনারে পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে দেশটি, এমনকি যারা বর্তমানে অন্যত্র রয়েছেন তাদের ক্ষেত্রেও এটা প্রযোজ্য হবে৷
ইউরোপে শরণার্থী সংকট কীভাবে শুরু হয়েছিল?
মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকায় সহিংসতা বৃদ্ধি থেকে ইউরোপের অসংলগ্ন শরণার্থী নীতি অবধি ইউরোপে শরণার্থী সংকটে কারণগুলো তুলে ধরা হয়েছে এই ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
যুদ্ধ এবং দারিদ্র্যতা থেকে পালানো
২০১৪ সালের শেষের দিকে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ চতুর্থ বছরে পা দেয়ার প্রাক্কালে এবং দেশটির উত্তরাঞ্চলে তথাকথিত ‘ইসলামিট স্টেট’-এর বিস্তার ঘটার পর সিরীয়দের দেশত্যাগের হার আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যায়৷ একইসময়ে সহিংসতা এবং দারিদ্র্যতা থেকে বাঁচতে ইরাক, আফগানিস্তান, ইরিত্রিয়া, সোমালিয়া, নিগার এবং কসভোর অনেক মানুষ ইউরোপমুখী হন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সীমান্তের ওপারে আশ্রয় খোঁজা
সিরীয় শরণার্থীদের অধিকাংশই ২০১১ সাল থেকে সে দেশের সীমান্ত সংলগ্ন তুরস্ক, লেবানন এবং জর্ডানে আশ্রয় নিতে শুরু করেন৷ কিন্তু ২০১৫ সাল নাগাদ সেসব দেশের শরণার্থী শিবিরগুলো পূর্ণ হয়ে যায় এবং সেখানকার বাসিন্দারা সন্তানদের শিক্ষা দিতে না পারায় এবং কাজ না পাওয়ায় এক পর্যায়ে আরো দূরে কোথাও যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পায়ে হেঁটে লম্বা পথ পাড়ি
২০১৫ সালে ১৫ লাখের মতো শরণার্থী ‘বলকান রুট’ ধরে পায়ে হেঁটে গ্রিস থেকে পশ্চিম ইউরোপে চলে আসেন৷ সেসময় ইউরোপের শেঙেন চুক্তি, যার কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত অধিকাংশ দেশের মধ্যে ভিসা ছাড়াই চলাচাল সম্ভব, নিয়ে প্রশ্ন ওঠে৷ কেননা শরণার্থীরা গ্রিস থেকে ধীরে ধীরে ইউরোপের অপেক্ষাকৃত ধনী রাষ্ট্রগুলোর দিকে আগাতে থাকেন৷
ছবি: Getty Images/M. Cardy
সমুদ্র পাড়ির উন্মত্ত চেষ্টা
সেসময় হাজার হাজার শরণার্থী ‘ওভারক্রাউডেড’ নৌকায় করে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে শুরু করেন৷ লিবিয়া থেকে ইটালি অভিমুখী বিপজ্জনক সেই যাত্রায় অংশ নিতে গিয়ে ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে সাগরে ডুবে যায় অন্তত আটশ’ মানুষ৷ আর বছর শেষে ভূমধ্যসাগরে ডুবে মরা শরণার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় চার হাজার৷
ছবি: Reuters/D. Zammit Lupi
সীমান্তে চাপ
ইউরোপের বহির্সীমান্তে শরণার্থীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় কয়েকটি রাষ্ট্র চাপে পড়ে যায়৷ হাঙ্গেরি, স্লোভেনিয়া, ম্যাসিডোনিয়া এবং অস্ট্রিয়া এক পর্যায়ে সীমান্তে বেড়া দিয়ে দেয়৷ শুধু তাই নয়, সেসময় শরণার্থী আইন কঠোর করা হয় এবং শেঙেনভুক্ত কয়েকটি দেশ সাময়িকভাবে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করে৷
ছবি: picture-alliance/epa/B. Mohai
বন্ধ দরজা খুলে দেয়া
জার্মান চ্যান্সেল আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সমালোচকরা মনে করেন, তাঁর ‘ওপেন-ডোর’ শরণার্থী নীতির কারণে বিপজ্জনক পথ পেরিয়ে অনেক শরণার্থীই ইউরোপে আসতে উৎসাহ পেয়েছেন৷ এক পর্যায়ে অবশ্য অস্ট্রিয়ার সঙ্গে সীমান্ত পথ নিয়ন্ত্রণ শুরু করে জার্মানিও৷
ছবি: Reuters/F. Bensch
তুরস্কের সঙ্গে চুক্তি
২০১৬ সালের শুরুতে ইইউ এবং তুরস্কের মধ্যে একটি চুক্তি হয়৷ এই চুক্তির আওতায় গ্রিসে আসা শরণার্থীদের আবারো তুরস্কে ফিরিয়ে নেয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়৷ তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই চুক্তির বিরোধিতা করে৷ নভেম্বর মাসে অবশ্য তুরস্কের ইইউ-তে প্রবেশের সম্ভাব্যতা নিয়ে আলোচনা স্থগিত ঘোষণার পর, সেই চুক্তি আবারো নড়বড়ে হয়ে গেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Altan
পরিস্থিতি বদলের কোনো লক্ষণ নেই
ইউরোপজুড়ে অভিবাসীবিরোধী মানসিকতা বাড়তে থাকলেও সরকারগুলো সম্মিলিতভাবে শরণার্থী সংকট মোকাবিলার কোনো সঠিক পন্থা এখনো খুঁজে পাননি৷ কোটা করে শরণার্থীদের ইইউ-ভুক্ত বিভিন্ন রাষ্ট্রে ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা কার্যত ব্যর্থ হয়েছে৷ মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে চলমান সহিংসতার ইতি ঘটার কোনো লক্ষণও নেই৷ ওদিকে, সমুদ্র পাড়ি দিতে গিয়ে শরণার্থীদের মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়তে শুরু করেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Mitrolidis
8 ছবি1 | 8
শরণার্থীদের প্রতিরোধে দেশটির ডানপন্থি প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবান সম্প্রতি বেশ কিছু কঠোর উদ্যোগ গ্রহণের ঘোষণা দেন৷ শিপিং কন্টেইনারে অভিবাসন প্রত্যাশীদের রাখার সিদ্ধান্ত সেসব উদ্যোগের প্রতিফলন৷ শরণার্থী ইস্যুতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-এর সামগ্রিক নীতির কঠোর বিরোধী তিনি৷ কোটা পদ্ধতিতে শরণার্থীদের বিভিন্ন দেশে ভাগ করে দেয়ার যে সিদ্ধান্ত ইইউ নিয়েছিল, সেটি নিজের দেশে কার্যকর করেননি৷ এমনকি ইইউ’র বিরোধিতা সত্ত্বেও সার্বিয়ার সঙ্গে সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছে হাঙ্গেরি৷
ওরবানের চিফ অব স্টাফ জেনোস লেজার গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘‘মানুষের মুক্তভাবে ঘোরাঘুরির অধিকার বাতিল করা হবে৷ তারা শুধুমাত্র তাদের জন্য নির্ধারিত জায়গায় থাকতে পারবে৷’’
তিনি বলেন, ‘‘নির্ধারিত জায়গা হচ্ছে রাষ্ট্রের সীমান্ত৷ সেখানে ২০০-৩০০ মানুষ থাকতে পারেন, এমন কন্টেইনার স্থাপন করা হবে৷ রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের আইনি প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকতে হবে৷’’
প্রসঙ্গত, গত বছর ৩০,০০০ শরণার্থী হাঙ্গেরিতে রাজনৈতিক আশ্রয়ের প্রার্থনা করেন৷ কিন্তু দেশটি মাত্র ৪২৫টি আবেদন গ্রহণ করেছে৷