প্রথমে শরণার্থীদের জন্য হৃদয় ও সীমানা খুলে দিয়েছিলেন চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ কিন্তু ঘরে-বাইরে প্রবল চাপের মুখে তাঁকে পিছু হঠতে হচ্ছে৷ শরণার্থীদের ভার সামলাতে না পেরে জার্মানি সীমান্তে কড়াকড়ি বাড়াচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির অর্থমন্ত্রী ভল্ফগাং শয়েবলে শরণার্থীদের ঢলকে তুষার ধসের সঙ্গে তুলনা করে চাপের মুখে আবার কিছুটা পিছু হঠেছেন৷
এর আগে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সিরীয় শরণার্থীদের জন্য আরও কড়া নিয়ম ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য জার্মানির দরজা বন্ধ করার কথাও বলেছেন৷ জোটসঙ্গী সিএসইউ দল শুরু থেকেই ম্যার্কেল-এর উদার শরণার্থী নীতির তুমুল বিরোধিতা করে চলেছে৷ যে ডাবলিন চুক্তির ভিত্তিতে শরণার্থীদের ইউরোপের প্রবেশদ্বারেই নথিভুক্ত করে তাদের দায়দায়িত্ব সেই দেশের কাঁধেই চাপিয়ে দেওয়া হতো, সেই চুক্তির ক্ষেত্রেও শিথিল মনোভাব দেখিয়েছেন ম্যার্কেল৷ এবার সেই চুক্তিকে আবার গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, সীমান্তে কড়াকড়িও বাড়ছে৷
এই অবস্থায় প্রশ্ন উঠছে, জার্মানি কি সিরীয় শরণার্থীদের ফিরিয়ে দেবার নীতি গ্রহণ করছে?
ম্যার্কেল-এর সার্বিক পররাষ্ট্র নীতি থেকে জার্মানি সরে আসছে বলে মন্তব্য করেছে ডেয়ার স্পিগেল পত্রিকার অনলাইন ইংরেজি সংস্করণ৷
জার্মানির দেখাদেখি ইউরোপের অন্য কিছু দেশও কড়াকড়ি বাড়াচ্ছে৷
ম্যার্কেল-এর কমে চলা প্রভাব সম্পর্কেও জল্পনা-কল্পনা বাড়ছে৷
উদ্বাস্তু পরিস্থিতি ও জার্মান রাজনীতি
জার্মানিতে বিপুল সংখ্যক শরণার্থীদের আগমন শুধু সরকারি ব্যবস্থাপনাকেই বিপদের মুখে ফেলেনি, অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও তার ছাপ ফেলেছে: চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল-এর জনপ্রিয়তা আজ কমতির দিকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Gebert
উদ্বাস্তু শিবিরে দাঙ্গা
হামবুর্গ শহরের ভিলহেল্মসবুর্গ এলাকায় শরণার্থীদের প্রাথমিক আশ্রয়কেন্দ্রটি ভরে যাওয়ায় আগন্তুকদের তাঁবুতে থাকার ব্যবস্থা করা হয়৷ মঙ্গলবার (৬ই অক্টোবর) সেখানে আফগানিস্তান ও আলবেনিয়া থেকে আগত উদ্বাস্তুদের মধ্যে ব্যাপক দাঙ্গা বাঁধে৷ লোয়ার স্যাক্সনি-র ব্রাউনশোয়াইগ-এও অনুরূপভাবে আলজিরীয় ও সিরীয় উদ্বাস্তুদের মধ্যে দাঙ্গা বাঁধে একটি চুরির অভিযোগকে কেন্দ্র করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Charisius
ইসলাম বিরোধীরা আবার মাথা চাড়া দিয়েছে
ড্রেসডেনে ইসলাম বিরোধী পেগিডা গোষ্ঠীর বিক্ষোভ সমাবেশে গত সোমবার প্রায় ন’হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করেন৷ বিক্ষোভকারীরা মূলত চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল-কেই বর্তমান উদ্বাস্তু সংকটের জন্য দায়ী করছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Settnik
ম্যার্কেল লাগাম টানলেন
চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল দৃশ্যত তাঁর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টোমাস ডেমেজিয়ের-এর গুরুত্ব কিছুটা খর্ব করে চ্যান্সেলরের দপ্তরের প্রধান পেটার আল্টমায়ার-কে শরণার্থী সংক্রান্ত কর্মকাণ্ড সমন্বয়ের দায়িত্ব দিয়েছেন৷
ছবি: Reuters
উদ্বাস্তুর লাশ
টুরিঙ্গিয়া রাজ্যের সালফেল্ড-এ অবস্থিত একটি রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী আবাসে সোমবার একটি অগ্নিকাণ্ডের পর ২৯ বছর বয়সি এক ইরিট্রিয়ান উদ্বাস্তুর লাশ পাওয়া যায়৷ কিভাবে এই শরণার্থী প্রাণ হারিয়েছেন, তা এখনও অজ্ঞাত৷ তবে আবাসটিতে ইচ্ছাকৃতভাবে অগ্নিসংযোগের কোনো হদিশ পুলিশ এখনও পায়নি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
যে কোনো পন্থায়
টুরিঙ্গিয়ায় এর আগেও উদ্বাস্তু আবাস হিসেবে চিহ্নিত বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে শরণার্থীদের আসা বন্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে৷ যেমন বিশহাগেন-এর এই বাড়িটির ছাদ পুরোপুরি পুড়ে গিয়েছে৷ গত সোমবার এখানে প্রথম উদ্বাস্তুদের আসার কথা ছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Gränzdörfer
ঘরে বাইরে
শরণার্থী সংকট এখন জার্মানির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও টান ধরাচ্ছে৷ চ্যান্সেলর ম্যার্কেলের সিডিইউ দলের জোড়োয়া দল বাভারিয়ার সিএসইউ৷ তাদের প্রধান হর্স্ট জেহোফার সেপ্টেম্বর মাসের শেষে একটি দলীয় সম্মেলনে বক্তা হিসেব আমন্ত্রণ জানান হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অর্বান-কে, যিনি সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে উদ্বাস্তুর স্রোত আটকানোর চেষ্টা করেছেন৷
ছবি: Reuters/M. Dalder
হাওয়া যদি বদলায়
বাভারিয়ার অর্থমন্ত্রী মার্কুস জ্যোডার ইতিপূর্বেও বলেছেন: ‘‘আমরা (অর্থাৎ জার্মানি) বিশ্বকে বাঁচাতে পারি না৷’’ এমনকি তিনি অস্ট্রিয়া সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার কথাও চিন্তা করেছেন৷ তবে জ্যোডার যখন সম্প্রতি রাজনৈতিক আশ্রয় প্রাপ্তির সাংবিধানিক অধিকার সীমিত করার কথা বলেন, তখন জেহোফার স্বয়ং সাথে সাথে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Gebert
7 ছবি1 | 7
সংকলন: সঞ্জীব বর্মন
সম্পাদনা: জাহিদুল হক
সত্যিই কি শরণার্থী প্রশ্নে দমে এসেছেন চ্যান্সেলর ম্যার্কেল? জানিয়ে দিন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷