‘শরণার্থীদের ওপর গ্যাস প্রয়োগ করা যেতে পারে’, এমন মন্তব্য করায় জার্মানির কট্টর ডানপন্থি দল অলটারনেটিভ ফর ডয়েচলান্ড- এএফডির এক সাবেক মুখপাত্রকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে৷ ক্রিস্টিয়ান ল্যুঠ দীর্ঘদিন দলটির মুখপাত্র ছিলেন৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির গণমাধ্যম সাইট-এর অনলাইন ভার্সনে বলা হয়, গত ফেব্রুয়ারিতে এক নারী ইউটিউবারের সঙ্গে কথা বলার সময় ল্যুঠ এমন মন্তব্য করেন৷ জার্মানির মিডিয়া জায়ান্ট প্রোসিবেন এক টিভি ডকুমেন্টারিতে এই মন্তব্য প্রচার করেছে৷
এএফডির পার্লামেন্টারি দলের সহনেতা আলেক্সান্ডার গাউলান্ড বলেছেন, ‘‘ল্যুঠ যা বলেছেন বলে বলা হচ্ছে, তা এএফডির লক্ষ্য ও নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং অগ্রহণযোগ্য৷’’
এক বিবৃতিতে গাউলান্ড জানান, ল্যুঠের এমন মন্তব্য তিনিও ‘সমর্থন করেন’, এমন অভিযোগও একেবারেই ‘কল্পনাপ্রসুত এবং ভ্রান্ত’৷
কী বলেছিলেন ল্যুঠ?
২৩ ফেব্রুয়ারি ইউটিউব ইনফ্লুয়েন্সার লিসা লিসেন্তিয়ার সঙ্গে বার্লিনের নিউটন বারে সাক্ষাৎ করেন ল্যুঠ৷ সেই সাক্ষাতে ল্যুঠ নানা উসকানিমূলক কথা বলেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে৷
সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, সেই সাক্ষাতে ল্যুঠ বলেন, ‘‘জার্মানির জন্য পরিস্থিতি যত খারাপ হবে, এএফডির জন্য তা ততটাই ভালো৷’’ পরিস্থিতি খারাপ না হলে এএফডি কেবল ৩ শতাংশ ভোট পেত বলেও মন্তব্য করেন তিনি৷
লিসেন্তিয়া এ সময় জিজ্ঞেস করেন, জার্মানি আরো শরণার্থী নিক এটা এএফডি চায় কিনা৷ উত্তরে ল্যুঠ বলেন, ‘‘অবশ্যই, কারণ, এএফডি তাদের ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে৷’’
জার্মান ব্লুকার্ড বেশি পাচ্ছেন কোন দেশের নাগরিকরা?
জার্মান অভিবাসী ও শরণার্থী মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী দেশটি ২০১৮ সালে ২৭ হাজার ইউরোপের বাইরের নাগরিককে ব্লুকার্ড দিয়েছে৷ ছবিঘরে দেখুন কোন দেশের নাগরিকরা এ সময়ে সবচেয়ে বেশি ব্লুকার্ড পেয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/chromorange
ভারত
তালিকায় প্রথম স্থানে রয়েছে আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত৷ জার্মান মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী ২০১৮ সালে দেশটির প্রায় সাত হাজার জন নাগরিককে ব্লু কার্ড দেওয়া হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/P. Gill
চীন
তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে চীন৷ উল্লেখিত সময়ে প্রায় দুই হাজার চীনা অভিবাসী এ সুবিধা পেয়েছে৷
ছবি: Imago Images/Xinhua/W. Lie
রাশিয়া
ব্লুকার্ড প্রাপ্তির দিক থেকে তৃতীয় অব্স্থানে রয়েছে রাশিয়া৷ তথ্য বলছে, ২০১৮ সালে রাশিয়ার এক হাজার ছয়’শ তিন জন নাগরিক জার্মান ব্লুকার্ড পেয়েছে৷
ছবি: DW/S. Dick
তুরস্ক
তুরস্কের প্রায় এক হাজারের অধিক নাগরিক ২০১৮ সালে জার্মান ব্লুকার্ড পেয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AA/E. Yildirim
ব্রাজিল
ব্লুকার্ড প্রাপ্তির দিক থেকে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে ব্রাজিল৷ ২০১৮ সালে দেশটির এক হাজার নাগরিক জার্মান ব্লুকার্ড পেয়েছে৷
ছবি: Reuters/P. Olivares
বাড়ছে জনপ্রিয়তা
২০১২ সালে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন দক্ষ অভিবাসীদের ব্লুকার্ড প্রদান সংক্রান্ত আইন প্রণয়নের পর থেকে জার্মানিতে ব্লুকার্ড দেওয়ার হার ক্রমান্বয়ে বাড়ছে৷ পরিসংখান বলছে ২০১৩ সালে মোট ১১ হাজার অ-ইউরোপীয়কে ব্লুকার্ড প্রদান করেছিল জার্মানি৷ আর ২০১৮ সালে তা দাঁড়ায় ২৭ হাজার-এ৷
ছবি: picture-alliance/chromorange
6 ছবি1 | 6
পরে তিনি বলেন, ‘‘আমরা পরে তাদের সবাইকে গুলি করতে পারবো৷ এটা কোনো ব্যাপারই না৷ অথবা তাদের ওপর গ্যাসপ্রয়োগ বা অন্য যা ইচ্ছা করা যেতে পারে৷ আমার কাছে সবই এক৷’’
প্রোসিবেন অবশ্য কোনো ব্যক্তির নাম প্রকাশ না করে তাদের ‘ফার রাইট, জার্মান, র্যাডিক্যাল’ নামের ডকুমেন্টারিতে অডিওর ব্যক্তিকে ‘এএফডির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা’ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে৷
তবে সাইট পত্রিকা জানিয়েছে আরো অনুসন্ধানের পর তারা অডিওতে কথা বলা ব্যক্তির পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছে৷ ‘বিশেষ জনস্বার্থের’ কথা বিবেচনায় সেই ব্যক্তির নাম ও পরিচয় প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছে পত্রিকাটি৷
উগ্র ডানপন্থিদের বিষয়ে ১৮ মাসের গবেষণা শেষে সাংবাদিক থিলো মিশকে এ ডকুমেন্টারিতে প্রশ্ন তুলেছেন, ‘জার্মানির উদার গণতন্ত্র কি হুমকির মুখে?’
বিতর্কিত ইতিহাস
২০১৩ সালে গঠনের পর থেকেই ল্যুঠ এএফডির সঙ্গে আছেন৷ এপ্রিলেই তাকে মুখপাত্রের পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়৷ তখন তার বিরুদ্ধে নিজেকে ‘ফ্যাসিবাদী’ বলে পরিচয় দেয়ার অভিযোগ ওঠে৷
বর্তমানে জার্মান পার্লামেন্ট বুন্ডেসটাগে প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকায় আছে এএফডি৷ দলটির সাবেক নেতা ফ্রাউকে পেট্রি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ২০১৬ সালে দলটির নির্বাহীরা ল্যুঠের ‘নাৎসি স্যালুট দেয়াসহ’ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানতেন৷
উগ্রপন্থার উত্থান
ঠিলো মিশকে তার ডকুমেন্টারিতে বর্ণনা করেছেন, কিভাবে উগ্রপন্থার উত্থান ঘটছে৷ তিনি দেখিয়েছেন কিভাবে উগ্র ডানপন্থি বিভিন্ন গ্রুপ সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে৷
মিশকে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বিভিন্নভাবে তারা নেটওয়ার্ক তৈরি করে, যেমন করোনা ভাইরাসের সময় সরকারের নানা পদক্ষেপবিরোধী বিক্ষোভ৷ এভাবে তারা নতুন নতুন পন্থা অবলম্বন করে আমাদের সমাজের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ধ্বংস করতে চায়৷’’
মিশকেকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এএফডির শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত ঠুরিঙ্গিয়া রাজ্যের গোয়েন্দা প্রধান স্টেফেন ক্রামার কয়েক বছরের মধ্যে এমন পরিবর্তন দেখে নিজের উদ্বেগের কথা জানিয়ছেন৷
এডিকে/এসিবি (ডিপিএ, এএফপি)
২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারির ছবিঘরটি দেখুন...
এএফডি নেতাদের আপত্তিকর যত মন্তব্য
জার্মানির ডানপন্থি পপুলিস্ট পার্টি অল্টারনেটিভ ফর জার্মানির (এএফডি) নেতারা গত কয়েকমাস ধরে একের পর এক উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন৷ তাদের সেরকম কয়েকটি বক্তব্য এখানে তুলে ধরা হলো৷
ছবি: picture alliance/ZB/H. Schmidt
ফ্রাউকে পেট্রি
‘অবৈধভাবে জার্মানিতে প্রবেশকারী শরণার্থীদের দিকে গুলি ছোড়া উচিত জার্মানির বর্ডার পুলিশের’, বলেছিলেন এএফডি’র কো-চেয়ার৷ ২০১৬ সালে জার্মানির একটি আঞ্চলিক পত্রিকাকে তিনি জানান, পুলিশ অফিসাররা সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে প্রয়োজনে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করতে পারে৷ সর্বশেষ সাবেক কমিউনিস্ট পূর্ব জার্মানির নেতা এরিক হ্যোনেকার এ ধরনের কথা বলেছেন৷
ছবি: Getty Images/T. Lohnes
বও্যর্ন হ্যোকে
জার্মানির থ্যুরিঙ্গা রাজ্যের এএফডির প্রধান বার্লিনের হলোকস্ট মেমোরিয়ালকে ‘মন্যুমেন্ট অফ শেইম’ আখ্যা দিয়ে জার্মানিতে নাৎসি অতীতের জন্য প্রায়শ্চিত্ত করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন৷ গুরুত্বপূর্ণ এক নির্বাচনের বছরে এই মন্তব্য করায় তাকে বহিস্কার করার পথে যেতে বাধ্য হয়েছেন এএফডির সদস্যরা৷
ছবি: picture-alliance/Arifoto Ug/Candy Welz
আলেক্সান্ডার গাউলান্ড
এএফডির ডেপুটি চেয়ারম্যান আলেক্সান্ডার গাউলান্ড গতবছর বলেন, জার্মানির জাতীয় ফুটবল দলের রক্ষণভাগের খেলোয়াড় জ্যেরম বোয়াটেংকে তাঁর পারফর্মেন্সের জন্য অনেকে প্রশংসা করলেও, তাঁর মতো কাউকে কেউ প্রতিবেশী হিসেবে চাইবে না৷ কৃষ্ণাঙ্গ বোয়াটেংকে নিয়ে এমন মন্তব্য সমালোচনার ঝড় তোলে জার্মানিতে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Murat
বিট্রিক্স ফন স্টর্চ
প্রাথমিকভাবে এএফডি ইউরো এবং বেইলআউটের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়েছিল৷ কিন্তু পরবর্তীতে দ্রুতই শরণার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় দলটি৷ ইউরোপের এই আইনপ্রণেতা বলেছেন, ‘‘যারা সীমান্তে আমাদের থামার নির্দেশ গ্রহণ করে না, তারা আক্রমণকারী৷ আর সেসব আক্রমণকারীকে প্রতিহত করতে হবে৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Murat
মার্কুস প্রেতজেল
এএফডির নর্থ রাইন-ওয়েস্টফেলিয়া রাজ্যের চেয়ারম্যান মার্কুস প্রেতজেল৷ ফ্রাউকে পেট্রির নতুন স্বামীও তিনি৷ বার্লিনে গত বছর ক্রিসমাস মার্কেটে প্রাণঘাতি হামলার পর তার মন্তব্য, ‘‘ম্যার্কেলের কারণেই প্রাণ হারিয়েছে এরা৷’’
ছবি: picture alliance/dpa/M. Murat
আন্দ্রে ভেন্ডট
স্যাক্সনি রাজ্যের সাংসদ সম্প্রতি জানতে চেয়েছেন অভিভাবকহীন অপ্রাপ্তবয়স্ক শরণার্থীর পেছনে রাষ্ট্র কতটা খরচ বহন করবে৷ তাঁর এই বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা হয়েছে৷ গত বছরের জুলাই অবধি ৫২,০০০ অভিভাবকহীন অপ্রাপ্তবয়স্ক শরণার্থী জার্মানিতে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছে৷