জার্মানিতে শরণার্থীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে৷ তাদের জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে হিমশিম খাচ্ছে জার্মান সরকার৷ ফলে অনেক সময় শরণার্থীরা থাকার জায়গা পাচ্ছেন না৷
বিজ্ঞাপন
এই অবস্থায় এগিয়ে এসেছেন জার্মান নাগরিক ইয়োনাস কাকোষ্কে৷ তিনি তাঁর নিজের ফ্ল্যাটের একটি ঘরে আফ্রিকার মালি থেকে আসা বাকারি নামের এক শরণার্থীকে থাকতে দিয়েছেন৷ তাঁরা দু'জন এখন ঐ ফ্ল্যাট শেয়ার করে একসঙ্গে থাকছেন৷ বাকারি যে ঘরে থাকেন সেটার ভাড়া জোগাড়ের জন্য কাকোশকে তাঁর বন্ধু-বান্ধবদের দানের উপর নির্ভর করেন৷
বাংলাদেশে শরণার্থী, বাংলাদেশের শরণার্থী
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা, ইউএনএইচসিআর-এর এক প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বের শরণার্থী আশ্রয়দাতা দেশের তালিকায় নবম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ৷ তেমনি বাংলাদেশ থেকেও অনেকে বিশ্বের অন্যান্য দেশে শরণার্থী হয়ে যাচ্ছেন৷
ছবি: Reuters
বাংলাদেশ নবম
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর ‘গ্লোবাল ট্রেন্ডস-২০১৩’ শীর্ষক বার্ষিক প্রতিবেদনে বলছে, বিশ্বের শরণার্থী আশ্রয়দাতা দেশের তালিকায় বাংলাদেশের স্থান নবম৷ প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের অর্থনীতির তুলনায় ধারণক্ষমতার দিকে থেকে বাংলাদেশ পৃথিবীর নবম শরণার্থী আশ্রয়দাতা দেশ৷
ছবি: Shaikh Azizur Rahman
কতজন শরণার্থী?
দক্ষিণ-পূর্ব বাংলাদেশে দুটি সরকারি শরণার্থী শিবিরে ৩০ হাজারের মতো মিয়ানমারের (রোহিঙ্গা) শরণার্থী বসবাস করছে বলে জানিয়েছে ইউএনএইচসিআর-এর প্রতিবেদন৷ শিবিরের বাইরে আছে আরও দুই থেকে পাঁচ লাখ অনিবন্ধিত ব্যক্তি৷
ছবি: AP
আশ্রয়প্রার্থী
হ্যাঁ৷ বাংলাদেশেও কেউ কেউ আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন৷ ইউএনএইচসিআর ওয়েবসাইটের বাংলাদেশ পাতায় এমন আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা নয়জন বলে জানানো হয়েছে৷ ২০১৪ সালের ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত সংখ্যাটা এমন ছিল বলে উল্লেখ করা হয়৷
ছবি: DW/Shaikh Azizur Rahman
বাংলাদেশের শরণার্থী
উন্নত জীবনের আশায় বাংলাদেশ থেকে অনেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমাচ্ছেন৷ অনেকক্ষেত্রে তাঁরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগর পথে রওনা দেন৷ কেউ গন্তব্যে পৌঁছে গ্রেপ্তার হয়ে ফিরে আসেন৷ কেউ বা শরণার্থী পরিচয় পান৷ বাংলাদেশের এমন শরণার্থীর সংখ্যা ৯,৮৩৯ জন৷
ছবি: Reuters
বাংলাদেশের আশ্রয়প্রার্থী
উন্নত বিশ্বে কোনোভাবে ঢুকে গিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার চল অনেকদিন ধরেই চলছে৷ জাতিসংঘের হিসেবে বাংলাদেশের এমন আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা ২২,১২৮ জন৷ সংখ্যাটা ২০১৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত প্রযোজ্য৷
ছবি: Reuters
স্বপ্নের শুরু টেকনাফে
বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়ার মতো দেশে যাওয়ার চেষ্টা করেন অনেক বাংলাদেশি৷ এ জন্য তাঁরা দালালদের অনেক অর্থও দিয়ে থাকেন৷ তাঁদের এই যাত্রা শুরু হয় টেকনাফ থেকে৷
ছবি: DW/Shaikh Azizur Rahman
ছোট নৌকা থেকে বড় নৌকায়
টেকনাফ থেকে প্রথমে ছোট নৌকায় যাত্রা শুরু হয়৷ তারপর একসময় মাছ ধরার বড় নৌকা বা কার্গোতে যাত্রীদের তুলে দেয়া হয়৷ সাধারণত অক্টোবর থেকে পরবর্তী পাঁচ মাসকে সমুদ্র যাত্রার জন্য সঠিক সময় বলে বিবেচনা করা হয়৷
ছবি: Asiapics
খাবার, পানির অভাব
ইউএনএইচসিআর-এর একটি প্রতিবেদন বলছে, যাঁরা সাগর পথে বঙ্গোপসাগর পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করেন তাঁদের অনেকে খাবার ও পানির অভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন৷ এছাড়া দালালরা অনেক সময় তাঁদের সঙ্গে খারাপ আচরণও করে৷
ছবি: Reuters
8 ছবি1 | 8
বাকারির সঙ্গে বসবাসের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে তিনি অন্য শরণার্থীদেরও কীভাবে সহায়তা করা যায় তা নিয়ে ভেবেছেন৷ পরে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করেছেন তিনি৷ শরণার্থীদের যাঁরা ফ্ল্যাট শেয়ার করতে দিতে ইচ্ছুক তাঁরা ঐ ওয়েবসাইটে নাম লিপিবদ্ধ করেন৷ পরে কাকোষ্কে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, কিংবা ইচ্ছুক ব্যক্তি যে এলাকায় বসবাস করেন সেখানকার সরকারি অফিসের লোকজন যোগাযোগ করে শরণার্থীদের সঙ্গে ঐ ইচ্ছুক ব্যক্তির কথা বলার সুযোগ করে দেন৷ এভাবে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫২ জন শরণার্থীর বাসস্থানের ব্যবস্থা করা গেছে৷
কাকোষ্কে বলেন, সরকারি ব্যবস্থাপনায় শরণার্থীদের সাধারণত এমন কোনো জায়গায় রাখা হয় যেখানে থেকে শরণার্থীরা সমাজের মূল সম্প্রদায়ের সঙ্গে মিশতে পারেননা৷ তাছাড়া শরণার্থীদের থাকার জায়গাগুলো আজকাল কট্টর ডানপন্থিদের হামলার শিকার হচ্ছে৷ কাকোষ্কে মনে করেন, একজন মানুষ অবৈধ মানেই যে সে ভালো মানুষ নন, তা নয়৷ জার্মানি সহ ইউরোপে শরণার্থীরা ‘স্বাভাবিক জীবনযাপন' থেকে বঞ্চিত: অর্থ নেই, চাকরি নেই, যেন বিদেশ বিভুঁয়ে আজীবনের জন্য অতিথি৷
মালির শরণার্থী বাকারি জানান, কাকোষ্কের সঙ্গে ফ্ল্যাট শেয়ারের আগে তাঁর কোনো স্থায়ী থাকার জায়গা ছিল না৷ জার্মান একজন নাগরিক যে এভাবে তাঁকে থাকতে দেবেন, সেটা তিনি কখনো ভাবেননি৷ তবে এখন তিনি কাকোষ্কের সঙ্গে একসঙ্গে রান্না করেন, খাওয়া দাওয়া করেন, এমনকি কখনও কখনও একসঙ্গে ঘুরতেও বের হন৷