ভূমধ্যসাগরে ক্ষতিগ্রস্ত একটি রাবার বোটে এক নারী ও শিশু শরণার্থীর মৃত্যুর জন্য লিবিয়ার কোস্ট গার্ড ও ইটালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দায়ী করেছে একটি সাহায্য সংস্থা৷ অভিযুক্তরা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/K. Nietfeld
বিজ্ঞাপন
সমুদ্র থেকে উদ্ধারকারী স্পেনের সংস্থা প্রোঅ্যাক্টিভা ওপেন আর্মস মঙ্গলবার জানিয়েছে, লিবিয়া সমুদ্র উপকূল থেকে ৮০ নটিক্যাল মাইল দূরে একটি বিধ্বস্ত রাবার বোট থেকে একজন জীবিত নারীকে উদ্ধার করা গেছে৷ এছাড়া তারা আরো এক নারী ও প্রায় পাঁচ বছর বয়সি এক শিশুকে মৃত অবস্থায় পেয়েছে৷
সংস্থাটি সামাজিক গণমাধ্যমে বিধ্বস্ত নৌকাটির ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করেছে৷ এমনকি সেখান দিয়ে যাওয়া একটি বাণিজ্যিক জাহাজের ছবিও দিয়েছে তারা এবং অভিযোগ করেছে, জাহাজটি শরণার্থীদের সাহায্যে এগিয়ে আসেনি৷
শরণার্থী শিল্পীরা
বিখ্যাত বেশ কিছু শিল্পী বাধ্য হয়ে দেশান্তরি হয়েছিলেন৷ চলুন ছবিঘরে জেনে আসি তাদের জীবনের গল্প৷
ছবি: picture-alliance/dpa/APA Publications Arnold Schönberg Center
ফ্রেডি মার্কারি
কুইন ব্যান্ডের প্রধান গায়ক ফ্রেডি মার্কারি ১৯৪৬ সালে জানজিবার রাজ্যে (এখন তানজানিয়ার অংশ) জন্মান৷ মার্কারির শৈশব পুরোটা কাটে ভারতের একটি বোর্ডিং স্কুলে৷ ১৯৬৩ সালে তিনি তাঁর পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে জানজিবার যান৷ কিন্তু এর ঠিক একবছর পর জানজিবারে বিপ্লব শুরু হলে, সপরিবারে ইংল্যান্ডে পালিয়ে আসেন মার্কারি৷
ছবি: Imago/Leemage
গ্লোরিয়া এস্তেফান
জন্মেছিলেন কিউবায়৷ কিউবার বিপ্লবের সময় তাঁর পরিবার অ্যামেরিকার মায়ামিতে পালিয়ে আসতে বাধ্য হন৷ তিনবার গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড জিতেছেন গ্লোরিয়া৷ এছাড়া অ্যামেরিকার সঙ্গীতাঙ্গণে ভূমিকার জন্য ২০১৫ সালে তাঁকে প্রেসিডেন্সিয়াল পদকেও সম্মানিত করা হয়৷
১৯৭৬ সালে জামাইকার রাজনৈতিক দলগুলো যখন নিজেদের মধ্যে সংঘাতে ব্যস্ত ছিল, তখন এক অজ্ঞাতনামা বন্দুকধারী গুলি করে বব মার্লেকে৷ তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও নিজ দেশ জামাইকা ছেড়ে চলে আসেন৷ এরপর অনেকটা স্বেচ্ছা নির্বাসনেই ছিলেন বব মার্লে৷
ছবি: AP
আর্নল্ড শোয়েনবর্গ
অস্ট্রিয়ার ইহুদি বংশোদ্ভূত মিউজিক কম্পোজার ১৯৩৪ সালে নাৎসি জার্মানি থেকে পালিয়ে অ্যামেরিকায় আসেন৷ তাঁর আধুনিক ও গৎবাঁধা স্কেলের বাইরে সুর করা গানগুলো হিটলার বাহিনীর কোপানলে পড়ে৷ আর্নল্ড শোয়েনবর্গকে ২০ শতকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও প্রতিভাবান মিউজিশিয়ান বলা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/APA Publications Arnold Schönberg Center
এম.আই.এ
ব্রিটিশ র্যাপার মাথাঙ্গি ‘মায়া’ আরুলপ্রাগাসাম এম.আই.এ নামেই বেশি পরিচিত৷ যদিও তিনি জন্ম নিয়েছেন ব্রিটেনে, তবুও তাঁর পরিবার কিন্তু শ্রীলঙ্কার৷ এম.আই.এ-র যখন মাত্র ছ’মাস বয়স, তখন তার পরিবার শ্রীলঙ্কা ফিরে গেলেও তাঁর বাবা উগ্রপন্থি এলটিটিই-এর সদস্য বলে মাতৃভূমিতে থাকতে পারেননি৷ ফলে এম.আই.এ-র মা তাঁকেসহ অন্যান্য সন্তানদের নিয়ে আবারো ব্রিটেন পালিয়ে আসতে বাধ্য হন৷
বিখ্যাত গীতিকার ও গায়ক মিকার জন্ম লেবাননের বৈরুতে, ১৯৮৩ সালে৷ তবে তাঁর পরিবার ১৯৮৪ সালে প্যারিস চলে আসতে বাধ্য হয়৷ কেননা তখন লেবাননে গৃহযুদ্ধ চলছে৷ শোনা যায় সেসময় অ্যামেরিকার দূতাবাসে আক্রমণও চালানো হয়েছিল৷
ছবি: AP
6 ছবি1 | 6
টুইটারে সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা অস্কার ক্যাম্পস অভিযোগ করে বলেন, লিবিয়ান নৌকাটি ধ্বংস করেছে এবং এই তিনজনকে সেখানে মৃত্যুর মুখে ফেলে রেখেছে৷
কিন্তু লিবিয়ান কোস্ট গার্ড তা অস্বীকার করে দাবি করেছে, তারা ত্রিপোলির পূর্ব উপকূলে একটি রাবার বোট থেকে ১৬৫ জন শরণার্থীকে উদ্ধার করেছে, যাদের মধ্যে ছিলেন ৩৪ জন নারী ও ১২ শিশু৷ তাদের দাবি সেই বোটে তারা কাউকে ফেলে আসেনি৷
‘‘সমুদ্রে এ ধরনের যত দুর্যোগ হচ্ছে, তার দায় মানবপাচারকারীদের, যারা পয়সা ছাড়া আর কিছু চিন্তা করে না এবং সেসব এনজিও'র, যারা অত্যন্ত দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিচ্ছে৷'' কোস্ট গার্ডের মুখপাত্র আইয়ুব গাসিম বলেন৷
সাম্প্রতিক সময়ে এসব উদ্ধারকারী এনজিও জাহাজগুলোর প্রতি ক্ষোভ ঝাড়ছে অনেক দেশ৷ বিশেষ করে ইটালি ও মাল্টা বলেই দিয়েছে যে,তাদের বন্দরে এমন জাহাজ ভেড়ানো যাবে না৷
মঙ্গলবার ইটালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ম্যাটেও সালভিনির দিকেও আঙুন তুলেছেন ক্যাম্পস৷ সালভিনি এর জবাবে বলেছেন, ‘‘কয়েকটি বিদেশি এনজিও'র মিথ্যাচার প্রমাণ করে যে, আমরা ঠিক কাজটি করছি৷''
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম-এর হিসেব বলছে, ইউরোপে পাড়ি দিতে গিয়ে এ বছর এই পর্যন্ত ভূ-মধ্যসাগরেই মারা গেছেন ১ হাজার ৪শ' ৪০ জন শরণার্থী৷
জেডএ/এসিবি (এএফপি, ডিপিএ, রয়টার্স, এপি)
শরণার্থী সংকটের কিছু আইকনিক ছবি
ইউরোপে ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে বিপুল সংখ্যক অভিবাসী প্রবেশের ছবি গোটা বিশ্বে ছড়িয়েছে এবং মানুষের মতামত সৃষ্টিতে প্রভাব বিস্তার করেছে৷ অভিবাসন এবং অভিবাসনের ফলে সৃষ্ট ভোগান্তির এত ছবি আগে দেখেনি বিশ্ব৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/E. Morenatti
লক্ষ্য: টিকে থাকা
অনিশ্চিত যাত্রার ধকল সামলাতে হয় শারীরিক এবং মানসিকভাবে৷ ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে গৃহযুদ্ধ থেকে বাঁচতে হাজার হাজার সিরীয় নাগরিক তুরস্ক হয়ে গ্রিসে জড়ো হয়েছেন৷ সে দেশের তিনটি দ্বীপে এখনো দশ হাজারের মতো শরণার্থী বসবাস করছেন৷ চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে মাস অবধি ছয় হাজার নতুন শরণার্থী এসেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Messinis
পায়ে হেঁটে ইউরোপে
২০১৫ এবং ২০১৬ সালে এক মিলিয়নের বেশি মানুষ গ্রিস ও তুরস্ক থেকে পশ্চিম ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করেছে৷ ম্যাসিডোনিয়া, সার্বিয়া, হাঙ্গেরি, অর্থাৎ বলকান রুট ব্যবহার করে তাদের এই যাত্রার অধিকাংশই ছিল পায়ে হেঁটে৷ অভিবাসীদের এই যাত্রা বন্ধ হয়ে যায়, যখন রুটটি আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয় এবং কয়েকটি দেশ সীমান্তে বেড়া দিয়ে দেয়৷
ছবি: Getty Images/J. Mitchell
বৈশ্বিক আতঙ্ক
এই ছবিটি গোটা বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছে৷ তিন বছর বয়সি সিরীয় শিশু আয়লান কুর্দির মরদেহ তুরস্কে সমুদ্রতটে ভেসে ওঠে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে৷ ছবিটি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে এবং শরণার্থী সংকটের প্রতীকে পরিণত হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/DHA
বিশৃঙ্খলা এবং হতাশা
শেষ সময়ের ভিড়৷ ইউরোপে প্রবেশের রাস্তা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে শুনে ক্রোয়েশিয়াতে এভাবে ট্রেনে এবং বাসে উঠতে দেখা যায় অসংখ্য শরণার্থীকে৷ ২০১৫ সালের অক্টোবরে হাঙ্গেরি সীমান্ত বন্ধ করে দেয় এবং শরণার্থীদের জন্য কন্টেইনার ক্যাম্প তৈরি করে৷
ছবি: Getty Images/J. J. Mitchell
বিবেকবর্জিত সাংবাদিকতা
হাঙ্গেরির এক সাংবাদিক এক শরণার্থীকে ল্যাং মেরে ফেলে দেয়ার ভিডিও নিয়ে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে সমালোচনার ঝড় ওঠে৷ সার্বিয়ার সীমান্ত সংলগ্ন হাঙ্গেরির একটি এলাকার সেই ঘটনায় আলোচিত সাংবাদিকের চাকুরি চলে যায়৷
ছবি: Reuters/M. Djurica
উন্মুক্ত সীমান্ত নয়
২০১৬ সালের মার্চে বলকান রুট আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ করে দেয়ার পর সীমান্তগুলোতে আরো আবেগপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়৷ হাজার হাজার শরণার্থী বিভিন্ন সীমান্তে আটকা পড়ে এবং তাদের সঙ্গে বর্বর আচরণের খবর পাওয়া যায় বিভিন্ন স্থান থেকে৷ অনেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এভাবে সীমান্ত পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করে৷
ধুলা এবং রক্তে ঢাকা এক শিশু৷ পাঁচবছর বয়সি ওমরানের এই ছবিটি প্রকাশ হয় ২০১৬ সালে৷ আয়লান কুর্দির ছবির মতো এই ছবিটিও গোটা বিশ্বকে আরেকবার নাড়িয়ে দেয়৷ সিরীয়ায় গৃহযুদ্ধ কতটা বিভৎস পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে এবং সিরীয়রা কতটা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে, তার এক প্রতীক হয়ে ওঠে ছবিটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Aleppo Media Center
অজানা নতুন ঠিকানা
গ্রিক-ম্যাসিডোনিয়া সীমান্তের ইডোমিনিতে নিজের মেয়েকে কোলে নিয়ে বৃষ্টির মধ্যে রাস্তায় হাঁটছেন এক সিরীয় নাগরিক৷ ইউরোপে তাঁর পরিবার নিরাপদ থাকবে, এমনটাই প্রত্যাশা ছিল তাঁর৷ ডাবলিন রেগুলেশন অনুযায়ী, একজন শরণার্থী প্রথম ইউরোপের যে দেশে প্রবেশ করেন, সে দেশে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করতে হবে৷ ফলে যারা আরো ভেতরে প্রবেশ করেছিলেন, তাদের অনেককে ফেরত পাঠানো হয়েছে৷
ছবি: Reuters/Y. Behrakis
সহযোগিতার আশা
বিপুল সংখ্যক শরণার্থী প্রবেশের কারণে জার্মানি অভিবাসন নীতি আরো কড়া করে ফেললেও এখনো শরণার্থীদের প্রথম পছন্দ জার্মানি৷ ইউরোপের আর কোনো দেশ জার্মানির মতো এত বিপুল সংখ্যক শরণার্থী নেয়নি৷ ২০১৫ সালে সঙ্কট শুরুর পর থেকে দেশটি ১২ লক্ষ শরণার্থী নিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Hoppe
ভূমধ্যসাগরে ডুবে মরা
ইউরোপে শরণার্থী প্রবেশের সংখ্যা চলতি বছর কমেছে, তবে থেমে যায়নি৷ বরং জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে ডুবে মরছে অনেকে৷ বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা এবং সরকারের হিসেব অনুযায়ী, চলতি বছর এখন অবধি সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে মারা গেছে প্রায় দু’হাজার মানুষ৷ গতবছর এই সংখ্যা ছিল ৫ হাজার৷