জার্মানিতে শরণার্থীদের মেয়ে পটানোর উপায় শেখাচ্ছেন ‘মি. ফ্লার্ট'৷ বিশেষ করে সিরীয় এবং ইরাকি শরণার্থীদের তিনি শেখাচ্ছেন কিভাবে যৌন সম্পর্ক গড়ার উদ্দেশ্যে মেয়েদের সঙ্গে আলাপ করতে হয়৷
বিজ্ঞাপন
‘‘তোমার সুগন্ধির ঘ্রানটা আমার পছন্দ হয়েছে'' কিংবা ‘‘তোমার গলাতো বেশ মিষ্টি'' – মেয়েদের আকৃষ্ট করার এরকম কিছু লাইন শিক্ষার্থীদের বোঝাচ্ছিলেন ‘মি. ফ্লার্ট'৷ মেয়ে পটানোর উপর শিখিয়ে তিনি বেশ ভালোই আয় করেন৷ তবে শরণার্থীদের তিনি প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন বিনা খরচায়৷
মেয়েদের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় বাক্য যা ‘পিকআপ লাইন' হিসেবে পরিচিত, সেগুলোর কয়েকটি শিক্ষার্থীদের কাছেও জানতে চান তিনি৷ বিশ বছর বয়সি ইসাম কাদিম আল বেন ঝটপট বলে ফেলেন, ‘‘ঈশ্বর তোমাকের শুধু আমার জন্য গড়েছেন৷'' আরো একটি বাক্য দ্রুতই গড়েন তিনি, ‘‘আমি তোমাকে ভালোবাসি৷ আজ রাতে কি তোমার ওখানে ঘুমাতে পারি?''
পরের বাক্যটি অবশ্য হর্স্ট ভেনৎসেলের বিশেষ পছন্দ হয়নি৷ তিনি বলেন, ‘‘সম্পর্ক তিনমাস পার না হওয়া পর্যন্ত তাদের বলতে যেও না যে তুমি তাদের ভালোবাসো৷ তাহলে তারা কেটে পড়বে৷ জার্মান মেয়েরা আসক্তি পছন্দ করে না৷''
২৭ বছর বয়সি ভেনৎসেল সাধারণত জার্মানির বিত্তবানদের মেয়ে পটানোর উপায় শেখান৷ এজন্য একদিন কাউকে প্রশিক্ষণ দিলে তিনি নেন ১,৪০০ ইউরো৷ আর গ্রুপের জন্য দৈনিক চার হাজার ইউরো৷ চলতি বছর তিনি সিদ্ধান্ত নেন শরণার্থীদের বিনা খরচায় সহায়তা করবেন৷ কেননা দশ লাখের বেশি শরণার্থীদের সামলাতে বেশি হিমশিম খাচ্ছে তাঁর দেশ৷ তাঁর প্রশিক্ষণ শরণার্থীদের জার্মান মেয়েদের সঙ্গে মেলামেশার বিষয়টি সহজ করতে পারে বলেই বিশ্বাস তাঁর৷
জার্মানিতে ‘মি. ফ্লার্ট' নামে পরিচিতি ভেনৎসেলের ক্লাসে সিরিয়া, ইরাক এবং আফগানিস্তান থেকে আসা পুরুষরা আসেন৷ ডর্টমুন্ড শহরের কাছে গতসপ্তাহে তাঁর এক ক্লাসে ছিলেন এগারো জন৷ তাদের অনেকেই জার্মান মেয়েদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে আগ্রহী৷ কিছু জার্মান নারীরও এক্ষেত্রে আপত্তি নেই৷ তাঁরা মনে করেন, জার্মান পুরুষরা অনেক বেশি মদ্যপান করেন, সারাক্ষণ ফুটবল নিয়ে থাকেন আর বেশি মাত্রায় সাদা৷ সে তুলনায় মধ্যপ্রাচ্যের পুরুষরা বেশ সুদর্শন৷
যেভাবে ভালোবাসা হয়
ভালোবাসার বা প্রেমে পড়ার কিংবা কাউকে প্রেমে ফেলার নির্দিষ্ট কোনো সূত্র নেই৷ তবে কিছু বিষয় আছে যেগুলো কাউকে প্রেমে ফেলতে অনেক ক্ষেত্রেই ভূমিকা রাখে৷ মনস্তাত্ত্বিকরা অন্তত তা-ই বলছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Pleul
চোখের নজর
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মনস্তাত্ত্বিক জিক রুবিনের মতে ভালোবাসার জন্য চোখের নজর বেশ গুরুত্বপূর্ণ৷ দেখা গেছে যাঁরা প্রেমে পড়েছেন, তাঁদের অন্তত ৭৫ ভাগই চোখে চোখ রেখে কথা বলার সুফল পেয়েছেন৷ তাই সত্যিই যদি কাউকে ভালোবাসেন, তাহলে তার চোখে চোখ রেখে কথা বলুন৷ কখনো কখনো অস্বস্তিকর মনে হলেও কথা বলার সময় চোখে চোখ রেখেই কথা বলুন৷
ছবি: Colourbox/G. Dolgik
কথা শুনুন
কিছু লোক সবসময় নিজের কথা বলতে পছন্দ করে৷ প্রেমের ক্ষেত্রে এই অভ্যাস ভালো নয়৷ কারো মন পেতে হলে তার মনের কথা না শুনে শুধু নিজে কথা বললে কখনো কাজ হবে? যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ নেভাদার এক সমীক্ষা অনুযায়ী, যারা ভালো শ্রোতা তারা মনের মানুষ পাওয়ায় বেশি সফল৷
ছবি: Fotolia/apops
প্রশংসা করুন
মনস্তাত্ত্বিক গ্যারি নিউম্যান মনে করেন, যাকে প্রেমিকা হিসেবে পেতে চান তার কোনো ভালো কাজের প্রশংসা করাটাও খুব জরুরি৷ অনুপ্রেরণা পেলে কাজের উৎসাহ কাউকে প্রেমে উৎসাহীও করে তুলতে পারে বলেই তিনি মনে করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa Themendienst
হাসুন
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ ড্রেক-এর এক সমীক্ষা বলছে, হবু প্রেমিকার মুখোমুখি হলে গোমড়া মুখে বসে না থেকে যত খুশি হাসলেই লাভ৷ তাহলে হওয়ার হলে প্রেম নাকি তাড়াতাড়ি হবে!
ছবি: Mila Supynska - Fotolia.com
স্পর্শ
প্রেমের ক্ষেত্রে স্পর্শটাও অনেক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ৷ মনস্তাত্ত্বিকরা বলছেন, কখনো কখনো সামান্য একটু স্পর্শও মন কেড়ে নেয়৷
ছবি: Fotolia/Yuri Arcurs
5 ছবি1 | 5
তবে শরণার্থীদের নিয়ে জার্মানিতে যে খুব ইতিবাচক মনোভাব রয়েছে এমন নয়৷ গতবছর বিপুল সংখ্যক শরণার্থী গ্রহণ করায় জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের জনপ্রিয়তা পড়তির দিকে যেতে শুরু করেছে৷ বিশেষ করে বর্ষবরণের রাতে কোলনে বেশ কিছু মেয়ে শরণার্থীদের দ্বারা যৌন নিগ্রহের শিকার হন৷ ফলে শরণার্থীদের সম্পর্কে অনেকের মাঝে সৃষ্টি হয় বিরূপ প্রতিক্রিয়া৷
হর্স্ট ভেনৎসেল চান চাহিদা যাই থাক, নারী পুরুষের মধ্যকার মেলামেশাটা সহজ হোক৷ যৌনতার বিষয়াদি নিয়ে খোলামেলা আলাপে আপত্তি নেই জার্মানদের৷ তবে সেগুলো একটা শোভনীয় পর্যায়ে হওয়াটাই তাঁর কামনা৷ তাই ‘পিকআপ লাইন' বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে৷ ডর্টমুন্ডে শিক্ষার্থীদের তিনি বোঝান, জার্মানিতে নারী এবং পুরুষের মধ্যে যে কোনো সময়ই যৌন সম্পর্ক হতে পারে৷ প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় সাক্ষাতে সেক্স খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার৷
ক্লাসে শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন করতে পছন্দ করেন ভেনৎসেল৷ তিনি একজনের কাছে মেয়ে পটানোর উপায় জানতে চাইলে, সেই শিক্ষার্থী জিমে গিয়ে সুঠাম দেহ গড়ার দিকে গুরুত্ব দেননি৷ কিন্তু ভেনৎসেল তাঁকে শুধরে দেন৷ মেয়েরা নাকি ‘বডি বিল্ডারদের' দিকে বিশেষ আকৃষ্ট নয়৷ আরেক শিক্ষার্থীর মতে, ফেরারি থাকলে মেয়েরা আকৃষ্ট হবে৷ কিন্তু ‘মি. ফ্লার্ট' তাঁকে বোঝান, সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র অর্থের প্রতি আকৃষ্ট মেয়েরাই আগ্রহী হবে৷ আর সবার পক্ষে দাবি গাড়ি কেনা সম্ভব নয়৷
ভেনৎসেলের এ সব প্রশিক্ষণ শরণার্থীদের কতটা কাজে আসবে তা নিশ্চিতভাবে জানা না গেলেও জার্মানিতে এসবের কদর যে বেশ তা বোঝা যায় তাঁর ব্লগের দিকে তাকালে৷ ‘‘ফ্লার্ট ইউনিভার্সিটি'' শিরোনামে থাকা ‘মি. ফ্লার্টের' ব্লগের অনুসারী পাঁচ লাখের বেশি৷
এআই/ডিজি (এএফপি)
জার্মানিতে কয়েকজন শরণার্থীর জীবন
যুদ্ধবিক্ষুব্ধ কোনো দেশ থেকে কীভাবে ইউরোপে আসছে লক্ষ লক্ষ মানুষ? সবাই কি স্থায়ীভাবে ইউরোপে থাকতে চান? থাকতে হলে কী করতে হবে? কী করছেন তাঁরা? কয়েকজন শরণার্থীর জীবন দেখে একটু ধারণা নেয়া যাক৷
চিকিৎসক থেকে শরণার্থী
সিরিয়ায় রাজধানী দামেস্কে চিকিৎসক হিসেবে ভালোই ছিলেন হামবার আল-ইসা৷ কিন্তু যুদ্ধ শুরুর পর জন্মভূমির সব সুখ ছেড়ে ইউরোপের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমাতে হয় তাঁকে৷
অনেক পথ পেরিয়ে...
মেসিডোনিয়ায় পৌঁছানোর পর সার্বিয়ার সীমান্ত পর্যন্ত যেতে অনেকটা পথ হাঁটতে হয়েছে হামবারকে৷ হেঁটে কোনো শহরে পৌঁছালেই শুরু হতো ইন্টারনেট ক্যাফে খুঁজে বের করার চেষ্টা৷ পেলে প্রথম কাজ কোথায় আছেন, কেমন আছেন সে সম্পর্কে পরিবারকে বিস্তারিত জানানো৷ একা এসেছেন, তাই স্বজনদের তাঁর জন্য খুব চিন্তা৷ তাঁদের চিন্তা দূর করা ও তাঁদের সম্পর্কে জেনে নিজেকে নিশ্চিন্ত রাখতেই পছন্দ করেন হামবার৷
অবশেষে জার্মানিতে...
অনেক দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে অবশেষে জার্মানিতে পৌঁছেছেন হামবার৷ সিরিয়াতে সার্জন হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও নতুন দেশে চাইলেই তো আর চিকিৎসক হিসেবে কাজ শুরু করা যায় না৷ জার্মান ভাষা শিখে নিজেকে তৈরি করতে হবে সবার আগে৷ সেই চেষ্টা চলছে৷ পাশাপাশি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে অনুবাদকের কাজও করছেন৷ তাঁর স্বপ্ন অবশ্য জার্মানিতে বসবাস করা নয়৷ সুসময় ফিরে এলে নিজের দেশেই ফিরতে চান হামবার৷
দেশান্তরী এক আফগান কিশোরী
তোবার বয়স এখন ১৬ বছর৷ আফগানিস্তানের হেরাত থেকে জার্মানিতে এসেছে সে৷ হেরাতে নিয়মিত স্কুলে যেত সে৷ লেখাপড়া করেই প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্নও দেখতো৷ কিন্তু তালেবান বেছে বেছে মেয়েদের স্কুলে হামলা শুরু করায় তোবার পক্ষেও আর দেশে থাকা সম্ভব হয়নি৷
সপরিবারে জার্মানিতে
আফগানিস্তান থেকে জার্মানিতে অবশ্য একা আসেনি তোবা৷ দুই বোন এবং তাঁদের স্বামীও এসেছেন সঙ্গে৷ কাছের এই মানুষগুলো সঙ্গে থাকার কারণেই ইরান, তুরস্ক, গ্রিস এবং বলকান অঞ্চল হয়ে জার্মানিতে পৌঁছাতে পেরেছে তোবা৷
দুঃস্বপ্নে পোড়া স্কুল, স্বপ্নে সুন্দর আগামী
তালেবান হামলা থেকে বাঁচতে আফগানিস্তান ছেড়ে এলেও স্বনির্ভর হওয়ার স্বপ্ন কিন্তু ছাড়েনি তোবা৷ নিজেকে নতুন করে তৈরি করছে সে৷ জার্মান ভাষা শিখছে৷ স্বাবলম্বী হতে হলে জার্মানিতে ভাষা শেখাটা তো সবার জন্যই জরুরি৷
এক সাংবাদিকের পরিবার
ওপরের ছবির তিনজন জার্মানিতে এসেছেন সিরিয়ার ইদলিব থেকে৷ আহমেদ (মাঝখানে)-এর সঙ্গে তাঁর স্ত্রী হেবা এবং বন্ধু সালেহ৷ সিরিয়ায় সাংবাদিক হিসেবে বেশ কিছুদিন কাজ করেছেন আহমেদ৷
শৈশবেই প্রবাসী
আহমেদ-হেবা দম্পতির এই মেয়েটিও এসেছে জার্মানিতে৷ মাত্র এক বছর বয়সেই শুরু হয়েছে তার প্রবাসজীবন৷ ওর বাবা অবশ্য যুদ্ধ থামলেই ফিরে যেতে চায় সিরিয়ায়৷
8 ছবি1 | 8
আপনার কি কোনো ‘পিকআপ লাইন' জানা আছে? প্রেম নিবেদনের সময় আপনি কী বলে থাকেন? জানান আমাদের, লিখুন নীচের ঘরে৷