জার্মানির মতো কিছু দেশের প্রশাসন ও মানুষ শরণার্থী গ্রহণের ক্ষেত্রে বর্তমানে অভাবনীয় উদারতা দেখা যাচ্ছে৷ কিন্তু শরণার্থী প্রশ্নে দীর্ঘমেয়াদি নীতি সম্পর্কেও নানা মহলে নানা প্রশ্ন উঠছে৷
বিজ্ঞাপন
ইউরোপ যখন শরণার্থীদের ঢল সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে তখন দেশ হিসেবে জার্মানির প্রশাসন ও মানুষ শরণার্থীদের স্বাগত জানাচ্ছে৷ কিন্তু এমন সদিচ্ছা, সহায়তার মনোভাব এবং ক্ষমতা কতদিন অক্ষত থাকবে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে৷ জার্মান সরকার আগামী বছরগুলিতেও ক্ষমতা অনুযায়ী শরণার্থী গ্রহণ করবে বলে জানিয়েছে৷ জার্মানির উপর শরণার্থীদের সম্ভাব্য প্রভাব নিয়েও বক্তব্য রেখেছেন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ মহম্মদ আবোশানাব এ প্রসঙ্গে ম্যার্কেল সরকারের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন শেয়ার করেছেন৷
মানবাধিকার সংগঠন ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’-এর ইউরোপ ও মধ্য এশিয়া বিভাগের প্রধান হিউ উইলিয়ামসন জানিয়েছেন, শীতের আগেই জার্মানি আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য বাড়তি বাসস্থানের ব্যবসা করছে৷
রবার্টো রে মনে করিয়ে দিয়েছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রস্তাবিত মাত্রার চেয়েও বেশি রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী গ্রহণ করেছে জার্মানি ও সুইডেন৷
লেখক ও সাংবাদিক চাকের খাজাল মনে করেন, শরণার্থী সংকটের সমাধান হলো প্রথমে তাদের স্বাগত জানানো এবং তারপর শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের মাধ্যমে সমাজের মূল স্রোতে তাদের সমন্বয় করা৷
শরণার্থীদের বিষয়ে সরকারি স্তরে আলাপ-আলোচনা, তর্ক-বিতর্কের পাশাপাশি তাদের অবস্থা নিয়ে নানা প্রতিবেদন, ছবি, ব্যঙ্গচিত্র শেয়ার করছেন টুইটার ব্যবহারকারীরা৷ যেমন অ্যান্ড্রু ফাংক শরণার্থীদের প্রতি বৈষম্যের বিরুদ্ধে একটি ব্যঙ্গচিত্র শেয়ার করেছেন৷
জার্মানিতে পৌঁছে শরণার্থী পরিবারের এক শিশুর অভিব্যক্তি দেখে ক্যাথরিন মাহোনি আশা প্রকাশ করেছেন, তার ভবিষ্যৎ যেন উজ্জ্বল হয়৷
আরেক শরণার্থী পরিবারের উজ্জ্বল, আশাভরা অভিব্যক্তি শেয়ার করেছেন রোসমে ওয়ারডা৷
সংকলন: সঞ্জীব বর্মন সম্পাদনা: দেবারতি গুহ
সহজেই হতে পারে শরণার্থীদের বাড়ি
খুব বড় জায়গা নিয়ে বিশাল বিশাল শরণার্থী শিবির না করলে কি জার্মানি সিরিয়া থেকে আসা এত মানুষের আবাসনের ব্যবস্থা করতে পারবে? জার্মানির তরুণ স্থাপত্যবিদরা এমন সব উপায় দেখিয়েছেন যা অনুসরণ করলে কোনো সমস্যাই হবার কথা নয়৷
ছবি: Leibnitz Universität in Hannover
ছাদের ওপরে শরণার্থী
হানোফার বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্যবিদ্যার শিক্ষার্থীরা শরণার্থীদের জন্য কিছু আশ্রয় শিবিরের ডিজাইন করেছেন৷ তারা দেখিয়েছেন ফাঁকা জায়গা থাকলে তো কথাই নেই, না থাকলেও কীভাবে অতি সহজে বিপদগ্রস্ত মানুষদের আশ্রয় দেয়া যায়৷ ছাদের উপরে ঘর তৈরি করে শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার একটা উপায়ও তাঁরা দেখিয়েছেন৷ ছবিতে দেখুন, হানোফারের শিক্ষার্থীরা কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেদের অনুষদের ছাদেই শরণার্থী রাখার উপায় দেখিয়েছেন৷
ছবি: Leibnitz Universität in Hannover
ভাসমান বাড়ি
জার্মানিতে ৮৭০টির মতো বার্জ বা যন্ত্রচালিত বড় নৌকা পড়ে আছে৷ সেগুলোকে শরণার্থীদের আশ্রয় শিবির হিসেবে ব্যবহার করা যায়৷ বার্জে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে অসুবিধা হলে সৌরবিদ্যুত বা বায়ুশক্তির ব্যবহারে উৎপন্ন বিদ্যুৎ ব্যবহার করা যেতে পারে৷
ছবি: Leibnitz Universität in Hannover
এক্সপো ২০০০ মেলার পরিত্যক্ত ভবন
২০০০ সালে হানোফারে যে আন্তর্জাতিক মেলা হয়েছিল সেই মেলার ডাচ প্যাভিলিয়নটি এখনো অক্ষত অবস্থায় খালি পড়ে আছে৷ হানোফার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলছেন, এই ভবনেও শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়া যেতে পারে৷
ছবি: Leibnitz Universität in Hannover
শূন্যস্থান পূরণ
কাঠের কাঠামোয় তৈরি এই ভবনের মতো আশ্রয় শিবির যে-কোনো ফাঁকা জায়গাতেই তৈরি করা যেতে পারে৷ যখন শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার দরকার ফুরাবে, তখন এমন ভবন অফিস-আদালত হিসেবেও ব্যবহার করা যেতে পারে৷
ছবি: Leibnitz Universität in Hannover
বাগানবাড়িই আশ্রয়স্থল
জার্মানিতে ছোট ছোট জমি ভাড়া দেয়া হয়৷ সেই জমিতে অনেক সৌখিন ব্যক্তিই বাগান-বাড়ি গড়ে তোলেন৷ লাইবনিৎস বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এমন বাড়িকে শরণার্থীদের ছোট ছোট পরিবারের সাময়িক বাড়ি হিসেবে ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন৷ তাঁদের যুক্তি, এসব বাড়ি বছরের বেশির ভাগ সময় তো পড়েই থাকে, সুতরাং শরণার্থীদের থাকতে দিলে ভালোই হবে৷
ছবি: Leibnitz Universität in Hannover
গাড়ির জায়গায় বাড়ি
জার্মানির অধিকাংশ শহরের মাঝখানেই বড় বড় গাড়ি পার্কিং সেন্টার আছে যা বেশির ভাগ সময় প্রায় ফাঁকা থাকে৷ শিক্ষার্থীরা মনে করেন, এই জায়গাগুলোতেও শরণার্থী শিবির করা যেতে পারে৷ মাটির নীচের এমন পার্কিং সেন্টারের সবচেয়ে নীচ তলায় গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রেখে, বাকি অংশে শরণার্থীদের জায়গা দিলে কোনো সমস্যা হবে না বলেই শিক্ষার্থীদের ধারণা৷