শরণার্থীদের সন্তানদের ‘মূল্যবোধ’ শেখানোর পরিকল্পনা
৭ মে ২০১৮
জার্মানির রক্ষণশীল রাজনীতিকরা স্কুলে উদ্বাস্তু শিশুদের জন্য ‘মূল্যবোধের’ ক্লাস চালু করতে চান বলে একটি জার্মান পত্রিকার বিবরণে প্রকাশ৷ এই মূল্যবোধ সাংস্কৃতিক অথবা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণের উপরে স্থান পাবে৷
বিজ্ঞাপন
রক্ষণশীল জার্মান রাজনীতিকরা স্কুলে উদ্বাস্তু শিশুদের জন্য জার্মান ভাষাশিক্ষা ছাড়া সামাজিক মূল্যবোধের পাঠের ব্যবস্থা করতে চান বলে ‘রাইনিশে পোস্ট’ পত্রিকা তাদের সোমবারের সংস্করণে জানিয়েছে৷
রিপোর্ট অনুযায়ী, শাসক সিডিইউ-সিএসইউ দলের উচ্চপদস্থ বিধায়করা স্কুলে তথাকথিত ‘মূল্যবোধ শিক্ষা’ সম্পর্কে একটি খসড়া প্রস্তুত করেছেন৷ সংশ্লিষ্ট শিক্ষাক্রমে উদ্বাস্তু শিশুরা আইনের শাসন, নারী-পুরুষের সমতা ও একমাত্র রাষ্ট্রের বলপ্রয়োগের একচেটিয়া অধিকার সম্পর্কে অবহিত হবে৷
‘‘জার্মানিতে যাঁরা থাকার অধিকার পাবেন, বিশেষ করে আমাদের সমাজে শান্তি বজায় রাখার জন্য তাঁদের অন্তর্ভুক্তি একটি জরুরি প্রসঙ্গ,’’ বলে বিধায়কদের খসড়ায় মন্তব্য করা হয়েছে৷ ‘‘এই শিক্ষাক্রমের লক্ষ্য হবে, উদ্বাস্তুদের আমাদের মূল্যবোধ ও আইনের শাসন সম্পর্কে অবহিত করা৷ আমাদের আইনগত ব্যবস্থার সীমানা ও কর্তব্য সম্পর্কেও তাঁদের শিক্ষা দেওয়া হবে৷’’
শরণার্থী শিশুরা ঠিকমতো শিক্ষা পাচ্ছে তো?
জার্মান স্কুলগুলিতে শরণার্থীরা কি ঠিকমতো পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছে? শরণার্থীদের সমস্যাগুলো ধরতে পারছেন তো শিক্ষকেরা? সম্প্রতি এক সমীক্ষা এই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে৷ শরণার্থীদের শিক্ষা নিয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনাও শুরু হয়েছে৷
ছবি: picture alliance/dpa/AA/M. Abdullah
সমস্যার মূল
এই মুহূর্তে জার্মানির বিভিন্ন অঞ্চলের স্কুলে প্রায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার শরণার্থী শিশু পড়াশোনা করে৷ কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, তাদের ঠিক মতো শেখাতে পারছেন তো শিক্ষকেরা? তাদের সমস্যাগুলো ধরা যাচ্ছে তো?
ছবি: picture alliance/dpa/M. Skolimowska
হিংসা, ভয়, গরিবি
জার্মানির আর পাঁচজন ছাত্রের মতো শরণার্থীরা নয়৷ নিজের দেশ থেকে তাদের পালিয়ে আসতে হয়েছে৷ তারা হিংসা, ভয়, গরিবির শিকার৷ তাদেরকে মূলস্রোতে আনতে গেলে শিক্ষার অন্য মডেল তৈরি করা দরকার৷
ছবি: picture alliance/dpa/Sputnik/I. Zarembo
ড্রপ আউট
সমীক্ষা বলছে, স্কুলের পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে না পেরে বহু শরণার্থী শিশুই মাঝপথে পড়াশোনা বন্ধ করে দিচ্ছে৷
স্পেশাল স্কুল
শরণার্থীদের জন্য বিভিন্ন অঞ্চলে স্পেশাল স্কুল তৈরি করা হয়েছে৷ কোনো কোনো সংগঠন কলেজ পড়ুয়াদের দিয়ে সেখানে ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা করেছে৷ কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, ওই শিক্ষকেরা শরণার্থীদের সমস্যা ধরতে পারছেন তো?
ছবি: picture alliance/dpa/AA/M. Abdullah
শরণার্থী শিক্ষক
কোনো কোনো স্কুলে অবশ্য শরণার্থী শিক্ষকদেরই পড়ানোর কাজে নিয়োজিত করা হয়েছে৷ অনেকেই বিষয়টিকে ভালো মডেল বলে মনে করছেন৷ শরণার্থী শিক্ষকেরা শিশুদের সমস্যা অনেক সহজে বুঝতে পারেন৷ সব স্কুলেই এ ধরনের ব্যবস্থা করা যায় কিনা, তা নিয়ে ভাবনা চিন্তা চলছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Macdougall
মূলস্রোতে ফেরানো
শরণার্থী শিশুদের জার্মানির মূলস্রোতের সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত করা দরকার৷ কিন্তু তার জন্য অনেক সময় দেওয়া দরকার৷ শরণার্থী শিশুদের মন বোঝা দরকার প্রথমে৷ সেখানেই ঘাটতি থাকছে বলে অনেকের ধারণা৷
ছবি: S.Ponsford
সরাসরি কথাবার্তা
শরণার্থী ছাত্রদের সঙ্গে আলাদা আলাদা করে কথা বলা দরকার বলে মনে করছেন অনেকে৷ প্রত্যেকের সমস্যাগুলো আলাদা আলাদা করে বোঝা দরকার৷ তাদের বোঝাতে হবে, আর ভয়ের কোনো কারণ নেই৷ তারা নিরাপদ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/L. Pitarakis
7 ছবি1 | 7
ফ্রাংকফুর্টে আজ সোমবার সিএসইউ ও সিডিইউ দলের সংসদীয় তথা রাজ্য বিধানসভার বিধায়ক গোষ্ঠীর নেতারা মিলিত হবেন৷ সেই সাক্ষাতে মূল্যবোধ শিক্ষা সংক্রান্ত খসড়াটি পেশ করা হবে৷ চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল স্বয়ং সেই সাক্ষাতে উপস্থিত থাকবেন বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে৷
মূল্যবোধের স্থান সংস্কৃতি ও ধর্মের উপরে
পরিকল্পিত শিক্ষাক্রমে নারী-পুরুষের সমতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং মানব মর্যাদার সুরক্ষার মতো যেসব মূল্যবোধ আলোচিত হবে, ‘‘অপরিহার্য আদর্শ হিসেবে সেগুলি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক বা ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গীর উপরে স্থান পাবে’’ বলে খসড়াতে ঘোষণা করা হয়েছে৷
গত মাসে বাভেরিয়ার মুখ্যমন্ত্রী মার্কুস জ্যোডার (সিএসইউ) ও হেসে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ফল্কার বুফিয়ের (সিডিইউ) যুগ্মভাবে ‘মূল্যবোধ শিক্ষার’ পরিকল্পনাটি পেশ করেন৷ বুফিয়ের জার্মান ‘স্পিগেল’ পত্রিকাকে বলেন যে, গত দু'বছর ধরে একাধিক উদ্বাস্তু কেন্দ্রে অনুরূপ একটি অন্তর্ভুক্তি প্রকল্প প্রয়োগ করা হয়েছে৷
প্রকল্পটি খুবই সফল হয়েছে বলে দাবি করেছেন বুফিয়ের৷ তিনি বলেন, ‘‘সেই অভিজ্ঞতার আলোকে আমরা আগামী সরকারি কর্মকালে (মূল্যবোধ শিক্ষার) ক্লাস গুলিকে বাড়াতে চাই৷’’
বাভেরিয়া ও হেসে, উভয় রাজ্যেই আগামী অক্টোবর মাসে রাজ্য বিধানসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে৷
এসি/এসিবি (রয়টার্স, এএফপি, ডিপিএ)
৮ তারকা যাঁরা একসময় শরণার্থী ছিলেন
সংগীত শিল্পী, অভিনেত্রী থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদ - বিশ্বখ্যাত এমন অনেক তারকাকে নানা কারণে জীবনের একটি সময় শরণার্থীর জীবন বেছে নিতে হয়েছিল৷ ছবিঘরে থাকছে তাঁদের কয়েকজনের কথা৷
ছবি: Getty Images
মারলেনে ডিটরিশ
১৯০১ সালে জার্মানিতে জন্ম নেয়া ডিটরিশ গায়িকা ও অভিনেত্রী হিসেবে বেশ নাম কুড়িয়েছিলেন৷ ১৯৩০ সালে তিনি হলিউডে কাজ করতে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান৷ সেখানে থাকলেও নাৎসি আমলের সমালোচনায় মুখর ছিলেন তিনি৷ ১৯৩৯ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি মার্কিন বাহিনীর জন্য গান গেয়েছেন৷ নাৎসি সরকার জার্মানিতে তাঁর মুভি প্রদর্শনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
হেনরি কিসিঞ্জার
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিসিঞ্জার জার্মানির বাভারিয়া রাজ্যে জন্মেছিলেন৷ নাৎসি সরকারের নিপীড়ন থেকে বাঁচতে ১৯৩৮ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চলে গিয়েছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Schiefelbein
মেডেলিন অলব্রাইট
যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী অলব্রাইট চেক প্রজাতন্ত্রে জন্মগ্রহণ করেছিলেন৷ ১৯৪৮ সালে সে দেশে কমিউনিস্ট সরকার ক্ষমতায় গেলে তিনি তাঁর পরিবারসহ যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Loeb
আলবার্ট আইনস্টাইন
জার্মান ইহুদি এই নোবেল বিজয়ী যখন ১৯৩৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র সফরে ছিলেন তখনই বুঝতে পারেন যে, তাঁর পক্ষে আর জার্মানি ফেরা সম্ভব নয়৷ কারণ ঐ বছরই হিটলার জার্মানির চ্যান্সেলর হন৷ ফলে তিনি যুক্তরাষ্ট্রেই থাকার সিদ্ধান্ত নেন এবং ১৯৪০ সালে সে দেশের নাগরিকত্বও গ্রহণ করেন৷
ছবি: Imago/United Archives International
গেওর্গ ভাইডেনফেল্ড
ইহুদি এই মানুষটির জন্ম অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায়, ১৯১৯ সালে৷ নাৎসিরা যখন অস্ট্রিয়া দখল করে নিলে তিনি লন্ডনে পাড়ি জমান৷ সেখানে তিনি একটি প্রকাশনা সংস্থা চালু করেন৷ ইসরায়েলের প্রথম প্রেসিডেন্টের ‘চিফ অফ স্টাফ’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/N.Bachmann
বেলা বার্টোক
হাঙ্গেরির কম্পোজার, পিয়ানোবাদক ও লোক সংগীত সংগ্রাহক বার্টোক ইহুদি ছিলেন না৷ কিন্তু নাৎসিদের হাতে ইহুদিদের নিপীড়িত হওয়ার বিষয়টির ঘোর সমালোচক ছিলেন তিনি৷ ফলে ১৯৪০ সালে তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যেতে হয়৷
ছবি: Getty Images
ইসাবেল আলেন্দে
১৯৭৩ সালে এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে চিলির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট সালভেদর আলেন্দেকে হটিয়ে দেয়া হয় এবং সেই সময়ই তাঁর মৃত্যু হয়৷ এরপর একসময় আলেন্দের এক কাজিনের মেয়ে ইসাবেলকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হয়৷ তা থেকে বাঁচতে প্রথমে ভেনেজুয়েলায়, তারপর যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান ইসাবেল৷ তাঁর লেখা কয়েকটি উপন্যাস আন্তর্জাতিকভাবে বেশ প্রশংসিত হয়েছে৷
ছবি: Koen van Weel/AFP/Getty Images
মিরিয়াম মাকেবা
‘মামা আফ্রিকা’ নামে পরিচিত দক্ষিণ আফ্রিকার সংগীত শিল্পী মাকেবা একবার গান গাইতে যুক্তরাষ্ট্র গিয়েছিলেন৷ সেই সময় দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার বর্ণবাদবিরোধিতার অভিযোগে তাঁর পাসপোর্ট বাতিল করে দেয়৷ ফলে তিনি আর দেশে ফিরতে পারেননি৷ কয়েক দশক পর অবস্থার পরিবর্তন হলে দেশে ফিরে যান মাকেবা৷