কয়েকদিন আগে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ ৮ বছরে পা দিল৷ প্রতিদিন সেখানে বোমাবর্ষণ চলছে৷ প্রাণ হাতে নিয়ে পালাচ্ছেন সাধারণ মানুষ৷তারই মধ্যে এএফডি বলছে– দেশে ফিরে যাক শরণার্থীরা৷
বিজ্ঞাপন
সিরিয়ায় তেমন কোনো সমস্যাই নেই৷ জার্মানিতে আসা সিরিয়ার শরণার্থীরা ফিরে যেতে পারেন দেশে৷ রীতিমতো সাংবাদিক বৈঠক করে এ কথা জানালেন জার্মানির দক্ষিণপন্থি দল এএফডি'র সদস্যরা৷ সম্প্রতি নিজেদের উদ্যোগে সিরিয়ায় একটি প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছিল এএফডি৷ সে দেশ থেকে ঘুরে এসে নিজেদের মন্তব্য জানালেন প্রতিনিধিরা৷ তাঁরা জানিয়েছেন, এ কথা ঠিক যে, সিরিয়ার বহু অঞ্চল যুদ্ধ বিদ্ধস্ত৷ কিন্তু সে দেশের বহু এলাকাই যুদ্ধের কবলের বাইরে৷ সিরিয়ার শরণার্থীরা নিজেদের দেশে ফিরে গিয়ে সে সমস্ত অঞ্চলে বসবাস করতেই পারেন৷
গত নির্বাচনে চোখে পড়ার মতো ভোট পেয়েছে এএফডি৷ সদ্য গঠিত সংসদে তারাই বিরোধী দল৷ নির্বাচনের সময় থেকেই তাদের বক্তব্য ছিল, শরণার্থীদের দেশে ফিরিয়ে দেওয়া উচিত৷ শরণার্থীদের প্রতি জার্মানির দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েও তারা বারংবার প্রশ্ন তুলেছে৷
পালাবার পথ নেই
গত মার্চে আফরিনে ঢুকে পড়েছিল তুরস্কের সেনা৷ মহল্লায় মহল্লায় চালিয়েছে হামলা৷ সামান্য সম্বলটুকু নিয়ে ঘর বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন সাধারণ মানুষ৷ তেমনই কিছু ভয়াবহ ছবি আজকের ছবিঘরে৷
ছবি: Reuters/K. Ashawi
গৃহহীন
গত মার্চে দু’দিক থেকে যুদ্ধ চলেছে সিরিয়ায়৷ একদিকে বিদ্রোহ দমনের নামে নিজের দেশের সরকার হামলা চালিয়েছে সাধারণ মানুষের ওপর৷ অন্যদিকে তুরস্ক ঢুকে পড়ে আফরিনে৷ বাড়ি ঘর ছেড়ে সকলেই পালাতে শুরু করে৷
ছবি: Reuters/K. Ashawi
অজানা যাত্রা
সে সময় আফরিনে ঢুকে পড়ে তুরস্কের সৈন্যরা৷ পাড়ায় পাড়ায় ঢুকে হামলা চালায়৷ বাধ্য হয়েই সব ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয় সাধারণ মানুষ৷
ছবি: Reuters/K. Ashawi
ইতিহাস ফিরে আসে
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্বে স্বনামধন্য চিত্রগ্রাহকদের ক্যামেরায়ধরা পড়েছিল এমনই বহু ছবি৷ শরণার্থীদের মিছিল৷ সিরিয়ায় সেই ছবিই ফিরে এসেছে একুশ শতকে৷
ছবি: Reuters/K. Ashawi
ঠিকানাহীন
বন্দুকের নল, বারুদবাহী ট্যাংক উপেক্ষা করেই সন্তানদের নিয়ে বেরিয়ে পড়েন বাবা-মা৷ কিন্তু তাঁরা জানেন না কোথায় যাবেন৷ কোথায় একটু আশ্রয় পাবেন তাঁরা৷
ছবি: Reuters/K. Ashawi
ভাঙা স্বপ্ন
ক্রমাগত বোমার আঘাতে ভেঙে যায় ট্রাক, জিপ৷ সেই ভেঙে যাওয়া যানবাহনেই ঘর ছেড়ে পালান সাধারণ মানুষ৷ অনেকেই চেষ্টা করেন দেশ ছেড়ে পার্শ্ববর্তী ইউরোপে আশ্রয় নিতে৷
ছবি: Reuters/K. Ashawi
তবু বেঁচে থাকা
কিছুদিন আগে এক সাংবাদিককে এক সিরিয়ার শরণার্থী বলেছিলেন, দেশে ফিরতে চান তিনি৷ কিন্তু যাওয়ার রাস্তা বন্ধ৷ যাঁরা তখন পালাচ্ছিলেন, তাঁদের জন্য ইউরোপের রাস্তাও কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছে৷ আফরিনের মানুষের মুখেও সেই একই কথা৷
ছবি: Reuters/K. Ashawi
6 ছবি1 | 6
কয়েক সপ্তাহ আগে এএফডি সদস্য ক্রিস্টিয়ান ব্লেক্সের নেতৃত্বে ৭ সদস্যের একটি দল গিয়েছিল সিরিয়ায়৷ সেখানে সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়ালিদ আল মুয়াল্লিম এবং মন্ত্রী আলি হায়দারের সঙ্গে বৈঠক করেন তাঁরা৷ এএফডি'র সদস্য এবং সাংসদ আরমিন পাউলুস হাম্পেল বলেন, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাসার আল আসাদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারে জার্মান সরকার৷ আসাদকে অর্থ সাহায্য করতে পারে এবং শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেওয়ার আবেদন করতে পারে৷ তাঁর আরো বক্তব্য, জার্মান সরকার আসাদ সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যাতে সরকারবিরোধী শরণার্থীদেরও সিরিয়া নিরাপদে থাকতে দেয়৷
গত ৮ বছরে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন৷ লক্ষ লক্ষ মানুষ বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র পালিয়েছেন৷ বহু মানুষ ইউরোপে এসে আশ্রয় নিয়েছেন৷ এমন পরিস্থিতিতে এএফডি'র সিরিয়া যাওয়া এবং শরণার্থীদের ফিরিয়ে দেওয়ার দাবির সমালোচনা করছে বাকি সব দল৷ বাম এবং সদ্য গঠিত জার্মান সরকার এর কড়া সমালোচনা করেছে৷
এএফডি নেতাদের আপত্তিকর যত মন্তব্য
জার্মানির ডানপন্থি পপুলিস্ট পার্টি অল্টারনেটিভ ফর জার্মানির (এএফডি) নেতারা গত কয়েকমাস ধরে একের পর এক উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন৷ তাদের সেরকম কয়েকটি বক্তব্য এখানে তুলে ধরা হলো৷
ছবি: picture alliance/ZB/H. Schmidt
ফ্রাউকে পেট্রি
‘অবৈধভাবে জার্মানিতে প্রবেশকারী শরণার্থীদের দিকে গুলি ছোড়া উচিত জার্মানির বর্ডার পুলিশের’, বলেছিলেন এএফডি’র কো-চেয়ার৷ ২০১৬ সালে জার্মানির একটি আঞ্চলিক পত্রিকাকে তিনি জানান, পুলিশ অফিসাররা সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে প্রয়োজনে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করতে পারে৷ সর্বশেষ সাবেক কমিউনিস্ট পূর্ব জার্মানির নেতা এরিক হ্যোনেকার এ ধরনের কথা বলেছেন৷
ছবি: Getty Images/T. Lohnes
বও্যর্ন হ্যোকে
জার্মানির থ্যুরিঙ্গা রাজ্যের এএফডির প্রধান বার্লিনের হলোকস্ট মেমোরিয়ালকে ‘মন্যুমেন্ট অফ শেইম’ আখ্যা দিয়ে জার্মানিতে নাৎসি অতীতের জন্য প্রায়শ্চিত্ত করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন৷ গুরুত্বপূর্ণ এক নির্বাচনের বছরে এই মন্তব্য করায় তাকে বহিস্কার করার পথে যেতে বাধ্য হয়েছেন এএফডির সদস্যরা৷
ছবি: picture-alliance/Arifoto Ug/Candy Welz
আলেক্সান্ডার গাউলান্ড
এএফডির ডেপুটি চেয়ারম্যান আলেক্সান্ডার গাউলান্ড গতবছর বলেন, জার্মানির জাতীয় ফুটবল দলের রক্ষণভাগের খেলোয়াড় জ্যেরম বোয়াটেংকে তাঁর পারফর্মেন্সের জন্য অনেকে প্রশংসা করলেও, তাঁর মতো কাউকে কেউ প্রতিবেশী হিসেবে চাইবে না৷ কৃষ্ণাঙ্গ বোয়াটেংকে নিয়ে এমন মন্তব্য সমালোচনার ঝড় তোলে জার্মানিতে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Murat
বিট্রিক্স ফন স্টর্চ
প্রাথমিকভাবে এএফডি ইউরো এবং বেইলআউটের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়েছিল৷ কিন্তু পরবর্তীতে দ্রুতই শরণার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় দলটি৷ ইউরোপের এই আইনপ্রণেতা বলেছেন, ‘‘যারা সীমান্তে আমাদের থামার নির্দেশ গ্রহণ করে না, তারা আক্রমণকারী৷ আর সেসব আক্রমণকারীকে প্রতিহত করতে হবে৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Murat
মার্কুস প্রেতজেল
এএফডির নর্থ রাইন-ওয়েস্টফেলিয়া রাজ্যের চেয়ারম্যান মার্কুস প্রেতজেল৷ ফ্রাউকে পেট্রির নতুন স্বামীও তিনি৷ বার্লিনে গত বছর ক্রিসমাস মার্কেটে প্রাণঘাতি হামলার পর তার মন্তব্য, ‘‘ম্যার্কেলের কারণেই প্রাণ হারিয়েছে এরা৷’’
ছবি: picture alliance/dpa/M. Murat
আন্দ্রে ভেন্ডট
স্যাক্সনি রাজ্যের সাংসদ সম্প্রতি জানতে চেয়েছেন অভিভাবকহীন অপ্রাপ্তবয়স্ক শরণার্থীর পেছনে রাষ্ট্র কতটা খরচ বহন করবে৷ তাঁর এই বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা হয়েছে৷ গত বছরের জুলাই অবধি ৫২,০০০ অভিভাবকহীন অপ্রাপ্তবয়স্ক শরণার্থী জার্মানিতে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছে৷