বেলারুশের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ লিথুয়ানিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর। শরণার্থীদের 'হিউম্যান শিল্ড' হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
লিথুয়ানিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যান্ডসবার্গিস এখন ব্রাসেলসে ইইউ-র পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে যোগ দিতে এসেছেন। তিনি ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন ''ইইউ যাতে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করে, তার জন্য শরণার্থীদের হিউম্যান শিল্ড হিসাবে ব্যবহার করছে বেলারুশ। শরণার্থীদের তারা লিথুয়ানিয়ায় ঢুকিয়ে দিচ্ছে।'' তার দাবি, ''এই অস্ত্র ব্যবহার করে তারা ইইউ-কে নীতি পরিবর্তন করতে বাধ্য করতে চায়।''
লিথুয়ানিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দাবি, ''আমাদের কাছে এই ব্যাপারে তথ্যপ্রমাণ আছে। বেলারুশের সীমান্তরক্ষীরা উদ্বাস্তুদের নিয়ে এসে লিথুয়ানিয়া সীমান্তে ঢোকাচ্ছে।''
তিনি এই দাবি করছেন এমন একটা সময়ে, যখন লিথুয়ানিয়া শরণার্থীদের রুখতে জরুরি ব্যবস্থা ঘোষণা করেছে। তারা ৫৫০ কিলোমিটার সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া লাগাবার কাজও শুরু করে দিয়েছে। রাজধানীতে নতুন আসা ৫০০ জন শরণার্থীকে রাখার জন্য একটা শিবিরও খোলা হয়েছে। এই শরণার্থীরা আসছেন মূলত ইরাক থেকে।
লিথুয়ানিয়ার দাবি
লিথুয়ানিয়া দাবি করছে, তাদের সীমান্তে ইরাকিরাই মূলত এসেছেন। বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো এই সংকট তৈরি করছেন।
যে কারণে শিরোনামে বেলারুশ
ইউরোপের বেলারুশে টানা ২৬ বছর ধরে ক্ষমতায় আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো৷ এখন কেন শিরোনামে এই রাষ্ট্রনায়ক, জানুন ছবিঘরে...
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/B. Zawrzel
লুকাশেঙ্কোর রাজনীতিতে প্রবেশ
সাবেক সোভিয়েত সামরিক বাহিনীর সাথে যুক্ত থাকা আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো ১৯৯৪ সালের প্রথম নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট হিসাবে ক্ষমতায় আসেন৷ ৪৫ শতাংশের ভোট পেয়ে নির্বাচিত হবার পর থেকেই লুকাশেঙ্কো বেলারুশের নীতিকে রাশিয়ার নিকটবর্তী করে তোলেন৷ ১৯৯৬ সালে ১৯৯জন সংসদ সদস্য সংবিধান বিরোধিতার দায়ে লুকাশেঙ্কোর অপসারণের দাবি তোলেন৷ কিন্তু ক্ষমতাচ্যুত করা যায়নি তাঁকে৷
ছবি: Reuters/M. Guchek
ক্ষমতা ধরে রাখা
১৯৯৬ সালে অপসারণের দাবির প্রেক্ষাপটে আয়োজন করা হয় একটি গণভোটের৷ সেখানে দেখা যায়, বেলারুশের জনতা বিপুলভাবে লুকাশেঙ্কোর পক্ষে রায় দিয়েছেন, যদিও এই গণভোটকে স্বীকৃতি দেয়নি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ৷ ২০০৪ সালে প্রেসিডেন্টের মেয়াদ বাড়ানোর কথা তোলেন তিনি, যা আবার গণভোটে ৭৯ শতাংশের সম্মতি পায়৷ এই ভোটকেও মান্যতা দেয়নি পশ্চিমা বিশ্ব৷
ছবি: Reuters/Y. Yerchak
বেলারুশ ও লুকাশেঙ্কো
লুকাশেঙ্কোর আমলে বেলারুশের অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে চোখে পড়বার মতো, যদিও বিশেষজ্ঞদের মত, এই উন্নয়নের পেছনে বিরাট ভূমিকা পালন করেছে রাশিয়ার সাথে তাদের নিবিড় সম্পর্ক৷ রাশিয়া থেকে বাজারদরের চেয়ে সস্তায় তেল কিনে ইউরোপের অন্যান্য দেশে যথেষ্ট লাভ রেখে বিক্রি করতে পারা বেলারুশের অর্থনীতির মূল চালক৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক
রাশিয়া ছাড়াও চীন, ভেনেজুয়েলা, ইরান, পাকিস্তানের সাথে সুসম্পর্ক রয়েছে বেলারুশের৷ কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউর সাথে লুকাশেঙ্কোর সম্পর্কে উন্নতি এই মুহূর্তে হচ্ছে না বলে বিশেষজ্ঞদের মত৷ বিশেষ করে, লুকাশেঙ্কো ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের এই দুই অঞ্চলে চলাফেরা করার ওপর বিধিনিষেধ থাকায় এমনটা হচ্ছে৷
ছবি: Reuters/RIA Novosti
‘ইউরোপের শেষ স্বৈরাচারী’
সাবেক জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী গুইডো ভেস্টারভাইলে ২০১২ সালে লুকাশেঙ্কোকে ‘ইউরোপের শেষ স্বৈরাচারী’ আখ্যা দেন৷ বেলারুশে তাঁর শাসনকালে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রেক্ষিতে এমনটা বলেন তিনি৷ উত্তরে লুকাশেঙ্কোর ব্যক্তিগত জীবনের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘‘(গুইডোর মতো) সমকামী হবার চেয়ে স্বৈরাচারী হওয়া ভালো’’৷
ছবি: Reuters/V. Ogirenko
বর্তমান বিতর্ক
১৯৯৪ সাল থেকে একটানা ২৬ বছর ধরে ক্ষমতায়৷ সব নির্বাচনে তিনিই বিপুলভাবে জয়ী হন৷ কিন্তু ২০২০ সালের সর্বশেষ নির্বাচনে পুনর্নির্বাচিত হবার পর বেলারুশজুড়ে নেমেছে প্রতিবাদের ঢল৷ ব্যাপক দুর্নীতি করে ক্ষমতায় লুকাশেঙ্কো - এমনটা মনে করছে ইইউ, অ্যামেরিকা, যুক্তরাজ্য ও ক্যানাডার পাশাপাশি বেলারুশের জনতাও৷ বেশ কিছু দেশ ইতিমধ্যেই লুকাশেঙ্কোকে বেলারুশের সাবেক রাষ্ট্রপতি বললেও পদ ছাড়ার কোনো কথা তিনি এখনও বলছেন না৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/B. Zawrzel
6 ছবি1 | 6
এই বছরে এখনো পর্যন্ত এক হাজার ৬০০-র বেশি শরণার্থী বেলারুশ থেকে লিথুয়ানিয়ায় প্রবেশ করেছে। যেটা ২০২০-র তুলনায় ২০ গুণ বেশি। গত দুই সপ্তাহেই এক হাজার মানুষ এসেছেন বলে লিথুয়ানিয়ার বর্ডার গার্ড সার্ভিস দাবি করেছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাানিয়েছেন, ''আমরা বিশ্বকে জানাতে চাই যে, বেলারুশ মিথ্যা কথা বলছে। ওরা শরণার্থীদের ইউরোপে ঢোকার সহজ পন্থার কথা বলছে এবং সেখানে নতুন স্বাধীন জীবনের লোভ দেখাচ্ছে। এটা চলতে দেয়া যেতে পারে না।'' তিনি জানিয়েছেন,'' বেলারুশ-রুট যদি বন্ধ না করা যায়, তা হলে জার্মানির মতো অন্য অনেক দেশই শরণার্থী ও অভিবাসীতে ভরে যাবে।''
লিথুয়ানিয়ার অনুরোধ
ল্যান্ডসবার্গিস, বলেছেন, ''বেলারুশ চায়, ইইউ তাদের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিক।'' গত বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বেনিয়ম ও জালিয়াতির অভিযোগের পর ইইউ বেলারুশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। বেলারুশের মানুষও এর বিরুদ্ধে সমানে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।
লিথুয়ানিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দাবি, ''ইইউ যেন চাপ বজায় রাখে। কারণ, এই চাপ কাজে দিচ্ছে।'' তিনি ইইউ-র বৈঠকে আরো কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারির কথা বলেছেন। তিনি ব্রাসেলস থেকে বাগদাদ যাচ্ছেন। সেখানে তিনি ইরাকের কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করবেন, তাদের দেশ থেকে যেন শরণার্থীরা আসতে না পারে। আর যারা গিয়েছে, তাদের যেন ফেরত নেয়া হয়।