শরণার্থী গ্রহণের বিষয়ে বলকান দেশগুলোর সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে ঐকমত্যে পৌঁছেছে ইইউ৷ সুবাদে গ্রিস থেকে জার্মানির পথে শিগগিরই শরণার্থী গ্রহণ কেন্দ্র বাড়ানোর পাশাপাশি সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদারের উদ্যোগও নেয়া হবে৷
বিজ্ঞাপন
রোববার চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল বলেছেন, শরণার্থীদের ত্রাণ, আশ্রয়কেন্দ্র এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা জরুরি ভিত্তিতে দরকার৷ তিনি আরো বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নকে শরণার্থীদের পাশে দাঁড়াতে হবে এবং দেখাতে হবে যে ‘‘ইউরোপ মূল্যবোধের স্থান, ইউরোপ সংহতির মহাদেশ৷'' ব্রাসেলসে বলকান দেশগুলোর সঙ্গে অনুষ্ঠিত ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইইউ নেতাদের বৈঠকে জার্মান চ্যান্সেলর এ কথা বলেন৷
সোমবার ব্রাসেলসে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট জঁ-ক্লোদ ইয়ুংকার জানান, সার্বিয়া, মেসিডোনিয়া এবং আলবেনিয়াসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের আটটি দেশ গ্রিস এবং বলকান অঞ্চলে বেশি হারে অভিবাসনপ্রত্যাশী গ্রহণের ‘অ্যাকশন প্ল্যান' তৈরি করেছে৷ পরিকল্পনা অনুযায়ী, গ্রিস ও বলকান অঞ্চল মিলিয়ে ১ লাখ স্থানে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের গ্রহণ করা হবে৷
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই পরিকল্পনার ফলে ইউরোপ হয়তো চলমান শরণার্থী সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবে৷
ব্রাসেলসের সংবাদ সম্মেলনে ইয়ুংকার আরো বলেন, ‘‘(শরণার্থী সংকট) পরিস্থিতি সামাল দেয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে, মানুষের যে অনিয়ন্ত্রিত স্রোত আসছে তার গতি মন্থর করে দেয়া৷'' পরিকল্পিত ১ লাখ শরণার্থী কেন্দ্রের অর্ধেরক হবে গ্রিসে, বাকি অর্ধেক, অর্থাৎ ৫০ হাজার হবে মেসিডোনিয়া, সার্বিয়াসহ অন্যান্য বলকান দেশে৷
শরণার্থী গ্রহণ কেন্দ্র বাড়ানোর পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সীমান্ত রক্ষা এজেন্সি ফ্রন্টেক্স-কে আরো সক্রিয় করা, অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ এবং সদস্য দেশগুলোর মধ্যে তার আদান-প্রদান বৃদ্ধির উদ্যোগও নেবে ইইউ৷ স্লোভেনিয়ায় এক সপ্তাহের মধ্যে আরো ৪০০ পুলিশ কর্মকর্তা মোতায়েন করা হবে৷
রবিবার রেকর্ড ১৫ হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী স্লোভেনিয়ায় প্রবেশ করে৷ সে দেশে অভিবাসী হতে আগ্রহীদের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে৷ স্লোভেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী সিরো সেরার এ বিষয়ে শঙ্কা প্রকাশ করতে গিয়ে বলেছেন, ‘‘তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা না নেয়া হলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন অস্তিত্বের সংকটে পড়তে পারে৷''
জার্মানিতে এত শরণার্থী চায় না তারা
শরণার্থীরা তাদের গন্তব্য হিসেবে জার্মানিকে বেছে নিচ্ছে৷ জার্মানিও তাদের প্রতি সহানুভূতি দেখাচ্ছে৷ কিন্তু জার্মানিতে এত শরণার্থী চান না অনেকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘বিশ্বাসঘাতক’ ম্যার্কেল
জার্মানির ইসলাম ও অভিবাসী বিরোধী গোষ্ঠী পেগিডার হাজার হাজার সমর্থক সোমবার জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের শরণার্থী নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে৷ শরণার্থীদের প্রতি নরম মনোভাবের কারণ তারা ম্যার্কেলের বিরুদ্ধে ‘উচ্চ পর্যায়ের বিশ্বাসঘাতকতা’ ও ‘জার্মানির মানুষের বিরুদ্ধে অপরাধ’-এর অভিযোগ আনেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Settnik
শরণার্থীদের নিয়ে কটূক্তি
পেগিডার (প্যাট্রিয়টিক ইউরোপিয়ান অ্যাগেনস্ট দ্য ইসলামাইজেশন অফ দ্য অক্সিডেন্ট) প্রতিষ্ঠাতা লুটৎস বাখমান সম্প্রতি শরণার্থীদের ‘পশু’, ‘আবর্জনা’ ও ‘উচ্ছৃঙ্খল জনতা’ বলে আখ্যায়িত করেন৷ এ জন্য তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেছে সরকার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O.Berg
সমাজে অন্তর্ভুক্তি সম্ভব নয়
সোমবার বিক্ষোভের সময় বাখমান বলেন, শরণার্থীর সংখ্যা দেড় কিংবা দুই মিলিয়নেই থেমে থাকবে না৷ এরপর আসবে তাদের স্ত্রী; আসবে এক, দুই কিংবা তিন সন্তান৷ ফলে এতগুলো লোকের জার্মান সমাজে অন্তর্ভুক্তির কাজ অসম্ভব হয়ে পড়বে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Settnik
জার্মান সরকারের অস্বীকার
জার্মানির জনপ্রিয় পত্রিকা ‘বিল্ড’ সরকারের গোপন ডকুমেন্টের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, চলতি বছর জার্মানিতে প্রায় দেড় মিলিয়ন শরণার্থী আসবে বলে মনে করছে সরকার৷ যদিও প্রকাশ্যে সরকার বলছে সংখ্যাটা এক মিলিয়ন হতে পারে৷ তবে জার্মান সরকারের এক মুখপাত্র এ ধরনের কোনো গোপন ডকুমেন্টের কথা তিনি জানেন না বলে সাংবাদিকদের বলেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Thalia Engel
শরণার্থীর মৃত্যু
জার্মানির পূর্বাঞ্চলের এক শরণার্থীদের বাসস্থানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ইরিত্রিয়া থেকে আসা ২৯ বছরের এক শরণার্থীর মৃত্যু হয়েছে৷ অগ্নিকাণ্ডের কারণ এখনও জানা যায়নি৷ এদিকে, জার্মান সরকারের হিসেবে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছর শরণার্থী ও তাদের বাসস্থানের উপর হামলার সংখ্যা বেড়েছে৷ এ বছরের প্রথম ছয় মাসেই এরকম ২০২টি ঘটনা ঘটেছে বলে সরকার জানিয়েছে, যেখানে গত বছর সংখ্যাটি ছিল ১৯৮৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিপদে ম্যার্কেল
শরণার্থীদের সঙ্গে এমন আচরণের কারণে নিজ দল সহ অন্যান্য দলের রাজনীতিবিদদের তোপের মুখে পড়েছেন ম্যার্কেল৷ তাঁরা জার্মানির শরণার্থী নীতি ও শরণার্থীদের আগমনের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে চ্যান্সেলরকে আরও কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন৷