জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল বলেছেন, শরণার্থী গ্রহণের ক্ষেত্রে কোনো সীমা বেঁধে দেয়ার চিন্তা বাস্তবসম্মত নয়৷ একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন ম্যার্কেল৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির সরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এআরডি-কে ম্যার্কেল বলেন, ‘‘সেটা কীভাবে সম্ভব? আপনি শুধু সীমান্ত বন্ধ করতে পারেন না৷'' শরণার্থী সংকট সামাল দিতে জার্মানির সামর্থ্য আছে উল্লেখ করে জার্মান চ্যান্সেলর বলেন, ‘‘আমি যা করতে পারব না, সে ব্যাপারে অঙ্গীকার করার কোনো মানে নেই৷ আমরা ব্যবস্থা করে ফেলব৷ এ ব্যাপারে বেশ নিশ্চিত আমি৷''
নিজের ইতিহাস স্মরণ করে ম্যার্কেল বলেন, ‘‘ইউরোপ দুর্গ হতে পারে না৷ আমি দীর্ঘদিন বেড়ার পেছনে থেকেছি৷''
তবে শরণার্থী সংকটের সমাধানে ইইউ-র ২৮টি দেশেরও দায়িত্ব রয়েছে বলে মন্তব্য করেন ম্যার্কেল৷ বুধবার ইউরোপীয় সংসদে দেয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের ইইউ-র ২৮টি দেশের মধ্যে বণ্টন করতে ‘নতুন প্রক্রিয়া'-র প্রয়োজন৷ ম্যার্কেল ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রঁসোয়া ওলঁদ বুধবার যৌথভাবে ইউরোপীয় সংসদে বক্তব্য রাখেন৷ বার্লিন প্রাচীর পতন যাবৎ এই প্রথম জার্মানি ও ফ্রান্সের নেতারা যৌথভাবে ইউরোপীয় সংসদে বক্তব্য রাখলেন৷
ডয়চে ভেলের ব্যার্ন্ড রিগ্যার্ট যৌথ বক্তব্যের বিষয়ে মতামত প্রকাশ করতে গিয়ে ২৬ বছর আগে ইউরোপীয় সংসদে দেয়া তৎকালীন জার্মান চ্যান্সেলর হেলমুট কোল ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রঁসোয়া মিতেরঁ-র যৌথ বক্তব্যের ঘটনাটি উল্লেখ করেন৷
জার্মানির যে টেলিভিশন চ্যানেলকে ম্যার্কেল সাক্ষাৎকার দেন সেই এআরডি ক'দিন আগে তাদের এক অনুষ্ঠানে হেডস্কার্ফ পরিহিত ম্যার্কেলের ছবি প্রচার করে বিতর্ক তৈরি করে৷ এরপর সামাজিক মাধ্যমে ঐ চ্যানেলের বিরুদ্ধে ‘ইসলামবিরোধী প্রোপাগান্ডা' চালানোর অভিযোগ ওঠে৷ তবে চ্যানেলটি দাবি করেছে, ‘দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে' গ্রাফিকটি তৈরি করে তারা৷
মুসলিম ও খ্রিষ্টান শরণার্থীদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করলে ইউরোপীয় নেতারা তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়ে ফেলবে মন্তব্য করে ম্যার্কেল বলেন, ‘‘বিশ্বের খ্রিষ্টানদের রক্ষা করার আমরা কে, যদি না আমরা আমাদের দেশে একজন মুসলমান কিংবা একটি মসজিদকে গ্রহণ করতে না পারি? এভাবে চলবে না৷'' বুধবার ইউরোপীয় সংসদে ভাষণ দেয়ার আগে একটি রাজনৈতিক দলের কর্মীদের সঙ্গে বৈঠকে এই মন্তব্য করেন ম্যার্কেল৷
এদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে থাকা অবৈধ অভিবাসীদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া দ্রুততর করতে বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসছেন ইইউ-র স্বরাষ্ট্র ও বিচারমন্ত্রীরা৷
উদ্বাস্তু পরিস্থিতি ও জার্মান রাজনীতি
জার্মানিতে বিপুল সংখ্যক শরণার্থীদের আগমন শুধু সরকারি ব্যবস্থাপনাকেই বিপদের মুখে ফেলেনি, অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও তার ছাপ ফেলেছে: চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল-এর জনপ্রিয়তা আজ কমতির দিকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Gebert
উদ্বাস্তু শিবিরে দাঙ্গা
হামবুর্গ শহরের ভিলহেল্মসবুর্গ এলাকায় শরণার্থীদের প্রাথমিক আশ্রয়কেন্দ্রটি ভরে যাওয়ায় আগন্তুকদের তাঁবুতে থাকার ব্যবস্থা করা হয়৷ মঙ্গলবার (৬ই অক্টোবর) সেখানে আফগানিস্তান ও আলবেনিয়া থেকে আগত উদ্বাস্তুদের মধ্যে ব্যাপক দাঙ্গা বাঁধে৷ লোয়ার স্যাক্সনি-র ব্রাউনশোয়াইগ-এও অনুরূপভাবে আলজিরীয় ও সিরীয় উদ্বাস্তুদের মধ্যে দাঙ্গা বাঁধে একটি চুরির অভিযোগকে কেন্দ্র করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Charisius
ইসলাম বিরোধীরা আবার মাথা চাড়া দিয়েছে
ড্রেসডেনে ইসলাম বিরোধী পেগিডা গোষ্ঠীর বিক্ষোভ সমাবেশে গত সোমবার প্রায় ন’হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করেন৷ বিক্ষোভকারীরা মূলত চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল-কেই বর্তমান উদ্বাস্তু সংকটের জন্য দায়ী করছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Settnik
ম্যার্কেল লাগাম টানলেন
চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল দৃশ্যত তাঁর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টোমাস ডেমেজিয়ের-এর গুরুত্ব কিছুটা খর্ব করে চ্যান্সেলরের দপ্তরের প্রধান পেটার আল্টমায়ার-কে শরণার্থী সংক্রান্ত কর্মকাণ্ড সমন্বয়ের দায়িত্ব দিয়েছেন৷
ছবি: Reuters
উদ্বাস্তুর লাশ
টুরিঙ্গিয়া রাজ্যের সালফেল্ড-এ অবস্থিত একটি রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী আবাসে সোমবার একটি অগ্নিকাণ্ডের পর ২৯ বছর বয়সি এক ইরিট্রিয়ান উদ্বাস্তুর লাশ পাওয়া যায়৷ কিভাবে এই শরণার্থী প্রাণ হারিয়েছেন, তা এখনও অজ্ঞাত৷ তবে আবাসটিতে ইচ্ছাকৃতভাবে অগ্নিসংযোগের কোনো হদিশ পুলিশ এখনও পায়নি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
যে কোনো পন্থায়
টুরিঙ্গিয়ায় এর আগেও উদ্বাস্তু আবাস হিসেবে চিহ্নিত বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে শরণার্থীদের আসা বন্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে৷ যেমন বিশহাগেন-এর এই বাড়িটির ছাদ পুরোপুরি পুড়ে গিয়েছে৷ গত সোমবার এখানে প্রথম উদ্বাস্তুদের আসার কথা ছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Gränzdörfer
ঘরে বাইরে
শরণার্থী সংকট এখন জার্মানির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও টান ধরাচ্ছে৷ চ্যান্সেলর ম্যার্কেলের সিডিইউ দলের জোড়োয়া দল বাভারিয়ার সিএসইউ৷ তাদের প্রধান হর্স্ট জেহোফার সেপ্টেম্বর মাসের শেষে একটি দলীয় সম্মেলনে বক্তা হিসেব আমন্ত্রণ জানান হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অর্বান-কে, যিনি সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে উদ্বাস্তুর স্রোত আটকানোর চেষ্টা করেছেন৷
ছবি: Reuters/M. Dalder
হাওয়া যদি বদলায়
বাভারিয়ার অর্থমন্ত্রী মার্কুস জ্যোডার ইতিপূর্বেও বলেছেন: ‘‘আমরা (অর্থাৎ জার্মানি) বিশ্বকে বাঁচাতে পারি না৷’’ এমনকি তিনি অস্ট্রিয়া সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার কথাও চিন্তা করেছেন৷ তবে জ্যোডার যখন সম্প্রতি রাজনৈতিক আশ্রয় প্রাপ্তির সাংবিধানিক অধিকার সীমিত করার কথা বলেন, তখন জেহোফার স্বয়ং সাথে সাথে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Gebert
7 ছবি1 | 7
সংকলন: জাহিদুল হক
সম্পাদনা: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী
‘শরণার্থী গ্রহণের ক্ষেত্রে কোনো সীমা বেঁধে দেয়ার চিন্তা বাস্তবসম্মত নয়’ – আপনি কি ম্যার্কেলের এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷