জার্মান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গ্রিসে যাঁরা প্রথম আশ্রয় চেয়েছিলেন, অথচ আছেন জার্মানিতে, তাঁদের গ্রিসেই ফেরত পাঠানোর বিষয়ে একমত হয়েছে দুই দেশ৷ এর আগে স্পেনের সঙ্গেও জার্মানির একই ধরনের সমঝোতা হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
শুক্রবার করা হয়েছে এই চুক্তি৷ এর ফলে এখন অনেক শরণার্থীকে গ্রিসে ফেরত পাঠাতে পারবে জার্মানি৷
দক্ষিণ ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে বেশ কিছুদিন ধরেই এ ধরনের চুক্তিতে আসার চেষ্টা করছে জার্মানি৷ যাঁরা এরই মধ্যে অন্য কোনো ইউরোপীয় দেশে আশ্রয়ের আবেদন করেছেন, তাঁদের সেসব দেশে এই চুক্তি অনুযায়ী ফেরত পাঠাতে পারবে জার্মানি৷
তাই চুক্তি অনুযায়ী এখন এথেন্সকে তাদের দেশে আশ্রয়ের আবেদন করেও অস্ট্রিয়া সীমান্ত পার হয়ে জার্মানিতে ঢুকে পড়া শরণার্থীদের ফেরত নিতে হবে৷ তবে বিনিময়ে এথেন্স কী পাবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়৷
গ্রিসের লেসবস দ্বীপে কেমন আছেন শরণার্থীরা?
লেসবস দ্বীপে থাকা শরণার্থীদের সেবা দিতে ইউরোপের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা পেতো বিভিন্ন এনজিও৷ কিন্তু আগস্ট মাসে সেই বরাদ্দ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এনজিওগুলো চলে যাচ্ছে৷
ছবি: DW/V. Haiges
তহবিল শেষ
গ্রিসের লেসবস দ্বীপে যেসব শরণার্থী আছেন তাঁদের চিকিৎসা, আইনগত সেবাসহ অন্যান্য সেবা দিতো বিভিন্ন এনজিও৷ এতদিন তারা ইউরোপীয় বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সংস্থার কাছ থেকে তহবিল পেতো৷ কিন্তু আগস্ট মাসে সেটি বন্ধ হয়ে গেছে৷ তাই অনেক এনজিও ইতিমধ্যে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে বা দেয়ার পরিকল্পনা করছে৷ ফলে শরণার্থীদের জীবন আরও কঠোর হয়ে উঠছে৷
ছবি: DW/V. Haiges
কৌশল?
শরণার্থীদের জন্য তৈরি করা একটি গোসলখানায় শ্যাম্পু আর পানির বোতল পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে৷ পরিচ্ছন্ন গোসলখানার অভাবে শরণার্থীদের তাই অন্য ব্যবস্থা করতে হচ্ছে৷ অনেক শরণার্থী মনে করছেন, তাদের জীবন দুর্বিষহ করে তোলার জন্য ইচ্ছে করেই এমন পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে৷
ছবি: DW/V. Haiges
সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়
ইরিত্রিয়ার শরণার্থী আমান তাঁর তাঁবুতে এই সাংবাদিককে চা বা পানি দিতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন৷ তিন মাস আগে তিনি লেসবসে যান৷ তাঁর আশ্রয় আবেদনের ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত হয় তা জানার অপেক্ষায় আছেন তিনি৷
ছবি: DW/V. Haiges
‘উই আর হিউম্যান’
আফগানিস্তান থেকে আসা এক আশ্রয়প্রার্থী লেসবসে শরণার্থীদের খারাপ পরিস্থিতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন৷ বেশিরভাগ আফগান শরণার্থী প্রায় এক বছর ধরে লেসবসে বসবাস করছেন৷ এখনও তাদের আবেদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি৷
ছবি: DW/V. Haiges
লেসবসবাসীদের প্রতিক্রিয়া
২০১৫ সালে শরণার্থী সংকট শুরুর পর লেসবসে পর্যটকদের আগমন কমে গেছে৷ তারপরও লেসবসে বসবাসকারীরা শরণার্থীদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করছেন৷ কিন্তু গ্রিসের একার পক্ষে শরণার্থীদের জন্য বিশেষ কিছু করা সম্ভব নয় বলে মনে করেন তাঁরা৷
ছবি: DW/V. Haiges
স্বেচ্ছাসেবীদের আনাগোনা
এনজিওদের কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেক স্বেচ্ছাসেবী লেসবসে শরণার্থীদের সেবা দিচ্ছে৷ ছবিতে জার্মান এক চিকিৎসককে সেবা দিতে দেখা যাচ্ছে৷ তবে অনেক শরণার্থীর অভিযোগ, চিকিৎসকরা যে কোনো সমস্যায় খালি ব্যথানাশক দিয়ে থাকেন৷
ছবি: DW/V. Haiges
আয়ের চেষ্টা
ইরানি এই নারী সাগরে ভেসে আসা লাইফ ভেস্ট দিয়ে থলে ও ওয়ালেট তৈরি করছেন৷ এভাবে সামান্য আয় যেমন হয়, তেমনি শরণার্থী জীবনের একঘেঁয়েমি থেকেও কিছুটা মুক্তি মেলে৷
ছবি: DW/V. Haiges
প্রতিদিন শরণার্থী আসছে
জাতিসংঘের হিসেবে, গ্রিসে এ বছর এখন পর্যন্ত প্রায় ১৪ হাজার শরণার্থী এসেছে৷ গত বছর এসেছিল এক লক্ষ ৭৩ হাজার৷ এর মধ্যে সাড়ে ১২ হাজার জনের আবেদন গৃহীত হয়েছে৷
ছবি: DW/V. Haiges
8 ছবি1 | 8
এর আগে স্পেনের সঙ্গে করা চুক্তিতেও এমন বিষয় ছিল৷ মরক্কো থেকে ভূ-মধ্য সাগর পাড়ি দিয়ে এসব শরণার্থীরা স্পেনে আসেন৷ সেখানে আশ্রয়ের আবেদনও করেন৷ কিন্তু পরে জার্মানিতে চলে আসেন৷
তবে এসব শরণার্থীর সংখ্যা খুব বেশি নয়৷ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসেবে, গত জুন থেকে অস্ট্রিয়া সীমান্ত দিয়ে গ্রিস থেকে জার্মানি আসা শরণার্থীর সংখ্যা দেড়শ'র বেশি হবে না৷
জার্মানির এমন দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করতে উঠে-পড়ে লাগার কারণ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্স্ট সেহোফার৷ তিনি জোট সরকার ভেঙ্গে দেয়ার হুমকি দেয়ার পর শরণার্থী সংক্রান্ত কিছু বিষয়ে আপোষ করতে বাধ্য হন চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ সেহোফার দক্ষিণের সীমান্ত একেবারে বন্ধই করে দিতে চাইছিলেন৷
এদিকে, ইটালির সঙ্গেও একই রকমের সমঝোতায় আসতে চাইছে জার্মানি৷ কথাবার্তা অনেকটাই এগিয়েছে বলে জানা গেলেও ইটালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্তেও সালভিনি বাগড়া দিতে পারেন৷ তিনি অভিবাসনবিরোধী লিগ পার্টির নেতা৷ গত সপ্তাহেই ম্যার্কেল ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, সমঝোতা করতে প্রয়োজনে তিনি ইটালি সফর করবেন৷