আগামী সপ্তাহের ইইউ সম্মেলনে শরণার্থী বিষয়ে ইউরোপীয় সমাধান হবে বলে মনে করছেন না জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ সেই সম্মেলনের আগে রোববার একটি মিনি সম্মেলনে মিলিত হয়েছেন ইইউ নেতারা৷
বিজ্ঞাপন
ব্রাসেলসে অভিবাসন নিয়ে এই মিনি সম্মেলনে জার্মান চ্যান্সেলরকে স্বাগত জানান ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জ্যঁ ক্লদ ইউঙ্কার৷ ম্যার্কেল মনে করেন না আগামী বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিতব্য ইইউ সম্মেলনে শরণার্থী বিষয়ে ইউরোপীয় সমাধান আসবে৷ তাই মিনি সম্মেলনে তিনি দ্বিপাক্ষিক বা ত্রিপাক্ষিক সমাধানের ওপর জোর দেন৷
ইউরোপে বাংলাদেশিদের আশ্রয় পাওয়ার হার বাড়ছে
ইউরোপীয় কমিশনের পরিসংখ্যান বিষয়ক সংস্থা ‘ইউরোস্ট্যাট’-এর গত ১০ বছরের হিসেব বলছে, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশিদের আশ্রয়ের আবেদন সফল হওয়ার হার বাড়তির দিকে৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. de Sakutin
তিন ধরনের সুরক্ষা
শরণার্থী, হিউম্যানিটারিয়ান ও সাবসিডিয়ারি – এই তিন ক্যাটাগরিতে আশ্রয় দেয়া হয়ে থাকে৷ যাঁরা শরণার্থী স্ট্যাটাসের যোগ্য নন, কিন্তু দেশে ফিরে গেলে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ার ঝুঁকিতে আছেন, তাঁদের সাবসিডিয়ারি সুরক্ষা দেয়া হয়৷ আর অসুস্থতা ও অভিভাবকহীন শিশুদের মানবিক (হিউম্যানিটারিয়ান) বিবেচনায় আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/R. Schlesinger
২০১৭
বাংলাদেশি নাগরিকদের পক্ষ থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে গতবছর ১৬,০৯৫টি আশ্রয়ের আবেদন পড়েছে৷ আর একই সময়ে বাংলাদেশিদের করা ২,৮৩৫টি আবেদন সফল হয়েছে৷ শতকরা হিসেবে সেটি ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ৷ জার্মানিতে আবেদন পড়েছে ২,৭২৫টি৷ সফল হয়েছে ৩১৫টি৷ এমনিভাবে অন্য কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান এরকম – যুক্তরাজ্য (আবেদন ১,৬৩০; সফল ৬৫), ইটালি (আবেদন ৫,৭৭৫; সফল ১,৮৮৫) এবং ফ্রান্স (আবেদন ৪,১১৫; সফল ৪৪০)৷
ছবি: imago/Cronos
২০১৬
বাংলাদেশিরা ১৪,০৮৫টি আবেদন করেছেন৷ ইতিবাচক সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে ২,৩৬৫টি৷ অর্থাৎ সফলতার হার ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ৷ কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান – জার্মানি (আবেদন ৬৬৫; সফল ১১০), যুক্তরাজ্য (আবেদন ১,৪০৫; সফল ৮০), ইটালি (আবেদন ৬,২২৫; সফল ১,৬১০) এবং ফ্রান্স (আবেদন ৪,১১০; সফল ৪৪০)৷
ছবি: picture alliance/dpa/D. Kalker
২০১৫
সেবছর সফলতার হার ছিল ১৫ দশমিক ৯ শতাংশ৷ আবেদন পড়েছিল ১১,২৫০টি৷ ইতিবাচক সিদ্ধান্ত ১,৭৮৫টি৷ কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান – জার্মানি (আবেদন ২৬৫; সফল ৩৫), যুক্তরাজ্য (আবেদন ১,০১৫; সফল ১২০), ইটালি (আবেদন ৫,০১০; সফল ১,২২৫) এবং ফ্রান্স (আবেদন ৩,৫৬০; সফল ৩১৫)৷
ছবি: Imago/Frank Sorge
২০১৪
আবেদন ৭,৫৮০টি৷ সফল ৭৮৫৷ শতকরা হার ১০ দশমিক ৩৷ কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান – জার্মানি (আবেদন ৪৬৫; সফল ৫০), যুক্তরাজ্য (আবেদন ৭০০; সফল ৭৫), ইটালি (আবেদন ৭৩৫; সফল ৩১৫) এবং ফ্রান্স (আবেদন ৩,৮৭০; সফল ২৬৫)৷
ছবি: Megan Williams
২০১৩
সফলতার হার ৭ দশমিক ১ শতাংশ৷ আবেদন ৮,৩৩৫৷ সফল ৫৯৫৷ কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান – জার্মানি (আবেদন ২৫০; সফল ২০), যুক্তরাজ্য (আবেদন ৮৩০; সফল ৫৫), ইটালি (আবেদন ৫৯০; সফল ৩০০) এবং ফ্রান্স (আবেদন ৩,৬১৫; সফল ১৪৫)৷
ছবি: picture alliance/robertharding/A. Robinson
২০১২
সফলতার হার ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ৷ কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান – জার্মানি (আবেদন ১৯০; সফল ১০), যুক্তরাজ্য (আবেদন ৮০০; সফল ৫০), ইটালি (আবেদন ১,৪১০; সফল ১,০৪৫) এবং ফ্রান্স (আবেদন ৩,৭৫৫; সফল ৮৫)৷
ছবি: Imago/Rainer Weisflog
২০১১
সফলতার হার ২ দশমিক ৮ শতাংশ৷ কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান – জার্মানি (আবেদন ১১০; সফল ০), যুক্তরাজ্য (আবেদন ৪৮০; সফল ৪০), ইটালি (আবেদন ৮৬৫; সফল ৬৫) এবং ফ্রান্স (আবেদন ৩,৭৭০; সফল ৪৫)৷
ছবি: picture-alliance/ZUMAPRESS.com/M. Cohen
২০১০
সফলতার হার ৪ দশমিক ৮ শতাংশ৷ কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান – জার্মানি (আবেদন ১০৫; সফল ০), যুক্তরাজ্য (আবেদন ৪৬০; সফল ৫৫), ইটালি (আবেদন ২১৫; সফল ৪০) এবং ফ্রান্স (আবেদন ২,৪১০; সফল ২৫)৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Uhlemann
২০০৯
সফলতার হার ৩ দশমিক ৮ শতাংশ৷ কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান – জার্মানি (আবেদন ৪০; সফল ০), যুক্তরাজ্য (আবেদন ৩৭৫; সফল ৪৫), ইটালি (আবেদন ৮৮৫; সফল ৮৫) এবং ফ্রান্স (আবেদন ১,৭৮০; সফল ৩৫)৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. de Sakutin
২০০৮
সফলতার হার ৩ দশমিক ৬ শতাংশ৷ কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান – জার্মানি (আবেদন ৪০; সফল ০), যুক্তরাজ্য (আবেদন ৩৯৫; সফল ৯৫), ইটালি (আবেদন ৯৫০; সফল ৫০) এবং ফ্রান্স (আবেদন ১,৬৬০; সফল ৩৫)৷
ছবি: picture alliance/dpa/D. Kalker
৩২ দেশের হিসাব
ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৮ সদস্যরাষ্ট্র এবং ‘ইউরোপিয়ান ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট’ বা ইএফটিএ-এর অন্তর্ভুক্ত আইসল্যান্ড, লিখটেনস্টাইন, নরওয়ে ও সুইজারল্যান্ডের পরিসংখ্যান অন্তর্ভুক্ত করেছে ইউরোস্ট্যাট৷ আরও পরিসংখ্যান জানতে উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: Megan Williams
12 ছবি1 | 12
রোববার দুপুরে মিনি সম্মেলনে ম্যার্কেলের বক্তব্য ছিল, ২৮ ইইউ রাষ্ট্র প্রত্যেকেই নিজ নিজ স্বার্থ রক্ষার কথা চিন্তা করে একটি সমাধানে আসতে যতটা অপেক্ষা করতে হবে, তার চেয়ে ইইউকে দেখতে হবে কীভাবে সবাই সমস্যা সমাধানে একে অপরকে সহযোগিতা করতে পারে৷
তাঁর বক্তব্যে সায় দিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ৷
১৬টি ইউরোপীয় দেশের নেতারা এই মিনি সম্মেলনে যোগ দেন৷ বিশেষ করে জার্মানিতে শরণার্থী বিষয়ে চলা অভ্যন্তরীণ জটিলতা নিরসন ও ভূমধ্যসাগরে শরণার্থীদের বহনকারী একটি এনজিও জাহাজ নিয়ে সম্প্রতি ইইউ রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বিতণ্ডা চলার পর এই মিনি সম্মেলনের আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়৷
সম্প্রতি জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও ম্যার্কেলের দল সিডিইউ’র সহযোগী সিএসইউ’র নেতা সেহোফার অভিবাসন বিষয়ক একটি ‘মাস্টারপ্ল্যান’ তৈরি করেন৷ কিন্তু ম্যার্কেলের সঙ্গে মতের মিল না হওয়ায় এখনও তা প্রকাশ করা হয়নি৷ জানা গেছে, যেসব শরণার্থী ইউরোপের অন্য দেশে নিবন্ধিত হয়েছেন, তাঁদেরকে জার্মান সীমান্ত থেকে ফিরিয়ে দিতে চান সেহোফার৷ তবে ম্যার্কেল এই পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেছেন৷ তিনি শরণার্থী সংকটের একটি ইউরোপীয় সমাধান চান৷
এ অবস্থায় জার্মান সরকার ভেঙ্গে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দেয়৷ সেহোফার ম্যার্কেলকে দু’সপ্তাহের সময় দেন৷
প্রতি দু’সেকেন্ডে একজন ঘরছাড়া
আজ বিশ্ব শরণার্থী দিবস৷ জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা জানিয়েছে, ২০১৭ সালে প্রতি দু'সেকেন্ডে একজন বাস্তুচ্যূত হয়েছেন৷ মিয়ানমার, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, সিরিয়াসহ কয়েকটি দেশ থেকে অনেক মানুষ বাসভূমি ছাড়তে বাধ্য হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AA/E. Omic
গৃহহীন যারা
সহিংসতা, যুদ্ধ ও সংঘাতের ফলে বিশ্বে এখন ৬৮ দশমিক ৫ মিলিয়ন, অর্থাৎ ৬ কোটি ৮৫ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত অবস্থায় আছেন৷ মঙ্গলবার জাতিসংঘের উদ্বাস্তু বিষয়ক সংস্থা ইইএনএইচসিআর এ কথা জানিয়েছে৷ জাতিসংঘের হিসেব মতে, ২০১৬ সালে সারা বিশ্বে ৬ কোটি ৫৬ লাখ মানুষ ঘরছাড়া হয়েছিল৷ সেবছর মূলত মিয়ানমার থেকেই বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিল৷ .
ছবি: DW/M. Mostqfigur Rahman
দু’ সেকেন্ডে একজন
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়, গতবছরই ১ কোটি ৬২ লক্ষ মানুষ নতুন করে গৃহহীন হয়েছে৷ এদের মধ্যে যাঁরা প্রথমবার বাধ্য হয়ে ঘর ছেড়েছেন, তাঁরাও যেমন আছেন, তেমনি আছেন যাঁরা আগে থেকেই উদ্বাস্তু, তাঁরাও৷ অর্থাৎ প্রতিদিন ৪৪,৪০০ মানুষ বিতাড়িত হচ্ছেন এবং প্রতি দু'সেকেন্ডে ১ জন করে গৃহহীন হচ্ছেন৷
যুদ্ধ, হিংসা এবং উৎপীড়নের জন্য ৬ কোটি ৮০ লক্ষ মানুষ নিজের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Swarup
দেশের মধ্যে
অভ্যন্তরীণ যুদ্ধ বা হিংসার জন্য দেশের ভেতরেই অনেক মানুষ বাস্তুভিটা ছেড়ে অন্য জায়গায় যেতে বাধ্য হয়৷ তাঁদের বলা হয় আইডিপি (ইন্টারনালি ডিসপ্লেসড পিপল)৷ তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে বিশ্বে প্রায় ৪কোটি আইডিপি ছিল৷ এই সংখ্যাটা আগের বছরের তুলনায় কমেছে৷ কলম্বিয়া, সিরিয়ায় এদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি৷
ছবি: picture-alliance/AA/E. Omic
সিরিয়ার দুর্দশা
গত ৭ বছর ধরে যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার ওপর দিয়ে নানা ঝড় বয়েছে৷ ২০১৭ সালের শেষ অবধি প্রায় ৬৩ লাখ মানুষ ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল৷ এছাডা়ও সিরিয়াতে প্রায় ৬২ লাখ মানুষ দেশের ভেতরেই উদ্বাস্তু জীবন কাটাচ্ছে৷
ছবি: DW/S. Derks
আফগানিস্তান
সিরিয়ার পরেই যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের স্থান৷ প্রচুর মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে আফগানিস্তান থেকে পালাচ্ছেন৷ বিশ্বব্যাপী নজিরবিহীনভাবে যুদ্ধ, সহিসংতা ও উৎখাতের কারণে প্রতিদিনই রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা বাড়ছে বলে মনে করা হচ্ছে৷ অন্যান্য দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে বিভিন্ন সংস্থার দ্বারে দ্বারে ঘুরছে যুদ্ধবিধ্বস্ত এসব মানুষ৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Paduano
দক্ষিণ সুদানের অবস্থা
দক্ষিণ সুদানে গৃহযুদ্ধ চলছে ২০১৩ সাল থেকে৷ গৃহযুদ্ধের কবলে পড়ে গত কয়েক বছরে দেশটির লাখ লাখ মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে৷ জাতিসংঘের মতে, এই দেশ সবচেয়ে খারাপ অবস্থার মধ্যে আছে৷
ছবি: Reuters/H. Kalis
তুরস্ক
প্রতিবেদন অনুযায়ী, তুরস্কে প্রচুর শরণার্থী রয়েছে৷ ২০১৭ সালের শেষের দিক পর্যন্ত তুরস্কে প্রায় ৩৫ লক্ষ শরণার্থী ছিল৷ তার মধ্যে অধিকাংশই সিরিয়ার মানুষ৷
ছবি: Getty Images/AFP/L. Gouliamik
গরিব দেশেও
অ্যামেরিকা আর ইউরোপ যাঁরা পৌঁছচ্ছেন, তাঁরা ছাড়াও অনেক শরণার্থী কম আয় সম্পন্ন বা মধ্যম আয় সম্পন্ন দেশগুলোতে আশ্রয় নিচ্ছেন৷ জাতিসংঘ শরণার্থী কমিশন (ইউএনএইচসিআর) বলছে, প্রায় ৮৫ শতাংশ শরণার্থী উন্নয়নশীল দেশে আশ্রয় নিচ্ছেন, যাঁরা খুবই দরিদ্র৷ এদের মধ্যে আফগানিস্তান, দক্ষিণ সুদান, মিয়ানমার, সোমালিয়া, সুদান এবং কঙ্গো, উগান্ডার মানুষই বেশি৷