তুরস্কের সঙ্গে ইউরোপের বাকযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে শরণার্থী সংক্রান্ত চুক্তি অনিশ্চয়তার মুখে পড়ছে৷ জাপানে জি-সেভেন শীর্ষ সম্মেলনেও আন্তর্জাতিক সমাধানসূত্র নিয়ে আলোচনা চলছে৷
বিজ্ঞাপন
ইউরোপের শরণার্থী সংকট সামাল দিতে তুরস্কের সঙ্গে চুক্তির উপর নির্ভর করছিলেন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলসহ ইউরোপীয় নেতারা৷ কিন্তু সে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতির জের ধরে সেই চুক্তি প্রশ্নের মুখে পড়েছে৷ ইইউ-তে প্রবেশের জন্য তুরস্কের নাগরিকদের ভিসার আর প্রয়োজন পড়বে না, এই প্রত্যাশার ভিত্তিতেই তুরস্কের এর্দোয়ান প্রশাসন শরণার্থী চুক্তিতে সাক্ষর করেছিল৷ কিন্তু ভিসামুক্ত প্রবেশাধিকারের সব পূর্বশর্ত পূরণ করতে সে দেশ এখন প্রস্তুত নয়৷ তাই আঙ্কারা থেকে ইইউ'র সঙ্গে সব চুক্তি বাতিল করার হুমকি শোনা যাচ্ছে৷
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জঁ ক্লোদ ইয়ুংকার বলেছেন, এমন সব হুমকিতে কোনো কাজ হবে না৷ তুরস্কের উচিত চুক্তির সব শর্ত মেনে নেওয়া৷
বিশেষ করে সন্ত্রাস-দমনের লক্ষ্যে বিতর্কিত যে আইন পাশ করা হয়েছে, তা প্রত্যাহার করে নিতে হবে৷ জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলও তুরস্ককে কোনো বাড়তি ছাড় দিতে প্রস্তুত নন৷
ইউরোপীয় পরিষদের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টুস্ক বলেন, ভৌগলিক কারণে এই সংকট শুধু ইউরোপের একার নয়, এর মোকাবিলা করতে গোটা বিশ্বকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে, ইউরোপের প্রতি সংহতি দেখাতে হবে৷ উল্লেখ্য, গত বছর প্রায় ১৩ লক্ষ শরণার্থী ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রবেশ করেছে৷
শরণার্থীদের ঝুঁকিপূর্ণ সমুদ্রযাত্রার বিপদের মাত্রা তুলে ধরতে ইটালির নৌবাহিনী নাটকীয় ছবি প্রকাশ করেছে৷
জার্মানির পূর্বাঞ্চলে ফ্রাংকফুর্ট আন ডেয়ার ওডার শহরে একদল শরণার্থীর উপর হামলার একটি ঘটনা এবং উপস্থিত পথচারীদের প্রতিক্রিয়া নিয়ে জোরালো সমালোচনা শোনা যাচ্ছে৷
এদিকে জার্মানিতে শরণার্থীরা কীভাবে মরিয়া হয়ে চার্চের আশ্রয় নিচ্ছে, তা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংবাদ সংস্থা এএফপি৷
গ্রিস থেকে বেশি পাঠানো হচ্ছে পাকিস্তানিদের
গ্রিস থেকে যে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের তুরস্কে পাঠানো হয়েছে তাদের মধ্যে বেশিরভাগই পাকিস্তানি৷ লেসবসে এখনো অনেক পাকিস্তানি ইউরোপে থাকার জন্য পালিয়ে বেড়াচ্ছেন, বিক্ষোভ-প্রতিবাদ, অনশন ধর্মঘট করছেন৷
ছবি: Jodi Hilton
‘সব অবৈধ’
লেসবসের স্থানীয় প্রশাসন মনে করে সেখানে শরণার্থী শিবিরের সবাই অবৈধভাবে গ্রিসে বসবাস করছে৷ লেসবসের মেয়র কার্যালয়ের প্রেস কর্মকর্তা জানালেন, শরণার্থী শিবির খালি করে শিগগিরই সবাইকে চলে যেতে হবে, না গেলে তারা পুলিশের সহায়তা নেয়া হবে৷
ছবি: Jodi Hilton
ধরা পড়ে ফেরার অপেক্ষায়
ইইউ-তুরস্ক চুক্তি অনুযায়ী ইতিমধ্যে গ্রিস থেকে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের তুরস্কে ফেরানো শুরু হয়েছে৷ তবে এখনো সিরিয়া, ইরাকসহ এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে এখনো অনেক অভিবাসনপ্রত্যাশী আসছেন গ্রিসে৷ ধরে ধরে ফেরতও পাঠানো হচ্ছে তাদের৷ ওপরের ছবিতে সাগর থেকে ধরে বাসে তোলা এক পাকিস্তানি৷
ছবি: Jodi Hilton
ফেরার পালা
গত ৮ এপ্রিল গ্রিস থেকে ২০২ জনকে তুরস্কে ফিরতে হয়েছে৷ তাদের মধ্যে ১৩০ জনই ছিল পাকিস্তানি৷ বাকিদের মধ্যে আফগান নাগরিক বেশি হলেও বেশ কয়েকজন বাংলাদেশ, কঙ্গো, ভারত, ইরান ও শ্রীলঙ্কার নাগরিকও ছিল৷
ছবি: Jodi Hilton
পাকিস্তানিদের অনশন
লেসবসের মোরিয়া ক্যাম্পে অনশন ধর্মঘট করছেন পাকিস্তানি অভিবাসনপ্রত্যাশীরা৷ তাঁদের দাবি, ইউরোপে থাকতে দিতে হবে৷ পাকিস্তানের বালুচিস্তানের এক তরুণ তো ইলেকট্রিক ল্যাম্প পোস্টের ওপরে উঠে ইউরোপে থাকতে না দিলে আত্মহত্যা করবেন বলেও হুমকি দিয়েছিলেন৷ পরে তাকে নামিয়ে আনা হয়৷
ছবি: Jodi Hilton
নিঃস্ব এক পাকিস্তানি
ইজাজের বয়স ৩৮৷ ইউরোপে স্থায়ী হতে জমিজমা বিক্রি করে পাকিস্তান ছেড়েছেন৷ এখন তুরস্কে ফিরে যেতে হবে তাঁকেও৷ ইজাজ বলছিলেন, ‘তুরস্কে ফিরে যাওয়ার চেয়ে আমার মরে যাওয়াই ভালো৷’
ছবি: Jodi Hilton
পালিয়ে বাঁচা
পুলিশ এসেছে৷ ধরতে পারলেই তুরস্কে ফেরত পাঠানো হবে৷ তাই গ্রিস সীমান্তের এক শরণার্থী শিবির থেকে ছুটে পালাচ্ছেন এক পাকিস্তানি৷
ছবি: Jodi Hilton
বিনে পয়সার খাবার
গ্রিসেরই এক শরণার্থী শিবির৷ নাম ‘নো বর্ডার্স ক্যাম্প’৷ সেখানে বিনে পয়সায় খাবারের আশায় অভিবাসনপ্রত্যাশীদের অপেক্ষা৷
ছবি: Jodi Hilton
শীতে আগুনের পরশ
এ পর্যন্ত যে ৩২৬ জনকে গ্রিস থেকে তুরস্কে ফেরত পাঠানো হয়েছে তাদের মধ্যে ২০১ জনই পাকিস্তানি৷ এখানে শীতে আগুন পোহাচ্ছেন কয়েকজন পাকিস্তানি৷