এক উগ্র দক্ষিণপন্থি জার্মান সেনা অফিসার সিরীয় শরণার্থী সেজে সম্ভবত সন্ত্রাসী হামলার ষড়যন্ত্র করছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী সেনাবাহিনীর দুর্বলতার কথা স্বীকার করে কড়া সমালোচনা করেছেন৷
বিজ্ঞাপন
জার্মান সেনাবাহিনীর অফিসার ছিলেন ফ্রাংকো৷ চরম দক্ষিণপন্থি ভাবধারা ও বিদেশি বিদ্বেষের মনোভাব তাঁর সতীর্থ ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অজানা ছিল না বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে৷ এমনকি উচ্চশিক্ষার সময় তিনি এমনই একটি বিতর্কিত বিষয় বেছে নিয়েছিলেন৷ কিছুকাল আগেও জার্মানির সীমান্তে ফ্রান্সের অ্যালসেস অঞ্চলে ফরাসি-জার্মান যৌথ বাহিনীর লেফটেন্যান্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি৷
তারপরের ঘটনা সত্যি বিস্ময়কর৷ সমান্তরাল এক দ্বিতীয় জীবন শুরু করেন ২৮ বছর বয়স্ক ফ্রাংকো৷ ২০১৫ সালের শেষে নিজেকে সিরীয় খ্রীষ্টান শরণার্থী হিসেবে তুলে ধরে বাভেরিয়ায় নথিভুক্ত হন তিনি৷ তারপর জার্মানিতে রাজনৈতিক আশ্রয়ের দরখাস্তও করেন ফ্রাংকো৷ ভাঙা ভাঙা আরবি ভাষা বলে সে যাত্রায় তিনি নিজেকে বিদেশি হিসেবে সফলভাবে তুলে ধরতে পেরেছিলেন৷ মরক্কোর দোভাষী তাঁকে আরবি ভাষায় প্রশ্ন করার বদলে ফরাসিতে কথা বলেন৷ এমনকি জার্মান সেনাবাহিনীরই এক সদস্য তাঁকে জেরা করেছিলেন৷ তিনি ঘুনাক্ষরেও ভাবতে পারেননি, সামনের ব্যক্তিটি একজন জার্মান লেফটেন্যান্ট৷ মোটকথা গোটা প্রক্রিয়ায় অনেক দুর্বলতা ধরা পড়েছে৷ জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই গাফিলতির পূর্ণাঙ্গ তদন্তের অঙ্গীকার করেছেন৷
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ধারণা, ফ্রাংকো বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী হামলার ষড়যন্ত্র করছিলেন৷ তাঁর কাছে লক্ষ্যবস্তুর একটা তালিকাও পাওয়া গেছে৷ চরম দক্ষিণপন্থি সন্ত্রাসবাদী হিসেবে তিনি বামপন্থি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলির উপর হামলা চালাতে চেয়েছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনার বিমানবন্দরের শৌচাগারে একটি পিস্তল লুকিয়ে রাখতে গিয়ে ধরা পড়েন ফ্রাংকো৷
বলা বাহুল্য, এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনার ফলে জার্মান সেনাবাহিনী বিশাল চাপের মুখে পড়েছে৷ জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন চরম বিরক্তি প্রকাশ করেছেন৷ রবিবার তিনি এক টেলিভিশন অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনীর মধ্যে কাঠামোগত ত্রুটির কথা খোলাখুলি স্বীকার করেন৷ তাছাড়া ফ্রাংকোর মতো উচ্চপদস্থ অফিসারের উগ্র দক্ষিণপন্থি ভাবধারা সম্পর্কে জানা সত্ত্বেও বাহিনীর সতীর্থ ও কর্মকর্তারা হাত গুটিয়ে বসে থেকে যে ‘ভুল’ সংহতির পরিচয় দিয়েছেন, তা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করেন জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী৷ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন স্তরে নেতৃত্বের দুর্বলতার কড়া সমালোচনা করেন তিনি৷ এর সম্ভাব্য পরিণাম সম্পর্কে তিনি অবশ্য কোনো মন্তব্য করেননি৷ তবে এমন প্রবণতা বরদাস্ত করা হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন৷
এসবি/এসিবি (ডিপিএ, এএফপি)
যেসব দেশে শান্তি ফেরাচ্ছে জার্মানি
তৎকালীন পশ্চিম জার্মানি ন্যাটোর সঙ্গে যোগ দেয়ার পর থেকে বার্লিন ট্রান্স-অ্যাটলান্টিক জোটটিকে নানাভাবে সহায়তা করেছে৷ সেই ১৯৯০ সাল থেকে বিভিন্ন দেশে শান্তি ফেরাতে কাজ করেছে জার্মান সেনাবাহিনী৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Hanschke
ন্যাটোতে জার্মানির ভূমিকা
তৎকালীন পশ্চিম জার্মানি আনুষ্ঠানিকভাবে ন্যাটোতে যোগ দিয়েছে ১৯৫৫ সালে৷ তবে ১৯৯০ সাল অবধি নিজেদের কর্মকাণ্ড অত্যন্ত সীমিত রেখেছিল জার্মানি৷ শান্তিরক্ষা থেকে শুরু করে প্রতিরক্ষা ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ পর্যন্ত বিভিন্ন কাজে ন্যাটোর হয়ে বিশ্বের কয়েকটি দেশে কাজ করেছে জার্মান সেনাবাহিনী৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Hanschke
বসনিয়া: জার্মানির প্রথম ন্যাটো মিশন
১৯৯৫ সালে বসনিয়া-হ্যারৎসেগোভিনায় প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে জার্মান সেনা মোতায়েন করা হয়৷ অর্থাৎ বসনিয়া যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে সেদেশে শান্তি ফেরাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন জার্মানরাও৷ সেই শান্তিরক্ষা মিশনে ন্যাটোর সদস্য ও সহযোগী দেশগুলোর ৬০ হাজারেরও বেশি সেনা মোতায়েন করা হয়েছিল৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/H. Delic
কসভোতে শান্তিরক্ষা
কসভোতে ন্যাটো নেতৃত্বাধীন শান্তিরক্ষা মিশনের শুরুতেই সেদেশে সাড়ে আট হাজার সেনা মোতায়েন করা হয়৷ ১৯৯৯ সালে সংখ্যালঘু আলবেনীয় বিচ্ছিন্নতবাদী এবং তাদের সমর্থকদের ওপর বর্বর দমনপীড়নের দায়ে সার্বিয়ার ওপর বিমান হামলা চালায় ন্যাটো৷ এখনো প্রায় ৫৫০ জন জার্মান সেনা কসভোতে অবস্থান করছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/V.Xhemaj
এজিয়ান সাগরে টহল
২০১৬ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) সমর্থিত ন্যাটো মিশনের অংশ হিসেবে এজিয়ান সাগরে মোতায়েন করা হয় জার্মান যুদ্ধজাহাজ ‘বন’৷ অভিবাসী সংকট যখন চরমে, তখন অন্যান্য কাজের মধ্যে এই মিশনের অন্যতম কাজ ছিল গ্রিস এবং তুরস্কের জলসীমায় অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের ওপর নজর রাখা৷ জার্মানি, গ্রিস এবং তুরস্ক এ কাজে ন্যাটোর সহায়তা চেয়েছিল৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/M.Schreiber
লিথুয়ানিয়ায় জার্মান ট্যাংক
বাল্টিক দেশগুলোতে ন্যাটোর মিশনের অংশ হিসেবে লিথুয়ানিয়ায় চলতি বছর ৪৫০ জন জার্মান সেনা মোতায়েন করা হয়েছে৷ অবস্থান করছে জার্মান ট্যাংকও৷ তবে জার্মানি ছাড়া ক্যানাডা, ইংল্যান্ড এবং যুক্তরাষ্ট্রের সেনাও রয়েছে সে অঞ্চলে৷ ‘বর্ধিত সামরিক মহড়া’-র অংশ হিসেবে প্রায় এক দশক যাবৎ ন্যাটো বাহিনী সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ লিথুয়ানিয়ায় অবস্থান করছে৷
ছবি: picture alliance/dpa/M. Kul
এক দশকের বেশি সময় ধরে আফগানিস্তানে
আফগানিস্তানে ন্যাটো নেতৃত্বাধীন আইসাফ বাহিনীতে জার্মানি যোগ দেয় ২০০৩ সালে৷ সংখ্যার বিচারে দেশটিতে মোতায়েন বিদেশি সেনাদের মধ্যে জার্মানির অবস্থান তৃতীয়৷ আফগান মিশনে এখন পর্যন্ত ৫০ জন জার্মান সেনা নিহত হয়েছে৷ ২০১৫ সালে জার্মান সেনাদের মিশন শেষ হওয়া ও দায়িত্ব হস্তান্তরের পরও সহস্রাধিক জার্মান সেনা অবস্থান করছেন আফগানিস্তানে৷