জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল বৃহস্পতিবার মিশর যাচ্ছেন৷ এরপর তিনি যাবেন টিউনিশিয়ায়৷ উত্তর আফ্রিকা থেকে ইউরোপে শরণার্থীদের প্রবেশ কমাতেই এই সফর বলে জানা গেছে৷
বিজ্ঞাপন
উত্তর আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের অনেক নাগরিক উন্নত জীবনের আশায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে আসার চেষ্টা করেন৷ এতে মাঝেমধ্যেই নৌকাডুবিতে অনেকের প্রাণ যায়৷ এই অভিবাসীদের একটি বড় অংশ লিবিয়া থেকে সমুদ্রে পাড়ি জমান৷ ২০১১ সালে গাদ্দাফির মৃত্যুর পর থেকে লিবিয়ায় কোনো কার্যকর সরকারব্যবস্থা নেই৷ সেই সুযোগে মানবপাচারকারীরা আশেপাশের দেশ থেকে সম্ভাব্য অভিবাসীদের লিবিয়ায় জমায়েত করে সেখান থেকে তাঁদের ইউরোপের উদ্দেশ্যে যাত্রার ব্যবস্থা করে৷ লিবিয়ার সঙ্গে আলজেরিয়া, নাইজার, চাড ও সুদানের সীমান্ত রয়েছে৷ তবে এসব সীমান্তের বেশিরভাগ এলাকা মরুভূমির মধ্যে পড়ায় ঐসব দেশের মানুষরা সহজেই লিবিয়ায় পৌঁছে যান৷
বিলাসী নৌকা থেকে শরণার্থী উদ্ধারের জলযান
দ্য অ্যাস্ট্রাল একসময় ছিল এব বিলাসী সেইলিং বোট, কিন্তু সেটি এখন নিয়োজিত মানবতার সেবায়৷ সাগর থেকে শরণার্থীদের উদ্ধার অভিযানে নিয়োজিত বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘প্রোঅ্যাক্টিভা ওপেন আর্মসকে’ দান করা হয়েছে নৌকাটি৷
ছবি: DW/K. Zurutuza
বড়লোকের কাছ থেকে গরীবের কাছে
স্পেনে বসবাসরত সফল ইটালীয় উদ্যোক্তা লিভিও লো মোনাকো তাঁর বিলাসবহুল সেইলিং বোট ‘দ্য অ্যাস্ট্রাল’ শরণার্থীদের উদ্ধার কাজে ব্যবহারে জন্য দান করে দিয়েছেন৷ কিছুটা সংস্কারের পর গত পহেলা জুলাই থেকে ভূমধ্যসাগরে শরণার্থীদের উদ্ধার অভিযানে নিয়োজিত আছে নৌকাটি৷ বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘প্রোঅ্যাক্টিভা ওপেন আর্মস’ এসব উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করছে৷
ছবি: DW/K. Zurutuza
নৌকায় উদ্ধারকারীরা
দ্য অ্যাস্ট্রালের ক্রু’রা বিভিন্ন পেশা থেকে এসেছেন৷ কেউ অভিজ্ঞ উদ্ধারকর্মী, কেউ চিকিৎসক আর কেউবা সেইলর৷ এদের অধিকাংশই ছুটির সময় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেন৷ প্রোঅ্যাক্টিভা ওপেন আর্মসের হয়ে শরণার্থীদের সহায়তায় কাজ করেন এই স্বেচ্ছাসেবীরা৷
ছবি: DW/K. Zurutuza
পুনর্জন্ম
অনেক নারী তাদের কোলের শিশুদের নিয়ে ছোট নৌকায় সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করেন৷ কেউ কেউ আবার উত্তর আফ্রিকা থেকে ইউরোপ অবধি পৌঁছানোর চেষ্টা করতে গিয়ে লিবিয়ায় মানবপাচারকারীদের খপ্পরে পড়েন এভং ধর্ষণের শিকার হয়ে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে যান৷
ছবি: DW/K. Zurutuza
উদ্ধার এবং ট্রান্সফার
অ্যাস্ট্রাল আকারে ছোট, ত্রিশ মিটার লম্বা - তাই সাগর থেকে শরণার্থীদের উদ্ধারের পর তাদের বড় কোনো জাহাজে তুলে দেয়ার চেষ্টা করেন এটিতে থাকা উদ্ধারকারীরা৷ ছবিতে অ্যাস্ট্রাল থেকে একদল শরণার্থীকে অন্য একটি বড় উদ্ধার জাহাজে তোলার প্রস্তুতি চলছে৷
ছবি: DW/K. Zurutuza
দেখুন, কিন্তু ধরবেন না
কড়া সামরিক নিয়মনীতির কারণে শরণার্থীদের সামরিক জলযানের উপরে তোলা হয়না৷ অ্যাস্ট্রালের ক্যাপ্টেন রিকার্ডো গাত্তি আক্ষেপ করে জানান, দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে, উদ্ধার অভিযানের দায়িত্ব গুটিকয়েক বসরকারি উন্নয়নসংস্থার হাতে তুলে দেয়া হয়েছে৷ এই কাজে ইউরোপের সংস্থাগুলোকে পাওয়া যায় না৷
ছবি: DW/K. Zurutuza
জায়গার অভাব
বড় উদ্ধারযান আশেপাশে না থাকলে কিংবা আবহাওয়া খারাপ থাকলে অনেক সময় শরণার্থীদের নিয়ে বন্দরে ফিরে যায় অ্যাস্ট্রাল৷ কিন্তু তখন শরণার্থীদের নৌকার ভেতরকার স্বল্প জায়গায় কোনোরকমে বসে থেকে সময় পার করতে হয়৷
ছবি: DW/K. Zurutuza
কিছু থাকবে, বাকিদের চলে যেতে হবে
শরণার্থীদের ইটালির দক্ষিণের একটি পোর্টে নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷ এখানকার কিছু মানুষ ইউরোপে রাজনৈতিক আশ্রয়ের সুযোগ পাবে, বাকিদের ফেরত পাঠানো হবে নিজেদের দেশে, ফ্রন্টেক্স কর্মকর্তা ডয়চে ভেলেকে একথা জানিয়েছেন৷
ছবি: DW/K. Zurutuza
পনের হাজার মানুষকে সহায়তা
গত জুলাই থেকে এখন অবধি পনের হাজারেরও বেশি মানুষকে সহায়তা করেছে ‘প্রোঅ্যাক্টিভা ওপেন আর্মস’৷ তাদের এই কাজ ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে৷
ছবি: DW/K. Zurutuza
8 ছবি1 | 8
লিবিয়ায় কার্যকর সরকার না থাকায় আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে মিশরে যাচ্ছেন ম্যার্কেল৷ বৃহস্পতিবারই তিনি মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাতাহ আল-সিসির সঙ্গে বৈঠক করবেন৷ উত্তর আফ্রিকা থেকে ইউরোপে শরণার্থী ও অভিবাসীদের অবৈধ প্রবেশ কীভাবে ঠেকানো যায়, তা নিয়ে দুই নেতা কথা বলবেন৷ এরপর শুক্রবার ম্যার্কেল যাবেন টিউনিশিয়ায়৷ সেখানেও তিনি একই বিষয় নিয়ে কথা বলবেন দেশটির প্রেসিডেন্ট বেজি এসেবসির সঙ্গে৷
গত সপ্তাহে ম্যার্কেলের আলজেরিয়া সফরে যাওয়ার কথা ছিল৷ কিন্তু সে দেশের প্রেসিডেন্ট আবদেলআজিজ বুতেফলিকা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় সফর বাতিল হয়ে যায়৷
উল্লেখ্য, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে জার্মানিতে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷ ম্যার্কেল চতুর্থবারের মতো চ্যান্সেলর পদে লড়ছেন৷ কিন্তু ২০১৫ সালে জার্মানিতে কয়েক লক্ষ শরণার্থীকে প্রবেশ করতে দেয়ায় সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি৷ শরণার্থীদের সংখ্যা কমাতে তাঁর উপর বিভিন্ন দিক থেকে চাপ দেয়া হয়৷ ফলে গতবছর তুরস্কের সঙ্গে একটি চুক্তি সই করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ তার ফলে তুরস্ক থেকে শরণার্থীদের ইউরোপে প্রবেশ অনেক কমে এসেছে৷ এবার উত্তর আফ্রিকা থেকে প্রবেশ কমাতে সেখানকার দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করছেন ম্যার্কেল৷ সফরে তাঁর সঙ্গে ব্যবসায়িক নেতারাও থাকবেন৷ মিশর আর টিউনিশিয়ায় বিনিয়োগ নিয়ে কথা বলবেন তাঁরা৷ অভ্যন্তরীণ সমস্যা, জঙ্গি হামলা এসব কারণে দেশ দুটিতে পর্যটকদের গমন কমে গেছে৷ এছাড়া আর্থিক সংকটের মুখেও আছে দেশ দুটি৷
জেডএইচ/এসিবি (এএফপি, ডিপিএ)
প্রাণের মায়া না করে ইউরোপে আসার প্রচেষ্টা
লিবিয়ার উপকূলে আটশো’র বেশি উদ্বাস্তু নড়বড়ে জাহাজে ইউরোপে আসার চেষ্টা করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন৷ এই ঘটনা ইউরোপের মানুষদের গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে, কিন্তু ট্র্যাজেডির বোধহয় এখানেই শেষ নয়৷...
ছবি: REUTERS
প্রাণে বাঁচা
২০শে এপ্রিল, ২০১৫: একটি ছোট পালের নৌকা গ্রিসের রোডোস দ্বীপের কাছে চড়ায় আটকালে সীমান্তরক্ষী আর স্থানীয় মানুষেরা বেশ কিছু উদ্বাস্তুকে উদ্ধার করেন৷ তা সত্ত্বেও এই দুর্ঘটনায় তিনজন উদ্বাস্তু জলে ডুবে মারা যান৷
ছবি: REUTERS/Argiris Mantikos/Eurokinissi
সীমান্তরক্ষীদের ডিঙিতে
১৩ই এপ্রিল, ২০১৫: উদ্বাস্তুরা কোস্ট গার্ডের ইনফ্ল্যাটেবল বোটে চড়ে সিসিলি-র একটি বন্দরে পৌঁছচ্ছে৷ সীমান্তরক্ষীরা লিবিয়ার উপকূলে একটি ডোবা নৌকা দেখতে পেয়ে ১৪৪ জন উদ্বাস্তুকে উদ্ধার করেন – এবং যুগপৎ ন’টি মৃতদেহকে সাগরের জলে ভাসতে দেখেন৷ আবহাওয়া ভালো থাকায় এপ্রিলের শুরু থেকে উদ্বাস্তুরা আরো বেশি সংখ্যায় আফ্রিকা থেকে ভূমধ্যসাগর পার হয়ে ইউরোপে আসার চেষ্টা করছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/C. Montanalampo
বাহন
১২ই এপ্রিল, ২০১৫: ওপিয়েলক অফশোর ক্যারিয়ার কোম্পানির ‘জাগুয়ার’ নামধারী মালবাহী জাহাজের অতি কাছে ডুবে যায় একটি উদ্বাস্তু বোট৷ এই কোম্পানির জাহাজগুলি গত ডিসেম্বর মাস যাবৎ দেড় হাজারের বেশি উদ্বাস্তুকে সমুদ্রবক্ষ থেকে উদ্ধার করেছে৷
ছবি: Opielok Offshore Carriers/dpa
হাঁটাপথে
২৮শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫: পশ্চিম আফ্রিকা থেকে আসা উদ্বাস্তুরা ম্যাসিডোনিয়া সীমান্তের দিকে হেঁটে চলেছেন৷ আশা, এইভাবে ‘খিড়কির দরজা’ দিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রবেশ – যদিও সে প্রচেষ্টা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/D. Bennett
ব্রিটেন যাওয়ার শেষ পন্থা
১৭ই ডিসেম্বর, ২০১৪: ফ্রান্সের ক্যালে বন্দর-শহরের কাছের হাইওয়েতে ব্রিটেনগামী লরিতে ওঠার সুযোগের অপেক্ষায় উদ্বাস্তুরা৷ সে আমলে ক্যালে-র পাঁচ-পাঁচটি বেআইনি ক্যাম্পে প্লাস্টিকের ঝুপড়িতে বাস করছিল তিন থেকে পাঁচ হাজার উদ্বাস্তু, শুধুমাত্র ইংল্যান্ড যাবার আশায়৷
ছবি: Reuters/P. Wojazer
‘সেভ আওয়ার সোলস’
২৫শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪: ভূমধ্যসাগরে সাইপ্রাসের কাছে একটি শরণার্থী নৌকা বিপদ সঙ্কেত পাঠানোর পর সাগরে ভাসতে থাকে – ৩০০ উদ্বাস্তু নিয়ে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
যারা কোনো বাধা মানে না
১৭ই মে, ২০১৪: আফ্রিকান উদ্বাস্তুরা মরক্কোর উপকূলে স্পেনের এক্সক্লেভ মেলিলা-র চারপাশের উঁচু তারের বেড়া পার হওয়ার চেষ্টা করছে৷ প্রায় ৫০০ মানুষ সীমান্ত পার হবার চেষ্টা করে, তাদের মধ্যে জনা ত্রিশেক সফলও হয়, কিন্তু পরে তাদের আবার মরক্কোয় ফেরৎ পাঠিয়ে দেওয়া হয়৷