ভারতের সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি এক জনস্বার্থ মামলার রায়ে বলেছেন শরিয়তি আদালতের ফতোয়া বা নির্দেশ মানা বাধ্যতামূলক নয়৷ এই রায় নিয়ে ভারতের শরিয়তি আদালতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে বিতর্ক শুরু হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
একাংশ বলছে মুসলিম সমাজের মধ্যে পারিবারিক বিবাদ মেটাতে এটা মূলত একটা সালিশি ব্যবস্থা৷ ফতোয়া হলো সালিশির বিধান৷
ভারতে শরিয়তি আদালতের জারি করা ফতোয়ার কোনো আইনি বৈধতা নেই৷ তাই ঐ ফতোয়া বা নির্দেশ কাউকে মানতে বাধ্য করা যাবে না, যদিনা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি নিজে থেকে স্বেচ্ছায় তা মেনে নিচ্ছে৷ ফতোয়া জারি করে কাউকে শাস্তি দেয়া যাবে না৷
সম্প্রতি ভারতের শীর্ষ আদালতের এক ডিভিশন বেঞ্চ শরিয়তি আদালতের সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে এক জনস্বার্থ মামলায় এই রায় দেন৷ দিল্লির এক আইনজীবীর অভিযোগ, শরিয়তি আদালতগুলি নিকাহ, তালাক থেকে নিয়ে মুসলিম মহিলাদের পোশাক পরিচ্ছদ নিয়ে ফতোয়ার পর ফতোয়া জারি করে চলেছে৷ শরিয়তি আদালতগুলি কার্যত ভারতের বিচার ব্যবস্থার সমান্তরাল হয়ে মুসলিম সমাজে কাজ করছে৷
সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বলা হয়, ফতোয়া দেয়াটা অবৈধ নাও হতে পারে৷ কারণ কাজি, মুফতি বা মৌলবিদের জারি করা ফতোয়া তাঁদের ব্যক্তিগত মত বা বিধান হতে পারে, কিন্তু সেই মত বা বিধান অন্যের ওপর জোর করে চাপিয়ে দেয়াটা বেআইনি৷ অনেক সময় এই ফতোয়া মানবাধিকারের সীমা ছাড়িয়ে অমানুষিক শারীরিক বা মানসিক নিষ্ঠুরতার পর্যায়ে চলে যায়৷ যেমন, জনস্বার্থ মামলায় উল্লেখিত একটি ঘটনার প্রসঙ্গ তুলে ধরা হয়৷ ২০০৫ সালে উত্তর প্রদেশের মজ:ফরনগরে এক বিবাহিতা মহিলাকে ধর্ষণ করে তাঁর শ্বশুর৷ মহিলা মুসলিম পঞ্চায়েতে অভিযোগ করলে পঞ্চায়েত বিধান দেয় মহিলার সঙ্গে শ্বশুরের যৌন সংসর্গ হওয়ায় ঐ শ্বশুরই হবে তাঁর স্বামী এবং তাঁর আসল স্বামীকে দেখতে হবে নিজের ছেলে হিসেবে৷
দেওবাঁধের দার-উল-উলুম ২০১০ সালে ফতোয়া জারি করে বিমা পলিসি অ-ইসলামিক৷ এতে সুদ এ ফাটকাবাজি মিশে আছে৷ ২০০৭ সালে ফতোয়া দেন, মুসলিম মেয়েরা টাইট জিনস পরতে পারবেন না৷ যেসব দম্পতি জন্ম নিরোধক ব্যবহার করতে চান, তাঁদেরকে প্রথমে হাকিম বা উনানির পরামর্শ নিতে হবে৷
সুপ্রিম কোর্টের এই বিতর্কিত রায় সম্পর্কে শরিয়তি আদালতের বিভিন্ন শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলি কী বলছে? এদের মধ্যে দেখা দিয়েছে মতভেদ৷ দার-উল-কাজা, দার-উল-ইফতা এবং নিজাম-ই-কাজার মতো শরিয়তি প্রতিষ্ঠান আছে ভারতে৷ দারুল-ইফতা ফতোয়া জারি করে কোরান বা হাদিসের ব্যাখ্যা অনুসারে৷ কাজাও কার্যত তাই৷ বিচার নয় বিধান৷ দার-উল-কাজা এবং নিজাম-ই-কাজা যা শরিয়তি আদালত বলে পরিচিত৷
ইরাকে জিহাদিবিরোধী যুদ্ধ
চরমপন্থি ইসলামি সংগঠন আইএস-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলছে ইরাকে৷ সন্ত্রাসবাদী এ সংগঠনটির সিরিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশেও তৎপরতা রয়েছে৷ দেখুন ইরাকে আইএস-বিরোধী যুদ্ধ সংশ্লিষ্ট কিছু ছবি৷
ছবি: Reuters
টিকরিট পুনরুদ্ধারের চেষ্টা
সুন্নিদের সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া (আইসিস) উত্তর ও দক্ষিণ ইরাকের কিছু অংশ দখল করে নিয়েছে৷ বাগদাদ থেকে ১৪০ কিলোমিটার দূরের শহর টিকরিটও এখন তাদের দখলে৷ সে এলাকায় ইরাক সরকারের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারের জন্য আইসিস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়ছে সেনাবাহিনী৷
ছবি: Reuters
মধ্যপ্রাচ্যে কর্তৃত্ব চায় আইসিস
আন্তর্জাতিক ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার সঙ্গে আইসিস-এর একসময় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল৷ ২০০৬ থেকে ২০০৭-এর দিকে ইরাকে যখন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন যৌথবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ লড়াই চলছে তখনই আইসিস-এর জন্ম৷ সংগঠনটির লক্ষ্য সিরিয়া, ইরাক, লেবানন, ফিলিস্তিন এবং জর্ডান মিলিয়ে বেশ বড় একটা অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা৷ ইরাকে নুসরা ফ্রন্টসহ বেশ কিছু সংগঠন তাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
বিদ্রোহীদের পাশে যুক্তরাষ্ট্র
সিরিয়ায় বাশার আল আসাদ আর ইরাকে নুরি আল মালিকির সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত বিদ্রোহীদের মধ্যে মধ্যপন্থি এবং মৌলবাদী সংগঠনের কর্মী রয়েছে৷ সিরিয়ায় ন্যাশনাল কোয়ালিশনের মতো কিছু মধ্যপন্থি সংগঠনকে সমর্থন দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র৷ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ওবামা বিদ্রোহীদের একাংশকে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের আর্থিক সহায়তা দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করে দেখছেন৷
ছবি: Reuters
ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি জানিয়েছেন, কংগ্রেস বিদ্রোহীদের জন্য ৫০০ মিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তার প্রস্তাব অনুমোদন করলে তা সিরিয়া এবং ইরাকে দেয়া হবে৷ এই বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ, কেননা, ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বড় একটা অংশ যে আইসিস-এর কাছে যাবেনা সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার উপায় নেই৷
ছবি: Reuters
কুর্দিরা চায় স্বাধীন কুর্দিস্তান
যুক্তরাষ্ট্র চায় ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকি সুন্নি এবং কুর্দিদের অংশিদারিত্বের সরকার গঠন করুন৷ ইরাকের কিছু অংশে কুর্দিদের স্বায়ত্তশাসন রয়েছে৷ কুর্দিরা ‘পেশমেরগা’, অর্থাৎ কুর্দিদের স্বাধিকার আন্দোলনের অংশ হিসেবে আইসিসের বিরুদ্ধে লড়ছে৷ কুর্দিদের মূল লক্ষ্য ইরাকে স্বাধীন কুর্দিস্তান প্রতিষ্ঠা করা৷
ছবি: Reuters
ইরানের ভূমিকা
ইরাকে শিয়া-সুন্নি সংঘাতের মধ্যে জড়াতে চায়না ইরান৷ কিন্তু শিয়া প্রধান দেশ ইরানের সরকার ইরাকের মালিকি সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে বলে ধারণা করা হয়৷ নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, আইসিস-বিরোধী যুদ্ধে মালিকি সরকারকে ড্রোন এবং অন্যান্য সমর উপকরণ দিয়ে সহায়তা করছে ইরান সরকার৷
ছবি: Atta Kanare/AFP/Getty Images
এক হাজারেরও বেশি নিহত
সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের সমর্থন দিচ্ছে সৌদি আরব৷ ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকি মনে করেন, আইসিসকেও মদদ দিচ্ছে সৌদি সরকার৷ ইরাকে চলমান সংঘাতে কমপক্ষে এক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে৷ মানবাধিকার সংস্থাগুলো এ জন্য ইরাক সরকার এবং আইসিস-এর কঠোর সমালোচনা করেছে৷
ছবি: Reuters
বাড়ছে শরণার্থী
আইসিসের হামলা শুরুর পর থেকে ইরাকের বিভিন্ন স্থান থেকে অন্তত ১২ লাখ মানুষ ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন৷ সিরিয়া সংকট শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত আড়াই লাখ সিরীয় স্বায়ত্তশাসিত কুর্দি রাজ্যগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে৷ এখন আইসিসের দখল করে নেয়া শহরগুলো থেকে পালিয়ে ইরাকিরাও আসছে৷ ছবিতে খাজাইর চেকপয়েন্ট অতিক্রম করে কুর্দিদের নিয়ন্ত্রিত শহর এরবিলের দিকে যেতে দেখা যাচ্ছে মসুল থেকে আসা ইরাকিদের৷
ছবি: Getty Images
স্বেচ্ছাসেবীরাও নেমেছে যুদ্ধে
প্রধানমন্ত্রী মালিকি জানিয়েছেন, রাশিয়া আর বেলারুশের কাছ থেকে পুরোনো যুদ্ধ বিমান কিনেছে ইরাক৷ আইসিসের বিরুদ্ধে সেগুলো ব্যবহার করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি৷ বাড়ছে সমরাস্ত্র৷ বাড়ছে যোদ্ধা৷ স্বেচ্ছাসেবীরাও যোগ দিচ্ছেন আইসিস বিরোধী যুদ্ধে৷
ছবি: Reuters
9 ছবি1 | 9
এই রায় সমর্থন করে মুসলিম পার্সোনাল ল-বোর্ডের কৌঁসুলি সওয়াল করেন, ফতোয়া মানতে কাউকে বাধ্য করা হয়না৷ আপত্তি থাকলে ঐ ব্যক্তি আদালতে যেতে পারেন৷ এটা বৈধ আদালতের সমান্তরাল বিচার ব্যবস্থা নয়৷ বাদি ও বিবাদিপক্ষ যদি স্বেচ্ছায় ঘরোয়া সমস্যা সমাধানের জন্য শরিয়তি আদালতের দ্বারস্থ হন, তাহলে ঐ আদালত সমস্যার ফয়সালা করতে তাদের মত বা বিধান দিয়ে থাকে৷ তা মানা বা না মানার জন্য জোর করা হয় না৷ এরফলে সাংবিধানিক আদালতের সময় এবং ঝামেলা লাঘব হয়৷
উত্তর প্রদেশের দেওবাঁধের দার-উল-উলুম রেক্টর মৌলানা মুফতি আবুল কাশিম নোমানি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের রায় আমরা খারিজ করছি না আবার স্বাগত জানাচ্ছি না৷ তবে সিদ্ধান্ত নিতে সময় লাগবে৷ হিন্দ ইমাম অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট মৌলানা মহম্মদ সাজিদ রসিদ মনে করেন, ধর্মীয় আচার আনুষ্ঠান বা রীতি নীতি পালন সাংবিধানিক আদালতের এক্তিয়ারে পড়ে না৷ কাজেই এইসব বিষয় নিয়ে আদালতে যাওয়া উচিত নয়৷ কেউ ইসলাম ধর্ম মানলে তাঁকে ধর্মের সবকিছুই মানতে বে৷ অর্থাৎ শরিয়ত না মানলে সে মুসলিম হতে পারেন না৷