ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে একমাত্র গ্রিসেই সংখ্যালঘু মুসলিমদের জন্য শরিয়া আদালত আছে৷ তবে এখন থেকে সেই আদালত পারিবারিক বিষয়ে আর অগ্রাধিকার পাবে না, যা আগে পেতো৷ পশ্চিম থ্রেস অঞ্চলের জন্য এমন আইন পাশ করেছে গ্রিক সংসদ৷
বিজ্ঞাপন
এ অঞ্চলে প্রায় এক লাখ বিশ হাজার মুসলিমের বাস৷ মঙ্গলবার এ আইন পাশ হয় সংসদে৷
আইন অনুযায়ী, সব পক্ষ রাজি থাকলে শরিয়া আদালতগুলো বিবাহ বিচ্ছেদ, শিশুর জিম্মা এবং উত্তরাধিকার বিষয়ে রায় দিতে পারবে৷ কিন্তু কোনো বিষয়ে কোনো পক্ষ যদি বেঁকে বসেন, তাহলে সাধারণ গ্রিক আইন প্রযোজ্য হবে৷
শতবর্ষ পুরোনো এই আইন সংস্কার হওয়ায় গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী অ্যালেক্সিস সিপ্রাস একে ‘ঐতিহাসিক পদক্ষেপ' বলে অভিহিত করেছেন৷ বলেছেন, এতে ‘‘সব গ্রিকদের জন্য আইনের সমান অধিকার নিশ্চিত হলো'' এবং একইসঙ্গে গ্রিস সংখ্যালঘু মুসলিমদের ‘‘বিশেষ আইনি ব্যবস্থার প্রতিও শ্রদ্ধাশীল'' থাকলো৷
ইউরোপে একমাত্র গ্রিসেই মুসলিমদের শরিয়া আদালত আছে৷ রাষ্ট্র কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত মুফতিরা শরিয়া আইন অনুযায়ী পারিবারিক বিষয়গুলোর নিষ্পত্তি করেন৷
গ্রিসের লেসবস দ্বীপে কেমন আছেন শরণার্থীরা?
লেসবস দ্বীপে থাকা শরণার্থীদের সেবা দিতে ইউরোপের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা পেতো বিভিন্ন এনজিও৷ কিন্তু আগস্ট মাসে সেই বরাদ্দ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এনজিওগুলো চলে যাচ্ছে৷
ছবি: DW/V. Haiges
তহবিল শেষ
গ্রিসের লেসবস দ্বীপে যেসব শরণার্থী আছেন তাঁদের চিকিৎসা, আইনগত সেবাসহ অন্যান্য সেবা দিতো বিভিন্ন এনজিও৷ এতদিন তারা ইউরোপীয় বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সংস্থার কাছ থেকে তহবিল পেতো৷ কিন্তু আগস্ট মাসে সেটি বন্ধ হয়ে গেছে৷ তাই অনেক এনজিও ইতিমধ্যে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে বা দেয়ার পরিকল্পনা করছে৷ ফলে শরণার্থীদের জীবন আরও কঠোর হয়ে উঠছে৷
ছবি: DW/V. Haiges
কৌশল?
শরণার্থীদের জন্য তৈরি করা একটি গোসলখানায় শ্যাম্পু আর পানির বোতল পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে৷ পরিচ্ছন্ন গোসলখানার অভাবে শরণার্থীদের তাই অন্য ব্যবস্থা করতে হচ্ছে৷ অনেক শরণার্থী মনে করছেন, তাদের জীবন দুর্বিষহ করে তোলার জন্য ইচ্ছে করেই এমন পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে৷
ছবি: DW/V. Haiges
সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়
ইরিত্রিয়ার শরণার্থী আমান তাঁর তাঁবুতে এই সাংবাদিককে চা বা পানি দিতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন৷ তিন মাস আগে তিনি লেসবসে যান৷ তাঁর আশ্রয় আবেদনের ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত হয় তা জানার অপেক্ষায় আছেন তিনি৷
ছবি: DW/V. Haiges
‘উই আর হিউম্যান’
আফগানিস্তান থেকে আসা এক আশ্রয়প্রার্থী লেসবসে শরণার্থীদের খারাপ পরিস্থিতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন৷ বেশিরভাগ আফগান শরণার্থী প্রায় এক বছর ধরে লেসবসে বসবাস করছেন৷ এখনও তাদের আবেদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি৷
ছবি: DW/V. Haiges
লেসবসবাসীদের প্রতিক্রিয়া
২০১৫ সালে শরণার্থী সংকট শুরুর পর লেসবসে পর্যটকদের আগমন কমে গেছে৷ তারপরও লেসবসে বসবাসকারীরা শরণার্থীদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করছেন৷ কিন্তু গ্রিসের একার পক্ষে শরণার্থীদের জন্য বিশেষ কিছু করা সম্ভব নয় বলে মনে করেন তাঁরা৷
ছবি: DW/V. Haiges
স্বেচ্ছাসেবীদের আনাগোনা
এনজিওদের কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেক স্বেচ্ছাসেবী লেসবসে শরণার্থীদের সেবা দিচ্ছে৷ ছবিতে জার্মান এক চিকিৎসককে সেবা দিতে দেখা যাচ্ছে৷ তবে অনেক শরণার্থীর অভিযোগ, চিকিৎসকরা যে কোনো সমস্যায় খালি ব্যথানাশক দিয়ে থাকেন৷
ছবি: DW/V. Haiges
আয়ের চেষ্টা
ইরানি এই নারী সাগরে ভেসে আসা লাইফ ভেস্ট দিয়ে থলে ও ওয়ালেট তৈরি করছেন৷ এভাবে সামান্য আয় যেমন হয়, তেমনি শরণার্থী জীবনের একঘেঁয়েমি থেকেও কিছুটা মুক্তি মেলে৷
ছবি: DW/V. Haiges
প্রতিদিন শরণার্থী আসছে
জাতিসংঘের হিসেবে, গ্রিসে এ বছর এখন পর্যন্ত প্রায় ১৪ হাজার শরণার্থী এসেছে৷ গত বছর এসেছিল এক লক্ষ ৭৩ হাজার৷ এর মধ্যে সাড়ে ১২ হাজার জনের আবেদন গৃহীত হয়েছে৷
ছবি: DW/V. Haiges
8 ছবি1 | 8
অটোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর ১৯২৩ সালে তুরস্ক ও গ্রিসের মধ্যকার লৌজান চুক্তি অনুযায়ী শরিয়া আইন চালু হয়৷
চুক্তি অনুযায়ী, এছাড়াও প্রায় ২০ লাখ অধিবাসী বিনিময় করে তুরস্ক ও গ্রিস, যাতে বাদ পড়েন এবং এই পশ্চিম থ্রেস অঞ্চলের তুর্কি ভাষাভাষী মুসলিমরা৷
তুরস্ক সনাতনী গ্রিকদের এবং গ্রিস তুর্কি মুসলিমদের ভাষা, সংস্কৃতি ও ধর্মচর্চার অধিকার দেয়, যা ঐ চুক্তিতে ছিল৷
মজার ব্যাপার হলো, গ্রিসের মুসলিমরা এখনো শরিয়া আইন মোতাবেক চলে, যেখানে তুরস্কে পরবর্তীতে অসাম্প্রদায়িক আইনি ব্যবস্থা চালু হয়৷ তুরস্ক সীমন্তবর্তী এই অঞ্চলে তুর্কি জাতির পাশাপাশি এখানে বুলগেরীয় ভাষাভাষি পোমাক সম্প্রদায়ও আছে৷
তবে এই আইনের পরিবর্তন করা নিয়ে কিছুটা শঙ্কায় ছিল গ্রিস৷ তাদের অনেকেরই ধারণা যে, এ ধরনের পরিবর্তন করা হলে তুরস্ক লৌজান চুক্তিতেও পরিবর্তন চাইতে পারে৷
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ান তো গেল মাসে গ্রিস সফরে অভিযোগই করে বসেছিলেন যে, এথেন্স মুসলিমদের প্রতি চুক্তি মোতাবেক আচরণ করছে না৷
আর এমন একটি সময়ে গ্রিস আইনটি পাস করলো যখন মানবাধিকার বিষয়ক ইউরোপীয় আদালত, ইসিএইচআর-এ এক মুসলিম নারীর নালিশের রায় ঝুলছে৷
পশ্চিম থ্রেসের ৬৭ বছর বয়সি সেই বিধবা নারীর অভিযোগ গ্রিসের বিরুদ্ধে৷ মৃত স্বামীর বোনদের সঙ্গে সম্পত্তি ভাগাভাগি নিয়ে গ্রিসের সাধারণ আদালত প্রথমে ঐ নারীর পক্ষে রায় দিলেও পরে সুপ্রিম কোর্ট রায় দেন যে, মুসলিম সম্পত্তি কোন্দলের নিষ্পত্তি করার এখতিয়ার কেবল মুফতিদেরই আছে৷ এরপর ঐ নারী ইউরোপীয় আদালতে নালিশ করেন৷
গত কয়েকবছর ধরে শত শত কোটি টাকা আর্থিক ত্রাণ পাওয়া সত্ত্বেও গ্রিসে দারিদ্র্যের হার দ্বিগুণ হয়েছে৷ অধিকাংশ গ্রিক নাগরিক নিজেদের খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন এবং অনেকে লঙ্গরখানা ও ত্রাণের জিনসপত্র দিয়ে দিন কাটাচ্ছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Y. Karahalis
অর্থনৈতিক দুরবস্থা
গ্রিকদের একটা বড় অংশ এখনো কোনরকমে তাদের খরচ তুলতে পারেন৷ অথচ গত সাতবছরে কয়েক বিলিয়ন ইউরো আর্থিক ত্রাণ হিসেবে পেয়েছে সেদেশ৷ কিন্তু তাসত্ত্বেও দারিদ্র্যতা সেদেশে এক বড় ইস্যু৷ আর পরিস্থিতিও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যান্য দেশের তুলনায় ক্রমশ অবনতির দিকে৷
ছবি: Reuters/A.Konstantinidis
গ্রিসের জন্য তিনটি বেইলআউট
ছবিতে এথেন্সে সামাজিক সুবিধা নিতে আসা গ্রিকদের ভিড় দেখা যাচ্ছে৷ বৈশ্বিক আর্থিক সংকট এবং এর প্রতিক্রিয়ায় ইউরোজোনের চারটি দেশকে আন্তর্জাতিক ঋণদাতাদের মুখাপেক্ষী হতে বাধ্য করেছে৷ আয়ারল্যান্ড, পর্তুগাল এবং সাইপ্রাস – এরা সবাই আর্থিক সহায়তা কর্মসূচির মাধ্যমে নিজেদের অবস্থার উন্নতি করেছে৷ তবে গ্রিস, যেদেশ ২০১০ সালে প্রথম বেইলআউট প্যাকেজ গ্রহণ করেছিল, ইতোমধ্যে তিনবার সহায়তা নিয়েও ভাগ্য বদলাতে পারেনি৷
ছবি: Reuters/A.Konstantinidis
কঠিন সময়
৬১ বছর বয়সি সাবেক শিক্ষিকা ইভা আগকিসালাকি অর্থোডক্স চার্চের তৈরি এক লঙ্গরখানায় স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করছেন৷ কেননা বেইলআউট প্যাকেজের আওতায় যখন অবসরের বয়স ৬৭ বছর করা হয়, তখন তাঁর চাকুরির চুক্তি শেষ হয়ে গিয়েছিল৷ তাঁর স্বামীর পেনশনের একটি অংশ, যা আবার আন্তর্জাতিক ঋণদাতাদের চাপে ৯৮০ ইউরো থেকে কমে ৬০০ ইউরো হয়েছে, তাঁর ছেলে এবং মেয়ের পরিবারে চলে যায়৷
ছবি: Reuters/A.Konstantinidis
অধিকাংশ গ্রিকই কোনক্রমে টিকে আছে
লঙ্গরখানা থেকে কিছু সহায়তা পান ইভা যা তিনি তাঁর বেকার মেয়ে এবং ছেলের সঙ্গে শেয়ার করেন৷ লঙ্গরখানার লম্বা টেবিলে খাবারের জন্য অপেক্ষার সময় তিনি বলেন, ‘‘আমরা কোনক্রমে টিকে আছি৷ অধিকাংশ গ্রিকই কোনক্রমে টিকে আছে৷’’
ছবি: Reuters/A.Konstantinidis
ঋণক্ষমা নেই
এথেন্সের সংসদ ভবনের সামনে বিক্ষোভ চলাকালে চেসনাট বিক্রি করছেন এব বৃদ্ধ গ্রিক৷ বিক্ষোভকারীরা ট্যাক্স কমানোর দাবিতে যখন আন্দোলন করছিলেন, তখন আন্তর্জাতিক ঋণদাতারা ট্যাক্স বাড়াতে এবং পেনশন কাটতে গ্রিসের উপর চাপ দিচ্ছিল৷ সেদেশের সরকার অবশ্য বলেছে গ্রিকরা ইতোমধ্যে যথেষ্ট মিতব্যয়িতা দেখেছে৷
ছবি: Reuters/A.Konstantinidis
দারিদ্র সীমার নীচে
লঙ্গরখানায় রাখা দানের পোশাক দেখছেন এক বৃদ্ধ নারী৷ গ্রিস ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে সবচেয়ে গরিব দেশ নয়, বুলগেরিয়া এবং রুমানিয়ায় পর তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে সেদেশ৷
ছবি: Reuters/A.Konstantinidis
গৃহহীনের সংখ্যা বাড়ছে
বিনা খরচায় কাপড় পরিষ্কার করানোর জন্য অপেক্ষা করছেন এক ব্যক্তি৷ ইথাকা মোবাইল লন্ড্রি সার্ভিস নামের সংস্থার স্বেচ্ছাসেবীরা দু’টি ওয়াশিং মেশিন এবং দু’টি ড্রায়ার নিয়ে একটি ভ্যানে করে শহরের বিভিন্ন এলাকায় যান৷ গৃহহীনদের পোশাক-আশাক ধুয়ে দেন তারা৷ সংস্থাটির সহপ্রতিষ্ঠাতা, ফানিস স্যোনাস জানান, পুরনো গৃহহীনদের সঙ্গে নতুন মুখও যোগ হচ্ছে৷