নিয়মিত ব্যায়াম বা শরীরচর্চা রোগ নিরাময়ে ওষুধের চেয়েও বেশি কার্যকর হতে পারে৷ এমনকি ভয়াবহ সব রোগ থেকে মুক্তিও দিতে পারে আপনাকে৷ বলছেন লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্স ও হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের বিশেষজ্ঞরা৷
বিজ্ঞাপন
হৃদরোগে একবার আক্রান্ত হলে সকলেই বেশ সচেতন হয়ে যান৷ নিয়ম করে ওষুধ খাওয়া তখন বাধ্যতামূলক৷ ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার দেখা যায়৷ অথচ এই হৃদরোগ আর টাইপ টু ডায়াবেটিস থেকে কিন্তু আপনি ব্যায়াম বা শরীরচর্চার মাধ্যমেই মুক্তি পেতে পারেন৷ নিয়মিতভাবে এটা করলে হয়ত আপনার আর ওষুধের প্রয়োজনই পড়বে না৷ সম্প্রতি লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্স এবং হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের গবেষকরা একথাই জানিয়েছেন৷
হাড় শক্ত রাখতে ব্যায়ামের বিকল্প নেই
জার্মানিতে হাড় নরম হয়ে যাওয়ার সমস্যায় ভুগছেন আনুমানিক ৭,৮ মিলিয়ন মানুষ৷ অথচ হাড় শক্ত রাখতে নিয়মিত শরীর চর্চা বা বিশেষ ধরণের ব্যায়াম বড় ভূমিকা পালন করতে পারে৷
ছবি: Fotolia/mangostock
হাড়ের ক্ষয়
প্রায়ই শোনা যায় বয়স বাড়ার সাথে সাথে হাড়ের নানা সমস্যা ও ব্যথা শুরু হয়৷ কিন্তু কেন এটা হয় – তা নিয়ে হয়ত অনেকেই ভাবেন না৷ অস্টিওপোরোসিস বা হাড় নরম হয়ে যাওয়ার সমস্যায় জার্মানিতে ভুগছেন প্রায় ৭,৮ মিলিয়ন মানুষ৷ এই সমস্যা কেন হয় বা এর থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় কী?
ছবি: DW/K.ZeinEddine
শুধু বয়সই কারণ নয়
হাড় নরম বা ভেঙে যাওয়ার জন্য শুধু বয়স বাড়াই একমাত্র কারণ নয়৷ থাইরয়েড, পেটের ক্রনিক সমস্যা বা পাকস্থলির অসুখের কারণেও হাড় নরম বা ক্ষয় হতে পারে৷ আর পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাওয়া-দাওয়া না করা ও অতিরিক্ত ধূমপান হাড়কে নরম করে৷ তাছাড়া নানা ধরনের ওষুধ-পত্র সেবন থেকেও হাড় নরম হতে পারে৷
ছবি: Gina Sanders/Fotolia
এক্স-রে
হরমোনের বৈষম্যতা জাতীয় অসুখ যেমন হাইপোথাইরয়েড, হাইপারথাইরয়েড এবং ডায়াবেটিস হলেও ধীরে ধীরে অস্টিওপোরোসিস হয়ে থাকে৷ মহিলাদের এস্ট্রোজেন নামের হরমোন হাড়কে মজবুত করতে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে৷ এক্স-রে বা অন্যান্য পরীক্ষার মাধ্যমে এই রোগের আক্রমণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়৷
ছবি: picture alliance / Bildagentur-o
ব্যায়াম
হাঁটাহাটি, সাঁতার কাটা এবং সাইকেল চালানো শরীরকে ফিট রাখে, কিন্তু হাঁড় শক্ত রাখায় তেমন কোনো ভূমিকা নেই এগুলির৷ এর জন্য রয়েছে বিশেষ ব্যায়াম, যা ঘরে বসেও করা যায়৷ বলা বাহুল্য, এক্ষেত্রে এমন কিছু করতে হবে যাতে মাংসপেশিতে ভালোভাবে টান লাগে বা চাপ পরে৷ যেমন এক পায়ে দাঁড়িয়ে বেশ কিছুক্ষণ লাফিয়ে লাফিয়ে হাঁটা৷
ছবি: imago/CHROMORANGE
জীবনযাত্রার পরিবর্তন
হাঁড় ঠিক রাখতে এ সব ব্যায়াম যে কোনো বয়সেই শুরু করা যায়৷ ৬০ অথবা ৭০ বছর বয়সও নাকি দেরি নয়, বলেন কোনো কোনো ডাক্তার৷ তবে এর জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে৷ অর্থাৎ, সপ্তাহে কম করে হলেও তিনদিন৷ তবে আগে ডাক্তারের সাথে কথা বলে নেওয়াই ভালো, বললেন হাড় বিশেষজ্ঞ ড. মার্টিন রুঙ্গে৷
ছবি: DW/Eva Usi
সঠিক খাওয়া-দাওয়া
হাড়ের জন্য ভিটামিন ‘ডি’ খুবই জরুরি৷ আর এই ভিটামিন ডি রয়েছে সামুদ্রিক মাছে৷ প্রতিদিন কিছুক্ষণ রোদে হাঁটাহাঁটি করাও দরকার হাড় শক্ত রাখার জন্য৷ তাছাড়াও ভিটামিন এ, সি, কে এবং বি ১২ হাড়কে মজবুত রাখতে সহায়তা করে৷
ছবি: Fotolia/oldline2
দুধ বা দুগ্ধজাতীয় খাবার
দুধ, দই, পনির, চিজ বা অন্যান্য দুগ্ধজাতীয় খাবার রয়েছে প্রচুর ক্যালসিয়াম যা হাড়ের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন৷ তাছাড়া মিনারেল ওয়াটারেও রয়েছে ক্যালসিয়াম৷ তবে সবকিছুই বুঝে শুনে খাওয়া ভালো৷
ছবি: AP
নিয়মিত ব্যায়াম
হাড়ের সমস্যার কারণে ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারেন না এমন মানুষের সংখ্যা জার্মানিতে প্রায় ১,৫৬ মিলিয়ন, যাঁরা বাড়িতে আত্মীয়, নার্স বা অন্যের সাহায্যে চলাফেরা করেন৷ হাড়কে শক্ত রাখতে বেশি কফি, চিনি, লবন, চিনি মিশ্রিত সফ্ট ড্রিংক এবং মদ্যপান এড়িয়ে চলাই ভালো৷ তবে সব কিছুর পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়াম যে করতেই হবে!
ছবি: Fotolia/mangostock
8 ছবি1 | 8
হুসেইন নাসিরের নেতৃত্বে এ সংক্রান্ত গবেষণাটি ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে৷ মতিষ্কে রক্তক্ষরণ, হৃদরোগ এবং টাইপ টু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত প্রায় ৩ লাখ ৩৯ হাজার রোগীর উপর পরীক্ষা চালিয়ে গবেষণাটি করা হয়৷ গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, ব্যায়াম এসব রোগ থেকে যেমন মুক্তি দেয়, তেমনি নিয়মিত শরীরচর্চার ফলে কোনো ওষুধ ছাড়াই রোগী সুস্থ থাকেন৷
এই গবেষণার প্রতিক্রিয়ায় চিকিৎসকরা এখন ওষুধ কমিয়ে শারীরিক ব্যায়ামের উপর জোর দিচ্ছেন৷ গবেষকরা বলছেন, বিশেষ করে যাঁরা একবার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন শারীরিক ব্যায়াম তাঁদের জীবনে সুফল বয়ে এনেছে৷ শুধু তাই নয়, এখন অনেকেরই আর ওষুধের প্রয়োজনও পড়ছে না৷
বিশেষজ্ঞদের কথায়, ওষুধ কেবল রোগ থেকে মুক্তির উপায়, কিন্তু শরীরচর্চা কোনো মানুষকে আবারো সেই রোগে আক্রান্ত হওয়া থেকে দূরে রাখে, অর্থাৎ রোগের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়৷
গবেষণার প্রতিক্রিয়ায় ব্রিটিশ অর্গানাইজেশন, যেমন ডায়াবেটিস ইউকে অ্যান্ড দ্য স্ট্রোক অ্যাসোসিয়েশন বলছে, এটা প্রমাণিত যে সাধারণ মানুষের চেয়ে যাঁরা ব্যায়াম করেন তাঁরা অধিক কর্মক্ষম৷
অবশ্য এর সঙ্গে সঙ্গে গবেষকরা এটাও বলছেন যে, একমাত্র ডাক্তারদের পরামর্শ মেনেই ওষুধ গ্রহণ ও ব্যায়াম করা উচিত৷ তাই চিকিৎসককে জিজ্ঞাসা না করে ওষুধ বন্ধ করা একেবারেই উচিত নয় বলে পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা৷