শরীরে আলোর প্রভাব
১৭ অক্টোবর ২০১৬মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ক্রনিক ব্যথার রোগীদের জন্য আলো আর ট্যাবলেট দিয়ে নতুন পদ্ধতি চলছে৷ ব্যথা চিকিৎসা কেন্দ্রে ডাক্তাররা লাইট থেরাপির উপর জোর দিচ্ছেন, যার কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই৷ ব্যথা এমন এক অনুভূতি, যা শুধু আংশিকভাবে পরিমাপ করা সম্ভব৷ প্রত্যেক রোগী তার শরীরের সতর্কতার সংকেত আলাদা আলাদা ভাবে অনুভব করে৷ ব্যথা সংক্রান্ত এক জার্মান প্রশ্নপত্র রয়েছে, যার সাহায্যে রোগীদের প্রতিক্রিয়া কতটা স্পর্শকাতর, তা পরীক্ষা করা হয়৷
সূক্ষ্ম চুল, ব্রাশ ও চাপের সাহায্যে স্পর্শকাতরতার মাত্রা পরীক্ষা করা হয়৷ কয়েক ঘণ্টার এই পরীক্ষায় কিছু প্রাথমিক লক্ষণ পাওয়া যায়৷ বর্তমান জ্ঞান অনুযায়ী ব্যথা অনেকগুলি বিষয়ের উপর নির্ভর করে৷ শুধু শারীরিক নয়, মনস্তাত্ত্বিক বিষয়ও একটা ভূমিকা পালন করে৷ স্নায়ু বিশেষজ্ঞ প্রো. টোমাস আর ট্যোলে বলেন, ‘‘এ ক্ষেত্রে সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গির উন্নতি হয়েছে৷ শারীরিক ও মনস্তাত্ত্বিক অবস্থার তফাত সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে৷ অন্যদিকে এই দুটি বিষয় যে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত, সেই উপলব্ধি থাকলে জানা যায়, যে শুধু ভালো ওষুধ বা পরামর্শ দিয়ে চিকিৎসা সহজ নয়৷''
ডাক্তারদের পাওয়া ফল অনুযায়ী তীব্র ব্যথা এবং চলমান চিকিৎসার ক্ষেত্রে আলোর অত্যন্ত ইতিবাচক প্রভাব থাকতে পারে৷ তবে সব আলো সমান নয়৷ উষ্ণ আলো অত্যন্ত আরামদায়ক হতে পারে৷ নীল, উজ্জ্বল আলোর অন্য প্রভাবও আছে৷ মানুষ এর ফলে আরও সজাগ ও সক্রিয় হয়ে ওঠে৷ প্রো. টোমাস আর ট্যোলে বলেন, ‘‘এ নিয়ে কোনো সংশয় নেই, যে কেউ যদি অপারেশনের পর আলোকিত পরিবেশে জেগে উঠে সেখানেই কয়েকদিন কাটায়, তার প্রায় ৩০ শতাংশ কম ওপিয়েট-এর প্রয়োজন পড়ে৷ আমরা এটাও জানি, যে কোনো হাসপাতালে আলো ও ছায়ার দিক থাকলে যে রোগীরা সূর্যের আলোর দিকে থাকেন, তারা বাকিদের তুলনায় অনেক দ্রুত সেরে ওঠেন৷''
পেশি, জয়েন্ট এবং টেনডন-এ ব্যথা মুভমেন্ট বা নাড়াচাড়ার মাধ্যমে কমানো অথবা সারিয়ে তোলা যায়৷ মনঃসংযোগ এক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷ নীল আলো আমাদের সজাগ থাকতে সাহায্য করে৷ এই আলো আমাদের সুন্দর রৌদ্রোজ্জ্বল দিনের কথাও মনে করিয়ে দেয়, যা ঘুমানো ও জেগে থাকার নিয়ন্ত্রণকারী মেলাটনিন হরমোন উৎপাদন তরান্বিত করে৷ অনেক রোগীর জন্য এই আলো বড় বেশি উজ্জ্বল৷ কথাটা সত্যি, কারণ ৪,০০০ লাক্স সাধারণ দপ্তরের আলোর তুলনায় প্রায় ১০ গুণ বেশি আলো দেয়৷
মনস্তাত্ত্বিকের সঙ্গে গ্রুপ থেরাপির জন্য বেশি উজ্জ্বল আলো ব্যবহার করা হয়৷ রোগীদের সেখানে শরীর মন শিথিল করে নিজেদের অনুভূতির প্রতি মনোযোগ দেবার কথা৷ উষ্ণ, হলুদ আলো এর জন্য আদর্শ৷ প্রাথমিক পরীক্ষা অনুযায়ী রঙিন আলো নিরাময়ের ক্ষেত্রে সাহায্য করে৷ প্রো. ট্যোলে বলেন, ‘‘আলো আমাদের সেই ছায়া থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করে, যা আসলে ব্যথার প্রতীক৷ তাই বাইরে, প্রকৃতির কোলে, আলোর সামনে গেলে নিজের দুর্বলতা দেখাতে পারলে আখেরে ভালো হয়৷ নিজেকে অসীমের দিকে ঠেলে দেওয়াই হলো সমাধান৷ আলোর বদলে ছায়ার মধ্যে নিজেকে গুটিয়ে নিলে কোনো লাভ হয় না৷ এখানে আমরা ভবনের মধ্যে আলো নিয়ে কাজ করছি৷''
উজ্জ্বলতা ও রং অনুযায়ী শরীর ও মনের উপর স্পষ্ট প্রভাব দেখা যায়৷ ব্যথা কমানো, মনঃসংযোগ বাড়ানো, মনমেজাজ ভালো করার এটাও একটা পথ৷