স্থুলকায় মানুষ মানেই অতিরিক্ত পেটুক নন৷ রোগের কারণেও মানুষের শরীর ফুলে যেতে পারে৷ কিছু চিকিত্সা থাকলেও তার প্রভাব ক্ষণস্থায়ী৷ জার্মানির এক নারী এমনই এক রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে চলেছেন৷
বিজ্ঞাপন
লিসা গ্ল্যোকনার লিপেডেমা রোগে ভুগছেন৷ ডাক্তারের প্রশ্নের জবাবে লিসা জানালেন যে তাঁর মনে হচ্ছে অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে৷ প্রায় জন্মের পর থেকেই লিসার ওজন বেড়েই চলেছে, বিশেষ করে হাত-পা ফুলে যাচ্ছে৷
লিপ শব্দটির অর্থ মেদ ও এডেমা মানে পানি জমা হওয়া৷ এর ফলে হাত-পা মারাত্মকভাবে ফুলে ওঠে৷ লিম্ফ বা লসিকার তরল মেদ কোষগুলির মাঝে জমতে থাকে এবং সহজে দূর হয় না৷ ফলে তন্তু ভীষণ বিকৃত হয়ে যায় ও ফুলে ওঠে৷ সমস্যাটা প্রায়ই বংশানুক্রমিক৷ লিসা গ্ল্যোকনারের ধারণা, তাঁর প্রপিতামহীরও সেই সমস্যা ছিল৷ স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে ড. রবিনসন ফেরেরা বলেন, ‘‘এটা একটা লিপিড মেক্যানিজম ডিসঅর্ডার, অর্থাৎ মেদ বিতরণে বিভ্রাটের কারণে এই মানুষগুলির এমন দশা হয়৷ প্রায়ই শরীরের উপরের অংশ চিকন হলেও নীচের অংশ বিশাল চওড়া হয়৷ বিশেষ করে বয়ঃসন্ধি, মেনোপজ, গর্ভধারণ, গর্ভনিরোধক পিলের মতো কারণে হরমোনের পরিবর্তন ঘটলে সেই সমস্যা আরও বেড়ে যায়৷’’
ওজন কমানো এবং স্লিম থাকার অভিনব ৭ উপায়
ওজন বেড়ে যাওয়া সারা বিশ্বেই একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ এতে যে দেখতে অসুন্দর লাগে তা-ই নয়, মোটা শরীরে বাসা বাঁধে নানা অসুখ-বিসুখও৷ জেনে নিন, অতিরিক্ত খাওয়া-দাওয়া থেকে নিজেকে দূরে রেখে স্লিম থাকার সহজ কিছু ট্রিকস৷
ছবি: Colourbox
চোখের আড়াল, মনের আড়াল
‘চোখের আড়াল হলেই মনের আড়াল’ – এই প্রবাদবাক্যটি ওজন কমানোর ক্ষেত্রেও কিন্তু খুবই প্রযোজ্য, কারণ, খাবার দেখলেই যে অনেকের খিদে পেয়ে যায়৷ তাই তৈরি বা রান্না করা খাবার অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল পেপার দিয়ে ঢেকে রাখুন, যেন প্রথমেই চোখে না পড়ে৷ খাবার না দেখলে খাওয়ার আগ্রহও কমে যাবে৷ আর এতে স্বাভাবিকভাবেই ওজন কমবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Junos
রান্নাঘরেই টিভি বা কম্পিউটার
টিভি দেখা বা কম্পিউটারে কাজ করার সময় অনেকেই চিপসের প্যাকেট বা এ ধরনের ফ্যাটযুক্ত খাবার সাথে নিয়ে সোফায় আরাম করে বসেন৷ আর সারাক্ষণ খেতে থাকেন৷ এ সব খাবার ওজন বাড়ানোয় বিশেষ ভূমিকা রাখে৷ আপনি যদি টিভি বা কম্পিউটারটা রান্না ঘরেই রাখেন, তাহলে এ সব যন্ত্রই হয়ত আপনাকে খাওয়া থেকে দূরে রাখবে৷
ছবি: Colourbox/Andy Dean Photography
কীভাবে ?
অ্যামেরিকার পুষ্টি বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ব্রায়ান ওয়েজনিকের করা এক গবেষণা থেকে জানা গেছে, কিচেনে বসে বিনোদনমূলক কোনো অনুষ্ঠান দেখার সময় অংশগ্রহণকারীরা কমপক্ষে ২০০ ক্যালোরি কম গ্রহণ করেছেন এবং এতে করে বছরে ১০ কেজি ওজন কমেছে৷
ছবি: Colourbox
সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রাখুন
রান্নাঘর যতটা গুছানো আর ছিমছাম থাকবে, ওজন কমানো কিন্তু ততটাই সহজ হবে৷ রান্নাঘরে খাবার-দাবার বা জিনিসপত্র একদমই এলোমেলো করে না রেখে যেখানে যা রাখার ঠিকঠাকমতো রাখুন৷ তখন আপনার এমন অনুভূতি হবে যে মনে হবে সবকিছুই আপনার নিয়ন্ত্রণে আছে, এমনকি আপনার শরীরের ওজনটাও! এতে মানসিক শক্তি পাবেন৷ যে কোনো নতুন কিছু করার জন্য তো এই মানসিক শক্তিই বেশি প্রয়োজন৷
ছবি: picture-alliance/akg-images
ফ্রিজ গুছিয়ে রাখুন
যেসব খাবার মোটা করে সেই খাবারগুলো ফ্রিজে ভেতরের দিকে রাখুন৷ আর যেসব খাবার তেমন মোটা করেনা বা ওজন বাড়ায় না, সেগুলো সামনের দিকে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখুন৷ কিচেনের গ্লাস লাগানো আলমারিগুলোর ক্ষেত্রেও ট্রিকস প্রযোজ্য৷ অর্থাৎ চিপস, বিস্কুটের প্যাকেট, বাদাম বা চকলেট জাতীয় খাবার একটু আড়াল করে রাখুন৷
ছবি: Colourbox
টেবিলে ফলমূল রাখুন
রান্নাঘর এবং বসার ঘরের টেবিলে ফলমূল রাখুন৷ বসার ঘরের টেবিলে এমন সব ফল রাখুন যেন হালকা খিদের ভাব হলে তা সেগুলো না কেটেই চট করে মুখে দেওয়া যায়৷ সোজা কথা, খিদের ভাব হলে যেন চোখের সামনে রাখা ফল খেতে পারেন৷
ছবি: Colourbox
ফুলের সুগন্ধ খিদে কমায়
খাবার ঘর বা রান্না ঘরের টেবিলে অন্তত একটি করে তাজা ফুল রাখুন, কারণ, ফুলের সুগন্ধ খাবারের সুগন্ধকে ছাপিয়ে যায়৷ মাঝে মাঝে ফুলের কাছে নাক নিয়ে সুগন্ধ গ্রহণ করুন৷ এতে করে বার বার খাওয়ার ইচ্ছে বা ‘খাই খাই’ ভাবটা দমন হবে৷ যদি তাজা ফুল রাখা সম্ভব না হয়, তাহলে মাঝে মাঝে ঘরের ভেতর গোলাপ বা জেসমিন ফুলের গন্ধযুক্ত ‘রুম স্প্রে’ ছড়িয়ে দিন৷ সুবাসিত মোমবাতি জ্বালিয়েও কিন্তু একই ফল পেতে পারেন!
ছবি: Colourbox
7 ছবি1 | 7
তখন সামান্য নড়াচড়া ও হাঁটাচলা করতেই বেশ কষ্ট হয়৷ পায়ের উপর ভীষণ চাপের কারণে খেলাধুলাও সম্ভব হয় না৷ ভুক্তভোগী হিসেবে লিসা গ্ল্যোকনার বলেন, ‘‘হাঁটতে গেলেই ব্যথা করে, দুই মিনিট পরেই পা জ্বালা করে৷ ভীষণ ভারি লাগে৷ মনে হয় পায়ে দুটি পানির থলি বেঁধে দেওয়া হয়েছে, সেটি নিয়েই চলে বেড়াতে হচ্ছে৷’’
অতিরিক্ত ওজনের কারণে শরীরের জয়েন্টের উপর বেশি চাপ পড়ে৷ সিঁড়ি চড়া বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়৷ মায়ের সঙ্গে তিনি কয়েক ঘণ্টা ধরে সঠিক মাপের পোশাকের খোঁজ করেন৷ নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিতে গিয়ে লিসা বলেন, ‘‘ফোলা পা বা আয়নায় প্রতিবিম্ব দেখলে নিজেকে অবশ্যই আকর্ষণীয় মনে হয় না৷ পায়ে চাকা চাকা দাগ থাকে, ত্বক মোটেই মসৃণ বা সুগঠিত নয়৷ কখনোই বাকিদের মতো সুন্দর হয় না৷’’
চিকিৎসার মাধ্যমে শরীরে পানি জমার হার কমিয়ে আনা হয়৷ বাতাসের চাপের ফলে লিম্ফ বা লসিকা থেকে পানির নিঃসরণ তরান্বিত করা হয়৷ লিসা বলেন, ‘‘নেটলেট চা খেলে সব সময়ে উপকার পাওয়া যায়৷ নেটলেটের যে কোনো রূপ খেলেই ওজন কমে যায়৷’’
লিসা সেইসঙ্গে সপ্তাহে দুই থেকে তিন বার লিম্ফ্যাটিক ড্রেনেজ বা লসিকানালী নিষ্কাশন করান৷ এই থেরাপি শরীর থেকে পানি কমাতে সাহায্য করে৷ ফিজিওথেরাপিস্ট হিসেবে বেটিনা গোট্রে বলেন, ‘‘চাপ নীচ থেকে উপরে পাঠানোর চেষ্টা করছি৷ অনেকটা দুধ দোয়ার মতো হাত চালিয়ে উপরদিকে ঠেলে দিচ্ছি৷ তারপর নীচের দিকটা শিথিল করে তুলছি৷ এভাবে গোটা শরীরকে উপরের দিকে ঠেলে দেবার চেষ্টা করছি৷’’
তবে এই চিকিৎসা নিয়মিত চালিয়ে যেতে হয়, কারণ তার সুফল অত্যন্ত ক্ষণস্থায়ী৷ ওজন কমাতে পারলে লিসার জন্য সবচেয়ে ভালো হতো৷ তবে লিপেডেমার ক্ষেত্রে অপারেশন ছাড়া সেটা হাসিল করা প্রায় অসম্ভব৷