সুখে-দুঃখে সংগীত আমাদের মনোরঞ্জন করে৷ সেইসঙ্গে শৈশব থেকেই শরীর ও মনের অনেক ক্রিয়ার উপরেও সংগীতের প্রভাব রয়েছে৷ চিকিৎসাবিদ্যার ক্ষেত্রেও সংগীতের সফল প্রয়োগ চলছে৷
বিজ্ঞাপন
মানুষ কেন সংগীত ভালবাসে? – এমন প্রশ্ন অনেকের মনেই জাগে৷ আসলে আমাদের পরিবেশ সুরে ভরপুর৷ পাখিদের কলকাকলি৷ কথারও সুর আছে৷
মস্তিষ্ক ভাষার মতো সংগীত শুনেও একই ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখায়৷ কিন্তু সংগীত শোনার সময় মস্তিষ্কের সেই অংশ সক্রিয় হয়ে ওঠে, যেখানে আবেগ সৃষ্টি হয়৷ সে কারণেই সংগীতের এত বেশি প্রভাব রয়েছে৷
সদ্যোজাত শিশুরাও সংগীত শুনে যথেষ্ট প্রতিক্রিয়া দেখায়৷ সেটা শুধু চোখে দেখা যায় না, হাতেনাতে প্রমাণ করা সম্ভব৷ সেই বয়সে শিশুরা মায়ের কণ্ঠ শুনলে তাদের লালায় স্ট্রেস হরমোন কর্টিসলের ঘনত্ব কমে যায়৷
ইউরোপের দশটি চোখ ধাঁধানো কনসার্ট হল
ইউরোপ কেন, দুনিয়া জুড়ে বড় বড় শহরের কনসার্ট হল শুধু গানবাজনা শোনার জায়গাই নয়, আধুনিক স্থাপত্যের নিদর্শনও বটে৷ তারা নিজেরাই পর্যটকদের টানে৷
ছবি: picture alliance/Arcaid/S. Ellingsen
কিলডেন পার্ফর্মিং আর্টস সেন্টার, নরওয়ে
কিলডেন পার্ফর্মিং আর্টস সেন্টার, নরওয়ে
কনসার্ট হলটি জলের ধারে৷ সামনেটা ১০০ মিটার লম্বা একটা কাচের দেয়াল, তার ওপর ঝুলছে ওক কাঠের সোনালি রঙের এক পর্দা, যেন থিয়েটারের যবনিকা৷ তৈরির কাজ শেষ হয় ২০১২ সালে৷ মোট এলাকা ১৬৫,০০০ বর্গমিটার৷ এখানে নাটক, অপেরা বা সিম্ফনি অর্কেস্ট্রা সব কিছুই অনুষ্ঠিত হয়৷
ছবি: picture alliance/Arcaid/S. Ellingsen
ফিলহার্মনি দ্য পারি, ফ্রান্স
এমন একটি কনসার্ট হলের আইডিয়া প্রথম এসেছিল নামকরা অর্কেস্ট্রা পরিচালক পিয়ের বুলে ও পুরস্কার বিজয়ী স্থপতি জঁ নুভেলের মাথায়৷ উদ্বোধন করা হয় ২০১৫ সালে৷ অ্যালুমিনিয়ামের সম্মুখভাগটি তিন লাখ চল্লিশ হাজার পাখি দিয়ে সাজানো, তাদের সাত ধরনের আকৃতি ও ধূসর থেকে কালো, এই চার ধরনের রঙ৷ দূর থেকে দেখলে মাছের আঁশের মতো ঝকঝক করে৷ ৩৭ মিটার উঁচু বাড়িটির ছাদে ওঠা যায় ও সেখান থেকে প্যারিসের দৃশ্য উপভোগ করা যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Muncke
সেজ গেটসহেড, ইংল্যান্ড
গেটসহেড আর নিউক্যাসলের মধ্যে টাইন নদীর ওপর সাতটা সেতু৷ তার মধ্যে মিলেনিয়াম ব্রিজটি সেজ গেটসহেড কনসার্ট হলের ওপর দিয়ে চলে গেছে৷ গোটা বাড়িটাতেই আলো জ্বলে৷ ডিজাইন প্রখ্যাত স্থপতি স্যার নর্মান ফস্টারের৷ উদ্বোধন করা হয় ২০০৪ সালে৷ কনসার্ট হলটি প্রতিদিন ১৬ ঘণ্টা করে বছরে ৩৬৪ দিন খোলা থাকে৷
ছবি: picture-alliance/robertharding/M. Sunderland
কাসা দা মুজিকা পোর্তো, পর্তুগাল
তেরশ’ দর্শকের বসার মতো এই কনসার্ট হলটিকে দেখতে যেন একটি সুবিশাল বাক্স৷ বাইরেটা সাদা কংক্রিট আর কাচের৷ ভেতরটায় নানা রঙ ও আকৃতির বিভিন্ন ফিচার, সেই সঙ্গে পর্তুগালের ‘আজুলেজস’ পাথরের টালি৷ কাচের ছাদটা খুলে দেওয়া যায়; তখন এখানে থেকে পোর্তো শহরের সব বাড়ির মাথা ছাড়িয়ে অতলান্তিক সমুদ্র অবধি দেখতে পাওয়া যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Karmann
পালাউ দে লেজার্ত রেইনা সোফিয়া, স্পেন
ভ্যালেন্সিয়া শহরে কুইন সোফিয়া প্যালেস অফ দ্য আর্টসের উদ্বোধন করা হয় ২০০৫ সালে৷ বিশ্বখ্যাত স্থপতি সান্তিয়াগো কালাত্রাভা যে সুবিশাল সিটি অফ আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেসের পরিকল্পনা করেছিলেন, এই কনসার্ট হলটি ছিল তার চূড়ান্ত অংশ৷ ৭৫ মিটার উঁচু ভবনটি বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু অপেরা হাউস বলে পরিচিত৷
ছবি: picture-alliance/Arco Images GmbH/J. Moreno
নর্স্কে অপেরা ও ব্যালে, নরওয়ে
অসলোর নরওয়েজিয়ান অপেরা ও ব্যালেট ভবনটির ছাদ ৩৬,০০০ কারারা শ্বেতপাথরের ব্লক দিয়ে তৈরি৷ এই ছাদের ওপর দিয়ে হেঁটে যাওয়া যায়৷ হলটির চারপাশে পাতলা কাচের দেয়াল৷ হলের ভেতরটা তেলে ‘সিজনড’ ওক কাঠ দিয়ে তৈরি, যার ফলে খুব ভালো শুনতে পাওয়া যায়৷ ইন্টারভ্যালের সময় ব্যালকনি থেকে বাইরে নরওয়ের ফিয়র্ডগুলির দৃশ্য দেখতে পারা যায়৷
কনসার্ট হলটির ধাঁচ কিছুটা আলাদা বলে গোড়ায় বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল৷ অর্কেস্ট্রার বাজনদাররা হলের মাঝখানে একটা পোডিয়ামের ওপর বসেন৷ স্থপতি হান্স শারুনের এই বিপ্লবী ডিজাইন পরে সারা বিশ্বে আধুনিক কনসার্ট হল তৈরির মডেল হয়ে ওঠে৷
ছবি: picture alliance/Arco Images/Schoening Berlin
আল্টো থিয়েটার, এসেন, জার্মানি
জার্মানির এসেন শহরের এই কনসার্ট হলটির বিশেষত্ব হলো, স্টেজের সামনে বসা দর্শকদের আসনগুলি অর্ধগোলাকৃতি করে অপ্রতিসমভাবে সাজানো৷ ফিনল্যান্ডের স্থপতি আলভার আল্টো জানিয়েছেন, তিনি ডেলফির প্রাচীন গ্রিক থিয়েটারগুলো থেকে এ ধরনের অডিটোরিয়াম সৃষ্টির প্রেরণা পেয়েছেন৷ আলভার থিয়েটারের নকশাটি করেন পঞ্চাশের দশকে, কিন্তু কাজ শুরু হয় ১৯৮৩ সালে৷ আজ এই ভবনটিকে আধুনিক ক্লাসিক্যাল ডিজাইনের একটি নিদর্শন বলে গণ্য করা হয়৷
ছবি: Bernadette Grimmenstein
হার্পা মিউজিক হল, রাইকজাভিক, আইসল্যান্ড
আংশিক রঙ করা কাচের বিল্ডিং ব্লকগুলোকে মৌমাছির চাকের মতো বসিয়ে আলোর জাদু সৃষ্টি করেছেন শিল্পী ওলাফুর এলিয়াসন৷ দিনের বেলায় বাইরে থেকে কাচের ওপর আলো পড়ে বর্ণালীর সৃষ্টি হয়; রাত্রে ভবনটির ভিতরের আলো জ্বললে গোটা বাড়িটা রঙ বদলায় যেন বহুরূপীর মতো৷
হামবুর্গের এই কনসার্ট হলটি তৈরি হতে যে পরিমাণ বিলম্ব হয়েছে আর বাজেট যে পরিমাণে বেড়েছে, তাতে কেউ প্রত্যাশাই করেননি যে, তার চূড়ান্ত আকার এত সুন্দর ও মনোমুগ্ধকর হবে৷ ফিলহার্মনিকের ছাদটা ঢেউ খেলানো, যেন একসঙ্গে সাগর আর সংগীতের ওঠা-নামা৷ হামবুর্গের বন্দর এলাকার একটি মালগুদামের উপর কাচের এই বাড়িটি যেন জলের ওপর ভাসছে৷ প্রথম কনসার্টের তারিখ হলো ১১ই জানুয়ারি, ২০১৭৷
ছবি: T. Rätzke
10 ছবি1 | 10
মস্তিষ্ক অত্যন্ত উত্তেজিত হয়ে পড়ে৷ সে কারণে যে সব শিশু সংগীত চর্চা করে, তারা অনেক সহজে ভাষা শিখতে পারে এবং নির্দিষ্ট বিষয় মনোযোগ দিয়ে শিখতে পারে৷
যে সব স্কুলে সংগীত চর্চা হয়, সেখানে শিশুরা সংঘবদ্ধ হয়ে ভালোভাবে শিক্ষা গ্রহণ করে এবং পরস্পরের মধ্যে ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে৷
সংগীত আমাদের শরীরে কী প্রতিক্রিয়া দেখায়, গবেষকরা তা পরীক্ষা করে দেখেছেন৷ সংগীত হৃৎস্পন্দন, রক্তচাপ ও পেশির টান বদলে দেয়৷ সেই সঙ্গে আমাদের শরীর আরও বেশি করে কিছু হরমোন নিঃসরণ করে৷
এই সব কারণে চিকিৎসাবিদ্যার ক্ষেত্রে সংগীতকে সফলভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে৷ ব্যথা সহ্য করতে এবং স্নায়ুকোষগুলির মধ্যে নতুন করে যোগাযোগ স্থাপন করতে সংগীত সাহায্য করে৷ তবে শুধু শারীরিক প্রয়োজনের কারণে নয়, সংগীত তার নিজস্ব গুণে বড়ই সুন্দর৷
বিশ্বের অসাধারণ কয়েকটি সংগীত ভেন্যু
বিশ্বের নামি-দামি সংগীত ও অপেরা শিল্পীদের আলোয় যেসব মঞ্চ উদ্ভাসিত হয়, বিশ্বের সেরা অর্কেস্ট্রা যেসব মঞ্চে পারফর্ম করে, তেমন কয়েকটি সংগীত ভেন্যু আছে এই ছবিঘরে, যাদের স্থাপত্য এবং আধুনিকতা মুগ্ধ করবে আপনাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Jiajie
এল্বফিলাহার্মোনি হামব্যুর্গ, জার্মানি
১১ জানুয়ারি জার্মানির এই বৃহত্তর কনসার্ট হলটির উদ্বোধন হয়৷ এমনভাবে এটি তৈরি, যে সমুদ্রবন্দরের একফোটা শব্দ এর ভেতরে প্রবেশ করে না৷ একটি মালগুদামের উপর কাচের এই বাড়িটি যেন জলের ওপর ভাসছে৷ এটি নির্মাণ করতে সময় লেগেছে একদশক৷
ছবি: T. Rätzke
গুয়াংসৌ অপেরা হাউজ, চীন
পার্ল নদীর উপর এই ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে৷ বিশাল আকৃতির একটি প্রস্তরখণ্ডের মত দেখতে এটি৷
ছবি: picture-alliance/ANN
অপেরা সিডনি, অস্ট্রেলিয়া
অসাধারণ এই স্থাপত্যের নির্মাতা ডেনিশ স্থপতি ইয়র্ন উৎসন৷ এটির নির্মাণ শেষ হওয়ার আগেই যিনি পদত্যাগ করেছিলেন৷ এর পেছনে খরচ হয়েছিল প্রচুর অর্থ, ছড়িয়ে পড়েছিল অনেক গুজব৷ ১৪ বছর লেগেছিল এটির নির্মাণ কাজ শেষ হতে৷ চালু হয়েছিল ১৯৭৩ সালে৷ ২০০৭ সালে জাতিসংঘের বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান পায় এটি৷ ছ’বছরের সংস্কার শেষে চলতি বছরের মে মাসে আবারও এটি চালু হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Naupold
ন্যাশনাল সেন্টার ফর দ্য পারফর্মিং আর্টস, চীন
বেইজিং-এ তিয়েনানমেন স্কয়ার থেকে খুব বেশি দূরে নয়, কিছুটা পথ গেলেই কৃত্রিম লেকের উপর ‘বিশাল একটি ডিম’ বা ‘পানির ফোটা’-র মতো এই ভবনটির দেখা পাবেন৷ ফরাসি স্থপতি পল অ্যান্ড্রু ১৯৯৯ সালে এটি নির্মাণ করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/L. Xiashun
পালাউ দে লেজার্ত রেইনা সোফিয়া, স্পেন
নিজের জন্মস্থান ভ্যালেন্সিয়ায় শিল্প ও বিজ্ঞানের অপূর্ব সংমিশ্রণে একটি পুরো শহর নির্মাণ করেছেন বিশ্বখ্যাত স্থপতি সান্তিয়াগো কালাত্রাভা৷ ‘কুইন সোফিয়া প্যালেস অফ দ্য আর্টস’-এর অনন্য নিদর্শন ৷ এটি দেখে কী মনে হয়? ভবন বা স্থাপত্য? নাকি কোনো বিশালাকৃতির রাজহাঁস বা একটি তিমি?
লস অ্যাঞ্জেলেসের ফিলহার্মোনিক অর্কেস্ট্রার হোম ভেন্যু এটি, বর্তমানে যেটির পরিচালক গুস্তাভো দ্যুদামেল৷ বিশাল একটি ফুলের মতো দেখতে এই স্থাপনাটির নামকরণ করা হয়েছে ওয়াল্ট ডিজনির নামে৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot
এসপ্লানাডে থিয়েটার্স অন দ্য বে, সিঙ্গাপুর
দু’টি গোলাকৃতির কাঠামো এবং ৭ হাজার ত্রিকোণাকৃতির কাচ দিয়ে স্থাপনাটি নির্মিত৷ স্থানীয় মৌসুমী ফলের নামে স্থানীয়রা এটির নাম দিয়েছেন ‘ডুরিয়ান’৷ সিঙ্গাপুরের সিম্ফোনি অর্কেস্ট্রা এই কনসার্ট হলে প্রায়ই অনুষ্ঠান করে৷ এখানে আসন সংখ্যা ১৬০০৷ এছাড়া নাটক ও অন্যান্য পারফর্মেন্সের জন্য আলাদা ২০০০ আসন রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/robertharding/A. Hall
হার্পা মিউজিক হল, রাইকজাভিক, আইসল্যান্ড
আংশিক রং করা কাচের বিল্ডিং ব্লকগুলোকে মৌমাছির চাকের মতো বসিয়ে আলোর জাদু সৃষ্টি করেছেন শিল্পী ওলাফুর এলিয়াসন৷ দিনের বেলায় বাইরে থেকে কাচের ওপর আলো পড়ে বর্ণালীর সৃষ্টি হয়, রাতে ভবনটির ভেতরের আলো জ্বললে পুরো ভবনটি রঙ বদলায় বহুরূপীর মতো৷
গেটসহেড আর নিউক্যাসলের মধ্যে টাইন নদীর ওপর সাতটা সেতু৷ তার মধ্যে মিলেনিয়াম ব্রিজটি সেজ গেটসহেড কনসার্ট হলের ওপর দিয়ে চলে গেছে৷ পুরো ভবনেই আলো জ্বলে৷ এর নকশা করেছেন প্রখ্যাত স্থপতি স্যার নর্মান ফস্টার৷ উদ্বোধন করা হয় ২০০৪ সালে৷ কনসার্ট হলটি প্রতিদিন ১৬ ঘণ্টা করে বছরে ৩৬৪ দিন খোলা থাকে৷
ছবি: picture alliance/Robertharding
কালচারাল সেন্টার হেডার আলিয়েভ, আজারবাইজান
এই সাংস্কৃতিক কেন্দ্রটি বাকু শহরে কাসপিয়ান সমুদ্রের ওপর নির্মিত৷ বর্তমান প্রেসিডেন্টের নামে নামকরণ করা হয়েছে এটির৷ ২০০৭ সালে এটির নকশা করেন স্থপতি জাহা হাদিদ৷