আধুনিক যুগে চারিদিকে প্রলোভনের অভাব নেই৷ হাতের নাগালেই সুস্বাদু খাদ্য৷ কিন্তু শরীর ঠিক রাখতে ডায়েট করার চাপও রয়েছে৷ সেটা করলে মন কি ভালো থাকে? গবেষকরা ডায়েট করার নানা ক্ষতিকারক দিক তুলে ধরছেন৷
ছবি: Colourbox
বিজ্ঞাপন
কয়েক সপ্তাহ ঢিলেমি করলেই ওজন বাড়তে থাকে৷ কিন্তু ডায়েট করলে শুধু সেটাই ঘটে না৷ চারদিকে প্রলোভনের অভাব নেই৷ অবচেতন মন নীরবে সে দিকে লক্ষ্য রাখে৷
কিন্তু ডায়েট করলে সেই অবচেতনে কী ঘটে? মার্কিন গবেষকরা সেই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে একটি পরীক্ষা চালিয়েছেন৷ সবার আগে তাঁরা একশো স্বেচ্ছাসেবীর শরীরে স্ট্রেস সৃষ্টিকারী কর্টিসল হরমোনের মাত্রা পরীক্ষা করেছিলেন৷ তারপর তাঁদের মধ্যে অর্ধেকের জন্য ডায়েট চালু করা হলো৷ বাকিদের উপর শুধু নজর রাখা হলো৷
তিন সপ্তাহ পর আবার সবার কর্টিসলের মাত্রা পরিমাপ করা হলো৷ দেখা গেল, দ্বিতীয় দলের কর্টিসলের মাত্রায় তেমন রদবদল হয় নি৷ কিন্তু ডায়েট করা মানুষগুলির মাত্রা প্রায় ১৭ শতাংশ বেড়ে গেছে৷ কর্টিসল রক্তচাপ ও নাড়ির স্পন্দন বাড়িয়ে দেয়৷ ফলে মানসিক চাপও বাড়ে৷ কিন্তু ডায়েট করলে মস্তিষ্কে শুধু স্ট্রেস বাড়ে না৷
গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী ক্ষুধার্ত মানুষ চাহিদা মেটাতে দোকানে গিয়ে বেশি ক্যালোরিযুক্ত খাদ্য বেছে নেন৷ চাহিদা ও পরিতৃপ্তি আমাদের আচরণ নির্ধারণ করে৷ সেই আচরণের জন্য মস্তিষ্কের টেগমেন্টাম নামের অংশ দায়ী৷ সেটি ‘পারিশ্রমিক' স্থির করে৷
মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর পাঁচটি খাবার
কিছু খাবার এত সুস্বাদু যে যতই খাওয়া হোক, তৃপ্তি যেন মেটেনা৷ কিন্তু সব খাবার তৃপ্তি মিটিয়ে খেলে উপকারের চেয়ে ক্ষতির আশঙ্কাই বেশি৷ বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, জনপ্রিয় পাঁচটি খাবার একটু বেশি খেলে মস্তিষ্কের জটিল রোগও হতে পারে৷
ছবি: Fotolia/Kesu
গরুর মাংস, খাশির মাংস...
মাংস অনেকেরই প্রিয়৷ গরু বা খাশির মাংস, চিকিৎসকরা যেগুলোকে ‘রেড মিট’ বলেন, সেগুলো তো কারো কারো প্রতিদিনের খাবার৷ এসব মাংস প্রতিদিন তো নয়ই, সপ্তাহে চার বারের বেশি না খাওয়াই উত্তম৷ গবেষকরা বলছেন, ‘রেড মিট’ সপ্তাহে চারবারের বেশি খেলে আলৎসহাইমার ঝুঁকি বাড়ে৷
ছবি: HLPhoto/Fotolia.com
মাখন বেশি খেলেও মহাবিপদ
দিনে এক চা চামচের পরিমাণ মাখন বা (বিভিন্ন প্রাণীর চর্বি থেকে তৈরি) মার্জারিন খাওয়া যেতে পেরে, কিন্তু এর বেশি হলেই বিপদ৷ গবেষকরা বলছেন, মাখন বা মাখনজাতীয় খাবার না খেয়ে খাদ্য তালিকায় অলিভ অয়েল যোগ করা সবচেয়ে নিরাপদ৷ তাহলে মস্তিষ্কের রোগের আশঙ্কা খুব একটা থাকবেনা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Eebener
বেশি খেলে পনিরও ক্ষতিকর
পনির খুব সুস্বাদু৷ মস্তিষ্কের জটিল রোগ আলৎসহাইমার থেকে দূরে থাকতে চাইলে সপ্তাহে মাত্র একবার পনির খেতে হবে৷
ছবি: Fotolia/Volker Gerstenberg
তেলে ভাজা এবং ফাস্টফুড
তেলে ভাজা খাবার এমনিতেই নানা রোগের কারণ৷ ফাস্টফুডও তাই৷ এ ধরণের খাবার ডাক্তাররা এমনিতেই কম খেতে বলেন৷ আলৎসহাইমার-এর ঝুঁকি আছে এমন লোকদের তো এসব থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকতেই হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পেস্ট্রি এবং অন্যান্য মিষ্টি খাবার
মিষ্টি জাতীয় খাবার বেশি খেলেও স্বাস্থ্যের ক্ষতি৷ ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য তো মিষ্টি এক অর্থে ‘হারাম’, অন্যদেরও উচিত মিষ্টি কম খেয়ে মস্তিষ্কটাকে নিরাপদ রাখা৷ বেশি মিষ্টি খাচ্ছেন? তাহলে আলৎসহাইমারের সঙ্গে কিন্তু আপনার দূরত্ব কমছে!
ছবি: Roland Förch
5 ছবি1 | 5
ক্ষুধার তাড়না মস্তিষ্কের এই অংশটিকে কীভাবে প্রভাবিত করে, ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা এমআরটি পরীক্ষা করে তা জানতে চেয়েছিলেন৷ স্বেচ্ছাসেবীরা একবার প্রাতরাশের সুযোগ পেয়েছিলেন৷ অন্যবার তাদের ক্ষুধার্ত থাকতে হয়েছিল৷ তারপর বিজ্ঞানীরা তাঁদের কয়েকটি ছবি দেখিয়েছিলেন৷ স্বেচ্ছাসেবীদের মস্তিষ্কের টেগমেন্টামের প্রতিক্রিয়া জানতে তাঁরা এমনটা করেছিলেন৷ নিরপেক্ষ ছবি দেখে মস্তিষ্কে প্রায় কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায় নি৷ কিন্তু খাদ্যের ছবি দেখে অবশ্যই পরিবর্তন দেখা গেছে৷
এ ক্ষেত্রে দেখা গেল, স্বেচ্ছাসেবীরা ক্ষুধার্ত থাকলে মস্তিষ্ক আরও চঞ্চল হয়ে উঠছে৷ পেট ভরা থাকলে কিন্তু তেমনটা ঘটছে না৷ উচ্চ ক্যালোরি-সম্পন্ন খাদ্যের ক্ষেত্রে মস্তিষ্ক সবচেয়ে বেশি চঞ্চল হয়ে পড়ে৷ সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, ডায়েট করলেই খাবার ইচ্ছা বা ক্ষুধার সঙ্গে সারাক্ষণ লড়াই করতে হয়৷ তখন অবচেতনে তোলপাড় কাণ্ড চলে৷
সুইডেনের এক গবেষণায় এমনটা দেখা গেছে৷ তার আওতায় ৮৫০ জনেরও বেশি শিশু-কিশোরকে খাদ্যগ্রহণ ও শরীর সম্পর্কে সচেতনতার বিষয়ে জেরা করা হয়েছিল৷ যে সব কিশোররা ঘনঘন ডায়েট করে, তারা শুধু নিজেদের শরীর সম্পর্কে অসন্তুষ্ট নয়৷ পেট ভরলে বা খিদে পেলেও তাদের শরীর ঠিকমতো সংকেত দিতে পারে না৷ ডায়েট কীভাবে সেই বোধশক্তির উপর প্রভাব ফেলে, তা এখনো স্পষ্ট নয়৷ কিন্তু মানুষ যত ঘনঘন ডায়েট করে, তার পরিণাম ততই ভয়াবহ হয়৷
খাওয়া না কমিয়েও মেদ কমানোর কিছু উপায়
বাড়তি মেদ নিয়ে অনেকেই মহা দুশ্চিন্তায়৷ মেদ কমাতে খাওয়া-দাওয়া কমিয়ে নতুন সমস্যাও ডেকে আনেন কেউ কেউ৷ অথচ খাওয়া-দাওয়া না কমিয়ে, অর্থাৎ ‘ডায়েট’ না করেও কিন্তু মেদ কমানো যায়৷
ছবি: Fotolia/Markus W. Lambrecht
অট্টহাসি মেদ কমায়!
দিনে দশ মিনিট করে জোরে জোরে হাসলেও নাকি মেদ কমে৷ হাসলে নাকি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, রক্তপ্রবাহেও ইতিবাচক পরিবর্তন আসে৷ রীতিমতো গবেষণা করে তা জানা গেছে৷ গবেষকরা বলছেন, প্রাপ্তবয়স্করা দিনে সাধারণত আটবারের মতো হাসেন, অন্যদিকে কোনো কোনো শিশু নাকি তিনশ’বার পর্যন্ত হাসে৷
ছবি: Fololia/olly
নিয়মিত ঘরের কাজ করুন
প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট করে ঘরের সাধারণ কাজগুলো করলেও অনেক উপকার পাওয়া যায়৷ ঘরের মেঝে পরিষ্কার করা, বিছানার চাদর বদলানো- এ ধরণের কাজগুলো করলেও মেদ বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ তো করা যায়ই, এমনকি মেদও কমানো যায়৷
ছবি: mmphotographie.de/Fotolia.com
মশলাযুক্ত খাবার পরিহার করুন
খাবারে যত কম মশলা থাকবে ততই ভালো৷ মশলায় যে অ্যালকালয়েড থাকে তা মেদ বৃদ্ধিতে সহায়ক৷ তাই মশলাযুক্ত খাবার যত ভালোই লাগুক, মেদ কমাতে চাইলে সেরকম খাবার কম খাওয়াই উত্তম৷ তবে মরিচ এবং দারুচিনির উপকার আছে৷ এগুলো রক্তে চিনির মাত্রা কমায়৷ দারুচিনি তো মেদও কমায়৷
ছবি: Fotolia/karepa
চুমুও মহৌষধ
এক মিনিট চুমু খেলে শরীর থেকে ২০ ক্যালরির মতো চর্বি ধ্বংস হয়৷ পুরুষরা যখন চুমু খায় তখন তাদের মুখমণ্ডলের ৩৮টি পেশির সংকোচন-প্রসারন হয়৷ বলতে পারেন মুখের ব্যায়ামও হয় তখন৷
ছবি: nikkytok / Fotolia
বাস, ট্রেন, ট্রামে চড়ুন
এসি লাগানো গাড়িতে বসে কর্মস্থলে যেতে খুব আরাম, তবে তাতে কিন্তু মেদ বাড়ে৷ পাবলিক ট্রান্সপোর্টে যাতায়াতের ধকল সহ্য করুন দেখবেন তাতেও মেদ খুব একটা বাড়ছেনা৷ দৌড়ে বাস, ট্রেন ধরার মতো প্রাত্যহিক ধকল দিনে ৩০ মিনিট সহ্য করলে নাকি ২৭০ ক্যালরি মেদ ক্ষয় হয়৷
ছবি: AP
হরর মুভি দেখুন
ওয়েস্টমিনস্টার ইউনিভার্সিটির গবেষকরা বলছেন, হরর মুভি বা ভৌতিক ছবি দেখলেও নাকি মেদ কমে৷ তাঁরা বলছেন, একটা ভৌতিক ছবি দেখলে ১৩৩ ক্যালরি মেদ ধ্বংস হয়৷ তাঁরা জানিয়েছেন, ভীতিকর দৃশ্য দেখার সময় শরীর থেকে অ্যাড্রেনালিন নিঃসরন বেড়ে যায়৷ এ প্রক্রিয়ায় চর্বিও গলে যায়৷
ছবি: Fotolia/Deklofenak
যৌনমিলন
ডায়েট না করে মেদ কমানোর সবচেয়ে ভালো উপায় নাকি যৌনমিলন৷ একবারের পরিপূর্ণ যৌনমিলনে নাকি ৮০ থেকে ৩৫০ ক্যালরি মেদ ক্ষয় হয়৷