‘মাদক' বাংলাদেশে একটা ভয়াবহ সমস্যা৷ অথচ মাদকাসক্তদের চিকিৎসার জন্য কোনো পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থা নেই এখানে৷ দেশে মদকাসক্তদের অধিকাংশই তরুণ-তরুণী৷ তবে দিন দিন আসক্ত নারীদের সংখ্যা বাড়েই চলেছে, জানালেন অধ্যাপক ডা. মোহিত কামাল৷
বিজ্ঞাপন
ডা. কামাল ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ মেন্টাল হেলথ-এর সাইকোথেরাপি বিভাগের প্রধান৷ ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, ‘‘এই তরুণীরা তাদের বন্ধুদের বা প্রেমিকদের কাছ থেকে মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ছে৷ অনেকক্ষেত্রে মাদকে আসক্ত স্বামী কৌশলে স্ত্রীকে মাদকাসক্ত করে ফেলছেন৷ তাছাড়া শহরাঞ্চলে যে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনাগুলো ঘটছে, তার অধিকাংশই মাদকের কারণে৷ রাতে মদ্যপান করে স্বামীরা বউকে পেটাচ্ছেন, আবার সকালে হাত-পা ধরে ক্ষমা চাচ্ছেন৷ কিন্তু ততক্ষণে ওই নারীর সহ্যের সীমা পার হয়ে গেছে, ফলে তারা ‘সেপারেট' হয়ে যাচ্ছেন৷''
ডয়চে ভেলে: বাংলাদেশে মাদকসেবীদের চিকিৎসা কেমন?
ডা. মোহিত কামাল: মাদকাসক্তির অনেকগুলো ধরণ আছে৷ যেমন বাংলাদেশে তিন ধরনের চিকিৎসা চলে৷ একটা হলো ‘সোশ্যাল মেথড', আরেকটা ‘সাইকোলজিক্যাল মেথড' এবং অন্যটা ‘ বায়ো-সাইকোলোজিক্যাল মেথড'৷ এখানে তিনটা মডেলের তিনটা দিক৷ আমি এটা বলব না যে, প্রত্যেকটা মডেলই পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা দিতে পারে৷ এখন ওয়ার্ল্ড স্ট্যান্ডার্ড হলো – দু'বছর চিকিৎসা করতে হবে৷ এক বছর যদি ফ্রি রাখা যায়, তবে তাকে আমরা ‘আর্লি রিকভারি বলি'৷ আরেক বছর যদি ফ্রি রাখা যায়, তাহলে সেটাকে আমরা বলি ‘সাসটেন রিকভারি'৷ কিন্তু দুই বছরের চিকিৎসা দেয়ার মতো অবকাঠামো বাংলাদেশে গড়ে উঠেনি৷ অর্থাৎ ওয়ার্ল্ড স্টান্ডার্ড চিকিৎসা বাংলাদেশে গড়ে উঠেনি৷
ডা. মোহিত কামাল
তারপরও বিভিন্ন সেন্টার, আমার পর্যবেক্ষণে যেটা দেখেছি, বেশ নাম করেছে৷ তারা তাদের মডেল অনুযায়ী জাতিসংঘ বা ডাব্লিউএইচও-র বলে দেয়া মতে চিকিৎসা দিয়ে থাকে৷ কেউ কেউ আবার ‘কলম্বো প্ল্যান' বা নিডা অনুযায়ী চিকিৎসা দিয়ে থাকে৷ কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভালো রেজাল্ট পাওয়া যাচ্ছে৷ তবে নেশায় ফেরত যাওয়ার ‘রেট' খুবই বেশি৷ কারণ ঐ ছেলেটা যে পাড়ায় থাকত, চিকিৎসা নিয়ে সেখানে ফিরে গিয়ে নানা ছলে-বলে সে আবারো ফিরে যায়৷ এখন ‘ইজি কমিউনিকেশন', বিশেষ করে মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট, ফেসবুকের কারণে ডিলারদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ হয়ে যাচ্ছে৷ ফলে আবার খুব সহজেই তাদের হাতে মাদক পৌঁছে যাচ্ছে৷ এই যোগাযোগ যদি বিচ্ছিন্ন করা না যায়, তাহলে তাকে ফেরানো যাবে না৷ ফলে ফিরে যাওয়ার রেট ‘ভেরি হাই'৷ এর অর্থ এই নয় যে, চিকিৎসা ব্যবস্থা দুর্বল৷ আমি মনে করি, কোনো কোনো সেন্টারে চিকিৎসা ব্যবস্থা ভালো এবং তাদের বিশ্বের নানা উন্নত দেশের সাথে তুলনা করা যায়৷ অন্যদিকে কোনো কোনো সেন্টার হয়ত মানসম্পন্ন নয়৷ ‘প্রাইভেট সেক্টর' বেশ ‘ডেভেলপ' করছে৷ কিন্তু সরকারি সেন্টারগুলো মাদকাসক্তদের চিকিৎসার জন্য পূর্ণাঙ্গ বলে মনে করি না৷
মাদক উৎপাদনে শীর্ষ কয়েকটি দেশ
জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনওডিসি (ইউনাইটেড নেশনস অফিস অন ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইম) সম্প্রতি বিশ্বের শীর্ষ মাদক উৎপাদনকারী দেশের একটি তালিকা তৈরি করেছে৷
ছবি: Abdelhak Senna/AFP/Getty Images
মিয়ানমার
আফিম উৎপাদনকারী দেশের তালিকার শীর্ষস্থান দখল করেছে মিয়ানমার। নানা কারণে আফগানিস্তানে আফিমের আবাদ কমে যাওয়ায় মিয়ানমার এই অবস্থানে পৌঁছেছে। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা গেছে। ইউএনওডিসির প্রতিবেদন মতে, মিয়ানমারের আফিম চাষীরা এখন অন্য যেকোনো পণ্য চাষের তুলনায় গড়ে প্রায় ৭৫ শতাংশ বেশি উপার্জন করছেন। দেশটিতে এখন প্রতি কেজি আফিম ৩৫৫ ডলারে বিক্রি হচ্ছে ।
ছবি: picture-alliance/AP Photo
আফগানিস্তান
বিশ্বে সবচেয়ে বেশি আফিম চাষ হত আফগানিস্তানে৷ ২০২২ সালে তালেবান শাসক মাদকদ্রব্য ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর দেশটিতে আফিম চাষ ৯৫ শতাংশ কমে যায়।জাতিসংঘের হিসেবে, প্রতি বছর প্রায় পাঁচ থেকে ছয় হাজার টন কাঁচা আফিম উৎপাদন হত সেখানে৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
কলম্বিয়া
কোকেন উৎপাদনে বিশ্বে সেরা কলম্বিয়া৷ জাতিসংঘের হিসেবে কলম্বিয়ায় প্রতি বছর তিন থেকে চার’শ টন কোকেন উৎপাদিত হয়৷ এছাড়া পেরু ও বলিভিয়াতেও কোকেনের চাষ হয়৷ ল্যাটিন অ্যামেরিকা, উত্তর অ্যামেরিকা আর ইউরোপ কোকেনের সবচেয়ে বড় বাজার৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মরক্কো
উত্তর আফ্রিকার মরক্কোতে প্রতি বছর গড়ে প্রায় দেড় হাজার টন মারিজুয়ানা ও হাশিশ উৎপাদিত হয়৷ যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোতে সীমিত আকারে মারিজুয়ানা বা গাঁজার ব্যবহার বৈধ করায় এর চাষ আরও বেড়েছে৷
ছবি: Abdelhak Senna/AFP/Getty Images
গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল
মাদক উৎপাদনে এশিয়ার তিন দেশ মিয়ানমার, লাওস আর থাইল্যান্ড ‘গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল’ নামে পরিচিত৷ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই তিন দেশে প্রতিবছর গড়ে প্রায় এক হাজার টন আফিম উৎপাদিত হয়৷
ছবি: AP
যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকো
মেথাম্ফেটামিন বা ক্রিস্টাল মেথ হলো এক ধরণের মাদক, যেটা এক ধরণের সুখানুভূতি এনে দেয় বলে মনে করেন এর সেবনকারীরা৷ ইদানীং এই মাদক সেবনের হার বাড়ছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ৷ তবে কোন দেশে এটা সবচেয়ে বেশি তৈরি হয় তা জানা যায়নি৷ তবে ক্রিস্টাল মেথ ল্যাবেও তৈরি করা যায়৷ তাই সারা বিশ্বে পুলিশ এ ধরনের ল্যাবে অভিযান চালাচ্ছে৷ এ পর্যন্ত যত অভিযান হয়েছে, তার ৮০ ভাগই হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র আর মেক্সিকোর ল্যাবে৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot
6 ছবি1 | 6
আপনারা যাদের চিকিৎসা দেন বা যারা চিকিৎসা নিচ্ছেন, তাদের কতভাগ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন?
আমি একটা বাস্তব পরিসংখ্যান দিয়ে বলি৷ আমার অধিনে যে ক'জন রোগী ভর্তি আছে, সেই ২০ জনের মধ্যে ১৬ জনই ইয়াবায় আসক্ত৷ তারা ইয়াবা যখন নিতে থাকে, তখন তাদের ব্রেনের ভেতরেও পরিবর্তন হয়ে যায়৷ এটা ছেড়ে দেয়ার পর রোগীর অবসাদ থাকে, কাজ করার উদ্যোম থাকে না৷ অর্থাৎ ‘লেথার্জি' থাকে৷ তখন সে নিজেকে চাঙ্গা করার জন্য আবার পুরনো মাদকে ফিরে যায়৷ কোনো কোনো চিকিৎসায় ৬ মাস পরও তারা আবার মাদক নিয়ে ফেলে৷ আবার কোনো কোনো সেন্টারে থেকে তারা তিন মাস চিকিৎসা নিয়ে বের হওয়ার পরও আর ইয়াবা নেয় না৷ এ সময় আমরা বায়ো-সাইকোলোজিক্যাল মেথডে কিছু ওষুধও ব্যবহার করি৷ এক্ষেত্রে দেখা যায় ‘ফলোআপ' যদি ঠিকমতো থাকে, পারিবারিক ‘সাপোর্ট' যদি ঠিকমতো থাকে, তাহলে ‘রিকভারি রেট' খুব ভালো৷ এরপরেও অবশ্য অনেকে ‘ফেল' করে৷ এ অন্যতম কারণ হলো ‘ফ্রাস্টেশন' ও ‘স্টেস'৷
আপনাদের কাছে যেসব রোগী আসে, তাদের বয়স কত?
আমি এই মুহূর্তে একজন রোগী দেখছি, যার বয়স ৪৭ বছরের বেশি৷ তাঁর ডায়াবেটিস আছে৷ অথচ তিনি ইয়াবায় আসক্ত৷ তবে এ ধরনের ‘কেস' বেশি আসে না৷ তবে ১৫-১৬ বছর থেকে শুরু করে ৩২-৩৫ বছরের রোগীর সংখ্যাই বেশি৷ এমনকি কিশোর-কিশোরীরাও ইয়াবা খায়, কারণ স্কুল লেভেলেও এখন ইয়াবা ছড়িয়ে যাচ্ছে৷ এদের ‘মোটিভেট' করা হয় এই বলে যে, ইয়াবা খেলে স্লিম হবা, ভালো গান গাইতে পারবা৷ মাদক ব্যবসায়ীরা তাদের এভাবে ‘মোটিভেট' করে ইয়াবা ধরিয়ে দেয়৷ একটু আগেই একটি ‘কেস' দেখলাম৷ একজন রোগী, গলব্লাডারে ব্যাথা হওয়াই ডাক্তার ‘প্যাথডিন' দিয়েছিলেন৷ মুশকিল হলো, এরপর ব্যাথা হলে তিনি নিজেই প্যাথডিন নিতেন৷ তার মানে তিনি এটাতে নির্ভরশীল হয়ে যাচ্ছিলেন৷ এইভাবে আমাদের ছেলেরা নানা ছলে-বলে মাদকে আসক্ত হচ্ছে৷ বলা বাহুল্য, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে মাদকের প্রবণতাটা বেশি৷ আগে আমরা ভাবতাম এ সমস্যা ছেলেদের মধ্যে হয়৷ এখন কিন্তু অনেক মেয়েও আসছে৷
বিশ্বের অদ্ভুত সব মাদক নিরাময় কেন্দ্র
আমাদের দেশে মাদকাসক্তি এখন বড় ধরনের সমস্যা৷ তবে মাদকাসক্তদের জন্য এখন বেশ কিছু নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্র রয়েছে৷ কিন্তু সেগুলো এতটা অদ্ভুত হয়ত নয়৷ বিশ্বের অদ্ভুত কিছু মাদক নিরাময় কেন্দ্রের তথ্য থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/R.Gul
থাইল্যান্ডের পুনর্বাসন কেন্দ্র
থাইল্যান্ডে ফ্রা পুত্থাবাতের কাছে থামক্রাবক মঠ৷ এখানে মাদকাসক্তদের ভিন্ন উপায়ে চিকিৎসা করা হয়৷ আধ্যাত্মিক ও প্রাকৃতিক উপায়ে মাদকাসক্তদের মানসিক ও শারীরিক প্রশান্তি এনে দেয়ার চেষ্টা করেন মঠের সন্ন্যাসীরা৷
ছবি: N.Asfouri/AFP/Getty Images
বমনের মাধ্যমে শুদ্ধি
এখানে সাধারণত মাদকাসক্তদের ১০দিনের একটি কর্মসূচিতে রাখা হয়৷ তবে এর মধ্যে বহির্বিশ্বের সাথে মোকাবিলা করার ক্ষমতা গড়ে না উঠলে আরো দীর্ঘ সময় সেখানে থাকতে পারেন তারা৷ ভোর বেলা প্রত্যেককে একটি পানীয় খেতে বাধ্য করা হয়, যার ফলাফল বমি৷ মঠের সন্ন্যাসীদের মতে পানীয়টি খুবই বাজে, কিন্তু কার্যকর৷ এছাড়া মঠ ছাড়ার আগে প্রতিটি অংশগ্রহণকারীকে অঙ্গীকার করতে হয় যে, সে আর কখনো মাদক ছুঁয়ে দেখবে না৷
ছবি: Getty Images/Paula Bronstein
আধ্যাত্মিক চেতনা
পেরুর আয়াহুয়াস্কা নিরাময় কেন্দ্রে প্রতি বছর কয়েক হাজার মানুষ প্রাকৃতিক উপায়ে মাদকাসক্তি থেকে মুক্তির চিকিৎসা নিতে যান৷ সেখানকার আদিবাসীদের বিশ্বাস আয়াহুয়াস্কা প্রত্যেকের মধ্যে আধ্যাত্মিক চেতনার উন্মেষ ঘটিয়ে মানসিক ও শারীরিক প্রশান্তি এনে দেয়৷ তবে পশ্চিমা চিকিৎসকদের মতে এ ধরনের চিকিৎসার ফলে ভয়ের স্মৃতি, বমি, প্রচুর ঘাম এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে৷ তাই বিশ্বের অনেক দেশে এখন আয়াহুয়াস্কা নিষিদ্ধ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/V.Donev
ধর্মীয় পন্থা
ব্রাজিলের রিও ডি জানেরোর পুনর্বাসন কেন্দ্র এটি৷ এখানে আধ্যাত্মিক উপায়ে চিকিৎসা করা হয়৷ প্রতিদিন সকালে সব মাদকাসক্ত ব্যক্তি জড় হয়ে ঈশ্বরের বন্দনা করেন৷ প্রত্যেককেই একটি গির্জার পাশে থাকতে দেয়া হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP/ F.Dana
শিকল বেঁধে চিকিৎসা
এই ব্যাক্তির নাম আমানউল্লাহ, যাকে আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে জালালাবাদে একটি মাজারে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে৷ এখানে মাদকাসক্তদের চিকিৎসা করা হয়৷ শিকল দিয়ে ৪০ দিন বেঁধে রাখা হয় তাদের৷ খেতে দেয়া হয় একটু রুটি, অল্প পানি আর একটু মরিচের গুড়া৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/R.Gul
আধ্যাত্মিক সাহায্য
মীর আলী বাবা, যাঁর নামে এই মাজার৷ স্থানীয়দের বিশ্বাস, মাদকাসক্তদের এখানে এভাবে বেধে রাখার ফলে আলী বাবা তাদের এই আসক্তি থেকে বের হতে সাহায্য করেন৷ এই ধারণা কেবল আফগানিস্তানেই নয় বিশ্বের অনেক স্থানে রয়েছে৷ কিছু স্থানে মাদকাসক্তদের শাস্তি দেয়া হয়, এমনকি হত্যা করাও হয়৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/R.Gul
শ্রমিক শিবির
চীনে মাদকাসক্তদের পুনর্বাসন হয় জেলখানায়৷ কারাদণ্ড হওয়ার পর ঐ ব্যক্তিকে নিরাময় কেন্দ্রে পাঠানো হয়৷ কোকেইন, হেরোইন বা মারিজুয়ানা নিয়ে কেউ ধরা পড়লেও একই শাস্তি৷ তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর অভিযোগ, চীন মাদকাসক্তদের ক্লিনিকগুলোকে শ্রমিক ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহার করে৷ অর্থাৎ তাদের দিয়ে নানা কাজ করিয়ে নেয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Shenglian
মৃত্যু অভিজ্ঞতা
কিরঘিজস্তানে যে পুনর্বাসন পদ্ধতিটি ব্যবহার করা হয় তা ভয়াবহ৷ এটাকে বলা হয় ‘কোমা চিকিৎসা’৷ মাদকাসক্তদের একটি ইনজেকশন দেয়া হয় যার প্রভাবে তারা কয়েক ঘণ্টা কোমা’র মতো অবস্থায় থাকে৷ এরপর যখন তারা ঘুম থেকে জেগে ওঠে তখন পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যায় বলে বিশ্বাস সেখানকার মানুষের৷ বিশেষজ্ঞরা অবশ্য এর ব্যাপক সমালোচনা করেছেন৷
ছবি: picture alliance/Robert Harding World Imagery
বিলাসবহুল পন্থা
অনেক তারকারা মাদকাসক্তি থেকে মুক্তি পেতে বিলাসবহুল পথ বেছে নেন৷ সবচেয়ে বিখ্যাত পদ্ধতিটি হয় অ্যামেরিকার বেটি ফোর্ড ক্লিনিকে৷ এখানে বিখ্যাত সংগীত শিল্পী ও অভিনেতারা চিকিৎসা করান৷ এই ক্লিনিকে এমন কিছু সুযোগ সুবিধা থাকে যাতে আপনার মনে হবে আপনি একটি বিলাসবহুল হোটেলে আছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A.Rain
সবার চিকিৎসার সুযোগ নেই
বিশ্বের বেশিরভাগ মাদকাসক্তের চিকিৎসার সুবিধা নেই৷ যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জরিপ অনুযায়ী, সে দেশের মাত্র ১০.৪ শতাংশ মাদকাসক্ত ব্যক্তি চিকিৎসার সুবিধা পান৷ গরীব দেশগুলোতে এ অবস্থা আরো শোচনীয়৷
ছবি: picture alliance/JOKER
10 ছবি1 | 10
তরুণীদের মধ্যে মাদকাসক্তের হার কেমন?
এখন তরুণীদের মধ্যেও মাদকাসক্তের হার ব্যাপক৷ এখন আধুনিক যুগ৷ তাই তারা মোবাইল ফোনে, ইন্টারনেটে, ফেসবুকে যোগাযোগ করে৷ এভাবে সহজেই বন্ধু জোগাড় হয়ে যায়৷ আর বন্ধু যদি আসক্ত থাকে, তাহলে সে তার বান্ধবীকেও আসক্ত করে ফেলে৷ আমি কয়েকটি দম্পতিও পেয়েছি, যেখানে স্বামী ড্রাগ নেওয়ায় স্ত্রী বাধা দিলে স্বামী কৌশলে স্ত্রীকেও ইয়াবা ধরিয়ে দিয়েছে এবং দু'জনে মিলে নেয়া শুরু করেছে৷ পরবর্তীতে সন্তানরা তাদের নিয়ে এসেছে চিকিৎসা করাতে৷ এভাবে কিন্তু মেয়ে, মায়েরাও আসক্ত হয়ে যাচ্ছে৷ আমি মনে করি, আমাদের সমাজে ভোগবাদী অস্তিত্ব বেড়ে গেছে৷ এরা পর্ণসাইড দেখছে, আর নারী-পুরুষ একে-অপরকে ভোগের বস্তু মনে করছে৷ আজকাল তো শিশুকাল থেকেই এগুলো দেখার সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে৷ এতে করে পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধ, মমতা, ভালোবাসার জায়গাগুলো দুর্বল হয়ে যাচ্ছে৷ ফলে তারা নানা ধরনের অপকর্মেও জড়িয়ে যাচ্ছে৷
আপনারা যে মাদকাসক্ত রোগী দেখেন, তাদের অপরাধ প্রবণতা কেমন?
ধরুন একজন ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তার মেয়ে ড্রাগ নেয়৷ বাবা-মা যখন বিষয়টা জানল, তখন তাকে টাকা-পয়সা দেয়া বন্ধ করে দেয়া হলো৷ তখন সেই মেয়েটি ড্রাগের জন্য একজন রিক্সাওয়ালার সঙ্গে চলে গেল বস্তিতে৷ সেখানে তাকে ২-৪ জন ধর্ষণ করল৷ কিন্তু সেটা সে গায়েই মাখলো না৷ তার কাছে মাদক পাওয়াটাই বড়৷ ফলে সে যখন আসক্ত হয়ে যায়, তখন সে বুঝতে পারে না যে সে ‘ক্রাইম' করছে৷ তার বিবেকবোধ শূন্য হয়ে যায়, মায়া-মমতার জায়গা ধসে যায়৷ তাই তখন তাকে দিয়ে যে কোনো অপরাধ করানো যায়৷ এমনকি হঠাৎ ক্ষেপে গেলে সে কাউকে খুনও করে ফেলতে পারে৷ একজন ‘এক্সপার্ট' হিসেবে আমি দেখেছি আমাদের শহরাঞ্চলে, বিশেষ করে সিটি কর্পোরেশনে যে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনাগুলো ঘটছে, মেয়েরা যে কেসগুলো ‘ফাইল' করছে অধিকাংশই গৃহনির্যাতন এবং সেটা ড্রাগের কারণে৷ রাতে মদ খেয়ে বা ড্রাগ নিয়ে বউ পেটানো যেমন চলেছে, তেমনই স্ত্রীদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ায় ডিভোর্সের সংখ্যাও বেড়েছে৷ সুতারাং বেড়ে গেছে পারিবারিক বিশৃঙ্খলা, শুরু হয়েছে সামাজিক বিশৃঙ্খলা, অবনতি হয়েছে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির৷ এই যে এত ছিনতাই, ডাকাতি বেড়ে গেছে – আমার মনে হয়, আসলে এগুলো ড্রাগেরই একটা কুফল৷
ধূমপান ও মদ্যপানে এগিয়ে ইউরোপীয়রা
অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় ইউরোপীয়রা সবচেয়ে বেশি মদ্যপান ও ধূমপান করেন৷ সময়মতো সতর্ক না হলে ফলাফল ভয়ঙ্কর৷ তাই এ ব্যাপারে ইউরোপীয়দের সাবধান করে দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা৷
যা মোটেই সুখের নয়
ডাব্লিউএইচও-র লন্ডন প্রতিনিধি ক্লাউডিয়া স্টাইন বলেন ‘‘অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় ইউরোপীয়রা মদ্যপান ও ধূমপান বেশি করেন৷ তাছাড়াও অতিরিক্ত ওজনের কারণে হৃদরোগ, ক্যানসার ও অন্যান্য অসুখের ঝুঁকিও বেশি৷ এদিক দিয়ে আমরা বিশ্ব রেকর্ড করেছি, যা মোটেই সুখের নয়৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Fluger
বেশিরভাগ মানুষই মোটা
যে সময়ে অন্যান্য দেশে এসব সমস্যা কমিয়ে আনার চেষ্টা চলছে, তখন ইউরোপে তামাক, মদ অতিরিক্ত ওজনের সমস্যা বাড়ছে৷ ইউরোপের শতকরা ৬০ ভাগ মানুষই অতিরিক্ত মোটা৷ যদিও অ্যামেরিকাই অতিরিক্ত মোটা মানুষের দিক থেকে এক নম্বরে রয়েছে৷ তারপরেই ইউরোপের স্থান৷ ইউরোপের শতকরা ৩০ ভাগ মানুষ ধূমপান করেন৷ আর মদ্যপান করেন মাথাপিছু বছরে ১১ লিটার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Hesse
গড় আয়ু কমার আশঙ্কা
ইউরোপীয়রা যেভাবে মদ ও ধূমপান করেন, এভাবে চলতে থাকলে পরবর্তী প্রজন্মের ইউরোপীয়দের গড় আয়ু কমবে বলে আশঙ্কা রয়েছে৷ এই সমীক্ষাটি করা হয়েছে ইউরোপের ৩৯টি দেশের যাতে সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রও ছিলো৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ইতিবাচক দিক
আরেকটি সমীক্ষা করা হয় অ্যামেরিকাসহ মোট ৫৩টি দেশে – যার মধ্যে পুরো রাশিয়া এবং তুর্কমেনিস্তানও রয়েছে৷ তবে ইতিবাচক দিক হলো,২০০৫ সাল থেকে ২০১০ সালের মধ্যে মদ্যপানের মাত্রা শতকরা ১০ ভাগ কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে বিভিন্ন ক্যাম্পেনের মাধ্যমে৷
ছবি: Imago/teutopress
কম মদ্যপান মুসলিম দেশগুলোতে
সবচেয়ে বেশি অ্যালকোহল পান করা হয় বেলারুশ এবং লিথুয়েনিয়ায়৷ সমীক্ষায় জানা গেছে সবচেয়ে কম মদ্য পান করা হয়েছে তুরস্ক ও আজারবাইজানের মতো মুসলিম দেশগুলোতে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
5 ছবি1 | 5
তরুণ-তরুণী বা যাদের পরিবার এটা ‘সাফার' করছে, তাদের প্রতি আপনার পরামর্শ কী?
প্রত্যেকের নিজের সন্তানের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে৷ প্রতিটি পরিবারকে বলব, নিজ সন্তানের প্রতি নজর দিন, তাদের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলুন৷ চারপাশে যে নানা ধরনের ফাঁদ আছে সে ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে৷ আসল কথা হলো – ঘরে যদি শান্তির আবহাওয়া থাকে, তাহলে সেই ঘরে বাচ্চাদের ‘সেলফ কনফিডেন্স' এত ভালো থাকে যে তারা অশুভকে না বলতে পারে৷ আর যেসব পরিবারে অশান্তি থাকে, বাবা-মায়ের মধ্যে হানাহানি হয়, ডিভোর্স, বিবাদ ঘটে, সেখানকার বাচ্চারা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকে৷ ঐ বাচ্চাদের মানসিক দুর্বলতা থাকে৷ তারা সহজেই অশুভকাজে জড়িয়ে যায় এবং খারাপ কাজ জেনেও সেটাকে না বলতে পারে না৷