বিশ্বের অনেক শহরে সাধারণ হোটেলে সকালে ঘুম ভাঙলে বোঝার উপায় থাকে না, আসলে কোথায় রয়েছি৷ ভিয়েনা শহরে এক প্রকল্পের আওতায় পর্যটকরা প্রায় স্থানীয় মানুষের মতো শহরের অনবদ্য চরিত্র উপভোগের সুযোগ পাচ্ছেন৷
বিজ্ঞাপন
অতীতে তালার মিস্ত্রীর কারখানা ছিল৷ এখন সেটি হোটেলে পরিণত হয়েছে৷ অতিথি হিসেবে ডানিয়েল পোনক্রাৎস ও হেলগা রোশিক ‘ক্রেৎসেল' হোটেলের ঘরের পর্দা সরিয়ে ভিয়েনা শহরের একটি গলির দৃশ্য দেখতে পান৷ হাঙ্গেরির এই দুই পর্যটক আপাতত ‘ক্রেৎসেল’ হোটেলের বাসিন্দা৷
২০১২ সালে টেরেসিয়া কোলমায়ার এই প্রকল্প শুরু করেছিলেন৷ স্থপতি হিসেবে তিনি ২৬টি খালি দোকান হোটেলে রূপান্তরিত করেছিলেন৷ আগে যেখানে মুচি বা দরজির দোকান ছিল, এখন সেখানে রাত কাটানোর জায়গা তৈরি হয়েছে৷ টেরেসিয়া বলেন, ‘‘এর ফলে প্রত্যেক অতিথি শহরে নিজস্ব ঘর পাচ্ছেন, যেখানে তিনি স্বাচ্ছ্যন্দ বোধ করতে পারেন৷ বাইরে বের হলেই নিজস্ব অ্যাডভেঞ্চার শুরু হতে পারে৷ গতানুগতিক হোটেলের ভবনে যে অবকাঠামো দেখা যায়, আমরা সেগুলিকে একই স্তরে পাড়ার মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছি৷’’
নির্দিষ্ট অ্যাপের মাধ্যমে অতিথিরা এই প্রকল্পের আওতায় এমন ‘পাড়ার হোটেল’ খুঁজে পেতে পারেন৷ পাড়ার মধ্যে ‘গলটেক' ক্যাফেতে প্রাতরাশ সেরে নেওয়া যায়৷ হোটেলের লবিতে সুভিনিয়ারের দোকানের বদলে অতিথিরা পাড়ার মধ্যেই টুকিটাকি কেনাকাটা করে নিতে পারেন৷ যেমন এক ডিজাইনারের গয়নার দোকান৷ অথবা শহরের আকর্ষণীয় পদ চেখে দেখার জন্য রোব্যার্ট অপোচেনস্কির দোকানে ঢুঁ মারতে হবে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা সব সময়ে এখানেই আছি৷ অতিথিরা আসে-যায়৷ আরও খালি দোকানের বদলে এমন আদানপ্রদান অনেক ভালো৷’’
চাবি মেরামতির দোকানে হোটেল
04:08
টেরেসিয়া কোলমায়ার অবহেলিত জায়গায় আবার প্রাণ সঞ্চার করতে খুব ভালোবাসেন৷ হোটেলের রিসেপশনের বদলে নির্দিষ্ট কোড টিপে ঘরের দোরগড়ায় বাক্স খুলে চাবি নিতে হয়৷ টেরেসিয়া বলেন, ‘‘নতুন করে ঘর সাজানোর সময় আমরা প্রতিটি দোকানের নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য বজায় রাখি৷ যেমন দরজির দোকান৷ আমরা বড় আকারের এক ছবি তৈরি করিয়েছি৷ এই তরুণী সেই কাপড়ই পরে আছেন, যেটি ওয়ালপেপার হিসেবেও ব্যবহার করা হয়েছে৷ এভাবে অতিথিদের জানাতে চাই, আপনারা ভিয়েনায় এসেছেন, এক প্রাক্তন দোকানে রাত কাটাচ্ছেন, এটা কোনো গতানুগতিক হোটেলের ঘর নয়৷’’
অ্যাপের কল্যাণে পর্যটকরা পাড়া সম্পর্কে অনেক খবর পেয়ে যান৷ যেমন সাধারণ দেখতে এক প্রাচীরের পেছনেই ‘মটো' নামের ভিয়েনার বিখ্যাত এক রেস্তোরাঁ রয়েছে৷
সারাদিন অনেক অভিজ্ঞতার পর চাবি মেরামতির সাবেক দোকান আবার শোবার ঘর হয়ে উঠলো৷ ডানিয়েল বলেন, অনেকবার ভিয়েনা আসা এবং অনেক কিছু দেখা সত্ত্বেও এখানে একেবারে নতুন এক অভিজ্ঞতা হলো৷ তিনি ভিয়েনা সম্পর্কে একেবারে নতুন ধারণা পেলেন৷
দোকানের জানালায় ঘুমানোর অভিনব অভিজ্ঞতা এবং জানালার ওপারে ভিয়েনা শহরের অনবদ্য চরিত্র অনুভব করার সুযোগ দিচ্ছে এই প্রকল্প৷
গেয়ারহার্ড সনলাইটনার/এসবি
অস্ট্রিয়ার যা কিছু মুগ্ধ করে
ভিয়েনা, ওয়াইন এবং অসাধারণ সব দৃশ্য৷ একশ’ বছর আগে নিজেদের প্রজাতন্ত্র হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিল অস্ট্রিয়া৷ চলুন দেশটি সম্পর্কে আরো কিছু তথ্য জেনে নেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Ludwig
অসাধারণ প্রকৃতির দেশ অস্ট্রিয়া
বার্গেনল্যান্ড থেকে লেক কন্সটান্সের মধ্যকার দেশটির নয়টি রাজ্যে ৮ দশমিক আট মিলিয়ন মানুষের বসবাস৷ দেশটির অধিকাংশ অংশই আসলে পাহাড়ি অঞ্চল৷ ছবিটি অস্ট্রিয়ার পূর্বাঞ্চলের ফোরার্লব্যার্গ রাজ্য থেকে তোলা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Ludwig
রাজধানী ভিয়েনা
ভিয়েনায় শ্যোনবর্ন প্যালেসের মতো অস্ট্রিয়ান এম্পায়ারের আর কোনো বড় প্রতীক নেই৷ ১৯১৮ সাল অবধি এটা ছিল হাবর্সবর্গ শাসকদের গ্রীষ্মকালীন আবাস৷ পরবর্তীতে এটিকে বিশ্ব ঐতিহ্য ঘোষণা করে ইউনেস্কো৷ বর্তমানে বছরে প্রায় ৪০ লাখ পর্যটক এই স্থাপনাটি দেখতে আসেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/E. Wrba
ওয়াইনপ্রেমীরা গ্রীষ্মে যেখানে ছুটে যান
গ্রীষ্মে ভিয়েনার বাসিন্দারা শহরের বাইরে দেশটির সবুজ গ্রামাঞ্চলে ছুটে যান৷ লোয়ার অস্ট্রিয়ার ভাইনফিয়ার্টেল ওয়াইন উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত৷ অনেকেই এই অঞ্চলে যান সরাসরি ওয়াইন উৎপাদকদের কাছ থেকে ওয়াইন পানের আশায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Giovannini
‘লেক অব লাভ’
অস্ট্রিয়ার সবচেয়ে নিম্নাঞ্চল হচ্ছে বার্গেনল্যান্ড৷ সেখানে লেক নয়েসিডলের অবস্থান, যেখানে দুর্লভ সব পাখির দেখা মেলে৷ এলাকাটি বিশ্বের সবচেয়ে শান্ত ইলেক্ট্রো-পপ উৎসব ‘লেক অফ লাভ’- এর জন্যও বিখ্যাত৷ সেই উৎসবের সংগীত সবাই একত্রে শুনলেও কানে পৌঁছায় আলাদা আলাদা হেডফোনে৷ ফলে শান্ত না হয়ে উপায় কী বলুন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Haasmann
যেখানে সবাই শুধু ছবি তোলে
একসময় লবনের জন্য বিখ্যাত আপার অস্ট্রিয়ার হালস্টাট এখন অধিকাংশ সময় পর্যটকে পূর্ণ থাকে৷ বিশেষ করে চীনা নববিবাহিতরা কোনো এক বিশেষ কারণে এই এলাকা ভ্রমণ করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Siepmann
মোসার্ট আর সংগীতের শহর সালৎসবুর্গ
অস্ট্রিয়া ভ্রমণে গেলে সালৎসবুর্গকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার কোনো উপায় নেই৷ সালৎসবুর্গের বাৎসরিক উৎসবে অংশ নেন অনেকে৷ তবে কেউ যদি সেই উৎসবে অংশ নেয়ার সুযোগ না পান, তবুও সালৎসবুর্গ ভ্রমণ মন্দ হবার কারণ নেই৷ এই শহরেই জন্মেছেন প্রখ্যাত সংগীত স্রষ্টা ভল্ফগাং আমাডেয়ুস মোৎসার্ট৷
ছবি: Tourismus Salzburg/G.Breitegger
আর হ্যাঁ, হাইকিংয়ের স্বর্গ
হাইকিংয় প্রেমীদের জন্য এক আদর্শ গন্তব্য অস্ট্রিয়া৷ দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে গ্রীষ্মে হাইকিংয়ের সময় স্থানীয় খাবারের স্বাদ নেয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ঐতিহ্যগত বিষয়াদি জানার বিষয় আছে৷ তবে ছবি তুলতে ভালোবাসেন যারা, তারা দয়া করে ক্যামেরার জন্য বাড়তি ব্যাটারি নিতে ভুলবেন না৷ সেখানকার ল্যান্ডস্কেপ এত সুন্দর যে ছবি তুলে শেষ করা দায়৷