বড় শহরের ঘিঞ্জি পরিবেশে বাগানের সাধ পূরণ করা কঠিন৷ বার্লিনসহ জার্মানির বেশ কিছু শহর অবশ্য আর্বান গার্ডেনিং-এর অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত তুলে ধরছে৷
বিজ্ঞাপন
তাজা পুদিনা পাতা, খাদ্য হিসেবে ফুলের পাপড়ি, ভিজান বা খাঁটি নিরামিষ কেক৷ বার্লিনে হিমেলবেট প্রকল্পের ক্যাফের প্রায় সব উপকরণই নিজস্ব বাগান থেকে আসে৷ জার্মানিতে অসংখ্য শহুরে বাগান প্রকল্পের মধ্যে একটিতে এসব পাওয়া যায়৷ বার্লিনের মতো শহরের মাঝে পরিত্যক্ত জমিতে এমন বাগান ফুলেফেঁপে উঠছে৷ হিমেলবেট প্রকল্পের মাইকে স্টার্ক বলেন, ‘‘এমন পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে শহরে পরিত্যক্ত জমির সদ্ব্যবহারের কাজে আমি অত্যন্ত আগ্রহী৷ আমাদের খাদ্য আসলে কোথা থেকে আসে, আমি তা দেখাতে চাই৷ কী করা সম্ভব, কীভাবে সম্ভব, মানুষকে সেই শিক্ষাও দিতে চাই৷’’
জার্মানদের ছোট্ট বাগান বাড়ি
বিদেশিরা ভেবে হয়তো অবাক হন, জার্মানরা কেন বাগানের জন্য প্রচুর জায়গা রেখে ছোট ছোট বাড়ি তৈরি করেন৷ ‘শ্রেবারগার্টেন’ নামে পরিচিত এই ঐতিহ্যের পেছনের কাহিনি রয়েছে আজকের ছবিঘরে...
ছবি: picture-alliance/dpa
বাগান
জার্মানিতে ভ্রমণের সময় অনেক পর্যটকই বিস্মিত হন জায়গায় জায়গায় কুটিরঘর আর ফাঁকা জায়গা দেখে৷ এটি আসলে বাগানের জন্য বরাদ্দ জায়গা৷ তিন নামে জার্মানদের মধ্যে এটি পরিচিত– শ্রেবারগার্টেন, ক্লাইনগার্টেনআনলাগে বা গার্টেনকলোনি৷ প্রত্যেক ছোট প্লটে একটি কুঁড়েঘর থাকবেই৷ আর মানুষ এসব জায়গা বাগান করতে ভাড়া নেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Schmidt
প্রবক্তা ডক্টর শ্রেবার
ঊনবিংশ শতাব্দীতে ব্যাপক নগরায়নের প্রেক্ষিতে জার্মানির লাইপজিশ শহরের চিকিৎসক ডানিয়েল গটলব মরিৎস শ্রেবার শহুরে যুবাদের মধ্যে বাইরে খেলাধূলা ও অন্যান্য সমাজকর্মের প্রসারে কাজ শুরু করেন৷ তাঁর মৃত্যুর পরে ১৮৬৪ সালে ‘শ্রেবারফেরাইন’ সংস্থাটি তাঁর স্মৃতিতে গড়ে ওঠে৷ তারা বিভিন্ন পরিবারের জন্য মাঠ খুঁজে দিতো যাতে খেলাধূলা ও বিনোদনের ব্যবস্থা হয়৷ পরে বাগান তৈরির ব্যাপারটি যুক্ত হয়৷
ছবি: picture-alliance/akg-images
গরীবের বাগান
তবে এর আগেও ভূমির মালিক, শিল্প কারখানা মালিক, নগর ব্যবস্থাপনা এবং সেবা সংস্থাগুলো অপেক্ষাকৃত গরীব পরিবারগুলোকে খোলা জায়গায় বাগান করার ব্যবস্থা করে দিতো৷ ‘আমেনগার্টেন’ বা গরীবের বাগান নামে পরিচিত ছিল এটি৷ ১৮২৬ সালে ১৯টি শহরে এই ধরনের বাগান করার তথ্য পাওয়া যায়৷
ছবি: picture-alliance/akg-images
মানসিক প্রশান্তির জায়গা
তাজা খাবার জোগান দেওয়া ছাড়াও এসব বাগান হয়ে ওঠে মানসিক প্রশান্তি ও বিশ্রামের জায়গা৷ ছবিটি ১৯০৬ সালে আঁকা৷ সেখানে দেখা যাচ্ছে, একজন জার্মান ‘স্কাট’ নামের একটি কার্ড গেম খেলছেন৷
ছবি: picture-alliance/akg-images
যুদ্ধ ও বাগান
দুই দফা বিশ্বযুদ্ধে জড়ানো জার্মানির মানুষের খাদ্যাভাব পুরণ করতে এই বাগানগুলোর বিশেষ ভূমিকা ছিল৷ কারণ, যুদ্ধ চলাকালীন খাবার সবসময় বাজারে পৌঁছাতো না৷ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর বাগানের ইজারা নেওয়ার খরচও এ কারণে কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল৷ ছবিটি অবশ্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বার্লিন থেকে তোলা৷
ছবি: picture-alliance/akg-images
বাগানের আইন
জার্মানিতে এই বাগান নিয়ে রীতিমতো আইন রয়েছে৷ সেখানে স্পষ্ট বলা রয়েছে, বাগানের কুঁড়েঘরটি থাকার জন্য ব্যবহার করা যাবে না এবং এটি একটি নির্ধারণ করে দেওয়া আকারের চেয়ে বড় হতে পারবে না৷ বাগানের তিন ভাগের এক ভাগে অন্তত সবজি বা ফল চাষ করতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Simaitis
সবুজ রাখা
ইজারা নেওয়া বাগানের মালিকেরা নিজের বাগানকে সবসময় সবুজ রাখার চেষ্টা করেন৷ সাধারণত এ ধরনের বাগানের জন্য এমন জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হয় যেখানে কেউ সচরাচর থাকতে চান না৷ যেমন– রেলপথের পাশে৷ বার্লিনের দেওয়ালের দুইপাশেও প্রচুর বাগান ছিল৷ ছবিতে ১৯৮২ সালে পশ্চিম বার্লিনের এমন বাগান দেখা যাচ্ছে৷ পূর্ব জার্মানির সরকার ১৯৫০ সালে এ ধরনের বাগানগুলোকে যৌথ বাগানে রূপান্তরের চেষ্টা করলেও পরে সেই উদ্যোগ থেকে সরে আসে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
7 ছবি1 | 7
দলবদ্ধভাবে সেই কাজ করতে চান তিনি৷ হিমেলবেটের মতো প্রকল্প মানুষকে পরস্পরের কাছে নিয়ে আসে৷ এটি বার্লিন শহরে সাম্প্রতিকতম আর্বান গার্ডেনগুলির অন্যতম৷
এর মধ্যে ‘প্রিন্সেস গার্ডেন’ গোটা বিশ্বে খ্যাতি অর্জন করেছে৷ কয়েকশ' স্বেচ্ছাসেবী ২০০৯ সালে বার্লিনের ক্রয়েৎসব্যার্গ পাড়ায় এক পরিত্যক্ত জমিতে গাছের চারার বাক্স বসিয়েছিলেন৷ আজ এই প্রকল্পকে গোটা বিশ্বে আদর্শ বাগান হিসেবে গণ্য করা হয়৷ পর্যটকদের ভিড় লেগেই রয়েছে৷ গাইড তাঁদের ঘুরিয়ে দেখান৷ সেখানে প্রায় ৫০০ ধরনের শাক-সবজি ও জড়িবুটি পাওয়া যায়৷ তবে বিষয়টি শুধু বাগান পরিচর্যার মধ্যে সীমিত নয়৷ প্রিন্সেস গার্ডেনের রবার্ট শ বলেন, ‘‘এমন এক জায়গায় শহরের মানুষ তাঁদের আইডিয়া পরীক্ষা করার সুযোগ পান৷ সেই জায়গায় শহরের প্রচলিত নিয়ম খাটে না৷ শহর মানেই তো নিয়মের বেড়াজাল৷ অর্থাৎ এখানে মানুষ বিনা সঙ্কোচে অংশ নিতে পারেন, কিছু করে দেখাতে পারেন৷ জমি বিক্রি করে সেই মূল্য পাওয়া যায় না৷ আর্বান গার্ডেনিং যে কোনো শহরের অংশ হওয়া উচিত বলে আমি বিশ্বাস করি৷’’
গার্ডেন ক্যাফেতে প্রতিদিন এই বাগান ও গোটা অঞ্চলে পরিবেশবান্ধব প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত শাক-সবজি ও অন্যান্য উপকরণ দিয়ে তৈরি নিরামিষ খাবার পাওয়া যায়৷
ক্রিস্টিনা ডাইকে/এসবি
আর্বান ফার্মিং: শহরে চাষ
বাড়ির বাগানে মুরগি পোষা, কিংবা ছাদ কি বারান্দার টবে সবজি ফলানো, এ ধরণের শহুরে চাষ চলে আসছে বহুকাল ধরে৷ কিন্তু ‘আর্বান ফার্মিং’ আজ একটি বিশ্বব্যাপী প্রবণতা – হয়তো একটি বিশ্বব্যাপীসমাধান৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Lopez
আর্বান ফার্মিং কেন?
২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ১,০০০ কোটি কিংবা তারও বেশি৷ এর দুই-তৃতীয়াংশ বাস করবে শহরে৷ জলবায়ু পরিবর্তনের যুগে এই পরিমাণ মানুষের খাদ্য জোগাড় করা সহজ কথা নয়৷ সেক্ষেত্রে শহরের মধ্যে চাষবাস সাহায্য করতে পারে৷
ছবি: Imago/UIG
শহুরে চাষি
শহরে যাদের বাস, তাদের প্রকৃতির প্রতি টান কোনো অংশে কম নয়৷ তার খানিকটা মেটে বাগান করতে পেরে৷ কিন্তু আর্বান ফার্মিং মানুষ আর মানুষের মধ্যে হৃদ্যতা আনে, নতুন চাকরি সৃষ্টি করে, বাড়ায় নগরবাসীদের খাদ্য নিরাপত্তা৷
ছবি: Imago/AFLO/Yoshio Tsunoda
সবুজের স্নিগ্ধ প্রলেপ
ঊষ্ণায়নের ফলে যখন বিশ্বের তাপমাত্রা বাড়ছে, তখন গাছপালা শহরের তাপমাত্রা কমায়৷ হংকংয়ের ইয়াউ মা তেই একটি প্রাচীন এলাকা৷ ২০১২ সালের মার্চ মাসে সেখানকার নানা ছাদের বাগান মিলিয়ে ‘এইচকে ফার্ম’ সৃষ্টি করা হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Lopez
ছাদে চাষ
নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিন গ্রেঞ্জ হল বিশ্বের বৃহত্তম ছাদের খামার৷ দু’টি ছাদ মিলিয়ে তৈরি এই খামারে বছরে ২২,০০০ কিলোগ্রাম অরগ্যানিক খাদ্য উৎপাদন করা হয়৷ এছাড়া খামারটি শহর জুড়ে বাড়ির ছাদে ৩০টি মৌমাছির দল ও মৌচাক পোষে৷ আর্বান ফার্মিংয়ের টেকসই মডেল হিসেবে ব্রুকলিন গ্রেঞ্জ গড়ে ওঠে ২০১০ সালে৷
ছবি: Imago/UIG
ময়লা ফেলার জায়গায় চাষ
নাম হলো ‘প্রিন্ৎসেসিনেনগ্যার্টেন’ বা রাজকুমারীর বাগান৷ বার্লিনের ক্রয়েৎসব্যার্গ এলাকার এই অংশটি অর্ধশতাব্দী ধরে ময়লা ফেলার জায়গা ছিল৷ পরে সেখান থেকে আবর্জনা সরিয়ে অরগ্যানিক সবজি চাষের পোর্টেবল, অর্থাৎ অন্য জায়গায় সরিয়ে নেয়া যায় এমন প্লট তৈরি করা হয়৷ সংগঠনটি আজ শহরের ভিতরে অনেক পোড়োজমি বা কনস্ট্রাকশন সাইটেও আর্বান ফার্মিং করে থাকে৷
ছবি: Prinzessinnengärten/Marco Clausen
ছাদে ধান রোয়া
টোকিও-র রোপোঙ্গি হিলস আসলে একটি বিজনেস ও শপিং কমপ্লেক্স৷ তার ছাদে মাটি ফেলে ধানের ক্ষেত করা হয়েছে৷ শহরের অন্যত্র ‘সিটি ফার্ম’ নামের একটি সংগঠন তরমুজ, টমেটো, সয়াবিন ফলায়৷ এছাড়া ধানচাষও করে থাকে৷ সংগঠনের সদস্যরা ধান ঝাড়ার কাজে সাহায্য করতে পারেন, কিংবা জাপানের ‘সাকে’ সুরা বানানোর পদ্ধতি শিখতে পারেন৷
ছবি: Imago/AFLO/Yoshio Tsunoda
বিপদের সময়
গ্রিসের রাজধানী এথেন্সের উপকণ্ঠে এলিনিকো কমিউনিটি গার্ডেন আসলে একটি ‘গেরিলা গার্ডেন’৷ গেরিলা যুদ্ধের মতোই অভাব-অনটনের দিনে গ্রিসের সর্বত্র এ ধরণের বাগান বা খেতখামার গজিয়ে উঠেছে, কেননা মানুষের খাদ্য চাই৷ এলিনিকো বাগানটি যেখানে, ২০০১ সাল পর্যন্ত সেটা ছিল একটা বিমানবন্দর৷ পরে জমি পরিষ্কার করে স্বেচ্ছাসেবীরা এখানে সবজি ও ফলমূল ফলাতে শুরু করেন দুঃস্থ এথেন্সবাসীদের সাহায্য করার উদ্দেশ্যে৷