1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শহরের মধ্যেই অভিযানের রোমাঞ্চ

নিকোলাস পটার/এসি১১ সেপ্টেম্বর ২০১৫

‘আর্বান এক্সপ্লোরেশন'-এর অর্থ নগর অভিযান, কিন্তু অভিযাত্রীরা ক্যামেরা হাতে নব্য রোম্যান্টিক, যাঁরা খুঁজছেন অবক্ষয়ের নান্দনিক সৌন্দর্য৷ সঙ্গে থাকছে ইতিহাসকে জানা ও চেনার আনন্দ আর খানিকটা বর্তমান-বিমুখিতা৷

Bildergalerie Lost Places
ছবি: Lars Wendt

বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানা; ভেঙে পড়া কংক্রিটের শেল্টার; ফেলে যাওয়া গ্রাম-গঞ্জ: কিছু মানুষের কাছে ফটো তোলার আদর্শ স্থান৷ এঁরা নিজেদের বলেন ‘আর্বান এক্সপ্লোরার' বা নগর অভিযাত্রী৷

জার্মান আলোকচিত্রশিল্পী ও সাংবাদিক আর্নো স্পেশ্ট বহু বছর ধরে এই সব পরিত্যক্ত জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন৷ সঙ্গে থাকে তাঁর ক্যামেরা৷ আর্নো বলেন, ‘‘বিষাদ, বিষণ্ণতা, মরণবিলাস কিংবা সেই ধরনের টান আমার চিরকালই ছিল৷ বছর খানেক আগে আমার ছেলে যখন ইন্টারনেটে বেলিৎস-এর স্যানাটোরিয়ামের ছবিগুলো খুঁজে পায়, তখন তা দেখে আমি মুগ্ধ হই৷ হঠাৎ দেখি এমন সব জায়গা, বেশ বড় বড় জায়গা, যেগুলো ঠিক আগে যেরকম ছিল, সেভাবে ফেলে রাখা হয়েছে৷ আর সে রকম পরিত্যক্ত অবস্থায় তাদের নিজস্ব সৌন্দর্য সৃষ্টি করেছে৷''

আর্বান এক্সপ্লোরেশন

২০০৭ সাল থেকে আর্নো স্পেশ্ট প্রধানত জার্মানির পূর্বাঞ্চলে ঘুরে বেড়িয়ে ফেলে-আসা বাড়িঘর, কলকারখানা ও তাদের ইতিহাস নিয়ে চর্চা করছেন৷ অবক্ষয়ের নান্দনিক স্পর্শ তাঁকে অভিভূত করেছে৷ ইতিমধ্যে তিনি বার্লিন, লাইপসিশ ও ড্রেসডেন সম্পর্কে তিনটি ছবির বই প্রকাশ করেছেন৷ আর্নো-র বক্তব্য, ‘‘আর্বান এক্সপ্লোরেশন বা নগর অভিযান আমাদের আধুনিক জীবনযাত্রার ঠিক উলটো৷ আমাদের জীবন আজ ক্রমেই আরো বেশি পরিকল্পিত, সংগঠিত, শৈলী সম্বলিত৷ আমি যখন এখানে কোনো জায়গায় ঢুকি, তখন তার কিছুই আগে থেকে সাজানো থাকে না৷ এখানে যেন সব কিছু কাকতালীয়৷ গাছগুলোকে দেখলে মনে হবে, এরা কে জানে কী ভাবে গজিয়েছে, বড় হয়েছে৷ অথবা দেয়াল থেকে পলস্তারা যেভাবে নিজেই খসে খসে পড়ছে, কোথাও ফেঁপে-ফুলে উঠছে, কোথাও খসে পড়ছে৷ এ যেন এক শিল্পকলা, এক নিজস্ব নন্দনতত্ত্ব, যার পিছনে কোনো মানুষ নেই, একটা বাড়িকে বিশ-ত্রিশ বছর ফেলে রাখলে যা জন্ম নেয়৷''

আর্বান এক্সপ্লোরেশন একটি বিশ্বব্যাপী আন্দোলনে পরিণত হয়েছেছবি: Lars Wendt

বিগত কয়েক বছরে এ ধরনের অনেক ছবির বই বেরিয়েছে৷ ইন্টারনেটেও ব্যাপারটা ছড়িয়েছে: আর্বান এক্সপ্লোরেশন নিয়ে ব্লগ-এর অভাব নেই৷ ইনস্টাগ্রাম বা ফেসবুকেও ‘নগর অভিযাত্রীদের' কমিউনিটি ক্রমে বেড়েই চলেছে৷

হিড়িকটা নতুন হলেও, হুজুগটা নয়৷ পঁচিশ বছর আগে বার্লিন প্রাচীরের পতনের পর থেকেই নগর অভিযাত্রীদের জন্য ‘পুবের দুয়ার' খুলে যায়৷ সাবেক পূর্ব জার্মানিতে অবক্ষয়ের নান্দনিক সৌন্দর্য উপভোগ করার সুযোগও ছিল অসংখ্য৷ আর্নো জানালেন, ‘‘একটি রাজনৈতিক শাসনব্যবস্থা দূর হবার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের কর্মপদ্ধতি ও কর্মপ্রক্রিয়া, বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থান, শিল্পবাণিজ্যের পূর্ণাঙ্গ শাখা লোপ পায়৷ আকস্মিক উত্তরণের ফলে যেন এক শূন্যতার সৃষ্টি হয়৷''

আর্বান এক্সপ্লোরেশনের সূচনা মার্কিন মুলুকে৷ পঞ্চাশের দশকে ডেট্রয়েটের মতো শহরগুলির যে দুর্দশা হয়, তার ফলে একেকটি এলাকা অবক্ষয়ের সম্মুখীন হয় – অপরদিকে শিল্পী-লেখকরা তাঁদের সৃজনশীলতা ব্যক্ত করার একটি নতুন ক্ষেত্র খুঁজে পান৷ অন্যান্য দেশেও একই প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়৷

আশির দশকে জাপানের পূর্তশিল্পে সংকটের ফলে সে দেশে আর্বান এক্সপ্লোরেশন শুরু হয়৷ অবশ্য জাপানে এই আন্দোলনের নাম ‘হাইকিও'৷

বিস্মৃত এমন সব স্থান, যেখানে মূক অতীত আবার মুখর হয়ে ওঠেছবি: Lars Wendt

স্পেশাল টুর

‘নগর অভিযানে' মানুষজনের আগ্রহ এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, ‘গো-টু-নো' নামধারী একটি কোম্পানি বার্লিনে স্পেশাল টুরের ব্যবস্থা করেছে৷ টুরিস্টরা গাইডের সঙ্গে গিয়ে বিভিন্ন ফাঁকা ও পোড়ো বাড়ির ছবি তুলতে পারেন৷ অর্থাৎ বিনা ঝুঁকিতে আর্বান এক্সপ্লোরেশন৷ যেমন ভ্যুন্শডর্ফের সেনা-ছাউনিটি বার্লিন থেকে গাড়িতে প্রায় দেড় ঘণ্টা দূরে৷ ঠান্ডা লড়াই-এর আমলে এখানে প্রায় ৬০ হাজার সোভিয়েত সৈন্যের বাস ছিল৷ ১৯৯৪ সালে তারা বিদায় হয়৷ তখন থেকে জায়গাটা ফাঁকা পড়ে রয়েছে৷

আর্নাস ডিমান গত পাঁচ বছর ধরে গো-টু-নো কোম্পানির টুর গাইড৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কাছে যত লোক খোঁজখবর করেন, সে তুলনায় আমরা যথেষ্ট টুরের ব্যবস্থা করতে পারি না৷ খুব বেশি মানুষকে এ ধরনের জায়গায় নিয়ে যাওয়া যায় না, তাহলে সেগুলির ক্ষতি হবে৷ কাজেই আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে জায়গাগুলোতে যাই৷ অন্যভাবে বলতে গেলে: আমরা যদি প্রতিবার পাঁচ'শ লোক সঙ্গে নিয়ে দু'টো টুর দিই, তাহলে জায়গাটার বারোটা বেজে যাবে, সেখানে আর কোনো টুর দেওয়া যাবে না৷ সেই কারণে আমরা ছোট ছোট গ্রুপ নিয়ে অনেক বেশি টুর দেওয়ার চেষ্টা করি৷''

আর্বান এক্সপ্লোরেশন একটি বিশ্বব্যাপী আন্দোলনে পরিণত হয়েছে৷ এই আন্দোলন যে আরো বেশ কিছুদিন ধরে চলবে, তাও নিশ্চিত করে বলা যায়৷ বিস্মৃত এমন সব স্থান, যেখানে মূক অতীত আবার মুখর হয়ে ওঠে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ