শহরের মাঝখানে সবজির বাগান, তাও আবার বার্লিনের মতো মহানগরীতে? আঠেরোশো বর্গমিটার এলাকার গ্রিনহাউসে৷ মাছের চৌবাচ্চার জল থেকেই সবজি ক্ষেতে সেচ দেওয়া হচ্ছে৷ একেই বলে ‘আর্বান ফার্মিং'!
বিজ্ঞাপন
গরম প্রায় তিরিশ ডিগ্রি ! বার্লিনের ঠিক মাঝখানে এই গ্রিনহাউস৷ শশা আর লেটুস পাতার মতো সবজি চাষ হচ্ছে রাজধানীর বাসিন্দাদের জন্য৷ কোম্পানিটির দুই প্রতিষ্ঠাতার কারোরই চাষবাস জানা ছিল না৷ তাঁরা হলেন বিজনেসম্যান৷ তাঁদের আইডিয়া হল, যেখানে গজাচ্ছে, সেখানেই শাকসবজি বিক্রি করা৷
ইসিএফ ফার্মসিস্টেমস-এর সিইও নিকোলাস লেশকে বললেন: ‘‘উৎপাদনের ক্ষেত্র শহরের মাঝখানে হলে খদ্দেরদের জন্য সরাসরি উৎপাদন করা চলে৷ দূরে মাল বয়ে নিয়ে যাওয়া, হিমায়নের ব্যবস্থা করার ঝামেলা নেই৷ এককথায় সাশ্রয়ী উৎপাদন৷''
কাছের কোনো এক রেস্তোরাঁ থেকে শেফ কুক এসেছেন বাজার করতে৷ শেফ কুক-এর আজ দরকার বিশেষ করে টাটকা হার্বস, মানে তৃণগুল্ম৷ সেইসঙ্গে স্বভাবতই শশা৷ তবে খরচ পোষাতে গেলে শহরের মাঝখানে সবজির বাগান খুব ছোট হলে চলবে না৷ গ্রিনহাউসটির আয়তন আঠেরো'শো বর্গমিটার৷ তা থেকে উৎপন্ন হয় বছরে ৩৫ টন সবজি৷ এ বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে এখানে মাছও কিনতে পাওয়া যাবে৷ পার্চ মাছগুলো আপাতত গ্রিনহাউসের পিছনে রাখা চৌবাচ্চায় বড় হচ্ছে৷ নিকোলাস লেশকে বছরে ৪০,০০০ মাছ বিক্রি করতে চান৷ মাছের চৌবাচ্চার জল দিয়ে আবার সবজিক্ষেতে সেচ দেওয়া হবে৷ নিকোলাস লেশকে বললেন: ‘‘মাছেদের বর্জ্য একটি অরগ্যানিক ফিল্টার দিয়ে নাইট্রেটে পরিণত করা হচ্ছে৷ নাইট্রেট হল গাছের সার৷ মাছের চৌবাচ্চার নাইট্রেট যুক্ত পানি গ্রিনহাউসগুলোতে নিয়ে গিয়ে সেখানকার গাছগুলোতে সেচ দেওয়া হয়৷ অর্থাৎ মাছেদের বর্জ্য পানি গিয়ে গাছেদের সেচের পানি হচ্ছে৷ এর মজা হল, আমরা গাছগুলোর জন্য অরগ্যানিক সার তৈরি করছি৷''
হাইটেক কৃষি
ফল্কমার কয়টার-এর মতে ‘আর্বান ফার্মিং' বা শহরে চাষবাস ছাড়া ভবিষ্যতে কিছুই চলবে না৷ ফল্কমার ওবারহাউজেন-এর ফ্রাউনহোফার ইনস্টিটিউটের গবেষক৷ এলইডি আলো সূর্যালোকের বিকল্প হতে পারে – অথচ সাধারণ বাতির চেয়ে অনেক কম কারেন্ট খায়৷ নানা ধরনের রং ও ওয়েভলেন্থ-এর আলোয় বিভিন্ন ধরনের তৃণগুল্ম গজাতে থাকে৷ শহরে সবজির চাষ ব্যবসায়িক দিক থেকেও সফল হবে বলে কয়টার-এর ধারণা৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কিংবা এশিয়ায় মানুষজন এ ব্যাপারে অনেক বেশি এগিয়ে৷ ফ্রাউনহোফার গবেষণা প্রতিষ্ঠান একটি জাপানি কোম্পানির জার্মান শাখার জন্য এই এলইডি আলোক প্রণালীটি তৈরি করছে৷ ফ্রাউনহোফার সেন্টার-এর অধ্যক্ষ ফল্কমার কয়টার জানালেন: ‘‘এই সিস্টেমগুলো শুধু স্টার্ট-আপ কিংবা গার্ডেনিং সংস্থাগুলির তরফ থেকেই ডেভেলপ করা হয় নয় – জার্মানি অথবা ইউরোপে যে পরিস্থিতি, তাতে বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোও এ কাজে নেমেছে৷ তোশিবা কিংবা প্যানাসোনিক-এর মতো কোম্পানিগুলি এলইডি বাতি তৈরি করে থাকে৷ তাদের ঐ প্রযুক্তি আছে এবং তারা সেটা ব্যবহার করতে জানে৷''
জার্মানির এক নন্দনকানন
মধ্য জার্মানির ডেসাও-ভ্যোরলিৎস গার্ডেন রিয়েলম ব্রিটিশদের বাগানের মতো৷ অষ্টাদশ শতকে এক যুবরাজ এটি নির্মাণ করেন৷ ইউরোপের অন্যতম বড় ইংলিশ পার্কগুলোর মধ্যে এটি একটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
যুবরাজ এবং তাঁর বাগান
মধ্য জার্মানির ‘ডেসাও-ভ্যোরলিৎস গার্ডেন রিয়েলম’ বাগানটি ১৪২ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে৷ আনহাল্ট-ডেসাও এর যুবরাজ লেওপোল্ড ফ্রানৎস এটি নির্মাণ করেন৷ সপ্তদশ শতকের শেষের দিকে শুরু হওয়া বাগানটির নির্মাণকাজ শেষ হতে সময় লাগে ৪০ বছর৷
ছবি: picture-alliance/dpa
স্বাধীনতার আস্বাদ
ইউরোপে শিক্ষা সফরের সময় এই বাগানটি গড়ে তোলার কথা ভেবেছিলেন যুবরাজ৷ বিভিন্ন স্থান থেকে এই ভাবনাগুলো জড়ো করেছিলেন তিনি৷ তবে তাঁর ভাবনার স্বতন্ত্র প্রতিফলন ঘটে বাগান নির্মাণে৷ বাগানটিতে কোনো বেড়া নেই৷ অর্থাৎ যুবরাজ বোঝাতে চেয়েছেন প্রত্যেকের জন্য এটা মুক্ত৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নদীর ধারে
এলবে নদীর তীরে গড়ে উঠেছে এই নন্দনকানন৷ এ কারণে প্রতি বছর লাখো পর্যটক আসেন পার্কটি দেখতে৷
ছবি: KsDW Bildarchiv/Heinz Fräßdorf
দার্শনিক দিক
ফরাসি দর্শনের ছাপ আপনি দেখতে পাবেন এই পার্কে গিয়ে৷ পার্কের বৈশিষ্ট্য দেখেই বোঝা যায় যুবরাজ ফরাসি দর্শনের প্রতি অনুরাগী ছিলেন৷ পার্কে একদিকে আছে একটি গির্জা অন্যদিকে আছে ইহুদি উপাসনালয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ওয়াটার ওয়ান্ডারল্যান্ড
যুবরাজ ফ্রানৎস এলবে নদীর ধার ঘেষে এমনভাবে পার্কটি নির্মাণ করেছেন যে পার্কের সৌন্দর্য্য এতে আরো বেড়েছে৷ সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য তিনি এতে কিছু ঝর্ণা, লেক তৈরি করেছেন৷ পুরো পার্কটি ঘুরে দেখতে তাই আপনি একটি গন্ডোলায় উঠে ঘুরতে পারেন৷ এতে সময় লাগবে ৪৫ মিনিট৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ব্রিজের ভিন্নতা
পুরো পার্ক জুড়ে রয়েছে ১৯টি সেতু বা ব্রিজ৷ ঝর্ণার ধার ঘেঁষে ঐ ব্রিজগুলো তৈরি করা হয়েছে৷ কিন্তু প্রতিটি সেতুই স্বতন্ত্র, অর্থাৎ বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে ভিন্ন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
গার্ডেনের প্রধান আকর্ষণ
পার্কের প্রথম ভবন এটি৷ নাম -ভ্যোরলিৎস প্যালেস৷ ১৭৭৩ সালে এর নির্মাণকাজ শেষ হয়৷ এ ভবনের নকশা করেছিলেন প্রিন্সের বন্ধু স্থপতি ফ্রিডরিশ ভিলহেল্ম ফন এর্ডমানসডোর্ফ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
লুইসে নামের দুই স্ত্রী
এই গ্যোথিক বাড়িটি প্রিন্স নিজেই নকশা করেছিলেন৷ এই বাড়িতে তিনি তাঁর দুই স্ত্রী ও তিন সন্তানের সাথে থাকতেন৷ দ্বিতীয় স্ত্রী ছিলেন বাগানের মালির মেয়ে এবং দুই স্ত্রীরই নামের প্রথম অংশ লুইসে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান
২০০০ সালে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান পায় পার্কটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চারপাশেই প্রকৃতির অসীম সৌন্দর্য্য
এই পার্কটির মূল আকর্ষণই হলো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য৷ যা এটি নির্মাণের শুরু থেকেই পর্যটককে আকর্ষণ করেছে৷ পার্কের মূল বৈশিষ্ট্য হলো, এর মাধ্যমে বোঝা যায় সৌন্দর্য্যকে কোনো কিছুর মধ্যে বেঁধে রাখা যায় না৷ যুবরাজের এই ভাবনা এতটাই জনপ্রিয়তা পায় যে জার্মানিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এই ধরনের বাগান নির্মাণ শুরু হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সবার জন্য বাগান
এই পার্কে ঢুকতে কিন্তু কোনো টিকেট লাগে না৷ অর্থাৎ সবার জন্য উন্মুক্ত এবং বছরের প্রায় পুরোটা সময় এটি খোলা থাকে৷ ২০০ বছরের এই বাগান তাই সবার বাগান হিসেবে পরিচিত হয়ে আসছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
11 ছবি1 | 11
ফেরা যাক বার্লিনে৷ ইসিএফ ফার্মসিস্টেম-এর দুই প্রতিষ্ঠাতা ইতিমধ্যেই আরো বড় করে ভাবছেন৷ তাঁরা তাদের শহুরে খামার-এর আইডিয়াটা অন্যদেরও বেচেছেন৷ গোটা পরিকল্পনার জন্য একাধিক পুরস্কারও পেয়েছেন৷ ভবিষ্যতে তাঁরা নিজেরাই আরো বেশি শহুরে খামারের মালিক হতে চান৷ নিকোলাস লেশকে জানালেন: ‘‘আপাতত আমরা মনোযোগ দিচ্ছি বাস্তবিক গ্রাহকদের জন্য এই ধরনের খামার গড়়ে তোলার উপর৷ আমরা শহুরে খামারের টার্নকি কনস্ট্রাকশন করে থাকি৷ ভবিষ্যতে আরো বেশিভাবে তা করতে চাই৷ শহরে একটা সুপারমার্কেটের চেন গড়ার স্বপ্ন আছে, যেখানে আমাদের নিজেদের শহুরে খামারগুলো থেকে পণ্য সরবরাহ করা হবে৷''
জার্মানিতে শেষ ঠিকানা- হৃদয়ের বাগান
কবরস্থান শুনলেই কেমন যেন ভয়ে আঁতকে উঠি সবাই৷ তবে জার্মানির কোনো কবরস্থানে ঘুরে এলে ভয় খানিকটা কেটে যায় বৈকি! প্রতিটি কবর সুন্দর করে বাঁধানো এবং সুন্দর করে সাজানো এক একটি বাগান৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভুবনে
কবিগুরু যেমন লিখেছিলেন, ‘‘মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভুবনে, মানুষের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই’’– এ কথা যে আমাদের সবারই৷ কিন্তু উপায় নেই, এক সময় এই সুন্দর ভুবন ছেড়ে আমাদের সবাইকেই চলে যেতে হবে৷ তবে কার শেষ ঠিকানা কোথায়, কেউ কি জানে?
ছবি: DW/A. Termeche
কবরস্থান মানেই ভয় নয়
কবরস্থান শুনলেই কেমন যেন ভয়ে আঁতকে উঠি সবাই৷ তবে জার্মানির কোনো কবরস্থানে ঘুরে এলে ভয় খানিকটা কেটে যায় বৈকি! প্রতিটি কবর সুন্দর করে বাঁধানো এবং সুন্দর করে সাজানো এক একটি বাগান৷
ছবি: DW
দেখতে ঠিক যেন পার্কের মতো
বিশাল এলাকা জুড়ে এক একটি কবরস্থান, ঢোকার সময় প্রথমেই মনে হবে চারিদিকে সবুজে ঘেরা কোনো পার্কে ঢুকছি৷ খানিকটা ভেতরে গেলে মনে হয় বিশাল পার্কে ছোট ছোট অনেক বাগান৷ একটি কবরস্থানে বড়দের এবং বাচ্চাদের জন্য আলাদা জায়গা রয়েছে৷
ছবি: DW/A. Termeche
নাম ফলক
প্রতিটি কবরেই পাশেই নানা রংয়ের পাথরের ওপর প্রয়াতদের নাম, জন্ম এবং মৃত্যুর তারিখ লেখা থাকে৷ অনেক সময় দেখা যায় কোনো কবরে একটি নামফলক৷ শায়িত আছেন একজনই কিন্তু জায়গাটি বেশ বড় করে বাঁধানো৷ অর্থাৎ সেখানে স্বামী বা স্ত্রীর জন্য জায়গা রাখা হয়েছে৷ তবে যিনি বেঁচে আছেন, তিনি তার পরিচর্যা করেন৷
ছবি: DW/A. Termeche
ফুলের বাগান
কবরস্থানে যে কেউ ঢুকে পুরোটাই ঘুরে বেড়াতে পারে৷ এতে কোনো বাধানিষেধ নেই৷ ছোট ছোট জায়গা ভাগ করা আছে, তবে ভেতর দিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা আছে৷ অনেকে শুধু হাঁটাহাঁটি করার জন্যও কবরস্থানে যায়, অত্যন্ত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন জায়গা৷ গ্রীষ্মে কোনো কবরস্থানকে ফুলের বাগান বললে ভুল হবেনা৷ প্রায় প্রতিটি কবরস্থানের কাছেই একটি করে ফুলের দোকান থাকে৷
ছবি: DW
পরিবার বা প্রিয়জনদের পরিচর্যা
জার্মানরা অনেকেই নিয়মিত কবরস্থানে যান তাদের প্রিয়জনের সমাধিতে ফুল দিতে৷ জ্বালিয়ে রাখেন মোমবাতি আর ছোট্ট বাগানটুকু করেন পরিষ্কার৷ তবে পুরো কবরস্থান পরিচর্যার জন্য থাকে বেতনভোগী আলাদা লোক৷
ছবি: Fotolia/forelle66
মুসলমানদের কবরস্থান
জার্মানিতে প্রথম মুসলমানদের কবরস্থান তৈরি করা হবে, আর তার আইন পাসও হয়ে গেছে৷ তৈরি হবে ভুপার্টাল শহরে৷ একই জায়গায় খ্রিষ্টান, ইহুদি এবং মুসলিম – এই তিন ধর্মের মানুষকে কবর দেওয়া হবে এবং একই গেট দিয়ে তিন কবরস্থানেই যাওয়া যাবে৷
ছবি: DW/C. Ignatzi
তাজা ফুল
জার্মানিতে পুরুষদের তুলনায় মহিলারা বেশিদিন বাঁচেন৷ আর তা কোনো কবরস্থানে গেলেও কারো দৃষ্টি এড়ায় না৷ অনেক বৃদ্ধাকেই দেখা যায় প্রতি সপ্তাহেই স্বামীর কবরে তাজা ফুল দিতে৷ শীত গ্রীষ্ম কখনো তার ব্যতিক্রম হয়না৷ এতো যত্ন করে কবরস্থানে ফুল দিতে দেখলে কবি জসীমউদ্দিনের ... ‘‘এইখানে তোর দাদীর কবর ডালিম গাছের তলে, তিরিশ বছর ভিজিয়ে রেখেছি দু’নয়নের জলে’’-র কথাই মনে করিয়ে দেয়৷