1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শহরে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের ভিড়

২ নভেম্বর ২০২১

সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকার মানুষের বিপর্যস্ত জীবন কাটাতে হচ্ছে৷ বিশেষ করে ঘূর্ণিঝড় আইলার পর থেকে অভাব-অনটন প্রকট হয়েছে৷ এমন পরিস্থিতিতে জীবিকার তাগিদে এলাকা ছাড়ছেন অনেকে৷

Bangladesch | Themenbilder: Salzgehalt im Wasser und Fehlgeburten
ছবি: Mortuza Rashed

খুলনার কয়রা উপজেলার শাকবাড়িয়া নদীর চরে কোনো রকমে ঘর তুলে বাস করছেন কার্তিক মুণ্ডা৷ ঘর বলতে নড়বড়ে খুঁটির ওপর গোলপাতার ছাউনি৷ নদীতে জোয়ারের পানি ঢুকলে তার ঘরের বারান্দায় পানি আসে৷ দীর্ঘদিন ধরেই এভাবেই চলছে জানান নৃ গোষ্ঠীর একজন কার্তিক৷

ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে কয়রার সংবাদকর্মী নিশীথ রঞ্জন মিস্ত্রি জানান, দুর্যোগ কবলিত সুন্দরবন উপকূলীয় জনপদের মানুষ ভাঙাগড়ার মধ্যেই দিন কাটাচ্ছেন৷ একটির ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে না উঠতেই, নতুন নামে ফের আঘাত হানছে প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড়৷ তিনি বলেন, ‘‘এসব ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণ হারিয়েছেন বহু মানুষ৷ ঘরবাড়ি হারিয়ে উদ্বাস্তু হচ্ছে বিপুল জনগোষ্ঠী৷ কাজ না থাকায় অনেকে এলাকা ছাড়ছে৷''

খুলনা নগরের ৫ নম্বর ঘাটের গ্রিনল্যান্ড বস্তির ডি ব্লকে ঘর তুলে বসবাস করছেন কয়রা উপজেলার নাকশা গ্রামের বাসিন্দা ৪০ বছর বয়সি রাহেলা বেগম৷ ঘূর্ণিঝড় আইলায় ঘরবাড়ি হারিয়ে সপরিবারে তারা শহরে চলে আসেন এবং  বাসাবাড়িতে কাজ করে কোনোমতে সাত জনের সংসার চালাচ্ছেন তিনি৷ তার এলাকার প্রায় অর্ধশত পরিবার আইলায় সব হারিয়ে শহরে একই বস্তিতে বসবাস করছেন বলে জানান রাহেলা৷ বস্তিটি রেলওয়ের জমিতে হওয়ায়  প্রায়ই রেল কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদ করার কথা বলে যায়৷ যে কারণে সবসময় আতংকে থাকেন৷

নগরীর সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনালের পাশে ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে গড়ে উঠেছে খোড়াবস্তি৷ বর্তমানে এ বস্তির নামকরণ হয়েছে স্থানীয় কাউন্সিলরের নাম অনুসারে হাফিজ নগর৷ এখানেও আইলায় ক্ষতিগ্রস্ত ৩০-৪০টি ‘জলবায়ু উদ্বাস্তু' পরিবার বসবাস করছেন৷

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতবিক্ষত সুন্দরবনের উপকূলীয় এ জনপদের মানুষ এভাবেই নিজেদের শেষ আশ্রয়- ঘরবাড়ি হারা হয়েছেন৷ এদেরকেই ‘জলবায়ু উদ্বাস্তু' হিসেবে চিহ্নিত করছেন বিশেষজ্ঞরা৷ ২০০৯ সালের ঘূর্ণিঝড় আইলায় প্রাথমিকভাবে ক্ষয়ক্ষতি কম হলেও দীর্ঘ মেয়াদে এর প্রভাব পড়েছে ‘ভয়ংকরভাবে' বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা৷ তারা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উপকূলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ লেগেই আছে৷ এতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের ভিড় বাড়ছে নগরীতে৷

উপকূলীয় তিন জেলা খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরার এক হাজার ৬৫০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের অবস্থা নাজুক উল্লেখ করে তারা বলেন, প্রায় ৬০ বছর আগে তৈরি এসব বাঁধের এখন আর দুর্যোগ মোকাবেলার সক্ষমতা নেই৷ যে কারণে উপকূল জুড়ে ধীরে ধীরে লবণপানি গ্রাস করায় মানুষ কাজ হারিয়ে ‘উদ্বাস্তু' হচ্ছে, চলে আসছে শহরে৷ 

সংসদ সদস্য গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস ও নদী ভাঙনসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাড়ায় উপকূলের মানুষের নানা ঝুঁকি বাড়ছে৷ এ ঝুঁকি মোকাবেলায় উপকূলের মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে৷

খুলনা সিটি করপোরেশনের তথ্য মতে, নগরে ছোট-বড় মোট ৪০টি বস্তি রয়েছে৷ এসব বস্তিতেই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ, ‘জলবায়ু উদ্বাস্তুরা' ঠাঁই নিচ্ছেন৷উদ্বাস্তুদের মধ্যে কেউ এসেছে ঘূর্ণিঝড় আইলার পর, কেউ সিডর, আবার কেউবা এসেছেন আম্পানের পর৷

জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, খুলনার কয়রা, দাকোপ, পাইকগাছা, সাতক্ষীরার শ্যামনগর, আশাশুনি, বাগেরহাটের শরণখোলা ও মোংলায় এলাকায় নদীর তীর ও বেড়িবাঁধের পাশে প্রায় ২০ লাখ মানুষের বসবাস৷ 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে উপকূলীয় জেলা খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরার নদীগুলোর আশপাশের এলাকা অনেকটাই বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠছে৷

বাংলাদেশের বস্তিতে জলবায়ু শরণার্থীর সংখ্যা বাড়ছে

02:28

This browser does not support the video element.

বাস্তুহারাদের মতে, প্রাকৃতিক দুর্যোগে বারবার ক্ষতির শিকার হলেও তাদের অন্য কোথাও স্থানান্তর বা দুর্যোগ সহনশীল ঘর তৈরির তেমন কোনো উদ্যোগ নেই৷

এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ‘মাইগ্রেশন' হওয়ার বিষয়টি স্বাভাবিক হলেও এসব উদ্বাস্তু জনগোষ্ঠী নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগ কম৷

সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের কারণে উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস ও নদী ভাঙনসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেড়েছে৷  প্রকৃতির এমন আচরণের জন্য উন্নত দেশগুলোকে দায়ী করে তিনি বলেন, যাদের কারণে পরিবেশ দূষণ বাড়ছে সেসব দেশের কাছ থেকে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতিপূরণ আদায়ে জোর দিতে হবে৷ একইসঙ্গে উপকূল এলাকায় দ্রুত টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবি জানান তিনি৷

পরিবেশ সুরক্ষা ফোরাম খুলনার আহ্বায়ক অ্যাড. কুদরৎ ই খুদা বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে মাইগ্রেশন হবে, বেঁচে থাকার স্বার্থে মানুষ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাবে এটাই স্বাভাবিক৷ কিন্তু তাদের সব অধিকার নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব ৷

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর পরিকল্পনা ডিসিপ্লিনের শিক্ষক অধ্যাপক তানজিল সৌগাত বলেন, সরকারের কাজ হলো এই মানুষদের আশ্রয় দেওয়া ও জীবিকার ব্যবস্থা করা ৷

শহরের আশপাশের উপজেলাগুলোকে শহরের আদলে তৈরি করা হলে মূল শহরের ওপর চাপ কম পড়বে এবং এতে শহরের শৃঙ্খলা ঠিক থাকবে বলে মনে করেন তিনি ৷

জলবায়ু উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন পরিকল্পনা সম্পর্কে বিডিনিউজকে খুলনা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আজিজুল হক জোয়ার্দ্দার বলেন, ‘‘শহর এলাকায় আমাদের কাজ নেই৷ রুট লেভেলে প্রশাসনের সঙ্গে মাধ্যম হিসেবে কাজ করি আমরা, বাস্তবায়ন করে প্রশাসন৷''

এনএস/কেএম (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম) 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ