1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শহরেও গাড়িহীন জীবন!

৬ এপ্রিল ২০১৮

জার্মানির মতো গাড়ি-পাগল দেশে বড় শহরে গাড়ি চলাচল সীমিত করতে নানা ভাবনাচিন্তা চলছে৷ কোলন শহরের একটি পাড়ায় ব্যক্তিগত গাড়ির প্রবেশ পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে৷

Fassade Köln Messe als Parkplatz bemalt
ছবি: Imago/Friedrich Stark

গাড়িহীন শহরের কথা ভাবাই যায় না৷ তবে কোলন শহরে একটি এলাকায় গাড়ির প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ৷ ইয়োহানা ও তাঁর বাবা-মা বছর দেড়েক ধরে নিপেস এলাকায় বসবাস করছেন৷ এটিই জার্মানির সবচেয়ে বড় গাড়ি-বর্জিত পাড়া৷ ইয়োহানা-র মা ইংগা ফয়সার পেশায় শিক্ষিকা৷ তিনি বলেন, ‘‘সে কথা শুনেই মনে হয়েছিল, এমনভাবে থাকার মজাই আলাদা৷ তারপর নিজেদের চোখে সবকিছু দেখে খুব ভালো লাগলো৷ শিশুরা পথের উপর খেলছে, মনে ভয় ছাড়াই দিব্যি ঘোরাফেরা করছে৷''

পার্কিং-এর বদলে খেলার জায়গা৷ জার্মানির মতো গাড়ি-পাগল দেশের জন্য প্রায় বিপ্লবের মতো ঘটনা৷ এলাকার প্রায় ১,৩০০ বাসিন্দার সঙ্গে ইংগা ফয়সার ও তাঁর স্বামী বাড়িভাড়া চুক্তির মধ্যেই গাড়ি ত্যাগ করার অঙ্গীকার করেছেন৷ ঠেলাগাড়ি নিয়ে বাজার করতে যেতে হয়৷ তবে সারা সপ্তাহের বাজার একসঙ্গে তাতে ধরে না৷ তাই প্রায় প্রতিদিনই পাড়ার দোকানে তাজা পণ্য কেনেন তাঁরা৷ ইংগা বলেন, ‘‘আমার বেশি কঠিন মনে হয়নি৷ সাইকেল চালিয়ে ঘুরি, পিঠে রাকসাক থাকে, বাজার তার মধ্যেই ধরে যায়৷ সাইকেলের ঝুড়িও রয়েছে৷ তবে পানীয়র বোতলের মতো বড় কিছু থাকলে ঠেলাগাড়ি ধার নেওয়া যায়৷ অর্থাৎ যথেষ্ট উপায় থাকে৷''

ছোট আকারে এমন নীতি কার্যকর করা সম্ভব৷ কিন্তু বড় শহরের সব এলাকা গাড়ি-বিহীন করে তোলা কতটা বাস্তবসম্মত?

ড. ক্রিস্টিয়ান পিলার জার্মান এয়ারোস্পেস সংস্থা ডিএলআর-এ পরিবহণ সংক্রান্ত গবেষণা বিভাগের প্রধান৷ জার্মানির বাকি শহরের মতো কোলনও গাড়ির উপর নির্ভরশীল৷ তবে তাঁর মতে, এই অবস্থার পরিবর্তন আনতে হবে৷ কীভাবে সেটা সম্ভব? ড. পিলার বলেন, ‘‘আমার মনে হয়, কোলনের মতো শহরের জন্য সোনার ডিম দেওয়া মুরগি নেই৷ অর্থাৎ একটিমাত্র চাবিকাঠি পাওয়া সম্ভব নয়, একাধিক পদক্ষেপ নিতে হবে৷ নগর পরিকল্পনার ক্ষেত্রেই কাজ শুরু করতে হবে৷ গণপরিবহণ কাঠামো আরও সম্প্রসারিত করতে হবে৷ সেইসঙ্গে সাইকেল ও পথচারীদের জন্য আরও ব্যবস্থা করতে হবে৷''

ভবিষ্যতে শহরের কাঠামোর একটা রূপরেখা প্রস্তুত করা হয়েছে৷ সব এলাকার মধ্য দিয়ে বড় রাস্তাগুলি ধীরে ধীরে গুটিয়ে ফেলতে হবে৷ সবুজ অংশ বাড়াতে হবে৷ ব্যক্তিগত মালিকানার গাড়িগুলিকে কোণঠাসা করে ফেলতে হবে৷ শহরের কেন্দ্রস্থলে মালপত্র নিয়ে যেতে ইলেকট্রিক গাড়ি ব্যবহার করতে হবে৷ সাইকেল ও ইলেকট্রিক শক্তিচালিত তিন চাকার বাহনের ব্যবহার বাড়বে৷ পাড়ার মধ্যে স্বয়ংক্রিয় বাস চলবে৷ মোবাইল ফোনের অ্যাপ-এর মাধ্যমে পরিবহণের সব মাধ্যমের মধ্যে সমন্বয় করা যাবে৷ তবে একটা শহরে এমন আমূল পরিবর্তন করার ঝক্কি ও ব্যয় কম নয়৷  ড. পিলার বলেন, ‘‘বড় সমস্যার ভয়ে আরও অপেক্ষা না করে পরিবহণের ক্ষেত্রে এমন পরিবর্তন এখনই শুরু করা উচিত বলে আমি মনে করি৷ ছোট ছোট পদক্ষেপ দিয়ে কাজ শুরু হতে পারে, যাতে তার সুফল হাতেনাতে পাওয়া যায়৷''

ইংগা ফয়সার এমন পদক্ষেপের কথা জানেন৷ যেমন আসবাবপত্র পরিবহণ বা কাছেপিঠে বেড়াতে গেলে তিনি কয়েক ঘণ্টার জন্য গাড়ি ভাড়া করেন৷ নিজস্ব গাড়ির বদলে কার-শেয়ারিং ব্যবস্থা৷ কারণ কিছু ক্ষেত্রে গাড়ি ছাড়া চলে না৷ ইংগা ফয়সার বলেন, ‘‘যখন খুব সকালে কাজে যেতে হয় এবং কিন্ডারগার্টেন সকাল সাড়ে সাতটায় খোলে আর আমাকে ৮টার সময় অফিসে পৌঁছতে হয়, তখন ট্রাম-বাসের উপর নির্ভর করা যায় না৷ তখন কারশেয়ারিং পরিষেবার আওতায় গাড়ি ভাড়া করতে হয়৷ সপ্তাহে একবার তো এমন চাহিদা হয়ই৷''

তবে সপ্তাহের বাকি দিনগুলিতে গোটা পরিবার গাড়ি ছাড়াই চলার চেষ্টা করে৷ দুপুরবেলা পাড়ার মধ্যেই দিব্যি সময় কেটে যায়৷ কোলন শহরের এই পাড়ার মানুষ দেখিয়ে দিয়েছেন, যে গাড়ি-বিহীন জীবনযাত্রা মানেই ত্যাগ স্বীকার করা নয়৷ বরং এর ফলে জীবনযাত্রার মান বাড়ে৷ জীবনে শান্তি আসে৷ বড় শহরের মধ্যেও সেটা সম্ভব৷

বরিস গাইগার/এসবি

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ