জার্মানির রাজধানী বার্লিন, শীতল যুদ্ধের শহর বার্লিন, বার্লিন প্রাচীর ও চেকপয়েন্ট চার্লির বার্লিন৷ সেখানকার বাসিন্দারা কিন্তু আজ নিজের হাতে সবজি চাষ করার স্বপ্ন দেখেন, যাকে বলে ‘আর্বান গার্ডেনিং’৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির রাজধানী বার্লিন চল্লিশ লাখ বাসিন্দার একটি মহানগরী৷ সবুজ বলতে ওই পাবলিক পার্ক বা ছোটখাট খিড়কির বাগান৷ কিন্তু সেই বার্লিনেও এখন সবজির চাষ শুরু হয়েছে৷ জায়গাটা ছিল হয়তো একটা পার্কিং লট, কিন্তু সেই গাড়ি রাখার জায়গায় বড় বড় কাঠের বাক্স বসিয়ে তাতে ফুল আর শাকসবজির গাছ লাগানো হয়েছে৷ এই নতুন ফ্যাশনটির নাম ‘আর্বান গার্ডেনিং' বা শহরে বাগান৷ বার্লিনে ইতিমধ্যেই শ'খানেক এ ধরনের শহুরে বাগান গজিয়ে উঠেছে৷
আর্বান ফার্মিং: শহরে চাষ
বাড়ির বাগানে মুরগি পোষা, কিংবা ছাদ কি বারান্দার টবে সবজি ফলানো, এ ধরণের শহুরে চাষ চলে আসছে বহুকাল ধরে৷ কিন্তু ‘আর্বান ফার্মিং’ আজ একটি বিশ্বব্যাপী প্রবণতা – হয়তো একটি বিশ্বব্যাপীসমাধান৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Lopez
আর্বান ফার্মিং কেন?
২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ১,০০০ কোটি কিংবা তারও বেশি৷ এর দুই-তৃতীয়াংশ বাস করবে শহরে৷ জলবায়ু পরিবর্তনের যুগে এই পরিমাণ মানুষের খাদ্য জোগাড় করা সহজ কথা নয়৷ সেক্ষেত্রে শহরের মধ্যে চাষবাস সাহায্য করতে পারে৷
ছবি: Imago/UIG
শহুরে চাষি
শহরে যাদের বাস, তাদের প্রকৃতির প্রতি টান কোনো অংশে কম নয়৷ তার খানিকটা মেটে বাগান করতে পেরে৷ কিন্তু আর্বান ফার্মিং মানুষ আর মানুষের মধ্যে হৃদ্যতা আনে, নতুন চাকরি সৃষ্টি করে, বাড়ায় নগরবাসীদের খাদ্য নিরাপত্তা৷
ছবি: Imago/AFLO/Yoshio Tsunoda
সবুজের স্নিগ্ধ প্রলেপ
ঊষ্ণায়নের ফলে যখন বিশ্বের তাপমাত্রা বাড়ছে, তখন গাছপালা শহরের তাপমাত্রা কমায়৷ হংকংয়ের ইয়াউ মা তেই একটি প্রাচীন এলাকা৷ ২০১২ সালের মার্চ মাসে সেখানকার নানা ছাদের বাগান মিলিয়ে ‘এইচকে ফার্ম’ সৃষ্টি করা হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Lopez
ছাদে চাষ
নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিন গ্রেঞ্জ হল বিশ্বের বৃহত্তম ছাদের খামার৷ দু’টি ছাদ মিলিয়ে তৈরি এই খামারে বছরে ২২,০০০ কিলোগ্রাম অরগ্যানিক খাদ্য উৎপাদন করা হয়৷ এছাড়া খামারটি শহর জুড়ে বাড়ির ছাদে ৩০টি মৌমাছির দল ও মৌচাক পোষে৷ আর্বান ফার্মিংয়ের টেকসই মডেল হিসেবে ব্রুকলিন গ্রেঞ্জ গড়ে ওঠে ২০১০ সালে৷
ছবি: Imago/UIG
ময়লা ফেলার জায়গায় চাষ
নাম হলো ‘প্রিন্ৎসেসিনেনগ্যার্টেন’ বা রাজকুমারীর বাগান৷ বার্লিনের ক্রয়েৎসব্যার্গ এলাকার এই অংশটি অর্ধশতাব্দী ধরে ময়লা ফেলার জায়গা ছিল৷ পরে সেখান থেকে আবর্জনা সরিয়ে অরগ্যানিক সবজি চাষের পোর্টেবল, অর্থাৎ অন্য জায়গায় সরিয়ে নেয়া যায় এমন প্লট তৈরি করা হয়৷ সংগঠনটি আজ শহরের ভিতরে অনেক পোড়োজমি বা কনস্ট্রাকশন সাইটেও আর্বান ফার্মিং করে থাকে৷
ছবি: Prinzessinnengärten/Marco Clausen
ছাদে ধান রোয়া
টোকিও-র রোপোঙ্গি হিলস আসলে একটি বিজনেস ও শপিং কমপ্লেক্স৷ তার ছাদে মাটি ফেলে ধানের ক্ষেত করা হয়েছে৷ শহরের অন্যত্র ‘সিটি ফার্ম’ নামের একটি সংগঠন তরমুজ, টমেটো, সয়াবিন ফলায়৷ এছাড়া ধানচাষও করে থাকে৷ সংগঠনের সদস্যরা ধান ঝাড়ার কাজে সাহায্য করতে পারেন, কিংবা জাপানের ‘সাকে’ সুরা বানানোর পদ্ধতি শিখতে পারেন৷
ছবি: Imago/AFLO/Yoshio Tsunoda
বিপদের সময়
গ্রিসের রাজধানী এথেন্সের উপকণ্ঠে এলিনিকো কমিউনিটি গার্ডেন আসলে একটি ‘গেরিলা গার্ডেন’৷ গেরিলা যুদ্ধের মতোই অভাব-অনটনের দিনে গ্রিসের সর্বত্র এ ধরণের বাগান বা খেতখামার গজিয়ে উঠেছে, কেননা মানুষের খাদ্য চাই৷ এলিনিকো বাগানটি যেখানে, ২০০১ সাল পর্যন্ত সেটা ছিল একটা বিমানবন্দর৷ পরে জমি পরিষ্কার করে স্বেচ্ছাসেবীরা এখানে সবজি ও ফলমূল ফলাতে শুরু করেন দুঃস্থ এথেন্সবাসীদের সাহায্য করার উদ্দেশ্যে৷
ছবি: Heidi Fuller-love
7 ছবি1 | 7
সাহিত্যের ছাত্রী হানা লিজা লিন্সমায়ার বলেন, ‘‘আমরা শহরের মধ্যে এক টুকরো গ্রাম আনার চেষ্টা করেছি, এক টুকরো জমি, যা থেকে নিজের শাকসবজি পাওয়া যায়, একটা গাছ বড় করার যে মজা রয়েছে; আমরা ছোটদের নিয়েও অনেক কাজ করি, তারা জীবনে প্রথমবার দেখে যে, সবজি শুধু সুপারমার্কেটে প্লাস্টিকের প্যাকেটে আসে না, বরং এখানে মাটিতে বীজ পুঁতে, তাতে জল ঢেলে গাছটাকে বড় করে, পরে তা থেকে ফুল-ফল বা সবজি পাওয়া যায়৷''
শহরে যারা বাগান করেন, তাদের কাছে শুধু ফসলটাই নয়, বরং বাগানে অন্যদের সঙ্গে দেখাশোনাটাও একটা বড় আকর্ষণ৷ ইট-কাঠ-পাথরের মরুভূমিতে তাদের এই ‘মরুদ্যানে' আজও মানুষের সঙ্গে মানুষের আলাপ-পরিচয় হয়৷ বাগান করার টব বা জমি ব্যক্তিগতভাবে ভাড়া করা যায়, আবার অনেকে মিলেও ভাড়া করা যায়৷ সকলেই এখানে আসতে পারেন, বাগান করতে পারেন, সদস্যতার কোনো বাধানিষেধ নেই৷
হানা ব্যাখ্যা করে দিলেন, ‘‘যাদের কাছাকাছি বাড়ি, তাদের অনেকেই এখানে এসে হাত লাগান, সাহায্য করেন৷ যাদের সারাটা দিন অফিসে কম্পিউটারে বসে কাজ করতে হয়, তারা নিজের হাতে কিছু একটা করতে পেরে, বাগান করতে পেয়ে খুব খুশি হন৷''
বাগান থেকে ‘চা’-এর কাপে আসার গল্প
শ্রীমঙ্গল উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে রয়েছে চোখ জুড়ানো বেশ কিছু চা বাগান৷ সেসব বাগানের চা বাগান থেকে কিভাবে চায়ের কাপে আসে তারই গল্প থাকছে এই ছবিঘর-এ৷
ছবি: DW/M. Mamun
চা বাগান
চা বোর্ডের হিসেবে পুরো বাংলাদেশে চা বাগান রয়েছে মোট ১৬২টি৷ তার মধ্যে শ্রীমঙ্গল উপজেলার বাগানসহ মৌলভীবাজার জেলায় মোট বাগানের সংখ্যা ৯০টির মতো৷
ছবি: DW/M. Mamun
চা শ্রমিক
সেই কাক ডাকা ভোরে উঠে চা শ্রমিকরা পাতা তুলতে শুরু করেন৷ যাঁর চা পাতার ঝুলির ওজন বেশি হয়, তিনি পারশ্রমিক বেশি পান৷ তাই তাঁদের মধ্যে সব সময় এক ধরনের তাড়া কাজ করে৷
ছবি: DW/M. Mamun
চা কন্যা
চা শ্রমিকদের মধ্যে নারীই বেশি৷ চা শ্রমিক, চা শিল্পী, চা কন্যা বা পাতিয়ালী – যে নামেই তাদের ডাকা হোক না কেন, তাঁরা কঠোর পরিশ্রমী৷
ছবি: DW/M. Mamun
এবার মাপার পালা
পাতা তোলার পর কে কতটা তুলেছেন তা মাপা হয় বাগানেরই কাছের ছোট এক কুটিরে৷ চা পাতার ওজন অনুপাতেই শ্রমিকরা তাঁদের পারিশ্রমিক পেয়ে থাকেন৷ পাতা মাপার পর এক ফাঁকে ঝটপট বাড়ি থেকে নিয়ে আসা নাস্তাটা তাঁরা সেরে নেন৷ আবার যে বাগানে যেতে হবে !
ছবি: DW/Nurunnahar Sattar
কারখানায় যাচ্ছে পাতা
মাপার পর এবার পাতা যাচ্ছে চা কারখানায়৷
ছবি: DW/Nurunnahar Sattar
পাতা বহমান
কারখানায় পৌঁছানোর পর ছোট ছোট ব্যগে করে ইলেক্ট্রিক মেশিনের সাহায্যে ঘুরে ঘুরে পাতা যাচ্ছে আরেক জায়গায়৷
ছবি: DW/Nurunnahar Sattar
ছড়ানো পাতা
এখানে পাতাগুলো ছড়িয়ে দিয়ে ভালো করে পরিস্কার করে বেছে নেওয়া হবে৷
ছবি: DW/Nurunnahar Sattar
পাতার সোঁদা গন্ধ
পাতা পরিস্কারের পর এবার যাচ্ছে মেশিনে৷ কয়েকটি মেশিনে একসাথে কাজ হচ্ছে৷ মেশিনে ‘প্রসেস’ হওয়ার সময় সবুজ পাতা কেমন যেন এক সোঁদা আর মিষ্টি গন্ধ ছড়ায়৷
ছবি: DW/Nurunnahar Sattar
বদলে যায় রং
এবার চা পাতা শুকানোর পালা৷ এরই মধ্যে এই মেশিনের গরম তাপে চা পাতার রং বদলে গিয়ে গাঢ় বাদামী হয়ে গেছে৷ চা বাগানে ঘোরাঘুরির পর তৈরি গরম চায়ের গন্ধ, চেহারা আর হাত দিয়ে ধরে দেখার অনুভূতি কিন্তু চা প্রেমীদের কাছে দারুণ রোমাঞ্চকর !
ছবি: DW/Nurunnahar Sattar
গুণগত মান পরীক্ষা
গুড়ো চা শুকিয়ে যাবার পর এবার গুণগত মান পরীক্ষার পালা৷ চা টেস্টের পর সব ঠিক থাকলেই কেবল তা বড় বড় বস্তায় ভরে প্যাকিং এবং রপ্তানির জন্য পাঠানো হয় চট্টগ্রামে৷
ছবি: DW/Nurunnahar Sattar
শেষ ধাপ: ‘চা’ এলো কাপে
চট্টগ্রামের কারখানা থেকে প্যাকেট হয়ে বাজারে আসে চা৷ তারপর তো দু’টি পাতা একটি কুঁড়ির সেই চা আমাদের কাপে৷ ‘চা’-এর তুলনা শুধু চা-ই৷
ছবি: DW/N. Sattar
সব সময়ের সঙ্গী ‘চা’
উপমহাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় পানীয় ‘চা’৷ ফিনলে চা কারখানার দেয়ালে লাগানো বোর্ডের এই কথাগুলো কতটা সত্যি, তা মনে হয় যে কোনো চা প্রেমীই জানেন৷
ছবি: DW/Nurunnahar Sattar
12 ছবি1 | 12
‘বাউয়ার্নগার্টেন'
বার্লিনের ‘বাউয়ার্নগার্টেন' বা ‘খামারবাড়ির বাগান' আর একটু বেশি বাণিজ্যিক৷ এ ধরনের বাগানগুলি শহরের কোনো বড় পার্কে কিংবা শহরের উপকণ্ঠে দেখতে পাওয়া যাবে৷ পেশাদার মালিরা এখানে হাল চালিয়ে মাটি কেটে, সেচের ব্যবস্থা করে বাগানটাকে ঠিকঠাক রাখেন, সখের বাগানকারীদের পরামর্শ দেন৷ খদ্দেররা এক টুকরো বাগান ভাড়া করে, পেশাদার মালিদের পরামর্শ মতো নিজেরাই চাষ করেন৷ এ ধরনের একটি ‘শহুরে বাগানের' পরিচর্যা করা শহরের বাসিন্দাদের পক্ষেও সহজ৷ বীজ পোঁতা ইত্যাদি কাজ পেশাদারি মালিরা করেন৷ বাগানের ভাড়াটিয়া ছুটি কাটাতে গেলে মালিরাই গাছে জল দেন৷
এখানে এক টুকরো বাগানের ভাড়া বছরে ৩০০ ইউরো৷ ফসল ভালো হবে না খারাপ, তা নির্ভর করবে সখের মালির আন্তরিকতা আর পেশাদারি মালিদের হাতযশের উপর৷ লাইবনিৎস গবেষণা প্রতিষ্ঠানও প্রকল্পটি সম্পর্কে আগ্রহী৷ নগর পরিকল্পনা প্রযুক্তিবিদ ড. ইঙ্গো জাসাদা বলেন, ‘‘আর্বান গার্ডেনিং-এর ফলে খাদ্য সরবরাহের পথ ও দূরত্ব কতটা কমে যায়, সেটাই আমাদের গবেষণার বিষয়৷ অর্থাৎ পরিবহণের ব্যয় কমানো, জলবায়ু পরিবর্তনের উপর প্রভাবের মতো পরিবেশগত, অর্থনৈতিক ও সামাজিক দিকগুলিও আমরা বিচার করে দেখছি৷''
অনেকেই ‘শহুরে বাগান' করতে আগ্রহী, কাজেই আবেদনকারীদের লাইন পড়ে আছে৷ বিশেষ করে শিক্ষিত মহলে এই প্রবণতা বেশি; তাদের কাছে সস্তায় শাকসবজি যতটা না লোভনীয়, তার চেয়ে বেশি কদর টাটকা শাকসবজির স্বাদের৷ কাজেই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী থেকে শুরু করে আইনজীবী বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, সকলেই শহরে বাগান করতে আগ্রহী৷