থাইল্যান্ডের ব্যাংকক, জার্মানির বার্লিনের মতো শহরগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দুর্যোগ দেখা দিচ্ছে৷ বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, ২০৫০ সাল নাগাদ ব্যাংকক তলিয়ে যেতে পারে৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে শহর কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন কৌশল গ্রহণ করছে৷
বিজ্ঞাপন
সমুদ্রসীমা থেকে ব্যাংকক মাত্র এক মিটার উঁচুতে অবস্থিত৷ প্রতিবছর সাগরের পানির উচ্চতা পাঁচ মিলিমিটার করে বাড়ছে৷
অ্যালেক্স ফেস ব্যাংককের একজন গ্রাফিতি আর্টিস্ট ও এক সন্তানের বাবা৷ তিনি তার বাড়ির ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি এখন বাড়ি বানাচ্ছি৷ অনেক টাকা খরচ হচ্ছে৷ আমি প্রায় ভাবি, একদিনতো সবকিছু পানিতে তলিয়ে যাবে৷ অনেকে বলছেন, এটা নাকি শিগগিরই হবে৷ আগামী ১০ বছরের মধ্যে৷''
ব্যাংককের কিছু অংশ ইতিমধ্যে তলিয়ে গেছে৷ যেমন ২০ কিলোমিটার দক্ষিণের সামুত চিন মন্দির এলাকা৷
জার্মানিতেও সম্প্রতি জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দুর্যোগ হয়েছে৷ পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছে গেছে, যেমন বার্লিনে৷ তাই ভারী বৃষ্টিপাত হলে পানি ধরে রাখা অনেক সময় সম্ভব হয় না৷ তখন নীচু এলাকায় অবস্থিত ঘরবাড়ির প্রবেশপথ, সাবওয়ে টানেলে পানি ঢুকে যায়৷
জলবায়ু পরিবর্তন: শহর রক্ষায় বার্লিন, ব্যাংককের কৌশল
04:33
বার্লিনের পানি ব্যবস্থাপনা অফিসের প্রকৌশলী কারিন জিকার বৃষ্টির পানি ব্যবস্থার নতুন কৌশল নিয়ে কাজ করছেন৷ বার্লিনের নর্দমা ব্যবস্থা অনেকসময় কুলিয়ে উঠতে পারে না৷ তিনি বলেন, ‘‘ভারী বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় পানি ব্যবস্থাপনার সিস্টেমগুলো অনেক সময় পানি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না৷ তখন পানি উপচিয়ে নীচু এলাকা তলিয়ে যায়৷’’
পরিস্থিতি সামাল দিতে বার্লিন ‘স্পঞ্জ সিটি’ হয়ে উঠতে চায়৷ বৃষ্টির পানি স্পঞ্জের মতো শুষে নিতে চায়৷
২০১৭ সাল থেকে বার্লিনের প্রতিটি নতুন ভবন স্পঞ্জ সিটির ধারণা মেনে তৈরি হচ্ছে৷ দক্ষিণপূর্ব বার্লিনের এই আবাসিক এলাকা তেমনই এক উদাহরণ৷
নতুন নির্মাণ কৌশল ও বৃষ্টির পানি ব্যবস্থাপনা বিষয়ে পারদর্শী একটি সংস্থা ২০১৮ সাল থেকে বার্লিনকে নানা পরামর্শ দিয়ে আসছে৷ এই ব্যবস্থায় বৃষ্টির এক ফোঁটা পানিও নর্দমা ব্যবস্থা পর্যন্ত পৌছায় না বলে জানালেন হানা ক্র্যুগার৷
প্রায় ৯০ শতাংশ বৃষ্টির পানি এভাবে ধরা যায়৷ এই পানি পাইপের মাধ্যমে বিশেষ নর্দমা ব্যবস্থায় চলে যায়৷
ব্যাংককে ফেরা যাক৷ বন্যা সামাল দিতে ব্যাংককও সবুজ ছাদ গড়ে তুলতে চায়৷ বার্লিনের মতো তারাও বৃষ্টির পানি অস্থায়ীভাবে ধরে রাখতে চায় এবং পরে সেটা ভালো কোনো কাজে লাগাতে চায়৷ প্রকৃতিকে কংক্রিটের জঙ্গলে একটা সুযোগ দেয়ার অনেকগুলো উপায়ের মধ্যে এটি একটি মাত্র৷ তবে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, ভবিষ্যতে বন্যা প্রতিরোধের এটি একটি চেষ্টা৷
মারিয়া ইয়েশকে/জেডএইচ
জলবায়ু পরিবর্তন: পালটে যাচ্ছে নদীও
কেবল খাবার পানি নয়, অন্য নানা কাজেই নদীর ওপর নির্ভর করতে হয় বিশ্বের কোটি কোটি মানুষকে৷ কিন্তু বৈশ্বিক উষ্ণায়ণ এই জল সরবরাহ প্রাকৃতিক ব্যবস্থাকে ধীরে ধীরে ধ্বংস করে দিচ্ছে৷
ছবি: AFP/Rammb/Noaa/Nesdis
পানির অপর নাম...
বিশ্বের মোট জলের বেশিরভাগই রয়েছে সমুদ্রে৷ মোট জলের কেবল ১০০ ভাগের এক ভাগ নদী দিয়ে বয়ে যায়৷ কিন্তু এই নদীগুলো ছাড়া ভূপৃষ্ঠে মিষ্টি পানি অন্যসব উৎস, যেমন হ্রদ ও জলাভূমি শুকিয়ে যাবে৷ এরই মধ্যে এমন আলামত দেখা যেতে শুরু করেছে৷ কেবল মানবজাতি নয়, প্রাণিজগত ও উদ্ভিদজগতেও পড়ছে এর প্রভাব৷
ছবি: picture-alliance/APA/B. Gindl
দশকের পর দশক
ওপরে আফ্রিকার শাড হ্রদের ১৯৬৩, ১৯৭৩, ১৯৮৭ এবং ১৯৯৭ সালের ছবি দেখানো হয়েছে৷ দেখা যাচ্ছে, মাত্র ৬০ বছরে হ্রদটির আকার ২৫ হাজার বর্গ কিলোমিটার থেকে কমে দুই হাজার বর্গ কিলোমিটারেরও নীচে নেমে এসেছে৷ দীর্ঘদিন ধরে এর জন্য বাঁধ ও সেচব্যবস্থাকে দায়ী করা হয়েছে৷ কিন্তু গবেষকরা জানতে পেরেছেন, এই অঞ্চলের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ নদী কোমাদুগুর জলও ধীরে ধীরে তাপমাত্রার ওঠানামার কারণে কমে এসেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/NASA
জীববৈচিত্র্য এবং খাদ্য সংকট
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মানুষ কিভাবে বাধ্য হচ্ছে খাদ্য ও জলের নতুন উৎস খুঁজে নিতে, শাড হ্রদ তার অন্যতম উদাহরণ৷ কৃষক এবং পশু খামারের মালিকেরা জলের জন্য ধীরে ধীরে উর্বর জমির সন্ধানে যাচ্ছেন৷ কিন্তু উর্বর জমি কমে যাওয়ায় অঞ্চলটিতে জমি নিয়ে উত্তেজনাও দেখা দিয়েছে৷ অন্য বিভিন্ন মহাদেশেও অত্যধিক গরমে নদীর জল শুকিয়ে যাওয়া এবং মাছ মরে যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে৷
ছবি: picture alliance/dpa/AP Photo/R. F. Bukaty
ইউরোপেও তাপদাহ
২০১৮ সালের গ্রীষ্মে তাপদাহ এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, খরস্রোতা রাইন নদীর জল শুকিয়ে খালের আকার ধারণ করে৷ তাপমাত্রা একসময় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসও ছাড়িয়ে যায়৷ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ মালামাল পরিবহনে রাইন নদীর ওপর নির্ভর করে৷ কিন্তু এক পর্যায়ে প্রশস্ত এ নদী এতটাই অগভীর হয়ে পড়ে যে, কেবল একটি লেন চলাচলের জন্য চালু রাখা সম্ভব হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Gambarini
গলে যাচ্ছে হিমবাহ
পানীয় জলের নির্ভরযোগ্য উৎসগুলোও হুমকির মুখে৷ বিভিন্ন পর্বতমালায় জমে থাকা হিমবাহকে জলের আধার মনে করা হয়৷ শীতকালে প্রচুর জল বরফ আকারে জমিয়ে রাখে হিমবাহগুলো৷ গ্রীষ্মকালে সে বরফ গলেই বিভিন্ন নদীতে জল যায়৷ হিমবাহগুলো অন্তত ২০০ কোটি মানুষের জল সরবরাহ করে৷ কিন্তু এরই মধ্যে বিভিন্ন হিমবাহে বরফ কমতে শুরু করেছে৷ বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এ শতাব্দীর শেষের দিকে হিমালয়ের তিন ভাগের এক ভাগ বরফ একেবারে গলে যাবে৷
ছবি: DW/Catherine Davison
হিমালয় ও দক্ষিণ এশিয়া
সিন্ধু অববাহিকার কৃষকেরা বিভিন্ন শস্য চাষের জন্য হিমালয়ের বরফ গলা পানির ওপর নির্ভর করেন৷ পুরো অঞ্চলটি সুপেয় জল ছাড়াও সেচ, মাছ ও পরিবহনের জন্য অনেকাংশেই নির্ভর করে সিন্ধু, গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার ওপর৷ এই তিন অববাহিকা দক্ষিণ এশিয়ার অন্তত ১৩ কোটি কৃষক ও ৯০ কোটি বাসিন্দার জলের জোগান দেয়৷
ছবি: Imago/Aurora
দাবানল
ছবিতে দেখানো অস্ট্রেলিয়ার দাবানলের মতো সম্প্রতি অনেক ভয়াবহ দাবানল দেখেছে বিশ্ব৷ জলবায়ু পরিবর্তনের আরেক দিক এটি৷ দাবানল নদীও ক্ষতি করছে৷ অস্ট্রেলিয়ার দাবানলে গাছ পুড়ে ছাই পড়ছে মারে-ডার্লিং অববাহিকার নদীতে৷ এর ফলে নদীর জল দূষিত হচ্ছে৷ এতে কেবল নদীর জলের ওপর নির্ভরশীল ২৬ লাখ মানুষ নয়, অনেক প্রজাতির প্রাণীও পড়েছে হুমকির মুখে৷
ছবি: Reuters/Maxar Technologies
শ্যাওলা এবং ডেড জোন
কেবল দাবানলের ছাইই যে নদীর ক্ষতি করে, এমনও না৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অতিবৃষ্টির ফলে নানা কারখানার বর্জ্য আরো দ্রুত নদী হয়ে সাগরে গিয়ে পড়ছে৷ এর ফলে নিউ ইয়র্ক উপকূলের মতো বিশাল এলাকা জুড়ে শ্যাওলা জন্মে সেখানকার জীববৈচিত্র্যে প্রভাব ফেলছে৷ কোনো কোনো স্থানে অক্সিজেনের সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ডেড জোনের সৃষ্টি হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/NASA
বৃষ্টি বেশি মানেই সুখবর নয়
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া মিসিসিপি নদীতে নাইট্রোজেন দূষণ একটি বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে৷ অতিবৃষ্টির ফলে আরো বেশি বর্জ্য ও নাইট্রোজেন জমা হচ্ছে নদীর জলে৷ একই সঙ্গে বন্যা ও সংখ্যায় ক্রমশ বাড়তে থাকা হারিকেনও ফেলছে প্রভাব৷