1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শহিদ বুদ্ধিজীবীর তালিকার কাজ স্থগিত, যাচাই বাছাই হবে

১৪ ডিসেম্বর ২০২৪

শহিদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা তৈরির কাজ বন্ধ আছে৷ গত সরকারের আমলে যে ৫৬০ জন শহিদ বুদ্ধিজীবীর তালিকার গেজেট হয়েছে তা ফের যাচাই বাছাই করা হবে৷

রায়েরবাজার শহিদ বুদ্ধিজীবী সৌধ
এ বছর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসেই (১৪ ডিসেম্বর) শহীদ বৃদ্ধিজীবীদের তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার কথা ছিলোছবি: Sazzad Hossain/DW

ডয়চে ভেলেকে শহিদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা তৈরির কাজ বন্ধ থাকার কথা নিশ্চিত করেছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী৷ আর মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম যাচাই-বাছাইয়ের কথা জানিয়েছেন৷

সচিব ইসরাত চৌধুরী বলেন, ‘‘এই মূহুর্তে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা তৈরির কাজ বন্ধ আছে৷ আমরা আগে চার দফায় মোট ৫৬০ জনের একটি তালিকা করেছি, যা গেজেট আকারে প্রকাশ হয়েছে৷ তবে এখন আর কাজ হচ্ছেনা৷ স্থগিত বা বন্ধ আছে বলতে পারেন৷''

কোনো সরকারি আদেশে বন্ধ আছে কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘ওরকম কোনো আদেশ হয়নি৷ তবে আমরা এখন অন্য আরো অনেক কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছি৷ আর যারা এই তালিকা তৈরির কমিটিতে আছেন তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ হচ্ছেনা৷ হয়তো পরে আবার শুরু হবে৷''

এখন অন্য আরো অনেক কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছি: ইসরাত

This browser does not support the audio element.

এবারের শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবসেই (১৪ ডিসেম্বর) শহিদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার কথা ছিলো৷ কিন্তু ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর দায়িত্ব নেয়া অন্তর্বর্তী সরকার সেটা করেনি৷

মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী নিজেই এই তালিকা প্রণয়ন কমিটির প্রধান৷ তিনি গত সরকারের আমল থেকেই মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিলেন৷ তিনি বলেন, ‘‘চার দফার মধ্যে শেষ দুই দফা তালিকা আমরা সময়ই হয়েছে৷''

শহিদ বুদ্ধিজীবীদের মর্যাদা নির্ধারণ ও  তার পরিবারের সদস্যদের সুযোগ সুবিধার প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘ওনাদের পরিবারের কোনো সুযোগ সুবিধা দেয়ার ব্যাপারে আগেও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি৷ তালিকা তৈরিরই সিদ্ধান্ত হয়েছিলো৷ আর তারা মর্যাদাবান বলেই তো তালিকা তৈরি করার সিদ্ধান্ত হয়েছিলো৷''

এদিকে, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক-ই-আজম বলেন, যে তালিকা আগে হয়েছে তা নতুন করে যাচাই বাছাই করা হবে৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘শহিদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা তৈরির কাজ বন্ধ নেই৷ আগে যে তালিকা তৈরি করা হয়েছে সেগুলো যাচাই বাছায়ের কাজ চলছে৷ নতুন নাম আসলে সেগুলোও যাচাই করা হচ্ছে৷''

তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘এই কাজে আগের যে কমিটি আছে সেই কমিটি পুনর্গঠন করা হবে৷ তাতে একটু সময় লাগবে৷''

২০২০ সালের ১৯ নভেম্বর শহিদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা প্রণয়নে গবেষক, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে ১১ সদস্যের যাচাই-বাছাই কমিটি গঠন করে আওয়ামী লীগ সরকার৷ মন্ত্রণালয়ের সচিবকে কমিটির সভাপতি করা হয়৷

কমিটি পুনর্গঠন করা হবে: ফারুক

This browser does not support the audio element.

এই কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী প্রথম দফায় ২০২১ সালের ৭ এপ্রিল ১৯১ জন শহিদ বুদ্ধিজীবীর নাম গেজেট আকারে প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়৷ ২০২২ সালের ২৯মে দ্বিতীয় তালিকায় আসে ১৪৩ জন৷ এরপর তৃতীয় দফায় চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি ১০৮ জন এবং চতুর্থ দফায় ২৪ মার্চ ১১৮ জন শহিদ বুদ্ধিজীবীর নামের গেজেট প্রকাশ করা হয়৷ সবশেষ তালিকা অনুযায়ী গেজেটভুক্ত শহীদ বুদ্ধিজীবী মোট ৫৬০ জন৷

চলতি বছরেরর মার্চে চতুর্থ তালিকা প্রকাশের সময় সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন চলতি বছরের ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের চূড়ান্ত তালিকা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে৷ সেই সংবাদ সম্মেলনে এখনকার মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরীও ছিলেন৷

কমিটির সদস্য ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. মুনতাসির মামুন বলেন, ‘‘দ্বিতীয় তালিকা প্রকাশের পর আর আমার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নাই৷ এরপর আরো দুইটি তালিকা প্রকাশ হলেও ওই দুইটি তালিকা তৈরির সঙ্গে আমি যুক্ত ছিলাম না৷''

তিনি বলেন, ‘‘তবে আমি মনে করি শহিদ বুদ্ধিজীবীদের একটা পূর্ণাঙ্গ তালিকা দরকার৷ খালেদা জিয়ার সরকারের সময় শহিদ বুদ্ধিজীবীদের ছবি দিয়ে ডাক টিকিট প্রকাশ করা হয়েছিলো৷ সেটা ছিলো একটি ভালো উদ্যোগ৷ গত সরকারের সময় বুদ্ধিজীবীদের তালিকা তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়৷ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তো আছে৷ শহিদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকাও পূর্ণাঙ্গ করা দরকার৷''

মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে এবং ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর বিজয়ের মাত্র দুই দিন আগে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার নীল নকশার অংশ হিসেবে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর ও আলশামসরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে৷ তাদের মধ্যে ছিলেন শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, শিল্পী, শিক্ষকসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা৷ মুক্তিযুদ্ধে কতজন বুদ্ধিজীবী শহিদ হয়েছেন তার সঠিক সংখ্যা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি৷ তবে নানা পর্যায়ের গবেষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ১৯৭২ সালে জাতীয়ভাবে প্রকাশিত শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবসের সংকলন, দেশি বিদেশি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ  থেকে একটা ধারণা পাওয়া যায়৷ সংখ্যাটি এক হাজারের বেশি হবে৷

মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ডা. এম এ হাসান বলেন, ‘‘শহিদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা প্রনয়নের কাজ বন্ধ না করে চলমান রাখা উচিৎ৷ এটা যদি না হয় তাহলে এই প্রজন্ম কাদের অনুসরণ করবে? আমাদের বীরদের চিনবে কীভাবে৷ একটি জাতি গড়ে ওঠে তার দর্শনের ওপর৷ যেসব বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করা হয়েছে তারা ছিলেন জাতির বৃদ্ধিবৃত্তিক চিন্তার উৎস৷ একটি জাতিরাষ্ট্র গঠনের তারা ছিলেন দার্শনিক৷ তাদের না জানলে তো এই জাতি পথ খুঁজে পাবেনা৷''

তার কথা, ‘‘যদি শহিদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা প্রনয়নের কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়, তবে তা হবে যে বুদ্ধি ও জ্ঞান মানুষকে পেছনমুখী করে এটা তেমন একটা কর্মকান্ড৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ